উত্তরা পশ্চিম এলাকার বিস্তারিত
একনজরে উত্তরা পশ্চিম
উত্তরা মডেল টাউন আবাসিক এলাকা, এখানে থাকা অনেকের কাছেই স্বপ্নের সামিল। শহুরে কোলাহল থেকে বাইরে, শান্ত আবাসিক এলাকা হিসেবে আলাদা জনপ্রিয়তা আছে উত্তরার। মূল শহরের জঞ্ঝাট থেকে বেশ দূরে, ছায়াঘেরা শান্ত পরিবেশে সুপরিল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে চমৎকার এই এলাকাটি। আর একারণেই অনেকের কাছে উত্তরায় একটি থাকার জায়গা থাকা মানে ঢাকার মাটিতে যেন সুখের ঠিকানা খুঁজে পাওয়া। শিশুদের জন্য স্কুল যেমন রয়েছে, আছে কলেজ আবার রয়েছে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও। সুচিকিৎসার জন্য উত্তরায় রয়েছে উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ, উইমেন্স মেডিক্যাল, লুবানা, হাই কেয়ার, ক্রিসেন্টসহ বেশ কিছু হাসপাতাল।
উত্তরাকে পূর্ব ও পশ্চিমে দুই ভাগে ভাগ করেছে ঢাকা - ময়মনসিংহ হাইওয়ে। এর পশ্চিম দিকে থাকা সেক্টর ১, ৩, ৫, ৭, ৯, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪-কে নিয়েই আমাদের এই এরিয়া গাইড উত্তরা পশ্চিম।
উত্তরা পশ্চিম এলাকা সম্পর্কে
উত্তরা পশ্চিমের অবস্থান
মূলত এয়ারপোর্টের বিশাল জায়গা এবং রানওয়েই ঢাকা শহর থেকে উত্তরাকে কিছুটা দূরে রেখেছে। আর এয়ারপোর্টের সীমানা যেখানে শেষ সেখান থেকে শুরু উত্তরার ১ নম্বর সেক্টর। এই সীমানা প্রাচীর প্রথমে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়েছে এবং গিয়ে মিশেছে জসীমউদ্দীন সরণীতে গিয়ে। এরপর সেই দেয়াল সোজা পশ্চিম দিকে চলে গিয়েছে সেক্টর ৩ এবং ৫-কে পাশে রেখে। সেক্টর ১, ৩, ৭, ৯ অবস্থিত একদম ঢাকা -ময়মনসিংহ হাইওয়ের বাঁ পাশ ঘেঁষে। আর এর পশ্চিমে অবস্থিত যথাক্রমে দক্ষিণ থেকে উত্তরে সেক্টর ৫, ১৪, ১৩, ১১ এবং সর্ব পশ্চিমে সেক্টর ১২।
পারিবারিক ও সামাজিক সুবিধাদি
উত্তরা আবাসিক এলাকা যেমন থাকার জায়গা হিসেবে অসাধারণ, তেমনি অসাধারণ উত্তরাবাসীদের মধ্যে গড়ে ওঠা সৌহার্দ্য। কমিউনিটির সকলেই নীতি-নৈতিকতার মধ্যে থেকে একে অপরের সাথে দারুণ সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। নিজের এলাকা নিজেই পরিচ্ছন্ন রাখার দারুণ প্রচেষ্টা রয়েছে উত্তরাবাসীর মধ্যে। প্রতিটি সেক্টরেই পার্ক কিংবা মাঠ থাকায় সবাই স্বাস্থ্য সচেতনও বটে। মাত্র বিশ পঁচিশ বছর আগেও যেখানে কেবল ধূ ধূ মাঠ, ঘন জঙ্গল ছাড়া কিছুই ছিল না, আজ সেখানেই গড়ে উঠেছে সম্প্রীতির বন্ধনে আধুনিক নগরজীবনের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
উত্তরায় প্রপার্টি
আশি সালের গোড়ার দিকে পরিকল্পনার সময় মূলত মধ্যবিত্তদের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা হলেও, ঢাকা শহরে জায়গার উচ্চমূল্যের কারণে উত্তরায় এখন মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত, সকলেরই বাস। সময়ের সাথে সাথে এই এলাকায় মধ্যবিত্ত এবং উচ্চমধ্যবিত্ত মানুষও বসবাস করতে শুরু করেছে। এই এলাকার অনেক ভবন যেমন নিজ উদ্যোগে নির্মিত তেমন ডেভেলপার কোম্পানির নির্মাণ করা ভবনের সংখ্যাও কম নয়। এই কিছুদিন আগেও উত্তরাতে ৬তলার চেয়ে উঁচু ভবন নির্মাণের অনুমতি ছিল না। এজন্য এই এলাকার শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি ভবন ৬তলা। এখন অবশ্য ১০-১২ তলা পর্যন্ত অনুমোদনও দেয়া হচ্ছে। সেক্টরভেদে ৮০০ বর্গফুটের ছোট ফ্ল্যাট যেমন রয়েছে, আছে ৪০০০ স্কয়ার ফিটের আলিশান অ্যাপার্টমেন্টও। এগুলো ২ বেড থেকে শুরু করে ৩, ৪ এমনকি ৫ বেড পর্যন্ত হতে পারে। ঢাকা - ময়মনসিংহ হাইওয়ে জুড়ে থাকা অসংখ্য ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান, বিপণী বিতান এবং গরীবে নেওয়াজ, গউসুল আজম, শাহ মখদুম এবং সোনারগাঁ জনপথ এভিনিউ জুড়েই লেগে থাকে রাজ্যের ব্যস্ততা।
উত্তরা পশ্চিমের যাতায়াত ব্যবস্থা
অভ্যন্তরীণ এবং শহরমূখী, এই দুই রকমের যাতায়াত ব্যবস্থাই আছে উত্তরায়। এলাকার ভেতরে যে কোনো জায়গায় যাতায়াতের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত রিকশা। সেইসাথে যে কেউ চাইলে ব্যক্তিগত যানবাহন তো ব্যবহার করতে পারেনই। উত্তরা পশ্চিমের গণপরিবহন চলে সেই প্রধান সড়কটি হল সোনারগাঁ জনপথ হয়ে ঢাকা - ময়মনসিংহ হাইওয়ে। এখান দিয়ে চলাচল করে সিএনজি, ট্যাক্সি এবং বিভিন্ন রুটের এসি - নন এসি সিটি বাস। যে কারণে এখান থেকে শহরের যে কোনো প্রান্তে যাতায়াত করা খুবই সহজ। দিয়াবাড়ি খালপাড় থেকে এসি বাস “বেস্ট শতাব্দী” যায় নিউমার্কেট আর রাইদার গাড়িগুলো চলাচল করে প্রগতি সরণী দিয়ে। এছাড়া মতিঝিল, মিরপুরসহ ঢাকার সব প্রান্তের বাস এখানে পাওয়া যায়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
উত্তরা পশ্চিমে স্কুল কলেজ আছে পর্যাপ্ত। ১ নম্বর সেক্টরে আছে দেশ সেরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কলাস্টিকার বিশাল নিজস্ব ক্যাম্পাস, ৩ নং সেক্টরে রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সের কাছেও তাদের জুনিয়র ক্যাম্পাস রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের মধ্যে আছে ১৪ নং সেক্টরে মাস্টারমাইন্ড, ১১ নম্বরে সাউথব্রিজ ইত্যাদি স্কুল। উত্তরার বিখ্যাত দুটি স্কুল ও কলেজ যথাক্রমে উত্তরা হাই স্কুল ও কলেজ এবং মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজ আছে উত্তরা পশ্চিমেই। উত্তরা হাই স্কুলের বিশাল মাঠ আছে ৭ নম্বর সেক্টরে অন্যদিকে প্রায় প্রতিটি সেক্টরেই আছে মাইলস্টোনের আলাদা আলদা ক্যাম্পাস।
হাসপাতাল ও অন্যান্য চিকিৎসাকেন্দ্র
উত্তরা পশ্চিমে চিকিৎসা সেবার জন্য বিখ্যাত উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এটি এক সময় পরিচিত ছিল বাংলাদেশ মেডিক্যাল নামে, কিন্তু একই নামে ধানমন্ডিতে আরেকটি হাসপাতাল থাকায় পরে তা পরিবর্তিত হয়। সোনারগাঁ জনপথে ৯ নম্বর সেক্টরে এর অবস্থান। এছাড়া ৭ নং সেক্টরে থাকা ক্রিসেন্ট হাসপাতালও মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত আছে প্রথম থেকেই। ১৩ নম্বর সেক্টরস্থ গরীবে নেওয়াজ এভিনিউতে পরপর আছে বেশ কিছু স্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রথমেই আছে লুবানা জেনারেল হাসপাতাল, যা একটি কার্ডিয়াক সেন্টারও বটে, আছে বিখ্যাত ল্যাব এইড এবং ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার যেখানে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখেন বিভিন্ন নামী দামী ডাক্তারেরা। তাই যে কোনো জরুরি অবস্থায়, দ্রুত চিকিৎসার নিশ্চয়তা পান উত্তরাবাসীরা।
মসজিদ ও অন্যান্য উপাসনালয়
উত্তরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে অসংখ্য মসজিদ। এই এলাকার চমৎকার দিক হল, প্রয়োজনের অতিরিক্ত না হলেও প্রতিটি সেক্টরেই রয়েছে নিজস্ব মসজিদ যা এলাকার মানুষের নামাজ আদায়ের জন্য যথেষ্ট। প্রতিদিনের নামাজসহ জুম্মাবার এবং ঈদের জামাতের জন্য চমৎকার ব্যবস্থা হয় এসবে। ৩, ৭, ১৩ সহ প্রতিটি সেক্টরের মসজিদই সুবৃহৎ এবং চমৎকার সাজানো গোছানো। উত্তরা এলাকায় সব ধর্মের মানুষ মিলে একসাথে বাস করেন শান্তিতে। ১১ নম্বর সেক্টরে তাই আছে চমৎকার, সুবিশাল একটি পূজামন্ডপ।
আশপাশের এলাকা
উত্তরা পশ্চিমের এক পাশে রয়েছে বিশাল এয়ারপোর্ট এলাকা। পূর্ব দিকের পুরোটাই ঢাকা ময়মনসিংহ হাইওয়ে। উত্তরে আছে আব্দুল্লাহপুর থেকে ধউর, বেরিবাধ, সুইচগেট এলাকা আর পশ্চিম দিকে উত্তরার নতুন শুরু হওয়া তৃতীয় পর্যায়ের কাজ যা দিয়াবাড়ি নামে অনেকের কাছে পরিচিত।
উত্তরা পশ্চিমে জীবনযাপন
খাবার এবং রেস্টুরেন্ট
ছোট ছোট ফুড স্টল থেকে শুরু করে পিজ্জা হাট এবং কেএফসির মতো বড় রেস্টুরেন্ট, ভোজনবিলাসীদের আনাগোনায় মুখর থাকে উত্তরার প্রতিটি খাবারের দোকান। অন্যান্য এলাকার ফুডকোর্টের মতোই, এই এলাকার ফুড কোর্টগুলোও সুনাম কুড়িয়েছে বেশ। আছে খানাস, শর্মা হাউজ, রেড চিকেন, কিংফিশার, বিএফসির মত ফাস্টফুড চেইন ও রেস্টুরেন্ট। আছে ক্রিমসন কাপ, কফি ওয়ার্ল্ডের মত কফিশপ। বিভিন্ন জায়গায় আছে মুখরোচক চটপটি ও ফুচকার দোকান। এক কথায় ভোজন রসিকদের জন্য উত্তরা ছেড়ে কোথাও যাবার দরকারই নেই!
কেনাকাটার গন্তব্য
উত্তরার প্রধান প্রধান সড়ক জুড়েই রয়েছে বেশকিছু শপিং স্পট। জামাকাপড়, জুতা, ব্যাগ থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় যেকোনো পণ্য, সবই পাওয়া যায় এই শপিংমলগুলোতে। ছোট ছোট ইলেক্ট্রিক গ্যাজেট কিংবা ইলেকট্রিক সামগ্রীও কেনা যাবে আশেপাশের দোকানগুলো থেকে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডেড শপের কথা আসলে প্রথমেই আসে আড়ং উত্তরার ৬তলা বিশাল আউটলেটটির কথা। এটি অবস্থিত জসীমউদ্দিন সরণীর কাছেই। এর একটু পরেই রয়েছে উত্তরার সবচেয়ে পুরাতন বিপনীবিতান, রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স। এটি বাংলা সিনেমার নায়করাজ রাজ্জাকের মালিকানাধীন একটি বিপনীবিতান। তিন নম্বর সেক্টরের এই এলাকাটি অত্যন্ত ব্যস্ত একটি এলাকা এবং এখান থেকে শুরু করে আজমপুর হয়ে একদম হাউজ বিল্ডিং এলাকা পর্যন্ত সম্পূর্ণ এলাকা বড় বড় সব বিপণিবিতান দিয়ে সদা ব্যস্ত। একে একে আছে এইচ এম প্লাজা, কুশল সেন্টার, আমীর কমপ্লেক্স, রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, সাইড গ্রান্ড সেন্টার, বি এন এস টাওয়ার, মাসকট প্লাজা এবং নর্থ টাওয়ারের মত বিশাল সব বাণিজ্যিক ভবন। এ তো গেল সেক্টরের সামনের দিকের কথা। ভেতরের দিকের কথা উঠলেই আছে চৌরাস্তায় জমজম টাওয়ার। এই চৌরাস্তাটি মূলত ১৩ ও ১১ নাম্বার সেক্টরের সংযোগস্থল। গউসুল আজম এভিনিউ ধরে আছে আগোরা, মিনা বাজার, ওয়ালটোন শো রুম এবং আর এফ এল এর সব সামগ্রী নিয়ে বিশাল ৬ তলা একটি শো রুম।
চিত্তবিনোদন
উত্তরা পশ্চিমে চিত্তবিনোদনের কথা উঠলে সবার আগে আসে মাঠ ও পার্কগুলোর কথা। ৭ নম্বর সেক্টরের পার্কটি সমগ্র উত্তরার একটি মডেল পার্ক হিসাবে পূনঃনির্মিত হয়েছে। এছাড়া, ১৩ নম্বর, ১১ নম্বর পার্ক গুলোও যথেষ্ট সুন্দর। ৩ নম্বর সেক্টরে আছে বিশাল খেলার মাঠ যা অনেকে চেনে উত্তরা ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠ নামে। ৭ নম্বর সেক্টরের মাঠটি উত্তরা হাই স্কুলের খেলার মাঠ নামে পরিচিত। ১৩ নম্বর, ১১ নম্বর ও ১২ নম্বর সেক্টরেও আছে আলাদা খেলার মাঠ।
মাঠ ও পার্কগুলো ছাড়া উত্তরা পশ্চিমবাসীদের জন্য আরেক আশীর্বাদের নাম উত্তরা লেক। দক্ষিণে ৫ নম্বর সেক্টর থেকে শুরু হয়ে ৭, ১৩ নম্বর সেক্টরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে একদম ১১ নম্বর সেক্টরের শেষ মাথায় সুইচ গেট সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে এই লেকটি। উত্তরার এই দৃষ্টি নন্দন লেক যে শুধু জলাবদ্ধতা থেকে বাচায় তাই না, বরং লেকের পার দিয়ে চমৎকার বাঁধানো রাস্তা ও পার্ক হয়ে উঠে এলাকাবাসী সময় কাটানোর জায়গা!