একনজরে মালিবাগ
মালিবাগ সম্পর্কে
মালিবাগের নাম শুনলেই প্রাণবন্ত ও ব্যস্ত এলাকার চিত্রই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। জনজীবন ও পুরো শহরের সাথে এ এলাকা ভীষণভাবে সংযুক্ত। বসতি স্থাপনের জন্য বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোক মালিবাগে আসে। বহু বছর ধরে এ এলাকা ধারণ করছে এসব মানুষের সুখ-দুঃখের কাব্য। অনেকেই বলেন মালিবাগ আবাসিক এলাকা হিসেবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর এ কথাটি সত্যি প্রমাণ করে এ এলাকার দারুণ সব রেস্তোরাঁ, নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা এবং অবশ্যই সাশ্রয়ী আবাসন সুবিধা। মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, গুলবাগ, চামেলীবাগ, শান্তিবাগ- মালিবাগের এ এলাকাগুলোতে বিভিন্ন রকমের আবাসন পাবেন আপনি। মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভার এ এলাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ। যানজট থেকে রেহাই দিয়ে এ এলাকা থেকে সহজ যাতায়াতের সুবিধা দিয়েছে এটি। স্বনামধন্য আবুল হোটেলের সামনে ভোজনরসিকদের ভিড়, সান্ধ্যকালীন আড্ডা, এলাকাবাসীর সৌহার্দ্য- সব মিলিয়ে মালিবাগ একটি দারুণ এলাকা।
মালিবাগ সম্পর্কে বিস্তারিত
আবাসিক এলাকা হিসেবে মালিবাগ
মালিবাগ মূলত আবাসিক এলাকা হিসেবেই জনপ্রিয় এবং আবাসনের সকল ধরনের উন্নত সুবিধা পাবেন এখানে। যারা সাধ্যের মধ্যে বাসা ভাড়া নিতে চান, তাদের জন্য এ এলাকাটি বেশ উপযোগী। একরুমের বাসা থেকে শুরু করে আয়তনে বড় বাসাও পাবেন এখানে। গোছানো ও পরিপাটি কমিউনিটি পাওয়া যাদের চাহিদা, তারা থাকার জন্য চামেলীবাগকে বেছে নিতে পারেন। অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে চাইলেও এ এলাকা নির্দ্বিধায় বেছে নিতে পারেন আপনি। পাশাপাশি কমার্শিয়াল স্পেস কিনতে বা ভাড়া নিতে ইচ্ছুক যারা, তাদের জন্যও একটি চমৎকার এলাকা হতে পারে মালিবাগ।
মালিবাগের প্রপার্টি
চমৎকার কিছু অ্যাপার্টমেন্ট পাবেন মালিবাগ এলাকায়। আবাসিক ও বাণিজ্যিক দু ধরনের প্রপার্টিই এখানে রয়েছে। বেশিরভাগ অ্যাপার্টমেন্টই রেডি অবস্থায় পাবেন তবে কিছু অ্যাপার্টমেন্ট এখনো নির্মাণাধীন। ছোট বা নিউক্লিয়ার পরিবারগুলো সহজেই এখানে ছোট বাসা খুঁজে নিতে পারবেন। চাকরিজীবী যেসব অভিভাবকেরা বাচ্চাদের নামকরা স্কুল কলেজে পড়াতে চান, তাঁদের জন্যও এলাকাটি ভীষণ উপযোগী। যাতায়াত সুবিধার কারণে অন্যান্য এলাকায় যাতায়াতও তাঁদের জন্য সুবিধাজনক হবে। মালিবাগের বাণিজ্যিক প্রপার্টির তালিকায় আছে বেশ কিছু অফিস; যার মধ্যে আছে টেলিভিশন চ্যানেলের অফিস থেকে শুরু করে নামকরা ব্যাংকের শাখা।
যাতায়াত ব্যবস্থা
মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভার এ এলাকার ট্র্যাফিক জ্যাম কমাতে ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সেইসাথে ডিআইটি রোড এ এলাকার যাতায়াতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মালিবাগ মোড় ঢাকার বেশ কিছু এলাকার জংশন হিসেবে কাজ করে। মালিবাগের রাস্তা থেকে বাস, রিকশা ও টেম্পো পাওয়া বেশ সহজ। সোহাগ বাস কাউন্টারও রয়েছে মালিবাগেই, যা এ এলাকায় থাকার ক্ষেত্রে একটি বেশ বড় সুবিধা। হাতিরঝিলের কাছাকাছি হওয়ায় ঢাকার অন্যান্য এলাকায় যাওয়াও এখান থেকে খুব সহজ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
মালিবাগে থাকতে চাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো এলাকার ভেতরে বা পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোয় নামকরা বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান। সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা সায়েন্স কলেজ এবং আবুজর গিফারী কলেজ মালিবাগের ভেতরেই অবস্থিত। ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতো প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মালিবাগ থেকে খুবই কাছে। কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট টিউটরও মালিবাগ এলাকায় প্রচুর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর কোচিং সেন্টারের ব্যাপকতা- দুটোই অভিভাবকদের এ এলাকায় বসতি স্থাপনে আগ্রহী করে।
চিকিৎসা সুবিধা
মালিবাগে চিকিৎসা সুবিধা বেশ উন্নত। ডিআইটি রোডে পাবেন ল্যাবএইড হসপিটাল আর মালিবাগের মধ্যাঞ্চলে পাবেন ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসাল্টেশন সেন্টার। এছাড়া, ডক্টর সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালও ভালো চিকিৎসা সেবার জন্য প্রসিদ্ধ। আদ-দ্বীন ওম্যান্স মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ আই হসপিটাল এবং পপুলার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারও পাবেন পার্শ্ববর্তী এলাকায়। জরুরি প্রয়োজনে ঔষধ কেনার জন্যও মালিবাগ এলাকায় প্রচুর ফার্মেসি আছে।
ধর্মীয় উপাসনালয়
মালিবাগে মসজিদের সংখ্যা একদমই অপ্রতুল নয়। মালিবাগ বাগানবাড়ি জামে মসজিদ ও মালিবাগ শাহী মসজিদ বেশ প্রসিদ্ধ। মালিবাগের ঠিক পাশেই আছে গুলবাগ জামে মসজিদ এবং গুলবাগ বাইতুল জান্নাত জামে মসজিদ। মৌচাক মার্কেটের পাশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য আছে শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির।
আশপাশের এলাকা
মালিবাগ থেকে মগবাজার, রামপুরা, খিলগাঁও, এমনকি মতিঝিলে যাতায়াতও বেশ সহজ। মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইঅভারের কল্যাণে বাংলামোটর, হাতিরপুল, তেজগাঁও এলাকায়ও আধাঘণ্টার কম সময়ে যাতায়াত করা যায়। হাতিরঝিল রোডও এখান থেকে খুব বেশি দূরে না বলে মালিবাগ থেকে গুলশান যেতেও খুব বেশি সময় লাগে না।
জীবনযাপন
খাবার ও রেস্টুরেন্ট
মালিবাগের সবচেয়ে বিখ্যাত হোটেল হলো আবুল হোটেল। শহরব্যাপী এর নামডাক শোনা যায়। মালিবাগে থাকার আরো একটি সুবিধা হলো যে, এটি খিলগাঁওয়ের ঠিক পাশেই। আর খিলগাঁওকে ‘খাবারের রাজ্য’ বললে অত্যুক্তি হবে না একেবারেই! ট্রেডিশনাল খাবারের সন্ধান করতে চাইলে যেতে পারেন দিল্লী দরবারে আর চাইনিজ খাবারের স্বাদ নিতে যেতে পারেন মিডনাইট সান রেস্টুরেন্ট।
কেনাকাটা
বেশ কিছু বিখ্যাত শপিং সেন্টার আছে মালিবাগে। শহরে এমন মানুষ কমই আছে যারা জীবনে অন্তত একবার মালিবাগের মৌচাক মার্কেটে যায়নি। এত শত শপিং মল হওয়ার আগে ধর্মীয় উৎসবগুলোর আগে সবাই এই মৌচাক মার্কেটেই ছুটতো। তবে এখনো এর নামডাক আছে। মৌচাক মার্কেটের ঠিক পাশেই পাবেন আয়েশা কমপ্লেক্স, যা ঢাকার সবচেয়ে বড় পাঞ্জাবির মার্কেট হিসেবে খ্যাত। পাইকারী দামে পাঞ্জাবি পাবেন এখানে। সাশ্রয়ী দামের জন্য মূলত এ মার্কেট দুটো পরিচিত। এছাড়াও মালিবাগে রয়েছে ফরচুন শপিং মল, টুইনটাওয়ার শপিং মল ও হোসাফ শপিং কমপ্লেক্স। খুব কাছেই মগবাজারে পেয়ে যাবেন আড়ং-এর আউটলেট।