উত্তর মিরপুর
উত্তর মিরপুর এলাকার বিস্তারিত
একনজরে উত্তর মিরপুর
পর্যাপ্ত পরিমাণে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রপার্টির সুবিধা থাকায় মিরপুরেরি এই অংশটি মধ্যবিত্তের নিকট অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি এলাকা। উত্তর মিরপুরের সেকশন ১২ ও ১৩ এর বেশিরভাগই আবাসিক প্রপার্টি আর ১০ ও ১১ নম্বর সেকশনে আপনি আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয় ধরণের প্রপার্টির খোঁজই পেতে পারেন। বিগত কয়েক দশকে মিরপুরের এই অংশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবার পরও এখনো এই এলাকা আছে, মানুষের সাধ্যের ভেতরেই। উপযুক্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মজাদার মুখোরোচক খাবারের সুবিধা, দরকারী চিকিৎসা সুবিধা এবং ব্যাবসার সুযোগ থাকায় এলাকার প্রতি মানুষের আগ্রহ দিনদিন বাড়ছেই। আর ঢাকার অন্য অংশের সাথে চমৎকার যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় এই এলাকাকে বসবাসের জন্য বেছে নেন অনেকেই।
উত্তর মিরপুর এলাকা সম্পর্কে
আবাসিক এলাকা হিসাবে উত্তর মিরপুর
ভাষানটেক থেকে মিরপুর ১০ খুব চমৎকারভাবে সাজানো গোছানো এবং দ্রুত বর্ধনশীল একটি এলাকা। ঢাকার এই অংশ সময়ের সাথে সাথে সুপ্রতিষ্ঠিত একটি এলাকায় পরিণত করেছে। এই অঞ্চলে জীবনযাপনের খরচ বেশ সাশ্রয়ী। আবাসিক সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় মিরপুর উত্তর মধ্যবিত্ত শ্রেণী বসবাসের জন্য একটি আকাঙ্ক্ষিত অঞ্চল। মিরপুর উত্তরের প্রতিটি সেকশনের বেশিরভাগ অংশ বিভিন্ন ব্লকে বিভক্ত এবং যেখানে অসংখ্য আধুনিক আবাসিক ভবন রয়েছে। এলাকাটি বেশকিছু পরিকল্পিত রাস্তা দ্বারা সংযুক্ত। স্থানীয়ভাবে দোকান এবং বাজার পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকায় যুক্তিসঙ্গত মূল্যে সহজেই যেকোন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। মিরপুর উত্তর এলাকা পুরোপুরিভাবে কাফরুল থানা এবং পল্লবী থানার অন্তর্গত, তাই এই এলাকার নিরাপত্তা শীর্ষস্থানীয়। এছাড়াও এলাকার অভ্যন্তরে বিভিন্ন সমিতির ধারাবাহিক বিকাশ সবার মধ্যে বন্ধন আরও বেশি জোরদার করে চলেছে।
উত্তর-মিরপুরে প্রপার্টি
এই সেদিন, ৯০ এর দশকের মিরপুরও আজকের মতো ছিল না। অনেকের জন্যই
এটি মূল শহর থেকে দূরে কোন একটি অঞ্চল ছিল । পরিবহনগত সুযোগ-সুবিধার অভাব এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে থাকায় এই অঞ্চলটিকে জীবনযাত্রার জন্য আদর্শ জায়গা হিসাবে বিবেচনা করা হত না কোনভাবেই। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে, সেকশন ১০, ১২, ১৩ এর অভ্যন্তরীণ রাস্তা সংস্কার, সেকশন ১৫ এর কাছে বিজয় রাকিন সিটির উন্নয়ন এবং সাম্প্রতিক মাটিকাটা সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ফলে এলাকাটি নিশ্চিতভাবে অনেক উন্নত হয়েছে। পুরো শহরেরর মাঝে আজ মিরপুর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে মিরপুরের উত্তর দিকে বেশ কিছু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, বড় বড় ব্যাংক, এনবিএফআই, সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা, রেস্তোঁরা, শপিং সেন্টার গড়ে উঠার ফলে বাণিজ্যিক প্রপার্টির জন্য বেশ দামী হয়ে উঠেছে। এখানে শহরের কয়েকটি নামীদামী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলি সম্মিলিত ফলস্বরুপ রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার এবং বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিতে মিরপুরকে একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গিয়েছে।
যাতায়াত ব্যবস্থা
মিরপুরের উত্তর অংশটি চমৎকারভাবে ঢাকা শহরের অন্যান্য রাস্তা এবং মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত। যদিও এই অঞ্চলের অভ্যন্তরে রিক্সাতেই চলাচল করা যায়, তবে মিরপুরের অভ্যন্তরে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বাসও ব্যবহার করেন অনেকে। সাম্প্রতিক সংযোজন মেট্রোরেল প্রকল্পের সাথে সাথে, ঢাকা এমআরটি লাইন হয়ে গেলে তা মিরপুরকে উত্তরা, ফার্মগেট, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মতিঝিলের সাথে সংযুক্ত করবে। দ্রুত পরিবহণের মাধ্যম বা র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের ফলে ২০ কিলোমিটারেরও বেশি জায়গা খুব সহজে চলাচল করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এতে ভ্রমণের সময় দুই তৃতীয়াংশের চেয়েও কমে যাবে। এর বাইরে মিরপুর উত্তর এলাকা মিরপুর ১১ ও মাটিকাটা সড়ক ও বনানী হয়ে কচুক্ষেত সড়ক দিয়ে উত্তরার সাথে যুক্ত। বনানী, গুলশান ১ এবং বাড্ডা স্বাচ্ছন্দ্যে যাওয়ার জন্য এখান থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাসের ক্ষেত্রে এলাকায় মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকা একটি অন্যতম চাহিদা। সেদিক বিবেচনায় এই অঞ্চলটি মর্যাদাপূর্ণ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা চলে। এসওএস হারমান মেইনার কলেজ, মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, স্কলাস্টিকার মিরপুরস্থ সিনিয়র ক্যাম্পাস, গ্রিনফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পুলিশ স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ এবং ভাষানটেক সরকারি কলেজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বিজ্ঞান বাণিজ্য ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলি উচ্চতর শিক্ষার জন্য আছে। তাছাড়া মিরপুর সেকশন ১২তে অটিস্টিক শিশুদের জন্য অটিস্টিক চিলড্রেন ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এবং সেকশন ১১তে ব্লুমিং বাডস সেন্টার ও ব্লুমিং বুডস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের মত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিশেষ যত্ন প্রয়োজন এমন শিশুদের সাপোর্ট দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। এর বাইরেও যারা আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে চান তাদের জন্য রয়েছে ট্রেইনিং ইন্সটিউট, ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিউট।
চিকিৎসা সুবিধা
মিরপুর উত্তরে গুণগতমানসম্পন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই। আয়ুর্বেদিক থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক মেডিকেল কলেজ এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মিরপুর উত্তর বেশ সবধরণের শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি রোগ নির্ণয়, রোগের চিকিত্সা, সহায়তা এবং জরুরী অবস্থায় সেবা প্রদান করে। ভাষানটেক রোডের সেন্টার ফর দ্যা রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্যা প্যারালাইজড (সিআরপি) এর মতো চিকিত্সাকেন্দ্র দেশে খুব কমই আছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিত্সা এবং পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসনের জন্য বিশেষায়িত এমন সেবা পাওয়া দুর্লভ। এর বাইরে এই অঞ্চলে কিছু চমৎকার জেনারেলাইজড হাসপাতাল এবং বিশেষায়িত চিকিত্সা কেন্দ্র রয়েছে যেমন, ডায়রিয়ার জন্য বিশেষায়িত আইসিডিডিআর, অন্যন্য সমস্ত ধরণের রোগের চিকিত্সার জন্য অলোক ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মার্কস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। অন্যদিকে, মিরপুরের পূর্ব পাশে অবস্থিত বাংলাদেশের বৃহত্তম সরকারী ডেন্টাল কলেজ ঢাকা ডেন্টাল কলেজও মিরপুর উত্তরের আশেপাশেই ধরা যায়। এখানে তর্কসাপেক্ষে পুরো এশিয়ার সেরা ওরাল এবং ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগ অবস্থিত।
মসজিদ ও অন্যান্য উপাসনালয়
মিরপুর উত্তর এলাকটিতে প্রচুর সংখ্যক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা উপাসনালয় রয়েছে।ঢাকা মসজিদের শহর, আর এই এলাকার প্রতি ১০০ মিটার বা এর চেয়েও কম দুরত্বের মধ্যেই রয়েছে মসজিদ। মিরপুর উত্তরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে থাকা অসংখ্য ধর্মভীরু মুসলিমদের জন্যই এত বেশি সংখ্যক মসজিদ আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় বায়তুল আজমত জামে মসজিদ এর কথা যা মিরপুর উত্তরের বৃহত্তম মসজিদের একটি। এর ভেতরে একসঙ্গে অসংখ্য লোক নামাজ আদায় করতে পারে। অন্যদিকে, স্কলাস্টিকার সিনিয়র ক্যাম্পাস মিরপুরের পাশে শাক্যমুনি বৌদ্ধ মন্দির এবং মিরপুর ১৩-তে সর্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির এবং সেবাশ্রম বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের জন্য উপাসনলয় হিসেবে বিদ্যমান।
আশপাশের এলাকা
মিরপুর উত্তরের পশ্চিমে আছে মিরপুর ২, মিরপুর ৬ এবং পল্লবী। মিরপুর উত্তর মিরপুরের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অংশ এবং শহরের অন্যান্য অংশের সাথে মিরপুর সেকশন ২, ১০ ও ১৪ এর মাধ্যমে দ্রুত ও চমৎকার যোগাযোগব্যবস্থা বজায় রাখে। এছাড়াও, অঞ্চলটি ঢাকা সেনানিবাস সংলগ্ন। র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের কল্যাণে মিরপুর উত্তর থেকে ভবিষ্যতে বিমানবন্দর এবং উত্তরা যাতায়াত করা হবে খুবই সহজ। অন্যদিকে, বনানী ও গুলশানের মতো বিশিষ্ট আবাসিক ও বাণিজ্যিক অঞ্চলগুলিও বেশ কাছাকাছি অবস্থিত এবং কচুক্ষেত রোড এবং স্বাধীনতা সরণীর দ্বারা সংযুক্ত।
মিরপুর উত্তরে জীবনযাপন
খাবার এবং রেস্টুরেন্ট
মিরপুর উত্তরের অন্যতম সেরা দিক এখানে থাকা বিভিন্ন মুখোরোচক খাবারের অপশন। এই অঞ্চলের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য রেস্তোরাঁগুলির মধ্যে একটি হল ১১ নম্বর সেকশনে রব্বানী হোটেল এবং রেস্তোঁরা। এই রেস্তোঁরাটির চাপ এবং কাবাব মুখের জল এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে যদি আপনি ওরিয়েন্টাল বা কন্টিনেন্টাল খাবারের সন্ধান করেন তবে সেকশন ১২ আপনার চাহিদা পূরণ করতে পারে। এগুলি ছাড়া, যদি আপনি চমৎকার ভিউসহ কোন রেস্তোঁরায় স্বুসাদু খাবার উপভোগ করতে চান তবে কালশীর মাটিকাটা রোডের দিকটা হতে পারে আপনার গন্তব্য।
শপিংএর গন্তব্য
মিরপুর উত্তরের সর্বাধিক জনপ্রিয় দুটি কেনাকাটার জায়গা বা মার্কেট হল বেনারসি পল্লী এবং নান্নু বাজার। বিয়ের কেনাকাটা এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য শুধু ঢাকা না বরং সারাদেশ থেকে মানুষ বেনারসি পল্লীতে আসেন। অন্যদিকে, নান্নু মার্কেটও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহের জন্য বিখ্যাত। সেকশন ১০ থেকে ১২ এর রাস্তাজুড়ে প্রচুর জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের আউটলেট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর আপনি এর বাইরে কিছু খুঁজলে মিরপুর উত্তর থেকে সামান্য দূরে মিরপুর ১ এবং ২ নম্বরের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আউটলেট শপিং সেন্টারগুলো নানারকমের অফার দিয়ে থাকে প্রায়ই।