একনজরে গুলশান ২
গুলশান ২ সম্পর্কে
ঢাকার অন্যতম অভিজাত এলাকা গুলশান ২। এর একটি অংশ সংযুক্ত করেছে বনানীকে আর অন্য অংশে রয়েছে বারিধারা। অভিজাত এই এলাকায় গড়ে উঠেছে অগণিত রেস্টুরেন্ট, দোকানপাট আর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। আধুনিক পরিকল্পনা আর নান্দনিকতা, এই দুইয়ের সংমিশ্রণ ঘটেছে গুলশান ২ এর উত্তরাংশে। বাংলাদেশের অধিকাংশ দূতাবাসগুলোও কিন্তু খুঁজে পাবেন এখানেই। কঠোর নিরাপত্তা এবং নিরাপদ কমিউনিটির কারণেই আবাসস্থল হিসেবে গুলশান ২ আরো লোভনীয় হয়ে উঠেছে সবার কাছে। গুলশান ২-এ বাড়ি কেনা বা ভাড়া নেয়া যদি থাকে আপনার সাধ্যের মধ্যে, তাহলে কিন্তু সেই লোভ সংবরণ করা যাবেনা মোটেই!
গুলশান ২ এলাকা সম্পর্কে বিস্তারিত
আবাসিক এলাকা হিসাবে গুলশান ২
গুলশান ২ সুপরিচিত এর বাণিজ্যিক প্রসার এবং দূতাবাসগুলোর কারণে। তবে নিরাপত্তা, যাতায়াত এবং আধুনিক সব সুযোগ সুবিধার নিশ্চয়তা থাকায় গুলশান ২ থাকার জায়গা হিসেবেও অসাধারণ। শিশু এবং বয়স্কদের জন্য সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে গুলশান ২-এ রয়েছে অনেকগুলো পার্ক এবং জগিং-এর জায়গা। চাইলে কমিউনিটির যে কেউ এসে এখানে কাটাতে পারেন সুন্দর কিছু সময়।
গুলশান ২-এ প্রপার্টি
একসময় সবকিছু মিলিয়ে গুলশান ছিল চমৎকার এক আবাসিক এলাকা। তবে কালের পরিক্রমায় এটি এখন অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকার নাম। ছোট বড় অসংখ্য কোম্পানি, ব্যবসা প্রনিষ্ঠানসহ বেশকিছু অ্যাম্বাসির ঠিকানা এই গুলশান। তবে গুলশান ২ আরো বেশি জনপ্রিয় এর মুখরোচক সব খাবারের দোকান আর পিংক সিটি কিংবা ইউনিমার্টের মতো অভিজাত শপিং স্পট-এর কারণে।
এখানকার প্রপার্টিতে যেমন বৈচিত্র্য রয়েছে, তেমনি আভিজাত্য রয়েছে অধিবাসীদের জীবনযাত্রায়। অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও ফুরোয়নি বাড়ির আবেদন। আর তাই, গুলশান ২ এর অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো দিয়ে যাবার পথে সড়কের দুইপাশেই আপনার চোখে পড়বে অনিন্দ্যসুন্দর একেকটি বাড়ি।
যাতায়াত ব্যবস্থা
ঢাকা চাকা বাস সার্ভিসটি গুলশান ২ কে খুব চমৎকারভাবে সংযুক্ত রেখেছে গুলশান ১ এর সাথে। এছাড়াও, গুলশান চাকা সরাসরি সার্ভিস দিচ্ছে বনানী-কাকলী থেকে বাড্ডার নতুন বাজার পর্যন্ত। তবে, এই এলাকায় সহজে ও দ্রুত যাতায়াত করার অন্যতম উপায় হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সড়কপথে রিকশায় চলাচল করা। এছাড়া, অধিক দূরত্বের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত যানবাহন, রাইড শেয়ারিং সার্ভিস অথবা সিএনজির মতো ছোটখাট পাবলিক ট্রান্সপোর্টের অপশন তো আছেই।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
শিক্ষার সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে গুলশানে রয়েছে বেশকিছু স্কুল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্কলাস্টিকা থেকে শুরু করে মানারত ঢাকা ইন্টারন্যশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, প্রতিটি শিশুর জন্য শিক্ষার সবটুকু সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত হয় এখানে। ফলে একটি শিশুও পিছিয়ে পরে না সুশিক্ষার প্রতিযোগিতায়।
চিকিৎসা সুবিধা
গুলশান ২ জুড়ে রয়েছে অনেকগুলো ক্লিনিক এবং মেডিকেল সেন্টার। যা কিনা গুলশানবাসীর চিকিৎসার প্রয়োজন মিটিয়ে যাচ্ছে নিরলসভাবে। এমনই দুইটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নাম ল্যাব এইড এবং ইউনাইটেড হাসপাতাল। সুন্দর পরিবেশে আধুনিক ও মানসম্মত চিকিৎসার জন্য সারা দেশেই সুনাম রয়েছে হাসপাতাল দুটির।
চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা
গুলশান ২ এতোই সুপরিকল্পিত যে এখানে কমার্শিয়াল প্রপার্টির জন্য যেমন আলাদা জায়গা রয়েছে, তেমনি আলাদা জায়গা রয়েছে রেসিডেনশিয়াল প্রপার্টির জন্য। এমনকি স্থানীয়দের চিত্তবিনোদনের জন্যও রয়েছে পৃথক জায়গা। খেলাধুলা, শরীরচর্চা কিংবা নিছক বিশ্রামের জন্য রয়েছে গুলশান হেলথ ক্লাব, গুলশান লেক পার্ক এবং গুলশান ইউথ ক্লাবের মতো বেশকিছু জায়গা। এগুলোর মধ্যে নির্মল বিনোদনের জন্য গুলশান ইউথ ক্লাবই সবচেয়ে জনপ্রিয় বাসিন্দাদের মধ্যে। ক্লাবের মাঠ, বাস্কেটবল কোর্ট, জগিং ট্র্যাক সার্বক্ষণিক খোলা থাকে সর্বসাধারণের জন্য। এছাড়া, ক্লাবের সদস্যদের জন্য রয়েছে চমৎকার একটি টেনিস কোর্ট।
তবে এখানেই শেষ নয়। অ্যাম্বাসির সদস্য এবং অন্যান্য বিদেশী অতিথিরা চাইলে চমৎকার সময় কাটাতে পারেন নর্ডিক ক্লাব, ডাচ ক্লাব কিংবা ইন্টারন্যাশনাল ক্লাব ঢাকা-তে।
মসজিদ
ধর্মপ্রাণ মানুষের কথা মাথায় রেখে গুলশান ২ এ রয়েছে বিশাল পরিসরের কয়েকটি মসজিদ। এখানেই এলাকার মুসলিম অধিবাসীরা প্রার্থনা করেন সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে। উত্তরে রয়েছে গুলশান সোসাইটি জামে মসজিদ এবং দক্ষিণে দুইটি বিশাল পরিসরের মসজিদ। যার মধ্যে একটির নাম গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ (আজাদ জামে মসজিদ) । চমৎকার নির্মাণশৈলীর কারণে প্রশস্ত এই মসজিদটিকে দেশের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদের তালিকায় রাখেন অনেকে।
আশপাশের এলাকা
গুলশান ২ এর প্রধান সড়কটি সংযুক্ত গুলশান ১ এর সাথে। গুলশান ২ মূলত ২টি অংশে বিভক্ত যার পূর্বাংশে সংযুক্ত হয়েছে বারিধারা আর পশ্চিমাংশে অবস্থিত বনানী। ঢাকার প্রতিটি এলাকার সাথেই সড়কপথে সরাসরি সংযোগ, ব্যবসা থেকে শুরু করে আবাসিক সুযোগ সুবিধা সবকিছুতেই গুলশান ২ কে এগিয়ে রয়েছে অন্য এলাকাগুলো থেকে।
গুলশান ২-এ জীবনযাপন
খাবার এবং রেস্টুরেন্ট
চমৎকার সব বাহারি খাবারের স্বাদ পেতে জুড়ি নেই এই এলাকাটির। জাপানিজ থেকে শুরু করে মেক্সিকান সব খাবারই মিলবে এখানে। ভোজনবিলাসীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ওয়েস্টিন, সৌলি’স, পেয়ালা, কুপা কফি, ইযুমি, কোর্টইয়ার্ড বাজার এবং এল তরো মেক্সিকানের মত রেস্টুরেন্টগুলো। আর যদি ডেজার্টের প্রতি আলাদা ভালবাসা থাকে, তাহলে আপনার জন্যই অপেক্ষা করছে বাটলারস চকোলেট ক্যাফে আর মুভেনপিক। সাথে নাইট টাইম হটস্পট হিসেবে গুলশান প্লাজা রেস্তোরা বা জিপিআর তো আছেই।
রসনার ভিন্ন স্বাদ নিতে আরো চলে যেতে পারেন ইউনিমার্টের উপরের তলায় শেফস টেবিল-এ। এই ফুডকোর্টে দেখা মিলবে বাহারি স্বাদের নানা খাবারের। ইনডোর বা আউটডোরে চমৎকার সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট থাকায় গুলশানের চমৎকার ভিউও উপভোগ্য হয়ে উঠবে আপনার কাছে।
হোটেল এবং বিলাসবহুল থাকার যায়গা
গুলশান ২ এর মতো ব্যস্ত এলাকায় সবসময়ই চাহিদা থাকে অতিথিদের থাকার জন্য ভালো একটি জায়গার। আর সেই চাহিদাকে চমকপ্রদ উপায়ে মিটিয়ে যাচ্ছে ওয়েস্টিন ঢাকা, সিক্স সিজনস, লং বিচ স্যুটস ঢাকা, লেকশোর হোটেল গুলশান আর আমারই ঢাকার মতো অভিজাত হোটেলগুলো। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে থাকার জন্য গ্রিন হাউজ গেস্ট হাউজের মতো গেস্ট হাউজ কিন্তু একদম আদর্শ জায়গা।
শপিংএর গন্তব্য
শপিং এর বর্ণাঢ্য সুযোগ সুবিধায়ও সমৃদ্ধ গুলশান ২। আপনি চাইলে সকালবেলার প্রয়োজনীয় শপিং সেরে নিতে পারেন ওয়েট মার্কেট থেকে। বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ড এর খোঁজে সন্ধ্যাবেলাটা উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে পিংক সিটিতে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানের যে কোনো প্রকার দৈনন্দিন পণ্যের খোঁজ পাবেন ইউনিমার্টে। এছাড়া গুলশান ২ মার্কেট(ডিসিসি)-ও নিত্যদিনের কেনাকাটায় ব্যাপক জনপ্রিয় এলাকাবাসীর কাছে। সুতরাং আপনার শপিং-এর যেকোনো প্রকার প্রয়োজনে নিশ্চিন্তে আস্থা রাখার মতো একটি জায়গা গুলশান ২।