দক্ষিণ মিরপুর এলাকার বিস্তারিত
একনজরে দক্ষিণ মিরপুর
ঢাকা শহরের মাঝে ৫৮ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি জায়গাজুড়ে আছে মিরপুর এলাকা। আর এই মিরপুরে বসবাস করে ৬ লক্ষেরও বেশি মানুষ। মিরপুরকে বাকি ঢাকার সাথে সংযুক্ত করে মূলত দুটি মেইন রোড। বেগম রোকেয়া সরণী চলে গিয়েছে মিরপুরের মাঝ বরাবর এবং মিরপুর রোড সংযুক্ত করেছে পুরান ঢাকার সাথে মিরপুরকে। এই দুই সরণীকে দুপাশে রেখে আমরা যদি মাঝখানে একটি জায়গা কল্পনা করি তাহলে মিরপুরের একটি বিশাল অংশকে দেখতে পাবো, যাকে অনেকভাবেই দক্ষিণ মিরপুর হিসেবে কল্পনা করা যায়। এই বিশাল অংশের মধ্যে যে ছোট ছোট এলাকাগুলো আছে সেগুলো হল, তালতলা, জনতা হাউজিং, পশ্চিম কাফরুল, পশ্চিম শেওড়া পাড়া, পশ্চিম কাজীপাড়া, দক্ষিণ মণিপুর, মণিপুর, সেনপাড়া পার্বতার কিছু অংশ, বড়বাগ, পীরেরবাগ, শিমুলতলা, দক্ষিণ পাইকপাড়া, মধ্য পাকিপাড়া, আহমেদনগর, শাহ আলী বাগ, মিরপুর ১, এবং টোলারবাগ।
মূলত আবাসিক এলাকা হওয়ায় এই বিশাল অঞ্চলে অগণিত মানুষের বাস। তবে কিছু বাণিজ্যিক এবং শিল্প এলাকার দেখাও মেলে মেইন রোডের সংলগ্ন এলাকায় এই এলাকার মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া অন্য দুটি রাস্তাও বেশ বিখ্যাত, দাস-উস-সালাম রোড এবং কামাল সরণী যা ৬০ ফিট রোড নামেই বেশি পরিচিত। ঢাকার বিখ্যাত গাবতলীর লাগোয়া হওয়ায় এর অন্যরকম একটি মূল্য আছে।
দক্ষিণ মিরপুর এলাকা সম্পর্কে
আবাসিক এলাকা হিসাবে দক্ষিণ মিরপুর
এই এলাকাটি ঢাকার অন্যতম পুরানো এবং মধ্যবিত্ত প্রধান এলাকা। ব্যস্ত জীবন, মুখরোচক স্টিরট ফুড এবং বাহারী রাস্তা নিয়ে এই এলাকা আপনাকে বরণ করে নেবে। এ যেন গল্পে নাটকে আমরা যে ঢাকাকে দেখি সেই ঢাকার বাস্তব উপস্থিতি!
মিরপুর দক্ষিণে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া খুব সাশ্রয়ী মূল্যের এবং এই অ্যাপার্টমেন্টগুলির সাথে আসা অন্যান্য সুযোগ সুবিধাগুলি খরচের তুলনায় বেশ মানানসই। এই অঞ্চলে প্রত্যেকের জন্যই কিছু না কিছু রয়েছে। মানুষ এই এলাকায় সাধারণত সাশ্রয়ী মূল্যের অ্যাপার্টমেন্টগুলির সন্ধান করে। মিরপুর -১ এবং পশ্চিম শেওড়াপাড়ার মতো জায়গাগুলো এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে দুটি প্রধান রাস্তার সাথে সংযুক্ত হওয়ায় বেশ ভালো চাহিদা সম্পন্ন। এই অঞ্চলে সুপার শপ সহ অসংখ্য প্রায় সবধরনের দোকান ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে এলাকার বাসিন্দারা প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে পারেন।
দক্ষিণ-মিরপুরে প্রপার্টি
মিরপুর দক্ষিণের রাস্তা বা গলি, সব সময়ই থাকে মুখর, থাকে মানুষ, দোকানপাট, গাড়ি, বাস বা রিকশায় পরিপূর্ণ। মিরপুর দক্ষিণের প্রধান সড়ক দুটি হল মিরপুর রোড এবং বেগম রোকেয়া সরণী, যেখানে আছে বিভিন্ন ব্যাংক, হাসপাতাল, কর্পোরেট অফিস, রেস্তোঁরা, শোরুম, ব্র্যান্ড আউটলেট, সুপার শপ এবং আরএমজি কারখানাগুলো। দরিস সালাম রোড এবং ৬০ ফিট রোডের এলাকার মাঝামাঝি দিয়ে চলে যাওয়া দুটি ব্যস্ত রাস্তা। এখানেও ব্যাংক, অফিস, রেস্তোঁরা এবং ব্র্যান্ডের দোকান রয়েছে অসংখ্য। এই রাস্তাগুলোতে বেশিরভাগ বাণিজ্যিক এবং শিল্প স্থাপনাগুলো রয়েছে। অনেকগুলি বিজনেস স্টার্টআপও মিরপুর দক্ষিণে অবস্থিত যা মূল্য কারণ এই অঞ্চলের তুলনামূলক সাশ্রয়ী ভাড়া। তবে মিরপুরের অন্যান্য অংশের মতো এই অঞ্চলও বেশিরভাগই আবাসিক স্থাপনায় পূর্ণ। বেশিরভাগ আবাসিক ভবনেই প্রচুর মানুষ থাকেন যা এরকম এলাকার জন্য স্বাভাবিক।
যাতায়াত ব্যবস্থা
মিরপুরের এই অংশের সবচেয়ে বড় একটি সুবিধা হল বাকি ঢাকার সাথে এর চমৎকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই এলাকা থেকে ঢাকার যে কোন অঞ্চলে আছে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা। মিরপুর রোড ধরে আপনি যেতে পারবেন পান্থপথ, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, আজিমপুরসহ আরও দক্ষিণে। অন্যদিকে গেলে পৌঁছে যাবেন মিরপুর ১০নং গোল চত্বরে। আবার বেগম রোকেয়া সরণী ধরে যেতে চাইলে যাওয়া যাবে খামারবাড়ি, মনিপুরীপাড়া, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, তেজগাঁও, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গুলিস্তান, এবং মতিঝিল এলাকায়।.
এরপর আসে ৬০ফিট রোড আর দারুস সালাম রোডের কথা। দক্ষিণ মিরপুরের অভ্যন্তরীণ যাতায়াতের জন্য এই রাস্তা দুটি চমৎকার। উত্তরবঙ্গে যেতে চাইলে ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ত ও জনপ্রিয় এলাকা হল শ্যামলী ও গাবতলী, দুটিই মিরপুরের এই এলাকার কাছেই অবস্থিত। এছাড়া ম্যাস-রাপিড-ট্রানজিট বা এম-আর-টি এর লাইন ৬ ও লাইন ৫ নির্মিত হচ্ছে এই এলাকা ঘিরেই। লাইন ৬ ধরে সহজে যাওয়া যাবে উত্তরা, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, তেজগাঁও, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গুলিস্তান, এবং মতিঝিল এলাকায় আর লাইন ৫ দিয়ে চলাচল করা যাবে গুলশান, বনানী, বসুন্ধরায়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
মিরপুর দক্ষিণে এমন অনেক স্কুল ও কলেজ রয়েছে যা এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীকে উন্নত মানের শিক্ষা প্রদান করতে ভূমিকা রেখে চলেছে। জাতীয় এবং ব্রিটিশ উভয় পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা স্কুল আছে এখানে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্কুলের মধ্যে রয়েছে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এবং মিরপুর -১ এর মেথোডিস্ট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। আশেপাশেই রয়েছে অসংখ্য শীর্ষমানের স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়। যেমন স্কলাস্টিকা মিরপুর, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (বিইউপি) এবং মিলিটারি ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বা এম.আই.এস.টি। উচ্চশিক্ষার জন্য মিরপুর দক্ষিণে বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বেগম রোকেয়া সরণীস্থ গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়, মিরপুর -১ এর দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় এবং গাবতলির ইউরোপীয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
চিকিৎসা সুবিধা
মিরপুর দক্ষিণে অসংখ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ফার্মেসী রয়েছে। এই অঞ্চলে বিশেষ বিশেষ হাসপাতালের মধ্যে আছে টোলারবাগের ডেল্টা হাসপাতাল, গাবতলির সেলিনা জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এবং মিরপুর রোডে সেকশন-২ এর বিপরীতে হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল । কাছাকাছি অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে এক্সিম ব্যাংক হাসপাতাল, মার্কস মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল। মিরপুর দক্ষিণে বিখ্যাত ফার্মেসি লাজ ফার্মার দুটি শাখা রয়েছে, একটি দারুস সালাম রোডে এবং অপরটি ৬০ ফুট রোডে।
চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা
মিরপুর দক্ষিণে, আপনি ঢাকা শহরের বেশকিছু আইকনিক ল্যান্ডমার্ক খুঁজে পাবেন। বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানাটি মিরপুর -১ এ অবস্থিত যার আলাদা করে কোন ভূমিকার প্রয়োজন নেই। ১৯৭৮ সালে নির্মিত বাংলাদেশের বৃহত্তম চিড়িয়াখানা এটি এবং প্রতিদিন প্রায় ১০,০০০ দর্শনার্থীর সমাগমে মুখ্র থাকে সমগ্র এলাকা। চিড়িয়াখানার ঠিক পাশেই রয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় বোটানিকাল গার্ডেন, যেখানে প্রায় ৫০,০০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে। মিরপুর দক্ষিণের আরও একটি ইন্টারেস্টিং জায়গা হল টাকা জাদুঘর যা দর্শনার্থীদের কৌতূহলী করে তোলে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশিক্ষণ একাডেমির প্রথম তলায় অবস্থিত। যাদুঘরে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সময়কাল থেকে আজ পর্যন্ত থাকা প্রচুর মুদ্রা এবং নোট প্রদর্শিত হয়।
মসজিদ ও উপাসনালয়
ধর্ম দেশের বেশিরভাগ মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, এ কারণেই মিরপুরের এই অঞ্চলে সমস্ত ধর্মের লোকদের জন্য ধর্মীয় সুবিধা রয়েছে। মুসলিম বাসিন্দারা এই অঞ্চলে মসজিদগুলি খুঁজে পেতে কোনও অসুবিধায় পড়েন না, প্রতি পাড়ায় কমপক্ষে একটি মসজিদ রয়েছে। মিরপুর -১ এর মসজিদ আল কুয়েত আল কবির ঢাকার বৃহত্তম মসজিদগুলির মধ্যে একটি। হিন্দু বাসিন্দারা খুঁজে পাবেন, মন্দির। মিরপুর দক্ষিণে কোনও বৌদ্ধ মন্দির না থাকায় যেতে হবে অবশ্য মিরপুর ১৩-তে, যেখানে শাক্যমুনি বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে। মিরপুর দক্ষিণে খ্রিস্টধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুসারীদের জন্য কয়েকটি গীর্জা রয়েছে। মিরপুর -১ এর মেথোডিস্ট চার্চ এবং বড়বাগের আওয়ার লেডি কুইন অফ অ্যাপস্টেলস চার্চ এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
আশপাশের এলাকা
মিরপুর দক্ষিণ একটি বিশাল অঞ্চল, তাই এটি অনেকগুলি অঞ্চলের সাথে পাশাপাশি অবস্থান করছে। দক্ষিণ-পশ্চিমে আছে গাবতলী, কল্যাণপুর এবং শ্যামলী। মিরপুর দক্ষিণের দক্ষিণ দিকে পড়েছে আগারগাঁও এবং শের-ই-বাংলা নগর, যেখানে অসংখ্য মন্ত্রণালয়, সরকারী সংস্থা এবং গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে। বেগম রোকেয়া সরণীর পূর্বদিকে আছে মিরপুর পূর্ব, এর মধ্যে সেনপাড়া পর্বতা, মিরপুর ১৪, পূর্ব মণিপুর, পূর্ব কাজিপাড়া, পূর্ব শেওড়াপাড়া, ইব্রাহিমপুর এবং কাফরুলের বেশকিছু অংশ রয়েছে। উত্তরে মিরপুর সেকশন -১, সেকশন -২, সেকশন-৬, সেকশন -১০ এর অবস্থান। মিরপুর দক্ষিণের চমৎকার যাতায়াত সুবিধার কারণে, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, মহাখালী, বনানী, এমনকি গুলশানের মতো অঞ্চলগুলিও খুব বেশি দূরের বলে মনে হয় না।
মিরপুর-দক্ষিণে জীবনযাপন
খাবার এবং রেস্টুরেন্ট
মিরপুর দক্ষিণের প্রাণবন্ততা তার খাবারের বাহার আর দৃশ্য দেখলেই স্পষ্ট হয়ে উঠে। এখানে প্রত্যেকে ভোজনরসিকের জন্যই কিছু না কিছু আছে। মিরপুর -১ তো রাস্তার খাবার বা স্রট্রিট ফুডের জন্য বিখ্যাতই। ৬০ ফিট রোডে অদ্ভুত কিছু ছোট ছোট খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে আপনি বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেতে পারেন এবং দুর্দান্ত সময় কাটাতে পারেন। এই রেস্তোঁরাগুলিতে মমো থেকে শুরু করে ফ্রাইড চিকেন সবই পাওয়া যায়! মিরপুর রোডে কয়েকটি ইন্টারেস্টিং খাবারের জায়গা রয়েছে যা বাংলাদেশী স্টাইলে থাই এবং চাইনিজ খাবার পরিবেশন করে। এটি হতে পারে যা পারিবারিক নৈশভোজ অর্থ্যাৎ ডিনারের জন্য চমৎকার। মিরপুর দক্ষিণে স্থানীয় খাবার দাবারের সাথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সুস্বাদু সকালের নাস্তা এবং দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা। আপনি যাই খেতে ইচ্ছে করুক না কেন, মিরপুর দক্ষিণের রেস্তোঁরা এবং খাওয়ার দোকানগুলি তা আপনাকে সরবরাহ করতে পারবে!
শপিংএর গন্তব্য
আপনি শপিংয়ের কথা ভাবলে হয়ত এই এলাকাটির কথা আপনার মাথায় প্রথমেই আসে এমন না। তবে মিরপুর দক্ষিণে কেনাকাটা করার মতো অনেক জায়গা আসলে রয়েছে। আপনি যদি শপিংমলগুলি সন্ধান করেন, দারুস সালাম রোডে ক্যাপিটাল টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্স রয়েছে, এখানে আপনি পোশাক, জুতা এবং অন্যান্য সমস্ত জিনিস পাবেন যা এরকম একটি জায়গায় আশা করা যায়। আবার প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, হার্ডওয়্যার স্টোর এবং ইলেকট্রনিক্সের দোকানও খুঁজে পাবেন এই অঞ্চলজুড়ে একাধিক স্থানে। এই অঞ্চলে দৈনিক
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ এমন কয়েকটি সুপার শপ রয়েছে, বেগম রোকেয়া সরণির উপর ডেইলি সুপার শপ এবং কৃষিবিদ সুপার শপ, ৬০ ফিট রোডের গ্রেস সুপার শপ এবং মিরপুর -১ এর স্বপ্ন তার উদাহরণ।