একনজরে শের-ই-বাংলা নগর ও আগারগাঁও
এলাকা সম্পর্কে
বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আপনাকে হয়ত কোন না কোন প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের অফিস বা পাসপোর্ট অফিসে যেতে হয়েছে। আবার গণভবন বা জাতীয় সংসদ ভবনের নাম শুনেননি এমন বাংলাদেশী পাওয়াও দুষ্কর। এমন সব বিখ্যাত, সদা ব্যস্ত, প্রয়োজনীয় ভবন, স্থাপনা এবং অফিস নিয়েই গড়ে উঠেছে সমগ্র আগারগাঁও আর শের-ই-বাংলা এলাকাটি। শের-ই-বাংলা নগরকে নিয়ে বিষদ পরিকল্পনা করেছিলেন পৃথিবীর বিখ্যাত স্থপতি, জাতীয় সংসদ ভবনের নকশাপ্রণেতা লু-আই কান। এই এলাকায় আছে দেশবিখ্যাত সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ কিংবা শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আছে শিশুমেলা, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বি.সি.এস কম্পিউটার সিটি (আইডিবি ভবন), পঙ্গু হাসপাতালের মত স্থাপনা। বেশিরভাগই সরকারী অফিস, প্রতিষ্ঠান, কোয়ার্টার বা স্থাপনা হলেও আগারগাঁও তালতলাসহ বেশ কিছু স্থানে আছে চমৎকার আবাসন সুবিধাও। আর এই এলাকার সম্পর্কে জানতেই আমাদের শের-ই-বাংলা নগর ও আগারগাঁও এর এলাকা পরিচিতি।
এলাকা সম্পর্কে বিস্তারিত
আবাসিক এলাকা হিসাবে শের-ই-বাংলা নগর ও আগারগাঁও
বেশ কিছু দরকারী প্রতিষ্ঠান হাতের কাছে থাকায় এবং চমৎকার লোকেশনে হওয়াতে আবাসিক এলাকা হিসেবে এই এলাকার একটি অন্যরকম চাহিদা রয়েছে। এই এলাকার ভেতরেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবন অবস্থিত। পুরো গণভবন, সংসদ ভবন চন্দ্রিমা উদ্যান এবং শের-ই-বাংলা নগর এলাকা কোন আবাসিক না হলেও আগারগাঁও, তালতলা প্রভৃতি স্থানে পাওয়া যায় বেশ কিছু আবাসিক ভবনের খোঁজ। আছে সরকারী কলোনী এবং কোয়ার্টারও। সরকারী জাতীয় সংসদ সচিবালয় আবাসিক কমপ্লেক্সও অবস্থিত আগারগাঁতেই। বিপ্রপার্টির ওয়েবসাইটেও লিস্টেড আছে আগারগাঁও এর বেশ অনেকগুলো প্রপার্টি।
যোগাযোগব্যবস্থা
এলাকার বেশিরভাগ স্থাপনাই অত্যন্ত ব্যস্ত ও জনসমাগমপূর্ণ হওয়ায় উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়। সংসদ ভবনের এক পাশে আছে সুপ্রশস্থ মানিক মিয়া এভিনিউ আর অন্য পাশে লেক রোড, যেটি চন্দ্রিমা উদ্যান আর সংসদ ভবনের মাঝে অবস্থিত। পূর্ব দিকে প্রায় পুরো অংশ জুড়েও আছে বেগম রোকেয়া সরণী যা থেকে পশ্চিমে আড়াআড়ি বের হয়ে গিয়েছে দুটি সড়ক। একটি বাণিজ্য মেলার মাঠের সামনে দিয়ে বীর উত্তম খালেদ মোশাররফ সরণী অন্যটি আগারগাঁও মোড় থেকে শিশুমেলা পর্যন্ত সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সড়ক। প্রতিটি রাস্তাই ঢাকা শহরের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা। আবার পশ্চিম দিকে আছে মিরপুরের সাথে সংযুক্ত ৬০ ফিট রোড। আর এগুলো দিয়ে চলচল করে ইন্টারসিটি বাস থেকে শুরু করে সব ধরণের যন্ত্রচালিত যানবাহন। তাই ঢাকা শহরের যে কোন স্থানে পৌঁছানোর জন্য ট্রান্সপোর্ট পাওয়া যায় খুব সহজেই। আর এলাকার অভ্যন্তরে চলাচলের জন্য রিকশা ও আছেই।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিক দিয়েও এই এলাকাটি সমৃদ্ধ। আছে দেশবিখ্যাত সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ কিংবা শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান। বিআইজিএম বা বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট একটি পোস্ট গ্রাজুয়েট লেভেলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যার অ্যাফিলিয়েশন আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে। স্কুল কলেজের মধ্যে শের-ই-বাংলা নগর গভর্মেন্ট বয়েজ স্কুল, আগারগাঁও তালতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আগারগাঁও তালতলা গভর্মেন্ট কলোনী হাই স্কুল উল্লেখযোগ্য
চিকিৎসা সুবিধা
চিকিৎসা সেবার জন্য আগারগাঁও এবং শের-ই-বাংলা-নগর এলাকাটি প্রসিদ্ধ। এত অল্প স্থানের মধ্যে এত বেশি উন্নতমানের এবং আধুনিক হাসপাতাল এবং চিকিৎসা ইন্সটিউট খুব কম জায়গাতেই আছে। এখানকার জনসমাগমপূর্ণ কিছু সরকারী হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রের একটি তালিকা নিচে দেয়া হল
- সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
- জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
- ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি
- জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতাল
- জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পূর্নবাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল)
- ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল
- জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট
- জাতীয় বাতজ্বর জনিত হৃদরোগ প্রতিরোধ কেন্দ্র
- ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল(অ্যাজমা সেন্টার)
- ঢাকা শিশু হাসপাতাল
আর এত বেশি পরিমাণে হাসপাতাল থাকার কারণে সমগ্র এলাকা জুড়েই আছে অসংখ্য ঔষুধের দোকান বা ফার্মেসি।
মসজিদ ও অন্যান্য উপাসনালয়
ঢাকার বেশিরভাগ এলাকার মতই অত্র এলাকাতেও নেই মুসলমানদের জন্য মসজিদের কোন অভাব। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ভবন এই আলাক্তেই অবস্থিত। আছে আগারগাঁও জামে মসজিদ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ, চন্দ্রিমা উদ্যান মসজিদসহ পর্যাপত পরিমাণ মসজিদ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যেতে পারেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রী শ্রী কালী মন্দির বা তালতলা কেন্দ্রীয় মন্দিরে।
আশপাশের এলাকা
শের-ই-বাংলা নগর ও আগারগাঁও এলাকাটি বেশ বিস্তৃত। এর দক্ষিণদিকে রয়েছে ইন্দিরা রোড, লালমাটিয়া, মণিপুরীপাড়া প্রভৃতি এরিয়া। পশ্চিমে মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী ইত্যাদি এলাকা। পূর্ব দিকের প্রায় পুরো এলাকাই পুরাতন এয়ারপোর্ট আর উপর দিকে অর্থ্যাত উত্তর দিকে আছে কল্যাণপুর আর শ্যাওড়াপাড়া। আশপাশের এলাকার সাথে এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই চমৎকার।
সরকারী অফিসের সমাহার
চিকিৎসা সুবিধা তথা হাসপাতালের মতই আগারগাঁও ও শের-ই-বাংলা নগর এলাকাটি বিভিন্ন সরকারী অফিস ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার একটি হাব। অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সরকারী অফিসের ঠিকানা আগারগাঁও থেকে শিশুমেলা পর্যন্ত বিস্তৃত জাস্টিস সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ এভিনিউয়ের দুধারে। এরমধ্যে প্রায় সবই উল্লেখযোগ্য। তবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল
- বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন
- বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, ঢাকা
- বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন
- পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়
- বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার
- ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা বিশ্ব ব্যাংকের অফিস
- বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড
- ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
- বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন
- বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন
- বাংলাদেশ ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকস বা পরিসংখ্যান ব্যুরো
- পরিবেশ অধিদপ্তর
- বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর
- বাংলাদেশ ন্যাশনাল আর্কাইভস
- বাংলাদেশ বেতারের কার্যালয়
- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা ন্যাশনাল বোর্ড অফ রেভিনিউ (এন বি আর)
- বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট গভর্নেন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইজিএম)
- ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি)
- বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ)
- র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন বা র্যাব ২ এর অফিস
পার্ক ও চিত্তবিনোদন
পার্ক এবং চিত্তবিনোদনের কথা উঠলেও এই এলাকা থাকবে এগিয়ে। সুবিশাল চন্দ্রিমা উদ্যান অবস্থিত এই এলাকাতেই। চমৎকার একটি বিকেল কাটানোর জন্য কিংবা সকাল বেলা মর্নিং ওয়াকের জন্য এটি হতে পারে গন্তব্য। আগারগাঁওতে আছে ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড যা ঢাকা শিশুমেলা নামেই বেশি পরিচিত। এছাড়া এই এলাকাতে আছে বেশ কয়েকটি জাদুঘর। সেগুলো হল
- জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর
- মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
- বাংলাদেশ বিমান বাহিনী যাদুঘর
- পরিসংখ্যান জাদুঘর বা স্ট্যাটিসটিক্স মিউজিয়াম
জীবনযাপন
খাবার ও রেস্টুরেন্ট
এই এলাকার বেশ জনপ্রিয় একটি রেস্টুরেন্ট হল যয়তুন রেস্টুরেন্ট। বেগম রোকেয়া সরণীতে, আইডিবি ভবনের উল্টোপাশেই এর অবস্থান। এখান থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী যাদুঘরের চমৎকার একটি ভিউ পাওয়া যায়। এছাড়া এলাকার পশ্চিম দিকে ৬০ ফিট রোডে পাওয়া জায় হরেক রকমের স্ট্রিট ফুড। অনেক রেস্টুরেন্টও আছে এই ৬০ ফিট রোডের দুধারেই।
কেনাকাটা
প্রাত্যহিক কেনাকাটার জন্য অসংখ্য জেনারেল স্টোর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এলাকাতে। এলাকার মানুষজন কেনাকাটার জন্য কাছেই বিভিন্ন কাঁচা বাজারে যেতে পারেন যেখানে টাটকা শাকসবজি তরিতরকারি পাওয়া যায়। তেমন বিখ্যাত, নামকরা কোন শপিং মল হয়ত এখানে নেই তবে দেশের বাৎসরিক সবচেয়ে বড় কেনাকাটার উৎসব বসে এই এরিয়াতেই। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মলেন কেন্দ্রের পাশের মাঠেই প্রতি বছর বসে বাণিজ্য মেলার আসর।