একনজরে বনশ্রী
বনশ্রী সম্পর্কে
ঢাকা শহর যে কী দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে তা বোঝা যায় বনশ্রী এলাকার দিকে তাকালে। এক সময় যা ছিল বিরাণভূমি আর বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, আজ তা শত মানুষের স্বপ্নের আবাসিক এলাকা বনশ্রী। আজকের এরিয়া গাইডে আমরা বনশ্রী এবং দক্ষিণ বনশ্রী এলাকাকে কভার করব। এই এলাকায় রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট শুরু হয়েছে ২০০০ সালের দিকে এবং গত ১০ বছরে তা ধারণ করেছে অনন্য মাত্রা। সে তুলনায় দক্ষিণ বনশ্রীর উন্নয়ন অনেকটাই সাম্প্রতিক এবং এই এলাকায় আরও অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে। এই এলাকার আভ্যন্তরীণ এবং অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও চমৎকার। বনশ্রী সরাসরি ডি আই টি রোড এর সাথে সংযুক্ত। এছাড়া ঢাকা মেট্রোরেল এর একটি স্টপেজও থাকবে বনশ্রীতে। তাই দিনে দিনে বনশ্রী হয়ে উঠেছে বসবাসের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।
বনশ্রী এলাকা সম্পর্কে বিস্তারিত
আবাসিক এলাকা হিসাবে বনশ্রী
মধ্যবিত্তের বসবাসের জন্য জনপ্রিয় এলাকা বনশ্রী। বেশ ভাল সুযোগসুবিধাসহ ভাড়া কিংবা বিক্রির জন্য বাজেটের মধ্যে ভাল ভাল সব অ্যাপার্টমেন্ট মেলে এই এলাকায়। সমস্ত বনশ্রীই বসবাস উপযোগী এবং বেশিরভাগই আবাসিকভাবে গড়ে উঠা রিয়েল এস্টেট প্রজেক্ট। এখানকার বাড়িঘরগুলো বেশিরভাগই নতুন নির্মিত এবং মর্ডান সব ফিচার সমৃদ্ধ। বনশ্রী এলাকার অনেক বড় একটি বৈশিষ্ট্য হল এখানকার তুলনামূলক সহনীয় বাসা ভাড়া, যে কারণে মধ্যবিত্তের প্রিয় এলাকা এটি। আর সুলভ মূল্যে নিত্য দিনের কেনাকাটা করতে চাইলে কাছেই আছে বাজার যেখানে কাঁচাবাজার থেকে যে কোন কিছু মিলবে ন্যায্য দামে। এছাড়া এলাকার মানুষেরা মিলে গড়ে তুলেছে চমৎকার একটি কমিউনিটি যা বনশ্রীকে করে তুলেছে আরও আদর্শ একটি এলাকা।
বনশ্রীতে প্রপার্টি
বনশ্রীকে শুরুতে ভাবা হয়েছিল শুধুমাত্র আবাসিক এলাকা হিসেবেই, কিন্তু ঢাকার অন্য অনেক এরিয়ার মতই এখানেও লেগেছে কমার্শিয়াল এরিয়ার ছোঁয়া। সূর্য উঠবার আগে থেকেই বনশ্রীতে মানুষের কোলাহল শুরু হয়, চলতে থাকে গভীর রাত অব্দি। শুধুমাত্র শহরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানকেই যে ডি.আই.টি রোড যুক্ত করেছে তাই নয়, এই রোডের আশেপাশে ব্যাংক, বীমা, অফিস কিংবা বাজার, কোন কিছুরই অভাব নেই। আছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আউটলেট আর আবাসিক ভবনও। বেশ কিছু স্টার্ট-আপ কোম্পানির জন্যও বনশ্রী প্রিয় গন্তব্য। বনশ্রীতে সম্প্রতি অনেক রেস্তোরাঁ গড়ে উঠছে যেখানে মেলে মুখরোচক ফাস্টফুড কিংবা গ্রিল আইটেম। এটি এমন একটি ব্যস্ত এলাকা যেখানে নিত্যদিনের সব ধরণের পণ্য মেলে সহজেই। মোটকথা, ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ত এলাকার একটি হল বনশ্রী, আর তা এখানকার প্রপার্টিগুলো দেখলেই বোঝা যায়।
যাতায়াত ব্যবস্থা
বনশ্রীতে থাকার একটি অন্যতম ভাল দিক হল, সমগ্র এলাকাজুড়ে এবং অন্য এলাকার সাথেও অতি চমৎকার যাতায়াত ব্যবস্থা। বনশ্রীর অভ্যন্তরে রাস্তা গুলো খুবই চমৎকার এবং সাজানো গোছানো। এক পাশ দিয়ে চলে গেছে প্রশস্ত একটি রাস্তা যেটি বনশ্রী মেইনরোড নামে পরিচিত এবং বেশিরভাগ দোকানপাট ও বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো এই রোড অথবা এর আশেপাশেই। এলাকার অভ্যন্তরের প্রতিটি রাস্তাতেই আছে রিকশা এবং টেম্পু সার্ভিস। বনশ্রী থেকে ইন্টারসিটি বাসের কোন অভাব নেই। উত্তরা মিরপুর মতিঝিল ধানমন্ডি যেকোনো জায়গায় সিটি বাস পেয়ে যাবেন। বনশ্রী মেইন রোডে গিয়ে মেশে ঢাকার অন্যতম প্রধান একটি রাস্তা ডিআইটি রোড এর সাথে। বাড্ডা ইউ লুপ দিয়ে খুব সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় হাতিরঝিল। বনশ্রীর অন্যদিকে আছে স্টাফ কোয়ার্টার রোড যেটি দিয়ে খুব সহজেই ঢাকার দক্ষিণ প্রান্তের এলাকাগুলোতে পৌঁছে যাওয়া যায়। এছাড়া এই এলাকার আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে মেট্রো রেল লাইনের পরিকল্পনা। পরিকল্পনা অনুসারে এমআরটি লাইন ১ এর একটি স্টপ আছে রামপুরাতে যেটি বনশ্রীর কাছেই। আবার এমআরটি লাইন ৪ সরাসরি যুক্ত থাকবে বনশ্রীর সাথে। এটি শুরু হবে ডেমরায় শেষ হবে মহাখালীতে গিয়ে আর মাঝখানে স্টপেজ থাকবে বনশ্রীর। অর্থাৎ গণপরিবহন বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টের কোন অভাবই নেই বনশ্রীতে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা ভাবলেও বনশ্রী চমৎকার একটি এলাকা। কেননা বনশ্রী তার আগামী প্রজন্মের জন্য নিশ্চিতভাবেই সুশিক্ষার ব্যবস্থা করতে সক্ষম। বাংলা এবং ইংরেজি মিডিয়ামে শিক্ষা দিচ্ছে এমন অনেকগুলো সরকারি, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে এই এলাকায়। শুধু বনশ্রী নয় বরং এর আশেপাশের সমস্ত এলাকাই ভাল মানের স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটির জন্য স্বনামধন্য। এরমধ্যে আছে আইডিয়াল স্কুলের একটি ব্রাঞ্চ, ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের দুটি ব্রাঞ্চ,আছে ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইন্সটিউট। এছাড়া কাছাকাছি থাকা আফতাবনগরে আছে ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজ। ঢাকার বৃহত্তম ইংলিশ মিডিয়ামস্কুলের একটি, অ্যাকাডেমিয়ার ক্যাম্পাস আছে বনশ্রীতে। কাছেই আফতাবনগরে আছে ইস্ট - ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি।
চিকিৎসা সুবিধা
স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা করলে বনশ্রী থাকবে এগিয়ে। আছে ফারাজী হসপিটাল যা বনশ্রী এবং আশপাশের এলাকার মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। বনশ্রী মেইন রোডে আছে আল-রাজী ইসলামিয়া হসপিটাল আর মেরাদিয়া কাঁচা বাজার এর নিকট আছে ইয়ামাগাতা-ঢাকা ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হসপিটাল। এলাকায় ওষুধপত্রের জন্য ফার্মেসিরও কোন অভাব নেই। বনশ্রী মেইন রোডে আছে বিখ্যাত লাজ ফার্মা।
মসজিদ, অন্যান্য উপাসনালয় ও ধর্মীয় স্থান
বনশ্রী এলাকায় হিন্দু মুসলিমসহ সব ধর্মাবলম্বী মানুষ বাস করে মিলেমিশে। ঢাকা হল মসজিদের শহর, তাই কোন মুসলিমকে আল্লাহর ঘর খুঁজতে বেগ পেতে হয় না। এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বনশ্রী সেন্ট্রাল মসজিদ এবং সাউথ বনশ্রী জামে মসজিদ পেয়ে যাবেন আর অন্যান্য মসজিদের সাথে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পাবেন শ্রী শ্রী কালী মন্দির অথবা বুড়াবাড়ি আশ্রম মন্দির। আবার বনশ্রীর কাছেই মেরুল বাড্ডাতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য আছে বৌদ্ধমন্দির। নর্থ বাড্ডা তে থাকা বাড্ডা ব্যাপ্টিস্ট চার্চ এ যেতে পারেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা। তাই বনশ্রীতে বসবাসকারী কোন ধর্মাবলম্বীকেই খুব বেশি দূরে যেতে হয়না উপাসনালয়ের খোঁজে।
আশপাশের এলাকা
বনশ্রী এলাকাটি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বেষ্টিত এবং হাতিরঝিল প্রজেক্ট আর ডি.আই.টি রোডের কারণে তার সবগুলোর সাথেই আছে চমৎকার যোগাযোগব্যবস্থা। বনশ্রী, গুলশান, বাড্ডার মত ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ফাইনান্সিয়াল হাবের কাছে অবস্থিত। ডিআইটি রোড ধরে উত্তর দিকে এগিয়ে রামপুরা ব্রিজ পার করে বাড্ডায় পৌঁছানো যায়। আর হাতিরঝিল দিয়ে গুলশান, নিকেতন, তেজগাঁও এবং সেন্ট্রাল ঢাকার অন্যান্য এলাকায় পৌঁছে যেতে পারবেন। আফতাবনগর আর একটি পরিকল্পিত এরিয়া যেটি রামপুরা খালের অন্য পাশে অবস্থিত। রামপুরার মতো বিখ্যাত এরিয়াও বনশ্রীর সাথেই লাগানো। দক্ষিণ বনশ্রীর সাথে লাগানো আরেকটি এলাকার নাম গোড়ান যেটি দক্ষিণ বনশ্রী প্রজেক্ট এর মধ্য দিয়ে পৌঁছানো যায়।
বনশ্রীতে জীবনযাপন
খাবার এবং রেস্টুরেন্ট
রেস্টুরেন্ট অথবা খাবারের দোকান খুঁজে পেতে বনশ্রীর বাসিন্দাদের কখনোই খুব বেশি বেগ পেতে হয়না। সব ধরনের সব মানের সব দামের রেস্টুরেন্ট ও খাবার দোকান আছে বনশ্রীতে। কাবাবের জন্য বিখ্যাত আল কাদেরিয়া রেস্টুরেন্ট এর একটি শাখা আছে বনশ্রী মেইন রোডে। থাই, চাইনীজ এবং ফাস্টফুড অফার করে এমন রেস্টুরেন্টও আছে বেশ কিছু। বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টে বনশ্রী ই-ব্লকে পাওয়া যায় যেখানে তরুণেরা ভিজিট করতে পছন্দ করেন। এলাকায় আছে স্ট্রিটফুড এর সমাহার।
শপিংএর গন্তব্য
প্রাত্যহিক কেনাকাটার জন্য অসংখ্য জেনারেল স্টোর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বনশ্রীতে। এলাকার মানুষজন কেনাকাটার জন্য কাছেই থাকা মেরাদিয়া কাঁচা বাজারে যেতে পারেন যেখানে টাটকা শাকসবজি তরিতরকারি প্রতিদিন সকালে পেয়ে যাবেন অনায়াসে। আপনি যদি সুপারশপে বা সুপার মার্কেটে কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তাহলে স্বপ্ন সুপার শপ এর একটি ব্রাঞ্চও রয়েছে এলাকায়। আরেকটি কারণে বনশ্রী বেশ বিখ্যাত। প্রতি বছর কোরবানি ঈদের আগে মেরাদিয়া হাটে বসে বিশাল গরু- ছাগলের বা কোরবানির পশুর সমারোহ।