একনজরে খিলগাঁও
খিলগাঁও সম্পর্কে
মাত্র কিছুদিন আগেও খিলগাঁওকে ঢাকাবাসী শান্ত, নিরিবিলি এলাকা হিসেবেই চিনতো। তবে হঠাৎ যেন চোখের পলকে বদলে গেছে খিলগাঁও, হয়ে উঠেছে ভীষণ ব্যস্ত আর প্রাণবন্ত এক এলাকা। খিলগাঁও জায়গাটি অবশ্য শুরু থেকেই খানিকটা অন্যরকম। এর অবস্থানের কথাই ধরা যাক, খিলগাঁওয়ের কিছু অংশ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্গত আর কিছু অংশ পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে। গত দশকে এলাকাটির বাণিজ্যিক ও আবাসিক- উভয় চাহিদাই বেড়েছে। তালতলা, সিপাহীবাগ, তিলাপাড়া - খিলগাঁও এর মধ্যে আবাসিক এলাকা হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়া ফ্লাইওভার হবার পর থেকে এখানে বেড়েছে অ্যাপার্টমেন্ট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। অর্থাৎ যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন এলাকাটির আমূল পরিবর্তনের আরো একটি কারণ। খিলগাঁওকে এখন ‘ঢাকার নতুন ফুড প্যারাডাইস’ বলা হয়। দেশী-বিদেশী বিচিত্র সব খাবারের সমাহার দেখা যায় এ এলাকার রেস্টুরেন্ট ও ফুড কার্টগুলোতে। আর এখানকার সাশ্রয়ী বাড়ি ভাড়ার কথা না বললেই না, কারণ আবাসিক এলাকা হিসেবে এর চাহিদা বৃদ্ধিতে এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
খিলগাঁও সম্পর্কে বিস্তারিত
আবাসিক এলাকা হিসেবে খিলগাঁও
খিলগাঁও বেশ ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা। তবে এ এলাকায় শান্ত ও ঘরোয়া আবহ খুঁজে পাবেন আপনি। রেসিডেনসিয়াল বিল্ডিংগুলো মেইনরোড থেকে খানিকটা দূরে হওয়ায় এ এলাকার বাসিন্দারা কোলাহল থেকে দূরেই বাস করেন। বিশেষ করে ব্লক সি খিলগাঁওয়ের অন্যান্য এলাকার তুলনায় শান্ত। তবে তালতলা মার্কেটের পাশে চলছে কিছু ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের কাজ। এ এলাকার নতুন নির্মিত রেসিডেন্সিয়াল অ্যাপার্টমেন্টগুলো বেশ আধুনিক, তবে পুরোনো বাড়িগুলোতেও স্থাপত্যশৈলীর নান্দনিকতা দেখা যায়। খিলগাঁওবাসীদের অধিকাংশই মধ্যম আয়ের মানুষ। কিন্তু এ এলাকার বাড়িগুলোর মূল্যমান সাশ্রয়ী হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের সাধ্যের মধ্যেও রয়েছে কিছু প্রপার্টি।
খিলগাঁওতে প্রপার্টি
আধুনিক সুবিধা সম্বলিত বেশ কিছু নতুন রেসিডেন্সিয়াল বিল্ডিং গড়ে উঠেছে খিলগাঁও এলাকায়। খিলগাঁওতে বাড়ি ভাড়া অনেক বেশি সাশ্রয়ী আর এটিই খিলগাঁওয়ের আবাসন চাহিদা বাড়ানোর অন্যতম কারণ। বিশেষত মধ্যবিত্ত নগরবাসীর সামর্থের সাথে এ এলাকার বাড়িগুলো ভীষণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর খিলগাঁওয়ে বাড়ি কিনতে পারবেন ৪০ লাখ থেকে ৬৫ লাখের মধ্যে। এ এলাকায় পুরোনো ধাঁচের বেশ কিছু বিল্ডিংও দেখা যায়।
পুরো এলাকায় এখনো প্রচুর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ও বাণিজ্য ভিত্তিক উন্নয়ন করার মতো জায়গাও রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মেইন রোডের কাছে প্রসিদ্ধ ডেভেলপাররা নতুন কিছু অ্যাপার্টমেন্ট গড়ে তুলেছেন। আর খিলগাঁওতে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার রমরমা অবস্থার কারণে কমার্শিয়াল স্পেসের চাহিদা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এছাড়া ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সোনালি ব্যাংক লিমিটেড, ডাচ বাংলা ব্যাংকের শাখা আছে খিলগাঁওতে। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, এবি ব্যাংক লিমিটেড ও আরো কিছু ব্যাংকের এটিএম বুথও পাবেন এখানে।
যাতায়াত ব্যবস্থা
যাতায়াতের সুব্যবস্থা খিলগাঁওয়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। খিলগাঁও ফ্লাইওভার ও মগবাজার ফ্লাইঅভারের কারণে এখানে যাতায়াতে এ এলাকার বাসিন্দাদের অনেকটুকু সময় বেঁচে যায়। এ দুটো ফ্লাইওভারের কল্যাণে এলাকাটির চিত্রপট বেশ বদলে গিয়েছে। আগে খিলগাঁও থেকে ঢাকার অন্যান্য অঞ্চলে যাতায়াত করা মানেই ছিলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্লান্তিকর জ্যামে বসে থাকা। কিন্তু ফ্লাইওভার দুটো বাংলা মোটর, ফার্মগেট, এলিফ্যান্ট রোড, রাজারবাগের সাথে খিলগাঁওয়ের সংযোগ বাড়িয়েছে বহুগুণ। আর খিলগাঁও এলাকার পাশ দিয়েই গিয়েছে ঢাকার অতীব গুরুত্বপূর্ন একটি রাস্তা, ডি আই টি রোড-প্রগতী সরণী সড়কটি।
খিলগাঁও থেকে বাসে যাতায়াত বেশ সুবিধাজনক। খিলগাঁও থেকে প্রচুর বাস প্রতিদিন বসুন্ধরা, মতিঝিল, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, গুলশান ও মিরপুরে আসা-যাওয়া করে। গোরান, গুলিস্তান, মালিবাগ এবং বাসাবো এলাকায় দ্রুত যাতায়াতের জন্য খিলগাঁওবাসী বেছে নেন টেম্পো সার্ভিস।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
বেশ কিছু ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় খিলগাঁও এখন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে জনপ্রিয় এলাকা। ইংরেজি মাধ্যম ও বাংলা মাধ্যম উভয় ধরনের স্কুলই পাবেন এ এলাকায়। বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খিলগাঁও মডেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, খিলগাঁও মডেল কলেজ, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এবং খিলগাঁও উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের নামডাক রয়েছে। এতগুলো স্কুল থাকায় স্কুল শুরু ও শেষের সময়ে খিলগাঁওয়ের রাস্তায় স্কুল ভ্যান চলার দৃশ্য বেশ নিয়মিত দেখা যায়।
চিকিৎসা সুবিধা
খিলগাঁওয়ের হাসপাতালগুলোর মধ্যে খিদমাহ হসপিটাল প্রাইভেট লিমিটেড বিখ্যাত। স্বল্প খরচে দক্ষ চিকিৎসকদের সেবা পাওয়া যায় এ ডায়াবেটিক হাসপাতালটিতে। এছাড়া ইসলামিয়া ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড এছাড়া ইসলামিক ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, পিপলস হসপিটাল লিমিটেডেও পাওয়া যায় উন্নত চিকিৎসা সেবা। এখানে আরো কিছু ক্লিনিক ও লাজফার্মা সহ কিছু ফার্মেসি থাকায় স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় সহজেই।
পার্ক ও বিনোদন
খিলগাঁও এলাকার শিশু-কিশোরদের খেলা ও বিনোদনের ক্ষেত্রে জোড়পুকুর মাঠ সবচেয়ে জনপ্রিয়। একসময় এটি ছিলো শুষ্ক-বিরান জমি, পরে একে খেলার মাঠে রূপান্তর করা হয়। সবুজে ঢাকা এ মাঠটিকে এলাকাবাসী ডাকেন ‘জলে সবুজে ঢাকা’ নামে। এছাড়া স্কুলের মাঠগুলোতেও বাচ্চাদের খেলতে দেখা যায়। চৌধুরী পাড়া শিশু পার্কেও পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটির বিকেল কাটান অনেকেই।
ধর্মীয় উপাসনালয়
খিলগাঁওয়ের মসজিদগুলোর মধ্যে মাটির মসজিদ, খিলগাঁও শাহী মসজিদ, তিলাপাড়া জামে মসজিদ প্রসিদ্ধ। ঈদের জামাতের জন্য খিলগাঁও বাসী সাধারণত খিলগাঁও ঈদগাহ মসজিদকেই বেছে নেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এ এলাকার সবচেয়ে নিকটবর্তী মন্দিরটি হলো পার্শ্ববর্তী এলাকা নান্দিপাড়ার বুড়া বুড়ি আশ্রম মন্দির।
আশপাশের এলাকা
ঢাকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা খিলগাঁওয়ের আশেপাশে। এলাকার উত্তর দিকে রামপুরা, আফতাব নগর এবং বাড্ডা। আর দক্ষিণ দিকে রয়েছে বাসাবো, সবুজবাগ, মতিঝিল এবং মুগদা। দক্ষিণ পূর্বে আছে গোরান। পশ্চিমে রয়েছে শাহজাহানপুর, রাজারবাগ এবং মালিবাহ। সব মিলিয়ে খিলগাঁওয়ের অবস্থান এমন জায়গায় যেখান থেকে ঢাকা শহরের যেকোনো জায়গায় সহজে যাতায়াত করা যায়।
জীবনযাপন
খাবার ও রেস্টুরেন্ট
ঢাকা শহরে ‘বাইরে খেতে যাওয়া’র সংস্কৃতিতে পুরোপুরি ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে খিলগাঁও। রকমারি খাবারই শুধু নয়, দামেও বৈচিত্র পাবেন খিলগাঁওয়ের রেস্তোরাঁগুলোর খাবারে। অল্প বাজেটে যেমন এখানে খাওয়া সম্ভব তেমনি সম্ভব বিলাসী ভুরিভোজও।
আপন কফি হাউজ ও পপাই’স শহরে প্রথম কোল্ড কফির প্রচলন শুরু করে। রুফটপ ডাইনিং রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে খিলগাঁওয়ের দ্য রুফটপের খ্যাতি রইয়েছে শহরজুড়ে। সাশ্রয়ী দামে খাবার খেতে চাইলে রয়েছে কালার ক্যাফে।আবার ব্যাংকুয়েট মিলের জন্য রয়েছে ভূতের আড্ডা। আর যারা বিয়েবাড়ির খাবার ভীষণ পছন্দ করেন, তারা ঢুঁ মারতে পারেন ট্রেডিশনাল বিডিতে। এছাড়া গ্রিল ও চাপের ভক্তদের জন্য খানাড্ডা হতে পারে দারুণ অপশন। এবার আসি ফাস্টফুডে! বার্গারপ্রেমীরা চোখ বন্ধ করে বেছে নিতে পারেন মিস্টার বার্গারের জ্যুসি-মশলাদার বার্গার। আর পাস্তা, পিজ্জা, স্যুপ এবং রাইস মিল খেতে চাইলে আলফ্রেসকো তো রয়েছেই। এমনকি স্ট্রিট ফুডের সমাহারের জন্যও খিলগাঁও বিখ্যাত। এখানকার ফুচকার স্বাদ একবার না খেলেই না!
কেনাকাটা
খিলগাঁওয়ের কথা বলতে গেলে শুরুতেই আসে তালতলা মার্কেটের নাম। স্বল্প দামে এমব্রয়ডারি, পোশাক-আশাক এবং হাউজহোল্ড আইটেম পাওয়া যায় বলে সারা শহরে এটি বিখ্যাত। এর পাশের তালতলা বাজারে সস্তায় পাবেন বিভিন্ন ধাতুর, প্লাস্টিকের এবং মাটির তৈরি তৈজসপত্র। খিলগাঁও পাকা জামে মসজিদ মার্কেটও বেশ প্রসিদ্ধ। নিত্যদিনের বাজারের জন্য খিলগাঁও রেলগেটের পার্শ্ববর্তী কাঁচা বাজারে যান এলাকাবাসী। আর স্বপ্ন সুপারশপের আউটলেটও রয়েছে এখানে। এছাড়াও বাটা, প্রিয়, কিডস অ্যান্ড মমস এবং লন্ডন এক্সক্লুসিভের আউটলেট পাবেন খিলগাঁওতে।