একনজরে মগবাজার
মগবাজার সম্পর্কে
ঢাকা শহরের অত্যন্ত চেনা পরিচিত ও সুপ্রাচীন একটি এলাকা মগবাজার। এমনকি ঢাকায় মুঘল শাসনের সময়কালেও এই এলাকার নাম শোনা যায়। এই এলাকার আইকনিক স্থাপনা হিসেবে একসময় দাঁড়িয়ে ছিল মগবাজার ওভারব্রিজ। কালের পরিক্রমায় সে ওভারব্রিজ গুড়িয়ে সেখানে স্থান হয়েছে সুবিশাল মগবাজার - মালিবাগ ফ্লাইওভারের। এলাকাটি ঢাকা শহরের মাঝে চমৎকার একটি লোকেশনে অবস্থিত যেখানে বসবাস এলাকাবাসীর জন্য খুবই সুবিধাজনক। মগবাজার এলাকাটি নয়াতলা, মধুবাগ এবং কিছু ক্ষেত্রে মীরবাগ পর্যন্ত বিস্তৃত।
এলাকাজুড়ে আছে অসংখ্য রাস্তাঘাট যেগুলোর আছে বাহারী নাম। অনেক রাস্তার নামের শেষেই এখানে “গলি” জুড়ে দেয়া আছে, যেমন পীরের গলি, বাটা গলি, ডক্টর গলি ইত্যাদি। বাইরে থেকে আসা কোন মানুষের জন্য এসব গলি খুঁজে বের করা কিছুটা কঠিন মনে হলেও এলাকার বাসিন্দাদের কাছে এসব গলি হাতের উল্টোপিঠের মতই চেনা পরিচিত। মগবাজার এবং আশপাশের এলাকায় আছে বেশকিছু নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতিও। আর সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন উন্নতির কারণেই এলাকায় বেড়েছে আবাসনের চাহিদা এবং বসবাসের জন্য আকর্ষণীয়। শান্তিতে জীবন যাপনের জন্য আছে প্রায় সকল সুবিধা যার মধ্যে চমৎকার যোগাযোগব্যবস্থা অন্যতম।
যোগাযোগব্যবস্থা
যোগাযোগের কথা উঠলে অতীতের তুলনায় অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে মগবাজার এলাকার। একসময় মগবাজার ছিল যানজটের এলাকা। কিন্তু যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির কারণে আজ অবস্থার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণের সাথেই এই এলাকার কানেক্টিভিটির উন্নতি অনেকাংশে জড়িত। এছাড়া হাতিরঝিল প্রকল্পও অনেক ভূমিকা রেখেছে এলাকার যানজট নিরসনে। চমৎকার কানেক্টিভিটি থাকার কারণে মগবাজার থেকে গুলশান, আফতাবনগর বা খিলগাঁয়ের মত এলাকায় চলে যাওয়া সম্ভব খুব সহজেই। এলাকার বাইরে যোগাযোগের জন্য রয়েছে সিটিবাস, সিএনজি, ট্যাক্সি আর অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য আছে পর্যাপ্ত পরিমাণ রিকশা।
মগবাজার এলাকা সম্পর্কে বিস্তারিত
আবাসিক এলাকা হিসাবে মগবাজার
Tমগবাজার আবাসিক এলাকা হিসেবে বরাবরই জমজমাট। এলাকায় চলমান রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট সেই ইঙ্গিতই দেয়। অনেক আগে থেকেই এটি একটি জনপ্রিয় ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্তের জন্য চমৎকার একটি এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয় একে এফোর্ডিবিলিটি বিবেচনায়। নয়াতলা এবং মধুবাগে অ্যাপার্টমেন্টের দাম ও ভাড়া সবচেয়ে আকর্ষণীয়। সেই মুঘল আমল থেকে এলাকার অস্তিত্ব থাকায় অনুমিতভাবেই এই এলাকার অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তবে এখনো সুযোগ আছে আরও উন্নতি ও পরিবর্তনের।
মগবাজারে প্রপার্টি
আবাসিক এবং বাণিজ্যিক, মগবাজারে আছে দুধরণের প্রপার্টিই। এলাকায় আছে বেশ কিছু কমার্শিয়াল প্রপার্টি এবং রেসিডেন্সিয়াল প্রপার্টি। বিখ্যাত সব ডেভেলপার কোম্পানি পুরো মগবাজার জুড়েই নানা লোকেশনে সুন্দর সব অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং গড়ে তুলছে যা এলাকার সৌন্দর্য্যকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। এর বাইরেও মগবাজারে রয়েছে পুরাতন সব বাড়িঘর, সরকারী হাউজিং এবং কোয়ার্টার, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিস। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড বা বিটিসিএল-এর বিশাল একটি অফিসও আছে মগবাজারে যা অন্য এলাকা থেকে একে আলাদা করে তোলে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
দেশের কয়েকটি বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় স্কুল কলেজের ঠিকানা মগবাজার। সুশিক্ষা প্রদানে মগবাজারের এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম দেশজুড়ে। বিখ্যাত কিছু স্কুল কলেজের মধ্যে আছে মগবাজার ইস্পাহানী স্কুল ও কলেজ, মগবাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেইন্ট প্যাট্রিক গ্রামার স্কুল, ন্যাশনাল ব্যাংক পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী ইউনিভার্সিটি কলেজ ইত্যাদি। এছাড়া কাছেই আছে মগবাজার গার্লস হাই স্কুল এবং ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
চিকিৎসা সুবিধা
মগবাজার এবং এর আশপাশের এলাকা দেশের সবচেয়ে বিখ্যাত ও আধুনিক হাসপাতালে পরিপূর্ণ। হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ এবং আদ-দ্বীন হাসপাতালের সুনাম শোনা যায় অনেক, বিশেষ করে প্রসূতি মায়ের সেবা ও চিকিৎসায় এ দুটো হাসপাতাল বিখ্যাত। এছাড়া এলাকায় আরও বেশ কিছু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল রয়েছে যার মধ্যে ঢাকা কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইন্সাফ বারাকাহ হসপিটাল উল্লেখযোগ্য। সিরাজুল ইসলাম হাসপাতাল এলাকায় বেশ বিখ্যাত এবং দেশের একতিই বৃহত্তম বেসরকারি মেডিক্যাল স্কুল হিসেবে প্রসিদ্ধ। এত এত হাসপাতাল থাকায় এলাকায় ফার্মেসিরও অভাব নেই, আছে লাজ ফার্মা, একেএক ফার্মেসি, ফাইন ফার্মা এবং এরূপ আরও অনেক ফার্মেসি।
পার্ক ও চিত্তবিনোদন
পার্ক ও খোলা মাঠের কথা চিন্তা করলে এদিক থেকে মগবাজার এলাকাটি কিছুটা পিছিয়েই থাকবে। তেমন পরিকল্পিত পার্ক বা খেলার মাঠ না থাকলেও স্কুল কলেজের নিজস্ব খেলার মাঠ রয়েছে যেগুলো খেলাধুলা ছাড়াও নানা কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়া নয়াতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে আছে নয়াতলা পার্ক, আছে বিটিসিএল শিশু পার্ক যেখানে বিকেল সন্ধ্যায় ছোট বাচ্চা এবং তাদের অভিভাবকদের ভিড় দেখা যায়। এর বাইরে হাতিরঝিল শিশু পার্কের দুরত্বও কাছাকাছি হওয়ায় অনেক মগবাজারবাসী চিত্তবিনোদনের জন্য সেখানেও যান।
ধর্মীয় উপাসনালয়
পুরো মগবাজার জুড়েই আছে অসংখ্য মসজিদের সমাহার। ঠিক মগবাজার সার্কেলেই আছে মগবাজার চৌরাস্তা জমে মসজিদ। বাইতুল মামুর জামে মসজিদ, মগবাজার চারুলতা মার্কেট জামে মসজিদও থাকে মুসুল্লীদের আনাগোনায় মুখরিত। অন্যদিকে এলাকার হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা চাইলে চলে যেতে পারেন দেশের প্রাচীনতম এবং বিখ্যাত মন্দিরের একটি সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরে যা কাছেই সিদ্ধেশ্বরী লেইনে অবস্থিত।
আশেপাশের এলাকা
ঢাকা শহরের জনবহুল ও জনপ্রিয় সব এলাকা যেন ঘিরে আছে মগবাজারকে। দক্ষিণে বেইলি রোড, রমনা, শান্তিনগর আর সিদ্ধেশ্বরী, উত্তরে তেজগাঁও, ফার্মগেট আর নয়াতলা, পশ্চিমে ইস্কাটন আর পূর্বে মালিবাগ, মৌচাক, কোন এলাকাই যেন মগবাজার থেকে দূরে নয়! আর এমন একটি কেন্দ্রবিন্দুতে থাকাইয় সবধরনের সুযোগসুবিধা ভোগ করেন এলাকার বাসিন্দারা।
মগবাজারে জীবনযাপন
খাবার এবং রেস্টুরেন্ট
খাবারের প্রসঙ্গ উঠলে মগবাজার নামটি অনেক ভোজনরসিকের জ্বিভে জল আনতে সক্ষম। ফখরুদ্দীন রেস্টুরেন্ট, শর্মা হাউজ, অ্যারাবিয়ান শর্মা হাউজ কয়েকটি বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট। দেশের প্রথম বাংলা-চাইনিজ রেস্টুরেন্ট হিসেবে ধরা হয় মগবাজারে থাকা দ্যি গ্রেট চ্যাং পেই রেস্টুরেন্টকে। এছাড়াও আছে ক্যান্টন চাইনিজ রেস্টুরেন্ট যা এলাকাবাসীর বেশ পছন্দ। এসবের বাইরেও একালায় সাধারণ খাবারে দোকান, রেস্টুরেন্ট এবং ফুড কার্ট রয়েছে। রাস্তার ধারের এসব দোকানেও সব সময়ই ভিড় লেগেই থাকে যা সবচেয়ে বেশি হয় সন্ধ্যার দিকেই।
শপিংএর গন্তব্য
মগবাজারের শপিং হাব হিসেবে একসময় খ্যাতি ছিল “বিশাল সেন্টার”-এর। যে কোন উৎসব বা সবধরনের কেনাকাটার জন্য এটি সবার প্রথম চয়েস ছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে সেই জৌলুস অনেকটাই কমে গিয়েছে। বিশেষ করে বিখ্যাত আড়ং মগবাজারে একটি ব্রাঞ্চ খোলার পর থেকেই এই এলাকার অনেকটুকু মার্কেট শেয়ার তারা দখল করে নিয়েছে এবং একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি হয়েছে। নতুন নতুন বেশ কিছু শপিং এর গন্তব্য তৈরি হয়েছে মগবাজার ও আশপাশের এলাকায়। যেমন কেউ যদি ফ্যাশনেবল বা টেকশই চশমার খোঁজে থাকেন, সেঞ্চুরি আর্কেড শপিং সেন্টার হতে পারে চমৎকার ঠিকানা। দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য আগোরা বা স্বপ্নের মত সুপারশপের উপস্থিতিও রয়েছে।