ধানমন্ডি এলাকার বিস্তারিত
একনজরে ধানমন্ডি
ধানমন্ডির প্রতিটি স্থানই যেন একজন ব্যক্তির হৃদয় ও মনের গভীরে জায়গা করে নেয় খুব সহজেই। একসময়ের শান্ত ও স্নিগ্ধ অঞ্চলটি রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে ইদানীং। এটি এমন একটি অঞ্চল যেখানে মানসম্মত শিক্ষা, সুস্বাদু খাবার, অত্যাধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, নির্মল পরিবেশের সাথে সৌন্দর্য, আড়ম্বরপূর্ণ বাড়ীঘর এবং সমৃদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র, সবই রয়েছে খুবই কাছাকাছি। ধানমন্ডি ঢাকার পুরাতন ও নতুন অংশের মধ্যে সংযোগকারী একটি এলাকা হিসেবে কাজ করে। এই এলাকাটি শহরের মানুষের জীবনের জন্য বহু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসকে ধারণ করে। আজ ধানমন্ডি সমগ্র দেশের অন্যতম সাজানো এবং মূল্যবান অঞ্চল হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
ধানমন্ডি এলাকা সম্পর্কে
আবাসিক এলাকা হিসাবে ধানমন্ডি
ধানমন্ডি অঞ্চলটি ১৯৫০ এর দশকে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার একটি আবাসিক অঞ্চল হিসাবে গড়ে তুলেছিল যা উচ্চ এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত নাগরিকদের একটি সুপ্রশস্থ এবং আরামদায়ক জীবনযাত্রার ব্যবস্থা করবে। এই অঞ্চলটি গত কয়েক দশকে আবাসিক-বাণিজ্যিক সব প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে একটি হাইব্রিড জোনে পরিণত হয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষের কখনই স্বাচ্ছন্দ্য ও সুবিধার অভাব হয়নি। অভ্যন্তরীণ প্রতিটি রাস্তাতেই অগণিত সংখ্যক বাড়ি ও প্রপার্টি রয়েছে যা একটি আরেকটির চাইতে চেয়ে ভাল। ধানমন্ডি এলাকার অ্যাপার্টমেন্টগুলি, বিশেষত ধানমন্ডি লেকের আশেপাশেরগুলি প্রায় প্রতিটিই অনন্য বৈশিষ্ট্যযুক্ত এবং অত্যন্ত দামী। সমগ্র ধানমন্ডি অঞ্চলটিই নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ।
ধানমন্ডিতে প্রপার্টি
সহস্রাব্দের সূচনালগ্ন থেকেই ধানমন্ডি ঢাকার একটি বিস্তৃত ব্যবসায়ের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই অঞ্চলটিতে বেশ কয়েকটি বড় ব্যাংক, এনবিএফআই, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের হেড অফিসের পাশাপাশি বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রপার্টি রয়েছে। এসবের বেশিরভাগই ধানমন্ডির কেন্দ্রীয় সড়ক, সাতমসজিদ রোডকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা। ঢাকার প্রায় সব রেস্টুরেন্টই ধানমন্ডিতে একটি ব্রাঞ্চ ওপেন করাকে সাফল্যে হিসাবে বিবেচনা করে। তাই নিয়মিতভাবে এলাকায় বিভিন্ন রেস্তোঁরা দেখতে পাওয়া যায়। ধানমন্ডি আরও বিখ্যাত বিবাহ ও অন্যন্য আচার অনুষ্ঠানের জন্য কমিউনিটি সেন্টারের প্রাচুর্যের কারণে। ধানমন্ডিতে দুই ধরণেরই রিয়েল এস্টেট প্রপার্টির প্রাচুর্য থাকায় কোনও সন্দেহ ছাড়াই অঞ্চলটি ঢাকার একটি শীর্ষ অঞ্চল হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।
যাতায়াত ব্যবস্থা
ধানমন্ডির একটি সেরা দিক হল এটি প্রায় একটি স্বনির্ভরশীল অঞ্চল যেখানে কোনও গন্তব্য খুব বেশি দূরে নয়। এই অঞ্চলের সমস্ত প্রধান স্থাপনাগুলি সবই খুব নিকটে অবস্থিত। এলাকায় চলাচলকারী হাজার হাজার রিকশায় যে কোনও স্থানে দ্রুত এবং সহজেই পৌঁছানো যায়। শহরের অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত থাকতে প্রচুর পাবলিক বাস পাওয়া যায় যা সাতমসজিদ রোড ও মিরপুর রোড ধরে ধানমন্ডিকে লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, নিউমার্কেট, আগারগাঁও, শ্যামলী, মিরপুর এবং কল্যাণপুরের সাথে সংযুক্ত করে। তদুপরি, শাহবাগ সড়কটি পরোক্ষভাবে গণপরিবহনের মাধ্যমে মালিবাগ, কাকরাইল, মতিঝিল এবং গুলিস্তানের সাথে সংযুক্ত করে ধানমন্ডিকে। এর ফলে সংযোগের একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক তৈরি হয় যা ঢাকার বেশিরভাগ অঞ্চলেই নেই।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
ঢাকা শহরের মাঝে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমাহার আছে ধানমন্ডিতেই। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে উচ্চমানের শিক্ষাপ্রদান করতে পারে এদের সবগুলোই। ঢাকার প্রাচীনতম বিদ্যালয়ের একটি গবর্মেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, সিটি কলেজ, সানিডেল, স্কলাস্টিকা, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের মত প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার সন্তানকে দিতে পারে সুশিক্ষার খোঁজ। অন্যদিকে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বা ইউল্যাব, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির মত প্রতিষ্ঠানে মেলে উচ্চশিক্ষার সুযোগ। এছাড়া বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজের মত চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষার স্থানও রয়েছে। আর ধানমন্ডিতে আছে দেশের স্বনামধন্যও ঐতিহ্যবাহী স্পোর্টিং ক্লাব আবাহনী ক্রীড়া চক্র। ধানমন্ডির আরেকটি বিশেষ দিক হল এখানে ভীনদেশী ভাষা শিক্ষার জন্য গথে-ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ এবং অ্যালিয়াস ফ্রাসেস ডি ঢাকা-এর উপস্থিতি যেখান থেকে জার্মান, ফ্রেঞ্চের মত বিশ্বব্যাপী কথিত ভাষা শেখা সম্ভব।
চিকিৎসা সুবিধা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতই ধানমন্ডিতে প্রাপ্ত চিকিৎসা সুবিধাও অসাধারণ। শুধু ঢাকা নয় বরং দেশের নানান প্রান্ত থেকে মানুষজন ধানমন্ডিতে আছে সুচিকিৎসার আশায়। এই এলাকায় ৩০টিরও বেশি ডেন্টাল ক্লিনিক রয়েছে যে কোনধরণের দন্ত চিকিৎসার প্রয়োজন মেটাতে। আছে প্রয়োজনমাফিক সাধারণ এবং স্পেশালাইজড হাসপাতাল। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ইবনে সিনা হসপিটাল, মেডিনোভা, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হসপিটাল এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। বাংলাদেশের প্রাচীনতম এবং বিখ্যাত চোখের চিকিৎসাকেন্দ্র বাংলাদেশ আই হসপিটালের প্রধান শাখাও এখানেই, ধানমন্ডি ২৭ এ অবস্থিত। ঢাকার শীর্ষস্থানীয় ক্যান্সার হাসপাতাল, আনোয়ার খান মর্ডান ক্যান্সার হসপিটালও পাওয়া যাবে ধানমন্ডি ক্লাব মাঠের পাশেই।
পার্ক এবং চিত্তবিনোদনের স্থান
অসুখ করলে শরীর ভালো করার জন্য যদি থাকে চিকিৎসাকেন্দ্র তাহলে মনের সুস্থতার জন্য চাই পার্ক এবং চিত্তবিনোদনের স্থান। আর ধানমন্ডির শুধু বাসিন্দাই নয় বরং সারা ঢাকা শহরের মানুষের জন্যই মন ভালো করা একটি স্থানের নাম ধানমন্ডি লেক। এই লেক এবং এর চারিপাশে থাকা পার্ক হতে পারে ইট কাঠ পাথরের ঢাকা শহরের মাঝখানে প্রকৃতিকে উপভোগ করার স্থান। সকল বয়সের এবং শ্রেণীপেশার মানুষের দুদন্ড রিলাক্স মুহূর্ত কাটানোর জন্য ধানমন্ডি লেকের জুড়ি নেই। এর পাশেই লাগোয়া রবীন্দ্র সরোবর যা মানুষের উপস্থিতিতে থাকে সদা সরগরম। সঠিক সময়ে যেতে পারলে এখানে অনুষ্ঠেয় যে কোন মঞ্চ নাটক বা অনুষ্ঠানও উপভোগ করা সম্ভব।
মসজিদ ও অন্যান্য উপাসনালয়
ঢাকায় মোগল শাসনামল শেষ হয়েছে শতবর্ষ পূর্বেই কিন্তু মোগল স্থাপত্যশিল্পের নিদর্শন এখনো মেলে ঢাকার বিভিন্ন স্থানেই। এমনই একটি হল ধানমন্ডি ৬/এ তে অবস্থিত ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহ যা মোগল ঈদগাহ নামেও পরিচিত। ১৬৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকেই এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়া একই এলাকার মসজিদ-উল-তাকওয়াও ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশিল্পের সাথে আধুনিক স্থাপত্যেনকশার সম্মিলনের এক চমৎকার নিদর্শন।
আশপাশের এলাকা
ঢাকা শহরের মাঝে চমৎকার একটি স্থানে অবস্থান ধানমন্ডির। এর উত্তরে আছে মোহাম্মদপুর, শ্যামলী এবং কল্যাণপুর এলাকা, আরও দক্ষিণে গেলে দেখা মিলবে গাবতলীর। মিরপুর, ফার্মগেট, পান্থপথ আছে ধানমন্ডির পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বে। আর ঢাকার পুরাতন অংশ যেমন হাজারীবাগ, নওয়াবগঞ্জ, আজিমপুর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান পশ্চিম ও দক্ষিণ -পশ্চিমে।
ধানমন্ডিতে জীবনযাপন
খাবার এবং রেস্টুরেন্ট
অনেকেই ধানমন্ডিকে দেশের ভোজনস্বররগ বলে আখ্যায়িত করেন। বাংলাদেশের কিংবা বিদেশের সব খাবার ধানমন্ডিতে পাওয়া যায়, তা যে কোন ধরণের খাবারই হোক না কেন। রেস্টুরেন্টের ব্যসবার যে জমজমাট অবস্থা তা ধানমন্ডি থেকেই শুরু হয়েছিল একরকম এবং এরপর থেকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি কখনই। সাতমসজিদ রোড এবং ২ নং রোডের উপরে এবং নিচে পুরোটা জুড়েই রয়েছে রেস্টুরেন্ট আর খাবারের জায়গা। আর যদি কেউ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি স্ট্রিট ফুড উপভোগ করতে চান তবে ধানমন্ডি লেক অঞ্চলে সেই সুবিধাও রয়েছে।
আবাসিক হোটেল ও থাকার ব্যবস্থা
ধানমন্ডি ঢাকার অভ্যন্তরে একটি অতি ব্যস্ত বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক অঞ্চল। তবে পুরো অঞ্চল জুড়েই অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত হোটেল রয়েছে। তবে, বিদেশীদের জন্য অন্যান্য অস্থায়ী থাকার ব্যবস্থা যেমন গেস্ট হাউসগুলি কেবল পর্যাপ্তই নয় বরং যথেষ্ট উপযুক্ত এবং সুরক্ষিত। এই জায়গাগুলি তাদের জন্য উপযুক্ত হতে পারে যারা খুব বেশি অর্থ ব্যয় না করে আরামদায়ক থাকার ব্যবস্থা খুঁজে থাকেন।
কেনাকাটার গন্তব্য
সীমান্ত স্কয়ার, সীমান্ত সম্ভার, রাপা প্লাজা, এ.আর. প্লাজা এবং মেট্রো শপিং মল - ধানমন্ডির মধ্যে থাকা কয়েকটি দুর্দান্ত শপিংয়ের গন্তব্য। এই জায়গাগুলিতে স্থানীয় এবং বিদেশী উভয় ব্র্যান্ডের এক্সক্লুসিভ সংগ্রহ পাওয়া যায় ফলে তা এ নগরীর গ্রাহকদের মধ্যে প্রিয় স্থান হিসেবেই পরিচিত। সীমান্ত সম্ভার ভবনে স্টার সিনেমাপ্লেক্সের একটি শাখা রয়েছে যেখানে নতুন নতুন সব ফিল্ম দেখা যায় যারা কিছুটা রিল্যাক্স সময় কাটাতে চান, ধানমন্ডি লেকে কাটাতে পারেন একটি সুন্দর সকাল বা সন্ধ্যা, লেকে নেমে পড়তে পারেন নৌকা চালাতে।