একনজরে দক্ষিণখান
দক্ষিণখান সম্পর্কে
উত্তর দিকে গাজীপুর তথা টঙ্গী, দক্ষিণ দিকে খিলক্ষেত, পশ্চিম দিকে উত্তরা আর এয়ারপোর্ট, এর মাঝখানে থাকা বিশাল এলাকাটিই দক্ষিণখান। এই কিছুদিন আগ পর্যন্তও এটি ছিল মূলত একটি ইউনিয়ন পরিষদ যার নাম ছিল দক্ষিণখান আদর্শ ইউনিয়ন পরিষদ। সুপরিকল্পিত নগরায়নের সাথে সাথে উত্তরার বিকাশ ঘটলে একই সাথে বিকাশ ঘটে দক্ষিণখান এলাকাটির। ২০০৬ সালে এই এলাকায় দক্ষিণখান থানা প্রতিষ্ঠিত হয় যার নামকরণ করা হয় পূর্বের দক্ষিণখান ইউনিয়ন পরিষদের নামেই। মোটামুটি একই সময় থেকেই এলাকায় রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট শুরু হয়েছে এবং বিগত ১০-১৫ বছরে তা ধারণ করেছে অনন্য মাত্রা। এই এলাকার অভ্যন্তরীণ এবং অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও চমৎকার। দক্ষিণখান সরাসরি কয়েকটি রাস্তা দিয়ে আব্দুল্লাহপুর, উত্তরার বিভিন্ন সেক্টর এবং এয়ারপোর্টের সাথে সংযুক্ত। সব মিলিয়ে দিনে দিনে দক্ষিণখানে আবাসন চাহিদা বাড়ছে বৈ কমছে না।
দক্ষিণখান এলাকা সম্পর্কে বিস্তারিত
আবাসিক এলাকা হিসাবে দক্ষিণখান
দক্ষিণখান এলাকাটি অনেকটাই গড়ে উঠেছে উত্তরা গড়ে উঠার সাথে সাথে। এখানে দৈনন্দিন জীবনযাপনের খরচ অনেকটাই কম। এজন্যই মধ্যবিত্তের বসবাসের জন্য জনপ্রিয় এলাকা দক্ষিণখান। বেশ ভাল সুযোগসুবিধাসহ ভাড়া কিংবা বিক্রির জন্য বাজেটের মধ্যে ভাল ভাল সব অ্যাপার্টমেন্ট মেলে এই এলাকায়। সমস্ত দক্ষিণখানই বসবাস উপযোগী। আছে আবাসিকভাবে গড়ে উঠা রিয়েল এস্টেট প্রজেক্ট। আবার নিজস্ব উদ্যোগে নির্মিত বাসাবাড়িও আছে অনেক। দক্ষিণখান এলাকার অনেক বড় একটি বৈশিষ্ট্য হল এখানকার তুলনামূলক সহনীয় বাসা ভাড়া, যে কারণে মধ্যবিত্তের প্রিয় এলাকা এটি। আর সুলভ মূল্যে নিত্য দিনের কেনাকাটা করতে চাইলে আছে বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার যেখান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু মিলবে ন্যায্য দামে। দক্ষিণখানে সব ভবনই সুউচ্চ নয়, বরং অনেক ভবনই ১ তলা থেকে ৩ তলার মধ্য হয়ে থাকে। আর এমন বাসায় দেখা যায় মোটামুটি সবাই সবাইকে চেনে। ফলে এখানকার মানুষের মধ্যে দেখা যায় চমৎকার সামাজিক বন্ধনের বিষয়টি।
দক্ষিণখানে প্রপার্টি
দক্ষিণখানে মানুষের কোলাহল লেগে থাকে সারাদিনই। মেইন রোডগুলো থাকে মানুষের পদচারনায় মুখোরিত। এটি মূলত একটি আবাসিক এলাকা। তেমন অফিস বা অন্যান্য সংস্থা নেই। তবে মেইন রোডগুলোতে আছে বেশ কিছু ব্যাংকের ব্রাঞ্চ। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পূবালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ইত্যাদি। এটি এমন একটি ব্যস্ত এলাকা যেখানে নিত্যদিনের সব ধরণের পণ্য মেলে সহজেই। প্রায় প্রতি গলিতেই রয়েছে কোন না কোন মুদির দোকান। এছাড়া যে কোন ধরণের দোকান হোক তা বৈদ্যুতিক সামগ্রী, কোন কিছু মেরামত, কাঠের জিনিস মেরামত বা তৈরি, কাঁচের জিনিস, বাড়ি নির্মাণ সামগ্রী কিংবা টিভি, ফ্রিজ বা এসি মেরামত, সবই পেয়ে যাবেন হাতের কাছেই। এই এলাকায় প্রপার্টির চাহিদাও অনেক। অনেকেই বিপ্রপার্টির কাছে দক্ষিণখানে প্রপার্টি সম্পর্কে তথ্য জানতে চান। বিপ্রপার্টির ওয়েবসাইটেও তাই লিস্টেড আছে দক্ষিণখানের অসংখ্য প্রপার্টি।
যাতায়াত ব্যবস্থা
কোন একটি এলাকার অন্যতম বড় বিষয় হল সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। যদিও সেক্টরের বাইরে থাকা এলাকাগুলোর রাস্তাঘাটের অবস্থা যে একদম চমৎকারতা বলা যাবে না, বরং রাস্তাঘাটের অবস্থা অনেকক্ষেত্রেই বেশ নাজুক। তবে ব্যাপার যদি হয় যানবাহনের সহজলভ্যতা এবং চলাচলের পথ তথা রুট নিয়ে, তবে উত্তরার পাশেই এই এলাকাটি চমৎকার। এয়ারপোর্টের উল্টোপাশ দিয়ে ঢুকে যাওয়া আশকোনা হাজীক্যাম্প রোড, চার নম্বর সেক্টরের পিছে থাকা কসাইবাড়ি রেলগেট দিয়ে চলে যাওয়া শহীদ লতিফ রোড, ছয় নম্বরের আজমপুর রেলগেট দিয়ে শাহ কবীর মাজার রোড এবং একদম উত্তরে থাকা আব্দুল্লাহপুর - আটিপাড়া রোড, এই চারটি রাস্তাই দক্ষিণখানের চারটি মেইন রোড হিসেবে বিবেচিত।
দক্ষিণখানে থাকার একটি অন্যতম ভাল দিক হল, সমগ্র এলাকাজুড়ে এবং অন্য এলাকার সাথেও অতি চমৎকার যাতায়াত ব্যবস্থা। দক্ষিণখানের অভ্যন্তরে রাস্তাগুলো খুবই চমৎকারভাবে আশেপাশের সব এলাকা এবং অভ্যন্তরীণভাবে সংযুক্ত। এলাকার অভ্যন্তরের প্রতিটি রাস্তাতেই আছে রিকশার চলাচল। মেইনরোডগুলোতে আছে ব্যাটারীচালিত অটোরিকশার সার্ভিস।
দক্ষিণখানের সাথে আশকোনা হাজীক্যাম্প হয়ে এবং সেক্টরের কসাইবাড়ী রেলগেট হয়ে চমৎকার যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে। চলে রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এছাড়া এই এলাকার সাথে উত্তরা ছয় নম্বর সেক্টর এবং আব্দুল্লাহপুরেরও রয়েছে চমৎকার যোগাযোগ। এর পাশাপাশি সব এলাকাতেই চলে সিএনজি, উবার, পাঠাওএর মত অ্যাপে বা ভাড়ায় চালিত যানবাহন। অর্থাৎ গণপরিবহন বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টের কোন অভাবই নেই দক্ষিণখানে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
হাই স্কুল কিংবা কলেজের জন্য দক্ষিণখানের ছাত্রছাত্রীরা মূলত উত্তরামুখী হয়ে থাকে। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, উত্তরা হাই স্কুল, মাইলস্টোন, স্কলাস্টিকা, আগা খান স্কুল সবই উত্তরাতে আছে। তবে এখানেও গড়ে উঠেছে বেশ কিছু কিন্ডারগার্ডেন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়। আশকোনা, গাওয়াইর, ফায়দাবাদ, গোলটেক ইত্যাদি এলাকায় দেখা মেলে বেশ কিছু স্কুলের। এছাড়া এই এলাকাতে আছে বেশ কিছু মাদ্রাসাও।
চিকিৎসা সুবিধা
চিকিৎসার জন্য ছোট ছোট কিছু স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, ক্লিনিক আছে দক্ষিণখানে। আছে আর্ক হসপিটাল, কে সি হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টার ইত্যাদি। এছাড়া উত্তরার একদম কাছেই হওয়াতে সেখানকার সবধরনের চিকিৎসা সুবিধা উপভোগ করতে পারেন দক্ষিণখানবাসী। আর ওষুধপত্রের প্রয়োজন পড়লে সমগ্র এলাকাজুড়েই আছে ওষুধের দোকান বা ফার্মেসী।
ধর্মীয় উপাসনালয়
ঢাকার অন্যান্য এলাকার মতই দক্ষিণখান এলাকাতেও হিন্দু মুসলিমসহ সব ধর্মাবলম্বী মানুষ বাস করে মিলেমিশে। সমস্ত এলাকাতেই আছে অসংখ্য মসজিদ তাই কোন ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীকে মসজিদ খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় না। এরমধ্যে কয়েকটি হল চেয়ারম্যান বাড়ি মসজিদ, হাজী ক্যাম্প মসজিদ, মোল্লারটেক সেন্ট্রাল মসজিদ, ইত্যাদি। বিখ্যাত স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমের নকশায় নির্মিত এবং আগা খান পুরষ্কারপ্রাপ্ত বায়তুর রউফ মসজিদও আছে দক্ষিণখান সংলগ্ন এলাকাতেই। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য একেবারে দক্ষিণখানেই কোন মন্দির বা চার্চ ইত্যাদি না থাকলেও তারা সহজেই উত্তরা ও সংলগ্ন অন্যান্য এলাকার উপাসনালয় ব্যবহার করতে পারেন।
আশপাশের এলাকা
দক্ষিণখানের উত্তর দিকে আছে তুরাগ নদ, যার ওপারেই গাজীপুর তথা টঙ্গী। দক্ষিণ দিক খিলক্ষেত বেষ্টিত। পশ্চিম দিকে আছে ব্যস্ত উত্তরা আর এয়ারপোর্ট থানা এলাকা। আর পূর্ব দিকে বিস্তীর্ণ ফাঁকা এলাকা যার পরেই শুরু হয়েছে ভবিষ্যতের ঢাকা পূর্বাচল প্রকল্পের। অন্য সব দিক বাদে মূলত পশ্চিম দিকের সাথে দক্ষিণখানের যোগাযোগ সবচেয়ে ভালো। উত্তরার ৬ নম্বর আর ৪ নম্বর সেক্টরের পর এয়ারপোর্ট রেলওয়ে স্টেশনের কাছে গিয়ে আছে মহা ব্যস্ত ঢাকা - ময়মনসিংহ হাইওয়ে বা নিউ এয়ারপোর্ট রোড।
দক্ষিণখানে জীবনযাপন
খাবার ও রেস্টুরেন্ট
তেমন নামকরা ক্যাফে রেস্টুরেন্ট না থাকলেও রেস্টুরেন্ট অথবা খাবারের দোকান খুঁজে পেতে দক্ষিণখান বাসিন্দাদের কখনোই খুব বেশি বেগ পেতে হয়না। কারণ বিভিন্ন ছোটখাট খাবারের দোকান এবং স্ট্রিটফুডের সমাহার আছে এই এলাকায়। সিপি ফুডের মত ছোট ছোট বিভিন্ন ফুড চেইনও আছে এই এলাকায়। আছে বেশ কিছু মিষ্টির দোকান। সব মিলিয়ে বেশ কিছু খাবারদাবারের অপশন আছে দক্ষিণখানে।
কেনাকাটা
প্রাত্যহিক কেনাকাটার জন্য অসংখ্য জেনারেল স্টোর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দক্ষিণখান এলাকাতে। এলাকার মানুষজন কেনাকাটার জন্য কাছেই বিভিন্ন কাঁচা বাজারে যেতে পারেন যেখানে টাটকা শাকসবজি তরিতরকারি পাওয়া যায়। দক্ষিণখান কাঁচাবাজার এজন্য বিখ্যাত।