মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডা সম্পর্কে বিস্তারিত
একনজরে মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডা
ক্যান্টনমেন্ট থানা ও গুলশান থানার কিছু অংশ নিয়ে ১৯৮৮ সালে মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডা এলাকাটি গড়ে ওঠে। বৃহত্তর বাড্ডার মাঝে দক্ষিণ বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, মেরুল বাড্ডা, টেকপাড়া, মেরুল, সোনা কাটরা, বৈঠকালি, ডিআইটি প্রজেক্ট, পূর্ব মেরুল বাড্ডা, আনন্দ নগর এবং আফতাব নগর নিয়ে পুরো মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডা এলাকাটি গড়ে উঠেছে। প্রগতি সরণির দুপাশের অফিস ও জনবসতি নিয়ে এ এলাকা। এছাড়া ডিআইটি এবং আফতাব নগর সহ বেশ কিছু জায়গায় রেসিডেনসিয়াল ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের কাজ চলছে। হাতিরঝিলের ঠিক পাশেই বলে এখান থেকে গুলশান, নিকেতন তো বটেই; এমনকি সেন্ট্রাল ঢাকার কারওয়ান বাজার ও বাংলামোটরের মতো জায়গাগুলোতেও বেশ সহজে যাতায়াত করা যায়।
মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডা এলাকা সম্পর্কে
আবাসিক এলাকা হিসাবে মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডা
দক্ষিণ বাড্ডা এলাকাটি মেইন রোডের দিকে বেশ ব্যস্ত ও প্রাণবন্ত। কিন্তু খানিকটা ভেতরের এলাকা; যেমন আফতাব নগরের দিকে পরিবেশ শান্ত ও নিরিবিলি। এদিকটা মূলত আবাসিক এলাকা এবং থাকার জন্য ভীষণ সাশ্রয়ী। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গা যেমন গুলশান, বারিধারা, কারওয়ান বাজার থেকে কাছে বলে চাকরিজীবীরাও এদিকটায় থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। হাতিরঝিলের কারণে এখন মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডা এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও সহজ হয়েছে। এ এলাকার প্রপার্টিগুলো এখনো বেশ সাশ্রয়ী তবে এর চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। তাই মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডায় বিনিয়োগ এখন অবশ্যই আপনার জন্য লাভজনক হবে। বসবাসের জন্য মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডার অন্যান্য এলাকাগুলোর তুলনায় আফতাব নগরের জনপ্রিয়তা বেশি এবং এর গঠন-পরিকল্পনাও একটু আলাদা। প্রশস্ত রাস্তা ও সুপরিকল্পিত ব্লকের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই এলাকাটি বেশ নিরিবিলি। তাই ঢাকার শশব্যস্ত জীবন থেকে ক্ষণিক মুক্তির জন্য ছুটে যেতে পারেন আফতাব নগরে।
মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডার প্রপার্টিগুলো
মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডার বেশিরভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কিত কাজগুলো দুটো প্রধান সড়ক প্রগতি সরণি ও গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডকে কেন্দ্র করে হয়। এ রাস্তা দুটোর উভয় পাশে বাজার, ব্যাংক, রেস্টুরেন্ট, শোরুম ও ব্র্যান্ড আউটলেট আছে। মধ্য, দক্ষিণ এবং মেরুল বাড্ডা বেশ উন্নত হয়ে যাওয়ায় ভেতরের এলাকাগুলো আবাসিক হিসেবে গড়ে উঠেছে। এখানে কিছু কিছু হাউজিং প্রজেক্টের কাজও চলছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রজেক্টটি হলো শান্ত ও নিরিবিলি আফতাব নগর। কোলাহলপূর্ণ ঢাকায় আফতাব নগর যেন এক প্রশান্তির উদ্যান। তাই এখানকার প্রপার্টিগুলোর চাহিদাও বাড়ছে। আফতাব নগরের আরো একটি চমৎকার বিষয় হলো সকালবেলার হাট। প্রতিদিন সকালে এখান থেকে টাটকা শাকসবজি ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য কেনা যায়।
যাতায়াত ব্যবস্থা
মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডার যাতায়াত ব্যবস্থা এক কথায় চমৎকার। প্রথমত, প্রগতি সরণি ও গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডের মতো বড় দুটো সড়ক এ এলাকাটির যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করেছে। অনেকগুলো বাস সার্ভিসই এখান থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আসা-যাওয়া করে। তবে এলাকার ভেতরে চলাচলের জন্য রিকশাই এখানে সবচাইতে ভালো অপশন। এছাড়া হাতিরঝিলের কাছে হওয়ায় মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডা থেকে নিকেতন, গুলশানসহ সেন্ট্রাল ঢাকার অন্যান্য এলাকায় পৌঁছে যাওয়া যায় ভীষণ সহজে। হাতিরঝিল বাস সার্ভিস ও হাতিরঝিল ওয়াটার ট্যাক্সি নামে হাতিরঝিল এলাকার দুটো নিজস্ব গণপরিবহনও রয়েছে, যা মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডা নিবাসীদের জন্য ভীষণ সুবিধাজনক। এ সার্ভিস দুটো সবসময়ই পাওয়া যায় এবং যাতায়াতের সময় কমাতে ভীষণ কার্যকর। আগামীতে ঢাকা মেট্রো প্রজেক্টের এমআরটি লাইন-১ (এয়ারপোর্ট রেল লিংক) এই এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থাকে আরো সহজ করবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডায় বেশ কিছু নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আফতাব নগরে অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির নাম এ তালিকায় সবার ওপরে থাকবে। এছাড়া দক্ষিণ বাড্ডায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস রয়েছে। দেশের সেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিও মেরুল বাড্ডায় ক্যাম্পাস তৈরি করছে। এ এলাকার নামকরা স্কুলগুলোর মধ্যে রয়েছে বাড্ডা হাইস্কুল এবংইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজের বারিধারা ব্র্যাঞ্চ।
হাসপাতাল ও অন্যান্য চিকিৎসাকেন্দ্র
মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডার অধিবাসীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে এই এলাকায় পর্যাপ্ত চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে। মধ্য বাড্ডায় লায়নস আই হসপিটাল, মেরুল বাড্ডায় ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও এআইএমএস হসপিটাল এবং আফতাব নগরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ইউনিয়ন স্পেশালাইজড হসপিটাল। এছাড়াও মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডার বিভিন্ন অংশে ফার্মেসির সংখ্যাও কম নয়।
ধর্মীয় উপাসনালয়
ধর্মীয় উপাসনালয় খুঁজতে মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডাবাসীকে অন্য এলাকায় যেতে হয় না। এলাকায় রয়েছে অসংখ্য মসজিদ, যার মধ্যে ডিআইটি প্রজেক্ট এরিয়ার বায়তুল রহমান জামে মসজিদ সবচেয়ে মনোরম। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য মেরুল বাড্ডায় রয়েছে মেরুল বাড্ডা দুর্গা মন্দির। মেরুল বাড্ডায় আরো রয়েছে একটি বৌদ্ধ মঠ। খ্রিস্টান ধর্মের কোনো উপাসনালয় ঠিক এ এলাকায় না থাকলেও খুবই কাছের উত্তর বাড্ডায় অনেকগুলো গির্জা রয়েছে। এর মধ্যে বারিধারা ব্যাপ্টিস্ট চার্চের নাম উল্লেখযোগ্য।
আশপাশের এলাকা
মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডার ঠিক পার্শ্ববর্তী এলাকা দুটো হলো রামপুরা ও বনশ্রী। রামপুরা ব্রিজ দিয়ে এ এলাকাগুলোয় যাতায়াত করা যায়। এ ব্রিজটি মূলত মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডার প্রধান দুটো সড়ক অর্থাৎ প্রগতি সরণি ও ডিআইটি রোডের মাঝে সংযোগ স্থাপন করেছে। গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড দিয়ে সহজেই গুলশান, মহাখালীতে আসা-যাওয়া করা যায়। হাতিরঝিল দিয়ে নিকেতন, তেজগাঁও সহ সেন্ট্রাল ঢাকার অন্যান্য এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থাও বেশ সহজ। আর প্রগতি সরণি ধরে উত্তর দিকে এগোলে আপনি বারিধারা, বসুন্ধরা এবং উত্তরায় যেতে পারবেন।
মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডায় জীবনযাপন
খাবার এবং রেঁস্তোরা
ভোজনরসিকেরা বেশ খুশি মনেই মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারেন। রাস্তার পাশের মুখরোচক স্ন্যাকস থেকে শুরু করে সুস্বাদু বিরিয়ানি, তেহারি - এ এলাকায় সবই পাবেন আপনি। গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডে অবস্থিত নয়ন বিরিয়ানি হাউসের বিরিয়ানির নামডাক রয়েছে সমস্ত শহরজুড়ে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এ বিরিয়ানির স্বাদ নিতে ছুটে আসে। এছাড়া হাতিরঝিলের গুদারাঘাট ও আফতাব নগরে রয়েছে বাহারি স্ট্রিট ফুডের দারুণ আয়োজন। তবে খানিকটা অভিজাত পরিবেশে খেতে চাইলে রয়েছে বিভিন্ন ফাস্ট ফুড এবং থাই-চাইনিজ রেস্টুরেন্ট।
পার্ক ও বিনোদন
হাতিরঝিলের রাস্তাগুলো নির্মাণ করার মূল উদ্দেশ্য ছিলো শহরের দূরবর্তী এলাকাগুলোর সাথে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করা। তবে পাশাপাশি এটি এখন ঢাকার সবচেয়ে মনোরম রাস্তাগুলোর মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে। প্রশস্ত ফুটপাত, সবুজের ছোঁয়া ও বসার সুব্যবস্থা থাকায় পথচারীদের জন্যও হাতিরঝিল একটি চমৎকার রাস্তা। হাতিরঝিলের ফুটপাত ধরে হাঁটার অভিজ্ঞতা পার্কে মর্নিং ওয়াকের মতো প্রশান্তির। এছাড়া রয়েছে হাতিরঝিল ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস। এটি মূলত অফিসে যাওয়া-আসার বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে হাতিরঝিল লেকের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের জন্যও এ ওয়াটার ট্যাক্সি রাইড হতে পারে ভীষণ আকর্ষণীয়। আফতাব নগরের লেকটিও নগরবাসীর কাছে খুব জনপ্রিয়। নাগরিক জীবনে প্রকৃতি ও গ্রামীন আবহের ছোঁয়া পেতে অনেকেই সপ্তাহান্তে বা ছুটির দিনে এ লেকটিতে ঘুরতে যান।
কেনাকাটা
মধ্য ও দক্ষিণ বাড্ডার একমাত্র বড় শপিং কমপ্লেক্সটি হলো মধ্য বাড্ডায় অবস্থিত লুতফুন শপিং কমপ্লেক্স। তবে পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোয় বেশ কিছু শপিং মল রয়েছে। সবচেয়ে কাছের এলাকা গুলশানে রয়েছে পুলিশ প্লাজা। হাতিরঝিল রুট ধরে গুলশানের দিকে অল্প এগোলেই পৌঁছে যাবেন সেখানে। পুলিশ প্লাজার বিভিন্ন তলায় রয়েছে ফ্যাশন শোরুম, কসমেটিক্সের দোকান, ইলেকট্রনিক্স স্টোর ও একটি বড় ফুডকোর্ট। এ এলাকার কাঁচাবাজারের সহজ সমাধান মধ্য বাড্ডার কাঁচা বাজার। তাছাড়া আফতাব নগরের সকালবেলার হাট থেকে তাজা ফল ও শাকসবজি কেনার সুবিধা তো রয়েছেই।