একনজরে শান্তিনগর ও সিদ্ধেশ্বরী
এলাকা সম্পর্কে
কল্পনা করুন ঢাকা শহরের ভেতর একটি প্রাণচঞ্চল গলির কথা। যে রাস্তাটি মুখরিত আছে স্কুলগামী বাচ্চাদের কলকাকলিতে আর রিকশার সুমধুর টুংটাং শব্দে। যেখানে দেশের নানা জায়গা থেকে আসা নানান সংস্কৃতি মিলেমিশে একাকার। যে এলাকাটি শুধু তার নবীনদেরই নয় বরং সবসময় খেয়াল রাখে তার প্রবীণ ও কর্মজীবী মানুষের স্বস্তির দিকে। সারাদিনের কর্মব্যস্ত সময়ের পর দুদন্ড বিশ্রাম পাওয়া যায় যেখানটায়। যে এলাকায় একই সাথে আছে জাকজমকপূর্ণ ঝলমলে শপিং মল আর বসবাসের সুউচ্চ অট্টালিকা। এমনই একটি এলাকা হল শান্তিনগর ও সিদ্ধেশ্বরী যেখানে দৈনন্দিন জীবনের সকল চাহিদা যেখানে মেলে সবার একদম হাতের নাগালেই। এই এলাকায় মানুষের বাস বহুদিনের। তাই এলাকাটি বিশেষ ঐতিহ্যবাহী। প্রপার্টি চাহিদা যেমন এখানে বিপুল, দামও তেমন চড়া। ঢাকা শহরের এই ব্যস্ত এলাকাটি নিয়েই আমাদের এরিয়া গাইড। খাবারদাবার, শপিং মল, স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে শান্তিনগর ও সিদ্ধেশ্বরীর মানুষের দৈনন্দিন জীবন, সবকিছু নিয়েই ধারণা পাওয়া যাবে এই এলাকা পরিচিতিতে।
এলাকা সম্পর্কে বিস্তারিত
আবাসিক এলাকা হিসাবে শান্তিনগর ও সিদ্ধেশ্বরী
শান্তিনগর ও সিদ্ধেশ্বরী এলাকাটি অনেক আগে ডেভেলপ হওয়া একটি এলাকা। এখানে উন্নয়ন শুরু হয় সেই ১৯৫০ সালের দিকে। ধীরে ধীরে এটি ঢাকার একটি কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং উন্নয়নের দিক থেকে অন্য অনেক এলাকাকে ছাড়িয়ে যায়। ২০০০ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছরে এই এলাকার প্রপার্টির মূল্য বেড়েছে প্রায় ১২৭%! বর্তমানে এই এলাকায় প্রপার্টির বেশ চাহিদা থাকলেও বিক্রির জন্য প্রপার্টি পাওয়া বেশ কঠিন। তাই বিক্রির জন্য শান্তিনগর বা সিদ্ধেশ্বরীতে একটি ফ্ল্যাট খুঁজে পাওয়া দুষ্করই বটে। তাই এই এলাকায় প্রপার্টির মূল্য বেশ চড়া। এলাকার সাথেই লাগোয়া বেইলী রোড বিখ্যাত বিভিন্ন খাবার রেস্টুরেন্টের জন্য। এর সাথে এলাকায় বেশ কিছু বিখ্যাত স্কুলের উপস্থিতি সমগ্র এলাকাকে ঘিরে রাখে প্রাণচঞ্চলতায়। ব্যস্ত বেইলী রোড কিংবা স্কুলের গলিগুলোকে পাশে রাখলে অন্যান্য অলিগলিতে বসবাসের জন্য চমৎকার, শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করে শান্তিনগর আর সিদ্ধেশ্বরীতে।
শান্তিনগর ও সিদ্ধেশ্বরীতে প্রপার্টি
Pশান্তিনগর আর সিদ্ধেশ্বরীতে প্রপার্টি চাহিদা বরাবরই ছিল তুমুল। আবাসিক এলাকা হিসেবে তো বটেই, বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবেও এলাকাটি সমাদৃত। ঢাকার বেশ কিছু বাণিজ্যিক হাবের কাছাকাছি এর অবস্থানও এখানকার প্রপার্টির ব্যাপক চাহিদার আরেকটি কারণ। ৫০ এর দশকে যখন এই এলাকার প্রাথমিক উন্নয়ন শুরু হয়, পরিকল্পনা চলছিল একে একটি আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার। যে এলাকা থাকবে সবুজে ঘেরা, থাকবে স্কুল কলেজ, খেলার মাঠ। কিন্তু নব্বই এর দশকের পর থেকে বেইলী রোডে শুরু হয় জমজমাট রেস্টুরেন্ট, শপিং ও খাবারদাবারের ব্যবসা। ফলে আশপাশের এলাকা হয়ে উঠে সদাব্যস্ত ও মানুষের সমাগমে মুখরিত। প্রায় সবগুলো বিখ্যাত ব্র্যান্ডের আউটলেট আছে বেইলী রোডে। এখানে আছে সুউচ্চ আবাসিক ভবনও। শান্তিনগর আর পাশের রাজারবাগ এলাকার মূল রাস্তাগুলোতে এমন উঁচু উঁচু আবাসিক ভবনের আধিক্য দেখা যায় যা আশপাশের বেশিরভাগ ভবন থেকে উঁচু। দেশের সবচেয়ে উঁচু আবাসিক ভবন হল সম্মানিত বিচারপতিদের বাসভবন, এই বিচারপতি ভবনও আমাদের আলোচ্য এলাকার কাছেই অবস্থিত।
যোগাযোগব্যবস্থা
শান্তিনগর ও সিদ্ধেশ্বরী সংলগ্ন এলাকা ঢাকা শহরের মধ্যে সবচেয়ে ভালোভাবে সংযুক্ত কয়েকটি এলাকার একটি। ঢাকা শহরের ঠিক কেন্দ্রে অবস্থান এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশনে চমৎকার অ্যাক্সেস থাকায় এই এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা দারুণ। এলাকার ঠিক মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে বেইলী রোড, উত্তর এবং পূর্ব দিকে আছে আউটার সার্কুলার রোড আর পশ্চিমে আছে মগবাজার রোড যেটি ধরে মগবাজার - মৌচাক ফ্লাইওভারে পৌঁছানো সম্ভব। এই ফ্লাইওভার এলাকাবাসীকে দেয় বাংলামটর, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও এবং মালিবাগ এলাকার সাথে চমৎকার যোগাযোগের ব্যবস্থা। মগবাজার রোড এবং আউটার সার্কুলার রোড ধরেও পৌঁছানো যায় মতিঝিল, মোহাম্মদপুর,উত্তরা, বসুন্ধরার মত শহরের বিভিন্ন স্থানে। আর শান্তিনগর ও সিদ্ধেশ্বরী এলাকার অভ্যন্তরে চলাচলের জন্য রিকশা এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় বাহন। এর সাথে সাথে বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং অ্যাপ এবং সিএনজি অটোরিকশা তো আছেই।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
এই এলাকার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল বেশ কিছু সমৃদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি। শুধু ঢাকা নয় বরং সমগ্র দেশেরই প্রথম সারির একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল, যার প্রধান শাখা বেইলী রোডে অবস্থিত। আরেকটি চমৎকার স্কুল হল সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। দেশের প্রথম কয়েকটি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের একটি উইলস লিটিলস ফ্লাওয়ার স্কুলও কাছেই কাকরাইলে অবস্থিত। এছাড়া সার্কিট হাউজ রোডে আছে কিডস টিউটোরিয়াল নামে আরেকটি স্কুল। শান্তিনগর ও সিদ্ধেশ্বরীতে আছে দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ও। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি শান্তিনগর ক্যাম্পাস এবং হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ।
চিকিৎসা সুবিধা
চিকিৎসা সেবার দিক থেকেও এই এলাকাটি বেশ সমৃদ্ধ। উচ্চমানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পারে এমন বেশ কিছু হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠান আছে এখানে। মা ও শিশুর পরিচর্যার জন্য সিদ্ধেশ্বরীর মনোয়ারা হাসপাতালের বেশ সুনাম আছে। বাংলাদেশ আই হসপিটাল চক্ষু চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত একটি হাসপাতাল। স্বনামধন্য পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একটি ব্রাঞ্চও আছে এলাকাতে। কাছেই ইস্কাটন এলাকায় আছে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল যা পরিচালিত হয় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির দ্বারা।
পার্ক ও চিত্তবিনোদন
রমনা পার্ক আয়তনে এবং ঐতিহ্যে দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ একটি পার্ক যা এই এলাকার খুবই কাছে অবস্থিত। পার্কটি ১৯৪৯ সালে বাংলার নবাবদের রেখে যাওয়া চমৎকার বাগান এবং চিড়িয়াখানার স্থাপনাকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে। প্রায় ৭০ একরের এই পার্কটির মাঝে আছে বিশাল লেক এবং এটি সমগ্র ঢাকার মানুষের খুব প্রিয় একটি গন্তব্য। এখানে সারা বছরই লেগে থাকে নানান আয়োজন। ছায়ানটের আয়োজনে বাংলা নববর্ষ বরণের সমচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠানও এই রমনার বটমূলেই আয়োজিত হয়। বেইলী রোডও মানুষের চমৎকার চিত্তবিনোদনের কেন্দ্র। এখানে আছে মহিলা স্মৃতি অডিটোরিয়াম এবং বাংলাদেশ গার্লস গাইডস অ্যাসোসিয়েশনের অডিটোরিয়াম। মঞ্চ নাটক বা থিয়েটারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত ও মঞ্চস্থ হয় এখানে। ঢাকার থিয়েটার বা মঞ্চ নাটকে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বেইলী রোডকে আনুষ্ঠানিকভাবে নাটক সরণি নামে নামকরণ করা হয় ২০০৫ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে।
ধর্মীয় উপাসনালয়
শান্তিনগর ও সিদ্ধেশ্বরীতে নানান ধর্মাবলম্বী মানুষ একসাথে বসবাস করেন। তাই যে কোন ধর্মাবলম্বী মানুষের জন্য আছে পর্যাপ্ত উপাসনালয়। মুসলিম বাসিন্দাদের জন্য এলাকাজুড়েই আছে মসজিদ। হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের জন্য আছে বিখ্যাত সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির। কাছেই থাকা কাকরাইল চার্চে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষেরাও পালন করতে পারেন তাঁদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান।
আশপাশের এলাকা
শান্তিনগর ও সিদ্ধেশ্বরীর চারিদিকেই আছে জমজমাট বেশ কিছু এলাকা যেগুলো স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। উত্তর দিকে আছে প্রচুর অফিস সম্বলিত এলাকা মগবাজার। পশ্চিমে থাকা ইস্কাটন মূলত সরকারি কোয়ার্টারে অধ্যুষিত একটি এলাকা। রমনাতেও আছে বেশ কিছু সরকারি অফিস যার মাঝে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বা ডিএমপি-র হেড কোয়ার্টার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শান্তিবাগ মূলত একটি আবাসিক এলাকা যার অবস্থান এই এলাকার উত্তরপূর্বে। দক্ষিণ-পূর্বে আছে সেগুনবাগিচা। দক্ষিণ দিকে আছে পল্টন আর দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের অবস্থানও দক্ষিণ পূর্বে।
শান্তিনগর ও সিদ্ধেশ্বরীতে জীবনযাপন
খাবারদাবার এবং রেস্টুরেন্ট
শপিং এর গন্তব্য
শপিং বা কেনাকাটার কথা উঠলে সিদ্ধেশ্বরী ও শান্তিনগরবাসীর হাতে আছে অনেক অনেক অপশন। গ্রোসারি বা নিত্যদিনের খুচরা কেনাকাটার জন্য আছে অসংখ্য মুদি দোকান ও সুপারশপ এলাকাজুড়েই। শান্তিনগর বাজারে মেলে খুচরা মুদি বাজারের সাথে সাথে টাটকা সব পণ্য। এলাকায় শপিংমলেরও কোন কমতি নেই। আছে কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি শপিং কমপ্লেক্স, কনকর্ড টুইন টাওয়ার, বেইলী স্টার, ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার ইত্যাদি। কম্পিউটার সংক্রান্ত সামগ্রীর জন্য আছে ইস্টার্ন প্লাস যার অবস্থান শান্তিনগরে। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় বুকস্টোর পিবিএস এর অবস্থানও শান্তিনগরে যা বইপ্রেমীদের কাছে প্রিয় একটি স্থান। আর শপিং এর কথা উঠলে আনারকলি মার্কেটের কথাও না বললেই নয়, এটি মূলত ছোটখাট একটি নিউমার্কেট যেখানে নিউমার্কেটের মতই বাহারি পণ্য পাওয়া যায় কিছুটা সীমিত পরিসরে।