একনজরে ওয়ারী
এলাকা সম্পর্কে
ওয়ারী এলাকাটি পুরান ঢাকা সংলগ্ন একটি অন্যতম প্রধান এলাকা। এটি এক সময় ঢাকার একটি প্রধান হাব হিসেবে বিখ্যাত ছিল। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই এই এলাকার আধুনিকায়নের সূচনা। ব্রিটিশ উন্নয়নের শুরুর দিকের বেশ কিছু কর্মকান্ডের ছাপ এখনো দেখা যায় ওয়ারীতে। স্বচ্ছল ও অভিজাত মানুষদের এলাকা হিসেবে ব্রিটিশ আমল থেকেই বিবেচিত ওয়ারী। পুরান ঢাকার সংলগ্ন এলাকা হওয়ায় এই এলাকায় মানুষের কোলাহল লেগেই থাকে। তাই একটি বাণিজ্যিক এলাকা ও ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে ওয়ারীর যোগসাজশ শতবর্ষ পুরাতন। বর্তমানে এই এলাকায় বৃহৎ পরিসরে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রসার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সমগ্র এলাকাটিকে তাই ওল্ড ওয়ারী (পুরাতন ওয়ারী) এবং নিউ ওয়ারী (নতুন ওয়ারী) নামে দুটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে।
এলাকা সম্পর্কে বিস্তারিত
আবাসিক এলাকা হিসাবে ওয়ারী
ওয়ারীর বাসিন্দাদের মধ্যে রয়েছে চমৎকার সামাজিক বন্ধন। এলাকার সকল বাসিন্দা নিজেদের মধ্যে মিলেমিশে এবং একটি বৃহৎ পরিবারের মতই বাস করেন। আর এ বিষয়টিই অন্যান্য এলাকা থেকে ওয়ারীকে করে তোলে অনন্য। ওয়ারী এলাকাটিতে একটি ঐতিহ্যবাহী ভাব রয়েছে। এই এলাকায় অল্প কিছুদিন থাকলেও যে কারো মনে হবে বহুদিন ধরে সেখানে তার বাস, এমনই আপন করে এই এলাকাটি। এই জনবহুল এলাকাটি স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। কয়েকযুগ ধরে ওয়ারীতে বসবাসরত পরিবারগুলোর বেশিরভাগই বিশাল জয়েন্ট ফ্যামিলি। তবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এখানে এখন ছোট একক পরিবারের উপস্থিতিও দেখা যাচ্ছে। আবাসিক এলাকা হিসেবে তাই ওয়ারী হতে পারে চমৎকার একটি ঠিকানা।
ওয়ারীতে প্রপার্টি
ওয়ারীতে বিভিন্ন ধরণের প্রপার্টির দেখা মেলে। পুরাতন অনেক বিল্ডিংই ভেঙে নতুন ও আধুনিকভাবে গড়ে উঠছে। এলাকার উন্নয়ন এখনো পুরোদমে এগিয়ে চলছে । তাই পুরাতন জীবনধারা থেকে নতুন ও আধুনিক জীবনের দিকে চলমান পরিবর্তন চোখে পরে এই এলাকার বেশিরভাগ প্রপার্টিতে। সাধারণ ছিমছাম বাসা থেকে শুরু করে সুউচ্চ দালানে ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট, সব ধরণের প্রপার্টিরই দেখা মেলে ওয়ারীতে। সব ধরণের প্রপার্টি একটি ছোট এলাকায় পাওয়া যাবার কারণে ওয়ারী অনন্য একটি এলাকা। নিউ ওয়ারীতে প্রপার্টির ভাড়া বা মূল্য সাধারণত ওল্ড ওয়ারী থেকে বেশি। বিভিন্ন ধরণের বাণিজ্যিক প্রপার্টি এবং কমনস্পেস ও কমিউনিটি সেন্টারেরও উপস্থিতি রয়েছে ওয়ারীতে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
বাইরে দেশের দক্ষিণ, পশ্চিমের প্রায় ৩২টি জেলায় চলাচল করা সম্ভব। দেশের প্রধানতম বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের সাথে যোগাযোগ ভালো হওয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, ওয়ারী থেকে মতিঝিলের সরাসরি টেম্পু সার্ভিস রয়েছে যা অনেক অফিসগামী মানুষের জন্য বেশ কাজের। ওয়ারীর প্রান্তে, জয় কালী মন্দিরের পাশেই আছে একটি বাসস্ট্যান্ড যেখান থেকে বাসাবো, খিলগাঁও, শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী থেকে শুরু করে কালশী, মিরপুর বা নারায়ণগঞ্জের মত এলাকায় পৌঁছানো সম্ভব। অন্যদিকে থাকা পোস্তগোলা বাসস্টপ থেকেও ছেড়ে যায় নানা গন্তব্যের ইন্টারসিটি বাস।
শুধু বাস বা সড়কপথই নয় বরং এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও বিস্তৃত। আছে নৌপথেরও বিস্তৃতি, চাইলে কেরানীগঞ্জের মাঝ দিয়ে নৌভ্রমণও সম্ভব। আর ঢাকা কিংবা দেশের অন্যান্য এলাকার মতই আছে রিকশার উপস্থিতি। সারা এলাকা জুড়েই পাওয়া যায় রিকশা যাতে চড়ে ইসলামপুর বা নবাবপুরের মত আশেপাশের যে কোন এলাকায় পৌঁছানো যায় দ্রুতই।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
ওয়ারীতে আছে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও উপস্থিতি। ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড স্কুল অ্যান্ড অ্যাকাডেমিয়ার মত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে। বাংলা মিডিয়াম স্কুলের মধ্যে আছে শের-ই-বাংলা নগর বালিকা মহাবিদ্যালয়। এছাড়াও আছে সেন্ট্রাল ওম্যান’স ইউনিভার্সিটি। ছোটদের জন্য আছে সানবিনস কেজি স্কুল, সিল্ভারডেল প্রিপেরাটরি অ্যান্ড গার্লস হাই স্কুল। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য অভিভাবকেরা নিশ্চিন্তে এই স্কুলগুলোতে তাদের সন্তানদের ভর্তি করিয়ে থাকেন।
চিকিৎসা সুবিধা
সালাউদ্দীন স্পেশালাইজড হসপিটাল লিমিটেড হল ওয়ারী এলাকার স্বাস্থ্যসেবার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নির্ভরযোগ্য ঠিকানা। বিশেষায়িত চিকিৎসকদের দ্বারা এখানে উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। এর বাইরেও শহীদ খালেক-ইব্রাহীম জেনারেল হাসপাতাল এবং ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক সেন্টারেও মেলে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা। আবার ওয়ারীর ঠিক পাশেই দয়াগঞ্জে আছে বিখ্যাত ডায়াগনস্টিক সেন্টার ল্যাব এইডের অবস্থান ওয়ারী থেকে যেখানে পৌঁছাতে ১০ মিনিট সময় লাগে। এমন বেশ কিছু হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্র কাছাকাছি অবস্থিত হওয়া ওয়ারীর বাসিন্দাদের জন্য একটি বড় সুবিধা। প্রয়োজনীয় ঔষুধের জন্য ছোট বড় অনেক ফার্মেসীও আছে যার মধ্যে লাজ ফার্মা এবং হেলথ কেয়ার ফার্মেসী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পার্ক ও চিত্তবিনোদন
চিত্তবিনোদনের কথা উঠলে ওয়ারীর কাছেই গুলিস্তানে আছে দেশ বিখ্যাত বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। কোন এক অলস বিকেলে অথবা যে কোন অকেশনে খেলা দেখতে চলে যাওয়া যেতে পারে এখানে। এর বাইরে এলাকার কাছে আছে দেশের প্রাচীত্তম বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেন। একে অনেকেই পুরো উপমহাদেশের সমৃদ্ধতম উদ্ভিদের সংগ্রহশালা বলে আখ্যা দেন। একটি অলস বিকেল কিংবা সুন্দর সকাল কাটতে পারে এই বলধা গার্ডেনে।
মসজিদ ও অন্যান্য উপাসনালয়
যদিও দেশের আর দশটা এলাকার মতই এই এলাকাও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কিন্তু ওয়ারীতে নানান ধর্মাবলম্বী মানুষের রয়েছে সহাবস্থান। মুসলিমদের প্রত্যহ নামাজ আদায়ের জন্য আছে মসজিদ উন নূর, ওয়ারী জামে মসজিদের মত মসজিদ। খ্রিস্টানদের জন্য আছে চার্চ, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য ওয়ারীর এক কোণে আছে বিখ্যাত কালী মন্দির। কালী পূজার উদ্দেশ্যে এবং অন্যান্য পূজায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিতি থাকে এখানে চোখে পড়ার মত। সব মিলিয়ে কমবেশি সকল ধর্মের মানুষের জন্যই উপাসনালয় আছে ওয়ারী এলাকায়।
ঐতিহাসিক স্থাপনা
ওয়ারীর ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল একটি খ্রিস্টান সমাধিক্ষেত্র। এটি বাংলাদেশের একটি প্রাচীনতম এবং বৃহৎ সমাধিক্ষেত্র। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এটির অন্যরকম এক মর্যাদা আছে। এছাড়াও নানান স্থান থেকে মানুষ আসে এখানে এই ঢাকা ক্রিস্টিয়ান সিমেট্রি দেখতে।
আশেপাশের এলাকা
ওয়ারী হল পুরাতন শহরের অন্যতম প্রধান একটি এলাকা, এর আশপাশের সকল এলাকার সাথে এর আছে শক্তিশালী যোগাযোগব্যবস্থা। ওয়ারীর দক্ষিণে আছে কমলাপুর, গোপীবাগ, গুলিস্তান ও মতিঝিল। কমলাপুর কাছে হওয়ায় ট্রেন যোগাযোগের জন্যও এলাকাটি আদর্শ। আর উত্তরদিকে পাওয়া যাবে দয়াগঞ্জ, সুত্রাপুর, নারিন্দার মত এলাকাগুলো। আবাসিক এলাকার হিসেবে প্রসিদ্ধ স্বামীবাগ, টিকাটুলি আছে পূর্ব দিকে আর পশ্চিম দিকে পড়েছে নবাবপুর আর বংশালের মত ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা।
ওয়ারীতে জীবনযাপন
খাবারদাবার এবং রেস্টুরেন্ট
ওয়ারীতে খাবারদাবারের কথা উঠলে সেখানেও থাকছে বৈচিত্র্য। পুরান ঢাকা এখনো বিখ্যাত সকল বিরিয়ানি এবং অন্যান্য স্থানীয় খাবারের জন্য। ঢাকার উত্তরা, বনানী, রামপুরার মতই ওয়ারীতেও গড়ে উঠেছে বিভিন্ন নতুন নতুন রেস্টুরেন্ট। তাই আধুনিক বিভিন্ন কুইজিনও আছে এই এলাকার বিভিন্ন খাবারের দোকানে। আছে কে এফ সি ও পিজ্জা হাটের আউটলেট। যে কোন স্পেশাল ইভেন্টের জন্য আছে ডাইনিং লাউঞ্জ। এর বাইরে বিভিন্ন বিখ্যাত ফুড চেইন যেমন পাপাই’স, সিক্রেট রেসিপি, টিউন অ্যান্ড বাইটসও তাদের ব্রাঞ্চ খুলেছে ওয়ারীতে।
শপিং এর গন্তব্য
শপিং এর কথা উঠলেও সেখানে ওয়ারী পিছিয়ে থাকবে না। নামকরা সকল ব্র্যান্ডের উপস্থিতিই আছে এই এলাকায়। আড়ং, সেলর, লে রিভ, ক্যাটস আই, টাইম জোন, ইউনিক্লো, বাটা, আছে সকল বিখ্যাত ব্র্যান্ডের শো রুম ও আউটলেট। এর বাইরে আছে রাজধানী সুপার মার্কেট যা ওয়ারীর সন্নিকটেই অবস্থিত। বিভিন্ন ধরণের মালামাল তুলনামূলক কম খরচে কেনার জন্য এই মার্কেটেও বেশ জনপ্রিয় এলাকাবাসীর মধ্যে।