উত্তরা পূর্ব এলাকার বিস্তারিত
একনজরে উত্তরা
উত্তরা নিঃসন্দেহে ঢাকার সবচাইতে পরিকল্পিত কয়েকটি এলাকার একটি। ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকার নাম নিতে গেলে নিঃসন্দেহে সেখানে উত্তরার নাম থাকবে। নামের ভেতরেই আছে “উত্তরা মডেল টাউন”, তাই শহরের এক প্রান্তে অবস্থিত হলেও সবসময় এটি থাকে মানুষের কোলাহলে মুখরিত। এছাড়া আকাশপথে উড়াল দিত হলেও উত্তরা ছাড়া গতি নেই, দেশের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যে এখানেই। তবে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা মিলে উত্তরা একটি আধুনিক স্বয়ংসম্পূর্ণ আবাসিক এলাকা।
সবকিছু মিলিয়ে উত্তরা নিঃসন্দেহে ঢাকার সবচেয়ে বাসযোগ্য এলাকার একটি। উত্তরা পূর্ব এলাকা হিসাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ের পূর্বে থাকা সেক্টরগুলোর কথা (২ ,৪, ৬, ৮) এখানে উঠে এসেছে।
পূর্ব-উত্তরা এলাকা সম্পর্কে
আবাসিক এলাকা হিসাবে পূর্ব-উত্তরা
আবাসিক এলাকা হিসাবে উত্তরা সবসময়ই সকলের চাহিদার শীর্ষে থাকে। উন্নত রাস্তাঘাট, হাতের কাছেই সবধরণের সুযোগসুবিধা এবং শহরের কোলাহল থেকে দূরে হওয়াই এর প্রধাণ কারণ। বসবাসের জন্য খুবই শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসাবে উত্তরা স্বীকৃত। বাচ্চাদের জন্য যেমন আছে স্কুল, সেই সাথে আছে অফিস-ব্যাংক এবং বিপণী বিতান। আছে নানান ব্র্যান্ডের শপ। এয়ারপোর্টের দিয়ে উত্তরায় প্রবেশের মূল পথ ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ের হাতের ডান পাশে পড়েছে উত্তরা পূর্ব এলাকাটি। উত্তরা পূর্ব শুরু হয়েছে ২ নম্বর সেক্টর, যা মূলত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র্যাব-১ এর সদর দপ্তর। শায়েস্তা খা এভিনিউ এর দক্ষিণ পাশ পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। এটুকু এলাকায় তেমন বসতি নেই। এরপর বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে যথাক্রমে সেক্টর ৪ ও ৬ যার বিস্তৃতি সমগ্র উত্তরা ছাড়িয়ে একদম হাউজবিল্ডিং বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত। সেক্টর ৬ এর সর্ব দক্ষিণপ্রান্ত আলাউল এভিনিউ নির্দেশ করে, এরপর থাকা সেক্টর ৮ ও আবার উত্তরার অন্যান্য এলাকা থেকে আলাদা। এখানে মূলত আছে সরকারী কিছু প্রতিষ্ঠানের কোয়ার্টার সুবিধা।
পূর্ব-উত্তরায় প্রপার্টি
আশির দশকের প্রারাম্ভে উত্তরাকে পরিকল্পনা করা হয়েছিল একটি সাজানো গোছানো আবাসিক এলাকা হিসাবে। যে এলাকা শহুরে কোলাহল থেকে বাইরে, নগরের এক কোণে। সেই সাজানো গোছানো ভাবটি ঠিকই আছে কিন্তু সময়ের পটপরিবর্তনে আজ উত্তরা একটি অতীব ব্যস্ত এলাকা। বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানের অফিস থেকে শুরু করে ব্যাংক বীমা কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা হাসপাতাল সবই আছে এই এলাকায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে ধরে এগুলোই হাতের ডানে আপনি দেখতে পাবেন অসংখ্য ব্যাংক, অফিস এবং বিভিন্ন ব্রান্ডের শো-রুম যেগুলো পড়েছে পূর্ব উত্তরা এলাকায়।
যাতায়াত ব্যবস্থা
আমাদের নগরজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যাতায়াতব্যবস্থা। একটি উন্নত এলাকার যাতায়াতব্যবস্থা অবশ্যই হবে উন্নত। উত্তরা থেকে সমগ্র ঢাকা শহরের এমন কোন স্থান নেই যেখানে বাস চলাচল করে না। এসব বাসের বেশিরভাগই ছেড়ে আসে আব্দুল্লাহপুর কিংবা টঙ্গী বাজার এলাকা থেকে। কিছু কিছু সার্ভিস সম্পরসারিত উত্তরা প্রকল্পের দিয়াবাড়ি, খালপাড় এলাকা থেকেও যাতায়াত করে। আর অল্প কিছু বাস সার্ভিস আশুলিয়া কিংবা গাজীপুরের মত দূরবর্তী স্থান থেকে চলাচল করে। এসব বাসের মধ্যে যেমন আছে সরকারী মালিকানাধীন বিআরটিসি দ্বিতল বাস সার্ভিস, তেমনি আছে বেসরকারি বিভিন্ন এসি ও নন এসি সিটি সার্ভিস।
এছাড়া এলাকার অভ্যন্তরে চলাচলের জন্য রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে রিকশার উপস্থিতি। তবে জেনে রাখা ভাল যে, কোন রিকশা কিংবা পেশিচালিত যাত্রীবাহী বাহনকেই হাইওয়ে পার হতে দেয়া হয় না। এজন্য উত্তরার পূর্ব অংশের সাথে পশ্চিম অংশের রিকশা যোগাযোগ নেই। তবে যন্ত্রচালিত বাহন আবার এই হাইওয়েতে তেমন জ্যামে পড়ে না দুটি বিশেষ ইউ-লুপ থাকার কারণে। নগর পরিকল্পনার চমৎকার উদাহরণ এই বিশেষ ইউ-লুপ দুটির একটির অবস্থান এয়ারপোর্ট ও জসীমউদ্দীন এভিনিউয়ের মাঝামাঝি, আরেকটির অবস্থান আজমপুর বাসস্টপের আগ দিয়ে। এই দুটি ইউলুপের কারণে অবিশ্বাস্য হারে কমে গিয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ের উত্তরা অংশের যানজট।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
সাজানো গোছানো উত্তরাতে থাকতে চান অনেকেই। তার একটি বিশেষ কারণ এই এলাকায় বেশ কিছু উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি। বাংলা মিডিয়াম কিংবা ইংলিশ, স্কুল কিংবা কলেজ, সবই আছে পূর্ব-উত্তরাতে। বিখ্যাত অনেকগুলি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল যেমন দ্যি আগা খান স্কুল, ডিপিএস-এসটিএস স্কুল, ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারন্যাশলান টার্কিশ হোপ স্কুল অ্যান্ড কলেজ উত্তরা-পূর্বের ৪ ও ৬ নাম্বার সেক্টরে। দেশসেরা রাজউক স্কুল ও কলেজও এই এলাকার ৬ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত। আছে নওয়াব হাবিবুল্লাহ স্কুল ও কলেজ, উত্তরা গার্লস হাই স্কুল, আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন স্কুল ও কলেজের মত বিভিন্ন বাংলা মিডিয়াম স্কুলও। তাই এই এলাকায় মেলে আদর্শ শিক্ষার নিশ্চয়তা।
হাসপাতাল ও অন্যান্য চিকিৎসাকেন্দ্র
এই এলাকা কিন্তু চিকিৎসা সুবিধার দিক দিয়েও পিছিয়ে নেই! বিখ্যাত কুয়েত মৈত্রী সরকারী হাসপাতাল আছে ৬ নম্বর সেক্টরের আলাওল এভিনিউতে। জসীমউদ্দিন এভিনিউ সংলগ্ন ৪ নাম্বার সেক্টরে আছে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার যেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ব্যক্তিগত চেম্বার করে রুগী দেখেন। এছাড়া ৪ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডের মাথায় আছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বারডেম-এর ব্রাঞ্চ। ক্লিনিক এবং মেডিক্যাল সেন্টার দিয়ে উত্তরা পূর্ব স্বয়ংসম্পূর্ণ।
চিত্তবিনোদন
আবাসিক এলাকা হিসাবে উত্তরা শুরু থেকেই প্রসিদ্ধ। সবুজে ঘেরা এ এলাকায় চাইলেই চমৎকার সময় কাটানো সম্ভব পরিবার পরিজন নিয়ে। আর সেজন্য সবার প্রিয় গন্তব্য হল উত্তরার চমৎকার পার্কগুলো। প্রায় প্রতিটি সেক্টরেই আছে বিশাল পার্ক এবং খেলার মাঠ। সমগ্র উত্তরা এলাকার মধ্যেই ৪ নং সেক্টরের মাঠটি প্রসিদ্ধ। বিশাল এই মাঠের সাথেই আছে ৪ নং সেক্টর পার্ক এবং পুকুর। আগা খান স্কুলও এই মাঠের লাগোয়া। সেক্টরের ৩ কিংবা ৫ নাম্বার রোড দিয়ে সহজেই এই মাঠে প্রবেশ করা যায়। এছাড়া ৬নং সেক্টরেরও আছে আলাদা একটি মাঠ। নানা বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে থাকে এসব যায়গা ভোর থেকে সন্ধ্যা অব্দি।
মসজিদ
সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণের জন্য সব এলাকাতেই দরকার বিশেষ স্থাপনার। প্রতিটি সেক্টরের মত উত্তরা-পূর্বের সব সেক্টরেও আছে আলাদা মসজিদ। সেক্টর ৪ মাঠ সংলগ্ন স্থানেই আছে বিশাল উত্তরা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। ৬নং সেক্টরের পাশেই আছে বায়তুন নূর জামে মসজিদ। চার নম্বর সেক্টরের ২বি রোডের শেষে আছে জামতলা ঈদগাহ।
আশপাশের এলাকা
উত্তরা পূর্ব এলাকাটির একপাশের সীমানা আছে ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে, অন্যপাশে রেললাইন। এই রেললাইন উত্তরা মডেল টাউন থেকে উত্তরখান এবং দক্ষিণখানকে পৃথক করেছে। এছাড়াও একদম উত্তরপাশে ৮নং সেক্টরের পর আছে তুরাগ নদী এবং আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী এলাকা।
উত্তরা-পূর্বে জীবনযাপন
খাবার এবং রেস্টুরেন্ট
উত্তরা পূর্বে খাবারের অপশনের কোন শেষ নেই। এই এলাকায় আছে বেশ অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট এবং ভ্রাম্যমাণ ফুডকোর্ট। ৪নম্বরে ক্যালিফোর্নিয়া ফ্রাইড চিকেন অ্যান্ড পেস্ট্রি শপ সিএফসি, সুমি’স হটকেক,রাজলক্ষী সেন্টারের উল্টো দিকে থাকা শী-সেল পার্টি সেন্টার, একুশে রেস্তোরা ইত্যাদি আছে। এছাড়াও আজমপুরের রাস্তায় এবং রাজলক্ষ্মীর বিপরীত পাশে আছে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ ফুডকোর্ট।
শপিংএর গন্তব্য
উত্তরা পূর্বে আছে চমৎকার কিছু শপিং ডেস্টিনেশন ছোটখাট দোকান থেকে শুরু করে বিশ্বখ্যাত নানান ব্র্যান্ড, আগোরার শপিং মল, সবই আছে এখানে। পাইকারী মূল্যে খুচরা পণ্য ক্রয়ের জন্য উত্তরা ৬ নং সেক্টরে রাজউক কলেজের নিকট থাকা কাঁচাবাজারটি অনেকের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য, এটি বিজিবি মার্কেট নামেও পরিচিতি পেয়েছে। এর কাছেই আছে পৃথিবীবিখ্যাত আউটডোর ব্র্যান্ড ডেকাথলনের আউটলেট যেটি বাংলাদেশে ডেকাথলনের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র শোরুম। এছাড়া জসীমউদ্দিন বাস স্টপের উল্টোপাশ থেকে শুরু করে রাজলক্ষ্মীর উল্টোপাশ পর্যন্ত আছে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্র্যান্ডের জুতোর দোকান যার মধ্যে অ্যাপেক্স, বাটা, জেনিস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সবশেষে উল্লেখ করা যায় পলওয়েল করনেশন মার্কেটের কথা যেটি অবস্থিত আব্দুল্লাহপুরের ঠিক আগেই।
উত্তরা-পূর্বে বিভিন্ন ব্যাংক
বেশ অনেকগুলি ব্যাংক রয়েছে উত্তরার পূর্ব পাশে। এর বেশিরভাগই একদম ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ের গা ঘেঁষে বিভিন্ন বিল্ডিং এ গড়ে উঠেছে। প্রথমে বলা যায় বিশ্বখ্যাত ব্যাংক এইচ.এস.বি.সি এর কথা। সারা দেশে মোট ৭টি ব্রাঞ্চের মধ্যে একটি ব্রাঞ্চ আছে উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে জসীমউদ্দীন ওভারব্রিজের কাছেই। এরপর উত্তর দিকে আগাতে থাকলেই একে একে হাতের ডানে পড়বে ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, এবি ব্যাংক, এবং আজমপুরের কাছে শাহজালাল এভিনিউতে স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংক। এসব ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান মানুষের জীবনযাপনকে করে তুলছে আরও সহজ।