HIGHLIGHTS
About Kallyanpur
শান্ত, নিরিবিলি এলাকা হিসেবে কল্যাণপুরের নামডাক থাকলেও, অধিকাংশ মানুষ একে বাস কাউন্টার গুলোর কারণেই বেশি চেনে। প্রতিদিন এখান থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাস যাতায়াত করে। তবে বাস কাউন্টার ছাড়াও এ এলাকার আরো কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য আছে। কল্যাণপুরকে ভেঙে বলা যায় ‘কল্যাণের নগরী’। সত্যিই কিন্তু এ এলাকায় গত কয়েক বছরে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্প করা হয়েছে যা এলাকাবাসীর জন্য কল্যাণকরই হয়েছে। এলাকাটি দারুস সালাম থানার অন্তর্গত।
দক্ষিণ মিরপুর, শ্যামলী, গাবতলী ও শেরে বাংলা নগরের জংশন হিসেবে ঢাকার বুকে স্থান করে নিয়েছে কল্যাণপুর। মূল শহরের পশ্চিম প্রান্তের এ এলাকাটি দেশের উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার তোরণ হিসেবেও বহুদিন ধরে কাজ করছে। বেশ কিছু হাউজিং এস্টেট, যাতায়াতের সুব্যবস্থা এবং সাশ্রয়ী জীবনযাপনের সুবিধা থাকায় শহরের অন্যতম জনপ্রিয় এলাকা এটি। এই এরিয়া গাইডে কল্যাণপুরের এই সুবিধাগুলো, এ এলাকার ধরন ও নানা দিক নিয়ে কথা বলবো আমরা।
কল্যাণপুর সম্পর্কে বিস্তারিত
আবাসিক এলাকা হিসেবে কল্যাণপুর
কল্যাণপুর মূলত আবাসিক এলাকাই। এখানে কল্যাণপুর হাউজিং এস্টেট সহ বেশ কিছু হাউজিং এস্টেট এবং সরকারি কোয়ার্টার আছে। এ এলাকার ভেতর দিকের রাস্তাগুলো তাই বেশ শান্ত। কোলাহল পাওয়া যায় শুধু মেইন রোডের দিকটায়। যানবাহনের হর্ন, হকারের হাকডাক বা ব্যস্ত পথচারী সব মেইন রোডকে কেন্দ্র করেই। কল্যাণপুর ঢাকার অন্যান্য এলাকার সাথে বেশ ভালোভাবেই সংযুক্ত। আর এজন্য মিরপুর রোড নিকটবর্তী হওয়াও একটি বড় কারণ। মিরপুরের দিকে যাতায়াতের জন্য দারুস সালাম রোডটিও এলাকাবাসীর জন্য সুবিধাজনক। ফলে মিরপুর অথবা আদাবর-শ্যামলীতে যাদের কর্মস্থল, তাদের বসবাসের জন্য কল্যাণপুর খুব সুবিধাজনক। এছাড়া এখানে বাড়ি ভাড়াও বেশ সাশ্রয়ী।
কল্যাণপুরে প্রপার্টি
আবাসিক প্রপার্টিই এখানে বেশি তবে মেইন রোডের দিকে কিছু বাণিজ্যিক প্রপার্টিও রয়েছে। কিছু অফিস, ব্যাংক, রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল, ব্র্যান্ড আউটলেট দেখা যায় মিরপুর রোডে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে কোর্ট দে লা অ্যাকমি, যা মূলত অ্যাকমি গ্রুপ অফ কোম্পানিজের হেড কোয়ার্টার। তবে আবাসিক এলাকা হিসেবে এ এলাকার জনপ্রিয়তা বেশি। আগেই বলেছি, শ্যামলী মিরপুর বা আশপাশের এলাকায় যাদের অফিস তাদের কাছে কল্যাণপুর বসবাসের জন্য দারুণ আকর্ষণীয়। এ এলাকায় বিক্রয়যোগ্য অ্যাপার্টমেন্ট গুলোর দাম মিরপুরের মতোই। ইদানিং এখানে বেশ কিছু কনস্ট্রাকশন প্রজেক্টের কাজ চলছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই বহুতল রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টি।
যাতায়াত ব্যবস্থা
কল্যাণপুরে বসবাসের অন্যতম বড় সুবিধা এর উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা। মিরপুর রোড যেহেতু পুরো শহরের বাস রুট, তাই এ এলাকা থেকে গণপরিবহণের সুবিধা বেশ ভালোভাবেই পাওয়া যায়। দেশের অন্যান্য জেলায় যেতে চাইলেও কল্যাণপুরের বাস কাউন্টারগুলোতে আস্তে হবে আপনাকে। কল্যাণপুর থেকে মিরপুর রোড ধরে উত্তর দিকে এগোলে ঢাকা-আরিচা হাইওয়ে, যা দেশের উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার মূল সড়কপথ। বিআরটিসির একটি বড় বাস ডিপোও রয়েছে এখানে।
দারুস সালাম রোড এ এলাকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। মিরপুরে যাতায়াত সহজ করেছে এ রাস্তাটি। এছাড়া ইয়েছে কল্যাণপুর নতুন বাজার রোড ও কল্যাণপুর মেইন রোড। কল্যাণপুর নতুন বাজার রোড মূলত নতুন বাজার ও হাউজিং এস্টেটের দিকে যায়, আর মেইন রোডটি ব্যবহৃত হয় এলাকার ভেতরে ও ৬০ ফিটে যাতায়াতের জন্য। এ এলাকার ভেতরে চলাচলের জন্য রিকশা বহুল ব্যবহৃত। ভবিষ্যতে এলাকাবাসী ঢাকা মেট্রো রেল প্রজেক্টের দক্ষিণ রুট এমআরটি লাইন-৫ ব্যবহারের সুবিধা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে কারণ এ এলাকায় একটি স্টপেজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
বেশ কিছু স্কুল-কলেজ থাকলেও ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত কল্যাণপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজই এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কলেজটি অবশ্য ১৯৯৩তে প্রতিষ্ঠিত। এছাড়া বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্সও এ এলাকায়ই অবস্থিত, যা দেশে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিষয়ক প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন এর উদ্যোগে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১২ তে এটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পায়। মোহাম্মাদপুর, শ্যামলী, শের-এ-বাংলা নগর এবং মিরপুরস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এ এলাকা থেকে রোজ যাতায়াত করা সুবিধাজনক।
চিকিৎসা সুবিধা
কল্যাণপুরের হাসপাতালগুলোর মধ্যে ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এর উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য প্রসিদ্ধ। এছাড়া দারুস সালামে বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতালেরও নামডাক রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা মেডিক্যাল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এ এলাকা থেকে মাত্র দশ মিনিট দূরত্বে অবস্থিত। এটি উন্নত চিকিৎসা সেবা সম্বলিত নামকরা সরকারি হাসপাতালও বটে।
ধর্মীয় উপাসনালয়
ধর্মীয় আচার পালনের ব্যাপারটি আমাদের সামাজিক জীবনের বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কল্যাণপুরবাসীর জন্যও এটি ভিন্ন নয়। প্রচুর মসজিদ থাকায় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের নামাজের জন্য দূরে যেতে হয় না। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্যও রয়েছে কল্যাণপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ। এ এলাকায় কোনো মন্দির না থাকলেও মোহাম্মাদপুরের তপোবন মন্দিরটি এখান থেকে খুব কাছে।
আশপাশের এলাকা
শ্যামলী-আদাবর, গাবতলী, শেরে বাংলা নগর এবং মিরপুরের মধ্যে জংশন হিসেবে ধরা হয় এই কল্যাণপুর এলাকাটিকে। এ এলাকার খুব কাছেই বড় বাস টার্মিনালের জন্য প্রখ্যাত গাবতলী, যেখান থেকে প্রতিদিন অসংখ্য বাস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করে। আদাবর-শ্যামলীতে রয়েছে বেশ কিছু অফিস ও স্টার্ট আপ প্রতিষ্ঠান, আর মিরপুর তো এ শহরের অন্যতম বৃহৎ ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। কল্যাণপুর মিরপুর রোডের ঠিক পাশেই হওয়ায় এলাকাবাসী সহজেই এখান থেকে মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি এমনকি নিউ মার্কেট, আজিমপুরেও যেতে পারে।
জীবনযাপন
খাবার ও রেস্টুরেন্ট
Tনানা রকম খাদ্যের সমারোহ পাবেন কল্যাণপুরে। দেশীয় খাবার এবং দেশী স্টাইলের থাই-চাইনিজ খাবার যাদের পছন্দ, তাদের একেবারেই হতাশ করবে না এ এলাকা। কারণ এমন খাবারের অসংখ্য রেস্টুরেন্ট রয়েছে পুরো এলাকায়। এছাড়া শ্যামলী খুবই কাছে হওয়ায় সাশ্রয়ী দামে ফাস্টফুড খাওয়ার দুর্দান্ত সুযোগও পাবেন শ্যামলী স্কয়ারের ফুডকোর্টে। দক্ষিণ মিরপুরের ৬০ ফিট রোডও এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়। তাই কল্যাণপুর থেকে চাইলেই দল বেঁধে চলে যেতে পারেন ৬০ ফিটের রেস্তোরাঁগুলোতেও।
কেনাকাটা
নিত্যদিনের কেনাকাটার জন্য কল্যাণপুরের অলিতে-গলিতে পাবেন বেশ কিছু জেনারেল স্টোর। কাঁচাবাজারের জন্য কল্যাণপুর নতুন বাজারে যেতে পারেন। আর যারা শপিং মলে কেনাকাটায় আগ্রহী, তাদের জন্য রয়েছে দারুস সালাম শপিং কমপ্লেক্স, যেখানে টুকিটাকি থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিকস সামগ্রী সবই পাবেন। এছাড়া শ্যামলী স্কয়ার কিন্তু কল্যাণপুরের খুব কাছেই। ফলে ব্র্যান্ড আউটলেট বা ফ্যাশন বুটিক থেকে কেনাকাটা করতে চাইলে বা অত্যাধুনিক সিনেমা হলের সন্ধানে যেতে পারেন সেখানেও।