একনজরে নিকুঞ্জ
এলাকা সম্পর্কে
একপাশে সুবিশাল বিমানবন্দরের রানওয়ে আর অন্যপাশে ঢাকা - ময়মনসিংহ হাইওয়ে এবং খিলক্ষেত অঞ্চল নিয়ে ঢাকার এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে চমৎকার সাজানো গোছানো আবাসিক এলাকা নিকুঞ্জ। এই এলাকাটি দুটি ভাগে বিভক্ত। দক্ষিণ দিকে, রানওয়ে বরাবর ছিমছাম এলাকাটি নিকুঞ্জ ১ এবং উত্তরে তুলনামূলক বেশি জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা নিকুঞ্জ ২। শহর থেকে কিছুটা বাইরে হওয়ায় ছিমছাম সাজানো গোছানো, কোলাহলমুক্ত একটি এলাকা হিসেবে সুনাম আছে এর। এয়ারপোর্ট রোডের সাথেই হওয়ায় বাকি ঢাকার সাথে আছে চমৎকার যোগাযোগব্যবস্থা। এলাকায় আছে বিলাসবহুল হোটেল এবং বিভিন্ন সরকারী বেসরকারি অফিসের উপস্থিতি। চলুন দেখে নেয়া যাক নিকুঞ্জ এলাকার বিস্তারিত।
নিকুঞ্জ এলাকা সম্পর্কে বিস্তারিত
যোগাযোগব্যবস্থা
অভ্যন্তরীণ এবং বহির্গামী, উভয় ধরণের যোগাযোগব্যবস্থার দিক দিয়েই নিকুঞ্জ একটি চমৎকার এলাকা। সমগ্র এলাকাই রিকশা দিয়ে চষে ফেলা সম্ভব। নিকুঞ্জ ১ এ আছে ১ থেকে ১০ নম্বর পর্যন্ত রোড যার মধ্যে ৯ ও ১০ নম্বর রোড এ, বি ও সি উপভাগে বিভক্ত। আর নিকুঞ্জ ২ এ আছে মোট ২১নম্বর পর্যন্ত রোড যার সিংহভাগই পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত। এছাড়া হাইওয়ের সমান্তরালে চলা সার্ভিস রোড বা ফ্রন্ট রোডও রয়েছে যেটি ব্যবহার করে ঢাকাগামী কিংবা ঢাকার বাইরে যাবার জন্য যে কোন ধরণের যানবাহন পাওয়া সম্ভব। এই ফ্রন্ট রোডেই রয়েছে বিলাসবহুল হোটেল এবং বেশিরভাগ অফিস। কুড়িল ফ্লাইওভারও নিকুঞ্জের এক পাশে অবস্থিত এবং এটি ব্যবহার করে পূর্বাচল, ৩০০ ফিট বা প্রগতি সরণি তথা রামপুরা বাড্ডা রোডে উঠা যায়। আর যোগাযোগব্যবস্থার কথা উঠলে সেখানে অবশ্যই আসবে দেশের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কথা যেটি নিকুঞ্জ থেকে খুবই কাছে অবস্থিত। এছাড়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পরিবহণ সংস্থা বিআরটিসির একটি ডিপোও আছে এই এলাকায়।
আবাসিক এলাকা হিসাবে নিকুঞ্জ
আবাসিক এলাকা হিসেবে নিকুঞ্জ ছিমছাম ও সাজানোগোছানো। এয়ারপোর্ট রানওয়ের একদম সামনের দিকে হওয়াতে নিকুঞ্জ ১ এ কোন ভবনই ৩ তলার বেশি উচ্চতার অনুমোদন পায় না। তবে এই এলাকার বেশিরভাগ ভবনই বেশ লাক্সারিয়াসভাবে নির্মিত। অন্যদিকে নিকুঞ্জ ২ এর ভবন গুলো এর চেয়ে বেশি উচ্চতায় নির্মিত হতে পারে এবং এখানেই মূলত বেশিরভাগ মানুষের বসবাস। এখানকার ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদাও বেশ ভালো। ব্যাচেলর কিংবা ছাত্রদের মধ্যে নিকুঞ্জ ২ এলাকাটি বেশ জনপ্রিয় এখানকার তুলনামূলক সুলভ ভাড়া এবং ফ্ল্যাটের সহজপ্রাপ্যতার জন্যে। আবার বিপ্রপার্টির ওয়েবসাইটে বিক্রির জন্যও লিস্টেড আছে নিকুঞ্জের বেশ কিছু প্রপার্টি। তাই বলা যায় বসবাসের জন্য আবাসিক এলাকা হিসেবে আদর্শ একটি এলাকা নিকুঞ্জ।
নিকুঞ্জে বাণিজ্যিক প্রপার্টি
নিকুঞ্জ ১ এ বাসা ভাড়া নিয়ে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু অফিস। আর নিকুঞ্জ ২ এলাকাজুড়ে, বিশেষ করে মেইনরোডের পাশ দিয়ে আছে বেশ কিছু বাণিজ্যিক প্রপার্টি। শুরুতেই বিআরটিসি বাস ডিপোর সাথে আছে খিলক্ষেত থানা। একটু সামনেই আছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর বিশাল অফিস কম্পাউন্ড, আছে ডেসকোর অফিস। এ দুয়ের মাঝে আছে রাজউক ট্রেড সেন্টার যেখানে বিলাসবহুল হোটেল ঢাকা রিজেন্সির অবস্থান। শহরের আরেকটি বিলাসবহুল হোটেল লে মেরিডিয়ানেও অবস্থিত মেইন রোদের পাশেই নিকুঞ্জ ২ এর একদম শেষ প্রান্তে। লে মেরেডিয়ানের সংলগ্ন ভবনটি হল ডিএসই (ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ) টাওয়ার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাদের এই নিজস্ব ভবন থেকে। এছাড়া অন্যান্য বাণিজ্যিক স্থাপনার মধ্যে লোটাস কামাল টাওয়ার এবং নিটল নিলয় টাওয়ার উল্লেখযোগ্য। এলাকার আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, মেইন রোডে মাত্র কয়েকশো মিটার দুরত্বের মধ্যে রয়েছে ৩-৪টি পেট্রোল পাম্প এবং সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন। হাইওয়ের পাশে হওয়াতেই এমন রিফুয়েলিং স্টেশনের আধিক্য।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
নিকুঞ্জে আছে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর বেশিরভাগই নিকুঞ্জ ২ এ অবস্থিত। এর মধ্যে আছে ২ নম্বর রোডে মার্ক আইডিয়াল স্কুল, এর পাশেই ৩ নম্বর রোডে গ্রীন অ্যারো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সানশাইন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ৯ নম্বর রোডে স্টারলিট স্কুল অফ ইংলিশ। এছাড়াও আছে জান-ই-আলম সরকার উচ্চ বিদ্যালয় এবং সিভিল এভিয়েশন হাই স্কুল। এর বাইরেও ইংলিশ মিডিয়াম বোর্ডিং স্কুল প্লেজ হারবর ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অ্যাডমিশন অফিসও নিকুঞ্জ ২ এ অবস্থিত। আর উত্তরার খুব কাছে অবস্থিত হওয়ায় উত্তরাস্থ যে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সহজে যাতায়াত করা যায়।
চিকিৎসা সুবিধা
নিকুঞ্জে উল্লেখযোগ্য চিকিৎসা সুবিধার মধ্যে আছে মেইনরোডের সাথেই মেডিটেক জেনারেল হাসপাতাল এবং সিটি ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল। তবে এখান থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল খুবই কাছে অবস্থিত হওয়াতে সেটিতেও সহজে পৌঁছানো সম্ভব। আর উত্তরার সাথে সহজ যোগাযোগ থাকাতে সেখানকার সব চিকিৎসা সুবিধাও নিকুঞ্জের বাসিন্দারা উপভোগ করতে পারেন।
পার্ক ও চিত্তবিনোদন
নিকুঞ্জ ২ তে মসজিদের ঠিক সাথে রয়েছে বিশাল নিকুঞ্জ ২ খেলার মাঠ। এখানে বিকেলবেলা ছোটছেলেদের দেখা যায় খেলাধুলায় মত্ত। এর সাথেই আছে নিকুঞ্জ ২ পার্ক। এছাড়া নিকুঞ্জ ১ এর সামনে রয়েছে নিকুঞ্জ লেক। এই লেকের ধার দিয়ে গড়ে উঠেছে চমৎকার নিকুঞ্জ ১ লেক পার্ক। এলাকাবাসীর চিত্তবিনোদনের জন্য এ জায়গাগুলো বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া কবি ফারুক সরণীতে আছে নিকুঞ্জ ক্লাব।
মসজিদ ও অন্যান্য উপাসনালয়
নিকুঞ্জ ১ এবং ২ এ দুটি আলাদা জামে মসজিদ আছে যেখানে মুসল্লীরা নামাজ আদায় করতে পারেন। নিকুঞ্জের সবচেয়ে ব্যস্ত মসজিদ হল নিকুঞ্জ ২ জামে মসজিদ। এছাড়াও কাছাকাছি আছে মৃধাপাড়া জামে মসজিদ, টিনশেড মসজিদ এবং বিআরইবি মসজিদ।
আশপাশের এলাকা
নিকুঞ্জের খুব কাছেই আছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এয়ারপোর্ট টার্মিনাল আর রানওয়ে মিলে ঘিরে আছে নিকুঞ্জের উত্তর এবং পশ্চিম পাশের প্রায় সম্পূর্ণ এলাকা। এয়ারপোর্ট রোড বা ঢাকা - ময়মনসিংহ হাইওয়ের ওপারে আছে বিস্তৃত খিলক্ষেত এলাকা। আর নিকুঞ্জ ১ এর দক্ষিণ পাশে আছে আর্মি গলফ ক্লাবের এরিয়া। আর নিকুঞ্জ ১ এর শেষে থাকা কুড়িল ফ্লাইওভার ব্যবহার করে সহজেই কাছের বিভিন্ন এলাকা যেমন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পৌঁছানো সম্ভব।
নিকুঞ্জতে জীবনযাপন
খাবার ও রেস্টুরেন্ট
বিলাসবহুল এবং খরুচে খাবারদাবারের জন্য আছে হোটেল রিজেন্সি এবং লে মেরিডিয়ান। এছাড়া নিকুঞ্জে আছে বেশ কিছু ছোটখাট এবং মাঝারীমানের রেস্টুরেন্ট যেখানে এলাকার সবাই ভুড়িভোজ করতে পারবেন। এরমধ্যে আছে ঢাকা স্পাইস রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড পার্টি সেন্টার, গ্রাম বাংলা রেস্টুরেন্ট, মারওয়া কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, কলাপাতা রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি। এর বাইরে নিকুঞ্জের স্ট্রিট ফুডও বেশ জমজমাট। বিশেষ করে নিকুঞ্জ ২ খেলার মাঠের আশেপাশে বেশ কিছু মজাদার স্ট্রিট ফুড এবং ভাজাপোড়ার দোকান দেখা যায়।
কেনাকাটা
প্নিকুঞ্জ এলাকায় তেমন বড় কোন শপিং মল বা শপিং ডেস্টিনেশন নেই। তবে এলাকার অভ্যন্তরে বাসিন্দাদের জন্য আছে পর্যাপ্ত সুপার শপ এবং প্রয়োজনীয় দোকানপাট। এখান থেকেই এলাকাবাসী তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা ও কাঁচাবাজার করে নেন। আর বড় শপিং এর প্রয়োজনে খুব কাছেই আছে সুবিশাল যমুনা ফিচার পার্ক। তাছাড়া উত্তরা এলাকাও কাছে হওয়াতে সেখানেও যাওয়া যায় খুব সহজেই।