একনজরে বাসাবো
এলাকা সম্পর্কে
বাসাবো একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা যা সুলভ আবাসনের জন্য জনপ্রিয়। ৬.৬২ বর্গকিলোমিটার জুড়ে থাকা এলাকাটি সবুজবাগ থানার অধীনে পড়েছে। বাসাবো মূলত ৪টি ভাগে বিভক্ত, সেগুলো হল, উত্তর বাসাবো, পূর্ব বাসাবো, দক্ষিণ বাসাবো এবং মধ্য বাসাবো। এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাটি আবার ঢাকার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের কাছেই অবস্থিত। পুরো এলাকাটিই থাকে মানুষের কোলাহলে মুখরিত এবং এখানে মেলে চমৎকার আবাসনের খোঁজ। কার্যকরী যোগাযোগব্যবস্থা, শিক্ষা ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, খাবার দাবারের জায়গা এবং রেস্টুরেন্ট মিলিয়ে একটি আবাসযোগ্য ও কাঙ্ক্ষিত এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছে বাসাবো।
এলাকা সম্পর্কে বিস্তারিত
আবাসিক এলাকা হিসাবে
এলাকার বাসিন্দারের জন্য সকল ধরণের আবাসিক সুবিধা এবং ছোটদের জন্য খেলাধুলা বা চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থাকে সঙ্গী করেই গড়ে উঠেছে বাসাবোর আবাসন। ফলে মধ্যবিত্তের জন্য পছন্দের একটি এলাকা এই বাসাবো। কিছু বিখ্যাত মাঠের উপস্থিতি এই এলাকাকে আরও আকর্ষণীয় হিসেবে গড়ে তুলেছে। এই এলাকাতে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার সুযোগও রয়েছে। বিগত কয়েক বছরে নাভানা সিলভার ডেল এবং ছায়াবিথী ইস্টার্ন হাউজিং প্রজেক্টের মত প্রকল্পগুলো নতুন নতুন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এবং আবাসন প্রকল্প নির্মাণের মাধ্যমে যে ঘটনার স্বাক্ষর রেখেছে। ফলে অন্যান্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও বাসাবো এলাকার প্রতি দিন দিন আকর্ষিত হচ্ছেন গড়ে উঠছে বাসাবোতে বিক্রির জন্য অ্যাপার্টমেন্ট।
বাসাবোতে প্রপার্টি
বাসাবো এখনো একটি উন্নয়নশীল এবং অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি এলাকা। এটি মূলত একটি আবাসিক এলাকা যার কাছেই রয়েছে বিশাল করপোরেশন হাব এবং বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল। বাসাবোতে বর্তমানে বিখ্যাত এবং বিশ্বস্ত ডেভেলপারেরা ভবন নির্মাণ করেছেন। এখানে ৭০০ থেকে ১৬০০ বর্গফুটের বিভিন্ন ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট পাওয়া সম্ভব ন্যায্যমূল্যে। বাসাবোতে আছে টেকভেন প্রপার্টিজ লিমিটেডের প্রকল্প টেকভেন মতিন হাইটস যেটি অনেক মানুষের পছন্দের। বাসিন্দারা সাধারণত ১০০০ স্কয়ারফুটের আশেপাশের ফ্ল্যাট পছন্দ করেন। বাসাবোতে ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট এর ভাড়াও বেশ নাগালের মাঝেই থাকে যা মধ্যবিত্তের জন্য বেশ দরকারী।
ঢাকার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক হাব মতিঝিলের খুব কাছেই অবস্থিত হওয়ায় বাসাবো বাণিজ্যিক প্রকল্প গড়ে উঠবার জন্যও বেশ সম্ভাবনাময় একটি স্থান। এখানে কিছু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং প্রাইভেট ব্যাংকের উপস্থিতি এলাকার মানুষের ব্যাংকিং পরিষেবা গ্রহণকে সহজ করে তোলে। কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যাংকের মধ্যে আছে অগ্রণী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, ব্রাক ব্যাংক লিমিটেড ইত্যাদি। ব্যাংক ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে ইউথ ফর বাংলাদেশ, লিগ্যাল ফোরাম বাংলাদেশ, ব্যাসিক বিল্ডারস বাংলাদেশ ইত্যাদি। এর বাইরেও অসংখ্য ফাস্ট ফুড চেইন এবং শপিং মলও গড়ে উঠছে বাসাবোতে যা একটি আবাসিক এলাকা হিসেবে এর চাহিদা ও মান দিন দিন বৃদ্ধি করেই চলেছে।
যোগাযোগব্যবস্থা
ধর্মরাজিকা বৌদ্ধ মন্দির সংলগ্ন এলাকাই বাসাবোর মূল ট্রান্সপোর্টেশন হাব হিসেবে কাজ করে। এখান থেকেই মতিঝিল, গুলিস্তান, দক্ষিণ বনশ্রী, সায়েদাবাদ, খিলগাঁও, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করা সম্ভব। খিলগাঁও ফ্লাইওভার উদ্বোধনের পর এলাকার ট্রাফিক জ্যামের ভয়াবহতাও কমেছে অনেকটাই। রিকশা এবং টেম্পু সার্ভিস থাকার কারণে বাসাবোর অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থাও বেশ ভালো। গোরান এবং মুগদার সাথে যোগাযোগে টেম্পু স্ট্যান্ড বেশ বড় ভূমিকা রাখে। সম্প্রতি এই এলাকার রাস্তাঘাটের বেশ উন্নয়ন ও সংস্কারসাধন করা হয়েছে যা এলাকার ভেতরে যাতায়াতকে করেছে আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। সব মিলিয়ে দক্ষিণ ঢাকার সাথে বাসাবোর যোগাযোগ বেশ ভালো।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
যে কোন উন্নত আবাসিক এলাকার জন্য ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি আবশ্যক। বাসাবো এবং এর আশেপাশের এলাকাতেও আছে বেশ কিছু চমৎকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হল মতিঝিল মডেল স্কুল, কদমতলা স্কুল, বাসাবো গার্লস হাই স্কুল, দ্বীপশিখা প্রি-ক্যাডেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সবুজবাগ গভর্নমেন্ট কলেজ, ইম্পেরিয়াল স্কুল ইত্যাদি। বাসাবোতে বাংলা এবং ইংরেজি মিডিয়ামের বেশ কিছু স্কুল ও কিন্ডারগার্ডেন স্কুল এলাকাটিতে রয়েছে।
চিকিৎসাসুবিধা
বাসাবো এবং এর আশেপাশে বেশ কিছু মেডিক্যাল সেন্টারের উপস্থিতি রয়েছে। ইসলামি ব্যাংক হসপিটাল সম্প্রতি এখানে একটি মেডিক্যাল সেন্টার খুলেছে. এছাড়াও আছে আরও বেশ কিছু ক্লিনিক। আছে বেশ কিছু স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতাল যেমন ভিএসএস চক্ষু হাসপাতাল, সেন্ট্রাল বাসাবো জেনারেল হাসপাতাল, বাসাবো ডায়াবেটিক হসপিটাল, সেন্টার ফর হেলথ ইত্যাদি। ব্যাসিক ডায়াগনোস্টিক অ্যান্ড কনসাল্টেশন সেন্টার, এমএস মেডিক্যাল সেন্টার এবং সেবা মেডিক্যাল সেন্টারের মত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানও আছে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত।
পার্ক ও চিত্তবিনোদন
বাসাবোর বাসিন্দাদের চমৎকার দুটো মাঠে অ্যাক্সেস আছে, বালুর মাঠ এবং খেলার মাঠ বা বাসাবো মাঠ। বালুর মাঠ একসময় ছিল একটি খোলা উন্মুক্ত জায়গামাত্র। সেটিই কালক্রমে পরিবর্তন এবং সৌন্দর্য্যবর্ধনের মাধ্যমে আজকের বালুর মাঠ। এখানে অন্যান্য চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থার পাশাপাশি একটি ছোট পুকুরও কাঁটা হয়েছে। বছরজুড়েই এখানে হয় রাজনৈতিক এবং সামাজিক অনেক আচার-অনুষ্ঠান। নানাধরণের খেলাধুলার ব্যবস্থাও থাকে এখানে দিনভর। ব্যস্তজীবনের ক্লান্তি ভুলিয়ে এসব খেলাধুলা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান এলাকার বাসিন্দাদের এক করে তোলে।
ঐতিহাসিক স্থাপনা
ধর্মরাজিকা বৌদ্ধমঠ বাসাবোর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্থাপনা। এটি যে শুধুমাত্র দৃষ্টিনন্দন তাই নয়, বরং এটি আমাদের সংস্কৃতির সাথেও জড়িত। ভারত বিভাগের পর প্রথম বৌদ্ধমঠ হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ সালে। সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িত থাকায় এবং অভাবী মানুষের পাশে থাকায় এটি বিখ্যাত। বাসাবোয় অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটে ঐতিহাসিক এ স্থাপনা ভ্রমণে।
মসজিদ ও অন্যান্য উপাসনালয়
মসজিদ, মন্দির এবং মঠের সহাবস্থানে বাসাবো চমৎকার ধর্মীয় সম্প্রীতির নিদর্শন বহন করে চলে। বৌদ্ধমঠের অবস্থান মুগদার দিকে আর মসজিদ ছড়িয়ে আছে সমগ্র বাসাবো এলাকাজুড়ে। সব ধর্মাবলম্বী মানুষেরা এখানে মিলেমিশে বাস করেন এবং নিজ নিজ ধর্ম পালন করেন।
আশেপাশের এলাকা
এই এলাকার উত্তর দিকে আছে খিলগাঁও, রামপুরা, মালিবাগ আর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে আছে মতিঝিল, কমলাপুর এবং মুগদা এলাকা। ঢাকা দক্ষিণে যাদের নিয়মিত যাতায়াত করতে হয় তাদের জন্য বাসাবো বেশ কার্যকরী একটি লোকেশন। খিলগাঁও ফ্লাইওভার এবং হাতিরঝিল প্রজেক্ট আরও বেশ কিছু এলাকার মতই বাসাবোকেও সংযুক্ত করেছে সফলতার সাথে। বর্তমানে রাস্তাঘাটের উন্নয়নও চলছে বেশ জোরেসোরে।
বাসাবোর জীবনযাপন
খাবার ও রেস্টুরেন্ট
লোকাল রেস্টুরেন্ট আর ক্যাফের কথা উঠলে বাসাবোতে আছে অনেক অপশন। খিলগাঁওতে সাম্প্রতিক সময়ে ফাস্ট ফুড মার্কেট বেশ চাঙ্গা। ভোজনরসিক এবং ফুড ব্লগারদের জন্য বর্তমানে বাসাবো এবং আশেপাশের এলাকা বর্তমানে সবচেয়ে পছন্দের জায়গা কারণ সমগ্র এলাকাতেই আছে নানা মানের এবং নানা ধরণের রেস্টুরেন্ট। যেমন দ্যা সিজল রেস্টুরেন্ট, মাছের বাড়ি - এ সি-ফুড প্যালেস, ক্যাফে মারমেইড, রেড হট চিকেন বিরিয়ানি অ্যাড কেবাব হাউজ, কাবাবওয়ালা ইতায়দি রেস্টুরেন্ট। সম্প্রতি বাসাবোতে বেশ কিছু ফুডকোর্টও চালু হয়েছে।
শপিং এর গন্তব্য
যদিও বাসাবোতে তেমন বিখ্যাত কোন শপিং মল নেই তবুও এই এলাকায় এবং আশেপাশেই আছে বিখ্যাত সব ব্র্যান্ড যেমন আড়ং, অ্যাপেক্স বা লে-রিভের আউটলেট। এর বাইরে আছে মীনাবাজার এবং স্বপ্নের মত সুপারশপ যা এলাকাবাসীর দৈনন্দিন চাহিদা মেটায়। বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক স্টোর যেমন ট্রান্সকম ডিজিটাল, ইলেক্ট্রোমার্ট, বেস্ট ইলেক্ট্রনিক্স এবং সনি র্যাংগসের শো রুমও খুঁজে পাওয়া যাবে এখানে। সব মিলিয়ে বাসাবোতে সবকিছুই আছে একটু একটু করে যা আবাসিক এলাকা হিসেবে একে করে তোলে আরও বাসযোগ্য!