পূর্ব মিরপুর এলাকার বিস্তারিত
একনজরে পূর্ব মিরপুর
স্বাধীনতার পর থেকেই মিরপুর ঢাকার একটি ব্যস্ততম এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। মিরপুর একটি থানা হিসেবে ঘোষিত হয় ১৯৭২ সালে, আর শেষ ২-৩ দশকে এই এলাকার এসেছে আমূল পরিবর্তন। ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের এই এলাকায় কমপক্ষে ৬ লক্ষ মানুষের বাস।
মিরপুরকে মানবদেহের সাথে তুলনা করলে এর একটি প্রধান ধমনীর নাম হবে বেগম রোয়েকা সরণী। এটি মিরপুরের সাথে বাকি ঢাকার চমৎকার যোগাযোগ নিশ্চিত করেছে। এর পূর্বে ছড়িয়ে থাকা এলাকাকেই আমরা বলছি পূর্ব মিরপুর। এতে অন্তর্ভূক্ত আছে সেনপারা পর্বতার এক বিশাল অংশ, মিরপুর ১৪, পূর্ব মনিপুর, পূর্ব কাজিপাড়া, পূর্ব শেওড়াপাড়া, ইব্রাহিমপুর এবংগ কাফরুলের একাংশ। মিরপুর যদিও মূলত একটি আবাসিক এলাকা, এখানে বাণিজ্যিক স্থাপনাও আছে প্রচুর। সাম্প্রতিক সময়ে অত্র এলাকার রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন চোখে পড়ার মত। নির্মায়মান ম্যাস - র্যাপিড ট্রানজিটের কাজ শেষ হয়ে গেলে এখানে প্রপার্টির দাম আরও বৃদ্ধি পাবে তা বলেই দেয়া যায়।
পূর্ব মিরপুর এলাকা সম্পর্কে
আবাসিক এলাকা হিসাবে পূর্ব মিরপুর
ব্যস্ত রাস্তাঘাট এবং যানবাহনের সহজলভ্যতা এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে পূর্ব-পরিচিতের অনুভূতি - মিরপুর পূর্বে মধ্যবিত্ত জীবনযাপনের সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্ত বৈশিষ্ট্য উপস্থিত। এই অঞ্চলে জীবনযাত্রার খরচ তুলনামূলক সস্তা কেননা বাড়ি ভাড়া বেশ সাশ্রয়ী। প্রপার্টি কিনতে গেলে কেনার দাম এখনো বেশ যুক্তিসঙ্গত তবে দাম আছে বাড়তির দিকেই। পূর্ব শেওড়াপাড়া এবং পূর্ব কাজীপাড়ার মতো অঞ্চলগুলি বেগম রোকেয়া সরণীসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সংলগ্ন হওয়ায় এদিকে প্রপার্টির চাহিদা কিছুটা বেশি। আপনি যদি কাঁচাবাজারের সন্ধান করেন, বেগম রোকেয়া সরণীর পশ্চিম পাশে শেওড়াপাড়া কাঁচা বাজার রয়েছে। অন্যান্য সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য রয়েছে অসংখ্য সুপারশপ। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল ডেইলি সুপার শপ যা বেগম রোকেয়া সরণীর পশ্চিম পাশেও রয়েছে। সব মিলিয়ে আপনি বলা যায় যে মিরপুর পূর্বে আছে একটি প্রাণবন্ত প্রতিবেশ, যেখানে অসংখ্য বাসিন্দাদের মধ্যে আছে প্রতিবেশির অনুভূতি ও আত্মিক সম্পর্ক।
পূর্ব-মিরপুরে প্রপার্টি
মিরপুর পূর্বের রাস্তা এবং গলিতে সর্বদা ভিড় লেগেই থাকে। মানুষ প্রতিদিনের যাতায়াতে ছুটতে থাকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। বেগম রোকেয়া সরণী ঢাকা শহরের অন্যতম ব্যস্ত একটি রাস্তা। এখানে অসংখ্য ব্যাংক, হাসপাতাল, কর্পোরেট অফিস, রেস্তোঁরা, শোরুম, ব্র্যান্ড আউটলেট এবং গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। মূল রাস্তাটিতেই বেশিরভাগ বাণিজ্যিক প্রপার্টি ও অফিস অবস্থিত। এলাকার অভ্যন্তরে প্রবেশ কলে আপনি পুরানো এবং নতুন আবাসিক প্রপার্টিগুলো দেখতে পাবেন। শুধু এই এলাকাই নয় বরং মিরপুরের সমস্ত অংশেই প্রপার্টির দামর উর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের জন্য একে একটি প্রধান এলাকা হিসাবে তৈরি করেছে।
যাতায়াত ব্যবস্থা
ঢাকার অন্য এলাকার সাথে মিরপুরের প্রধান পার্থক্য কোথায়? অবশ্যই এর চমৎকার যোগাযোগ এবং যাতায়াত ব্যবস্থায়! মিরপুর এলাকার প্রধানতম রাস্তা হল বেগম রোকেয়া সরণী যা ঢাকার অন্য অনেকগুলি এলাকার সাথে এর যোগাযোগস্থাপন করেছে। মিরপুরবাসীকে কখনোই গণপরিবহনের অভাববোধ করতে হয় না। মিরপুর রোড থেকে এয়ারপোর্ট রোডে যাবার আরেকটি সুন্দর শর্টকাট হল কাফরুল হয়ে স্বাধীনতা সরণী ব্যবহার করা। এছাড়া ম্যাস-রাপিড-ট্রানজিট বা এম-আর-টি এর লাইন ৬ ও লাইন ৫ নির্মিত হচ্ছে এই এলাকা এবং আশপাশের এলাকা ঘিরে। লাইন ৬ ধরে সহজে যাওয়া যাবে উত্তরা, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, তেজগাঁও, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গুলিস্তান, এবং মতিঝিল এলাকায় আর লাইন ৫ দিয়ে চলাচল করা যাবে গুলশান, বনানী, বসুন্ধরায়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
যে কোনও অঞ্চলের উন্নয়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে এবং মিরপুর পূর্বে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ইব্রাহিমপুরে অবস্থিত মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শাখা ২ এলাকার অন্যতম সেরা একটি স্কুল। এখানে জাতীয় শিক্ষাক্রমের আওতায় পাঠদান করা হয়। এই অঞ্চলে আরও বেশ কিছু স্কুল রয়েছে যেগুলি ইংরেজি এবং বাংলা উভয় মাধ্যমেই শিক্ষা দেয়। বেগম রোকেয়া সরণীতে অবস্থিত গ্রীন ইউনিভার্সিটি একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় যা এলাকার বাসিন্দাদের জন্য মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রদানে ভূমিকা রাখছে। কাছাকাছি অঞ্চলে অন্যান্য বেশ কিছু চমৎকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজ (এসপিএসসি) এবং স্কলাস্টিকা মিরপুর এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
চিকিৎসা সুবিধা
এই এলাকায় অনেকগুলি উন্নতমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং মেডিকেল সাপোর্ট দেয় এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ঔষুধ সরবরাহকারী ফার্মেসীও রয়েছে প্রচুর। মিরপুর পূর্বে বেশ কয়েকটি বড় পরিসরের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা রয়েছে যার ভেতর উল্লেখযোগ্য হল আল-হেলাল হাসপাতাল, এক্সিম ব্যাংক হাসপাতাল, মার্কস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং হাই-টেক মাল্টিকেয়ার হাসপাতাল। আশেপাশের অঞ্চলে অন্যান্য হাসপাতাল রয়েছে যা মিরপুর পূর্বের বাসিন্দাদের চিকিত্সার প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে বহু অংশে। বিশেষভাবে বলা যায় আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল এবং ঢাকা ডেন্টাল কলেজেরকথা। লাজ ফার্মাসহ বড় বড় ফার্মেসিগুলো আশেপাশেই পাওয়া যাবে।
মসজিদ ও অন্যান্য উপাসনালয়
ধর্ম দেশের বেশিরভাগ মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, এ কারণেই মিরপুরের এই অঞ্চলে সমস্ত ধর্মের লোকদের জন্য ধর্মীয় সুবিধা রয়েছে। মুসলিম বাসিন্দারা এই অঞ্চলে মসজিদগুলি খুঁজে পেতে কোনও অসুবিধায় পড়েন না, প্রতি পাড়ায় কমপক্ষে একটি মসজিদ রয়েছে। মিরপুর পূর্বের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মসজিদের মধ্যে মিরপুর ১৪ এর জামেউল উলূম মসজিদ ও মাদ্রাসা এবং পূর্ব শেওড়াপাড়ায় বায়তুল কাদির জামে মসজিদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এলাকার হিন্দু বাসিন্দাদের জন্য দুঃখের বিষয় হল মিরপুর পূর্বে তেমন কোনও মন্দির নেই। তবে নিকটবর্তী এলাকায় মন্দির রয়েছে, তালতলা কেন্দ্রীয় মন্দিরটি মিরপুর পূর্বের নিকটতম। বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের জন্যও মিরপুর পূর্বে আছে বিশেষ সুবিধা, স্কলাস্টিকা মিরপুর ক্যাম্পাসের ঠিক পাশেই অবস্থিত শাক্যমুনি বৌদ্ধ মন্দিরটি পূর্ব মিরপুরের কাছাকাছিই। মিরপুর পূর্বে বসবাসরত খ্রিস্টানরা কাফরুলের সেন্ট লরেন্সের গির্জাতে গিয়ে উপাসনা করতে পারবেন।
আশপাশের এলাকা
মিরপুর পূর্বের নিকটতম অঞ্চলটি হল মিরপুর দক্ষিণ, এটি তালতলা, পশ্চিম শেওড়াপাড়া, পীরেরবাগ, মনিপুর, এবং মিরপুর ১ সহ মিরপুর পূর্বের বিপরীতে বেগম রোকেয়া সরণীর পশ্চিম দিকের অঞ্চলগুলি নিয়ে গঠিত। মিরপুর -১০ গোলচত্বরের দিকে চলে যাওয়া রাস্তাটির একদিকে আছে মিরপুর পশ্চিম এবং অন্যদিকে মিরপুর উত্তর। কাফরুল, কয়েকটি সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাম্প এবং আগারগাঁও এলাকাও আছে আশেপাশে। শের-ই-বাংলা নগরের মতো এলাকা পূর্ব মিরপুরের পাশেই যে এলাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারী সংস্থা ও মন্ত্রণালয় অবস্থিত। এছাড়াও শহীদ সরণীর জন্য মহাখালীর গুলশান ও মিরপুরের অন্যান্য এলাকা মিরপুর পূর্ব থেকে খুব বেশি দূরে নয় কখনোই।
মিরপুর পূর্বে জীবনযাপন
খাবার এবং রেস্টুরেন্ট
সামাজিকীকরণ এবং বিনোদন প্রয়োজন এমন প্রচুর সংখ্যক বাসিন্দা রয়েছে মিরপুর পূর্ব এলাকায়। আর সেজন্য রেস্তোরাঁর চেয়ে আরও ভাল উপায় আর কী আছে? বন্ধুদের সাথে দেখা করতে কিংবা পরিবারের সাথে বাইরে গিয়ে খাবার টেবিলে চমৎকার কিছু সময় কাটাতে চাইলে মিরপুর পূর্ব হতাশ করবে না কখনোই। ভোজনরসিকদের জন্য সবধরণের স্বাদ এবং দামের খাবারই আছে এই এলাকায়। মিরপুরের বাসিন্দাদের সাশ্রয়ী মূল্যের মূল্যে খাবার যোগান দিতে অসংখ্য স্থানীয় ক্যাফে, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। ফাস্টফুড খাইতে চাইলে, পূর্ব শেওড়াপাড়ায় রয়েছে NOSH, এটি ভিন্নধর্মী বার্গারের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া বিখ্যাত হেবাং এবং সিএইচটি এক্সপ্রেস সহ পূর্বে মিরপুরে দেশী খাবারের জন্যও বেশ কয়েকটি জায়গা রয়েছে। আপনার সন্ধ্যার কাবাব এবং গ্রিল চাহিদা মেটাতে এখানে আইকিউআরএ রেস্তোঁরা এবং গ্র্যান্ড মহারাজ রয়েছে। আপনি যদি আরও কিছুটা হাই ফাই রেস্তোঁরার খোঁজে থাকেন তবে আইডিবি ভবনের বিপরীতে রয়েছে জয়তুন রেস্তোঁরা যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের বিলাসবহুল সব খাবার পাওয়া যায়। সোজা কথা মিরপুর পূর্বে ভোজনরসিকদের জন্য আছে অনেক অনেক অপশন!
শপিংএর গন্তব্য
আপনি শপিংয়ের কথা ভাবলে হয়ত এই এলাকাটির কথা আপনার মাথায় প্রথমেই আসে এমন না। তবে মিরপুর পূর্বে কেনাকাটা করার মতো অনেক জায়গা আসলে রয়েছে। দেশের বেশিরভাগ শীর্ষ ব্র্যান্ডের আউটলেট আছে বেগম রোকেয়া সরণীতে। এই এলাকায় বেশকিছু রেডিমেড আসবাব বিক্রি করে এমন দোকান রয়েছে। ইলেকট্রনিক শপ, পোশাকের দোকান, হার্ডওয়্যার স্টোর ছাড়াও আছে ইব্রাহিমপুর বাজার এবং রজনীগন্ধা মার্কেটের মতো ভিন্ন ধরণের একাধিক শপিং কমপ্লেক্স। বিসিএস কম্পিউটার সিটি হল বাংলাদেশের বৃহত্তম কম্পিউটার এবং ইলেকট্রনিক্সের বাজার, এবং এটি মিরপুর পূর্ব থেকে খুব বেশি দূরে নয়। এছাড়াও রয়েছে অনেকগুলো সুপারশপ, যার মধ্য সর্বাধিক জনপ্রিয় হল ডেইলি সুপার শপ। যদিও এটি বেগম রোকেয়া সরণীর পশ্চিম পাশে পড়েছে তারপরও মিরপুর পূর্বের বাসিন্দাদের কাছে খুব জনপ্রিয়।