একনজরে বনানী
বনানী সম্পর্কে
অনেক আগে যখন বনানী এলাকার পরিকল্পনা করা হয়, এটিতে মধ্যবিত্তের জন্য একটি আবাসিক এলাকা হিসাবেই প্ল্যান করা হয়েছিল। সময়ের বিবর্তনে সেই বনানীতে এখন দেশের সবচেয়ে বর্ণাধ্য মানুষদের বসবাস। আধুনিক বনানী একদিকে যেমন ছায়াঘেরা আবাসিক এলাকা একই সাথে আবার ব্যস্ত বাণিজ্যিক অঞ্চলও বটে! কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ এর উত্তর দিকের পুরোটাই প্রায় আবাসিক এলাকা যেখানে শুধু দেশ নয় বরং দেশের বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন গণ্যমান্য মানুষের বাস। অন্যদিকে দক্ষিণ দিকে আবাসিক আর বাণিজ্যিক, উভয় ধরণের প্রপার্টিই আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। “বনানী - ১১” নামের সম্প্রতি বিখ্যাত বনে যাওয়া রাস্তাটি কামাল আতাতুর্কের সমান্তরালে বনানীর বুক চিরে চলে গিয়েছে আড়াআড়িভাবে। পশ্চিমে মহাখালী থেকে পূর্বে গুলশান পর্যন্ত এই রাস্তাটি একটি ব্যস্ত রাস্তায় পরিণত হয়েছে কয়েকবছর আগে নির্মিত বনানী ১১ ব্রিজের কারণে। বহু কর্পোরেট অফিস থেকে শুরু করে নামীদামী ব্র্যান্ডের আউটলেট আছে এ রাস্তার দুপাশ জুড়ে। সব মিলিয়ে আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক, উভয় কারণেই বনানী আজ মহামূল্যবান এক এলাকায় পরিণত হয়েছে।
বনানী এলাকা সম্পর্কে বিস্তারিত
আবাসিক এলাকা হিসাবে বনানী
পরিষ্কার, পরিকল্পিত এবং উন্নতমানের রাস্তাঘাট বনানী এলাকার সিগনেচার বলা যায়। এলাকায় অনেক বিদেশীদের বাস এবং আশেপাশে থাকা দূতাবাসগুলোর কারণে আছে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থাও। ঢাকার মধ্যভাগ থেকে দূরত্ব এবং ঢাকার কুখ্যাত ট্রাফিক জ্যামের কথা মাথায় রেখে বিদেশীসহ আরও অনেকে বনানীতে বাস করতে চান যাদের প্রতিনিয়ত বিমানবন্দরে যাতায়াত করতে হয়। যেকারণে শুধু এলাকা হিসাবেই নয় বরং বিলাসবহুল সব বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে গড়ে উঠেছে বনানী। আছে খেলার মাঠ, পার্ক, সুপারমার্কেট, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়সহ নাগরিক জীবনের সব ধরণের সুযোগসুবিধা।
বনানীতে প্রপার্টি
পাশেই থাকা গুলশান ১ ও ২ এর মতই বনানীতেও রয়েছে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রপার্টির সংমিশ্রণ। স্টার্ট-আপ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য এই এলাকা বেশ আকর্ষণীয়। অন্য সব জায়গার চাইতে বনানী ১১ হল সবচেয়ে ব্যস্ত এলাকা। এখানে কমার্শিয়াল স্পেসের সংখ্যা সর্বাধিক যার ভেতর নানা ধরনের ব্র্যান্ড আউটলেট এবং বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট। তবে এত ব্যস্ততার মাঝে বনানীর অলিতে গলিতে এখনো দেখা মেলে শ্যামল ছায়ার।
যাতায়াত ব্যবস্থা
ঢাকা শহরে তুলনামূলক অবস্থানের কারণে বনানী থেকে খুব সহজেই গুলশান, কাফরুল, মহাখালী এবং প্রযোজ্যক্ষেত্রে উত্তরাতেও খুব সহজেই যাতায়াত করা সম্ভব। ঢাকা চাকা এবং গুলশান চাকা নামের দুটি বাস বনানী কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ হয়ে চলাচল করে যাতে করে খুব সহজেই বনানী থেকে গুলশানের বিভিন্ন স্থানে বং বাড্ডার নতুনবাজার পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। এছাড়া রোড ১১ দিয়ে গুলশানের দক্ষিণ দিক এবং ১৮ নম্বর রোড দিয়ে উত্তর অংশ সংযুক্ত। ভেতরে যেকোন জায়গায় চলাচলের জন্য আছে পর্যাপ্ত রিকশা। আর উবার, পাঠাও এর মত রাইড শেয়ারিং অপশনগুলো তো থাকছেই।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
যে কোন এলাকার জন্য ভাল্মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি অত্যন্ত দরকারী। বনানীতেও আছে নামকরা বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে বনানী বিদ্যা নিকেতন, নর্দান ইউনিভার্সিটি উল্লেখযোগ্য। একসময় নামকরা প্রায় সবগুলো বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলত বনানীতে। ধীরে ধীরে বড় বড় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে গেলেও আছে বেশকিছুই। আর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারণে এলাকার বসবাসকারীদের সন্তানের উপযুক্ত শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত হতে হয় না।
চিকিৎসা সুবিধা
গুলশানের তুলনায় হয়ত কিছুটা কম হতে পারে কিন্তু চিকিৎসা সুবিধার দিক দিয়েও বনানী যথেষ্ট উন্নত। জরুরী প্রয়োজনে এখানে আছে বেশ কিছু উন্নত মেডিক্যাল ও ডায়াগোনস্টিক সেন্টার। প্রাভা হেলথ কিংবা বনানী ক্লিনিকের মত প্রতিষ্ঠানগুলো এলাকার মানুষকে জরুরী প্রয়োজনে সব ধরণের সাপোর্ট দিতে সক্ষম।
চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা
খেলাধুলা এবং চিত্তবিনোদনের জন্য আলাদা জায়গা যেখানে মানুষ অবসর সময় কাটাতে পারবে কিংবা বাচ্চারা করতে পারবে খেলাধুলা, এমন স্থান থাকা যে কোন পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার জন্য আবশ্যক। বনানী দেশের অন্যতম বিলাসবহুল এবং পরিকল্পিত এলাকা। এখানে তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে পার্ক, খেলার মাঠসহ সবধরণের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা।
মসজিদ, অন্যান্য উপাসনালয় ও ধর্মীয় স্থান
মানুষের জীবনের অনেক বড় একটি অংশ হল ধর্ম আর বনানীতে রয়েছে নানা ধর্মাবলম্বী মানুষের বাস। তাই বেশ কিছু মসজিদ ছাড়াও বনানী এলাকায় আছে দুটি চার্চও। দেশ বরেণ্য বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সেটি বনানী কবরস্থান। এর অবস্থান ২৭ নং রোডের সাথে। এরপাশেই আছে বনানী সামরিক কবরস্থানও।
আশপাশের এলাকা
আশেপাশের এলাকা বিবেচনা করলে বনানী অত্যন্ত সুবিধাজনক একটি লোকেশনে অবস্থিত। পূর্ব এবং উত্তরে গুলশান আর দক্ষিণ দিকে আছে মহাখালী। এর সাথে পশ্চিমে থাকা ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে বনানীকে খুব চমৎকার একটি লোকেশনে পরিণত করেছে। তেজগাঁও, ক্যান্টনমেন্ট, নিকেতন, এয়ারপোর্ট কিংবা উত্তরা, যে কোন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে খুব সহজেই বনানী আসা যাওয়া করা যায়।
বনানীতে জীবনযাপন
খাবার এবং রেস্টুরেন্ট
বনানীতে খাবারের বেলায় যে পরিমাণ ভ্যারাইটি রয়েছে, শহরের খুব কম স্থানেই তার দেখা মেলে। ঐতিহ্যবাহী বিরিয়ানি থেকে শুরু করে মেক্সিকান, চাইনিজ, থাই, কী নেই এখানে! বনানী ১১ এবং কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতেই বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টের অবস্থান। আবার বিভিন্ন অলিতে-গলিতেও খাবার দোকানের নেই কোন অভাব। যে কোন ভোজন রসিকদের জন্য বনানী একটি অবশ্য গন্তব্য!
বিলাসবহুল হোটেল
বিলাসবহুল সব হোটেলের জন্য বনানী বিখ্যাত। বিদেশী উচ্চপদস্থ মানুষের আনাগোনা থাকার কারণে থ্রি কিংবা ফোর স্টার মানের হোটেলও আছে এখানে। লেকশোর, গোল্ডেন টিউলিপ, রেইন্ট্রি এবং সারিনার মত হোটেলগুলো অতিথিদের সর্বোচ্চ সেবার জন্য বিখ্যাত। শুধু থাকবার সুব্যবস্থাই নয়, বরং মুখরোচক সব খাবারের জন্যও সকলের কাছে অত্যন্ত প্রিয় এ হোটেলগুলো।
শপিংএর গন্তব্য
প্রায় সব বিখ্যাত ব্র্যান্ডের আউটলেট এবং এক্সক্লুসিভ কালেকশন প্রাপ্যতার কারণে বনানী উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের এক প্রিয় শপিং ডেস্টিনেশন। দেশী বিদেশি বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের শো-রুমই দেখতে পাওয়া যায় বনানীতে। বনানী ১১ নম্বর রোডে থাকা আড়ং-ও অনেক বিখ্যাত। বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী শপিং কমপ্লেক্সে পাওয়া যায় উন্নত এবং আমদানীকৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদি। এসবের পাশাপাশি বনানী সুপারমার্কেটও অনেকের প্রিয় গন্তব্য।