একনজরে রামপুরা
রামপুরা সম্পর্কে
এই কিছুদিন আগেও দেশের মানুষের একমাত্র টিভি বিনোদনের মাধ্যম ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভি। যখন শুক্রবার মানেই ছিল বিকেল তিনটার পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছবি, ঈদ মানে ছিল ইত্যাদি আর অয়াকেজ নাটক, ছিল বহুব্রিহী, কোথাও কেউ নেই, আজ রবিবারের মত ক্লাসিক নাটক, সবই এক বিটিভিতে! আর বিটিভির প্রধান সম্প্রচারকেন্দ্র এখানে হওয়ায়, একসময় রামপুরা শুনলেই মানুষের মাথায় প্রথম আসত বিটিভির কথা। তবে এখন শুধু টিভি ভবন নয় বরং সুলভে আবাসন আর চমৎকার যোগাযোগব্যবস্থার কারণে ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা এখন এই রামপুরা। রামপুরাকে পূর্ব-পশ্চিমে আড়াআড়ি ভাগ করেছে ডি.আই.টি রোড। যদিও সামগ্রিকভাবেই রামপুরায় প্রপার্টির দাম অন্যান্য এলাকার তুলনায় কিছুটা হাতের নাগালে থাকে, তবে পুরাতন রামপুরা তথা পূর্ব রামপুরায় পশ্চিম রামপুরার তুলনায় অ্যাপার্টমেন্টের দাম কম। পশ্চিম দিকে আছে উলন, মহানগর প্রজেক্টের মত নতুন আবাসন প্রকল্পগুলো। এর কাছেই আছে হাতিরঝিল প্রকল্প, যার ব্যবহারে গোটা রামপুরা এলাকার মানুষই পারে সহজে যাতায়াত করতে। দ্রুত যাতায়াতের জন্য আছে ওয়াটার ট্যাক্সির ব্যবস্থাও। ফলে খুব চমৎকার যোগাযোগ আছে গুলশান, তেজগাঁও, মহাখালী বা কারওয়ান বাজারের মত এলাকার সাথে। তাই দিনে দিনে রামপুরা হয়ে উঠেছে বসবাসের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।
রামপুরা এলাকা সম্পর্কে বিস্তারিত
আবাসিক এলাকা হিসাবে রামপুরা
মধ্যবিত্তের বসবাসের জন্য জনপ্রিয় এলাকা রামপুরা। বেশ ভাল সুযোগসুবিধাসহ ভাড়া কিংবা বিক্রির জন্য বাজেটের মধ্যে ভাল ভাল সব অ্যাপার্টমেন্ট মেলে এই এলাকায়। সমস্ত রামপুরাই বসবাস উপযোগী তবে যারা কিছুটা নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করেন তাদের জন্য আছে মহানগর প্রজেক্ট। এটি দেশের প্রথম আবাসিকভাবে গড়ে উঠা রিয়েল এস্টেট প্রজেক্ট। কাছেই থাকা হাতিরঝিল হোক কিংবা প্রকল্পের অভ্যন্তরে থাকা বিভিন্ন পার্কের কারণেই হোক, এই এলাকার মানুষের চিত্তবিনোদনের নেই কোন অভাব। আর সুলভ মূল্যে নিত্য দিনের কেনাকাটা করতে চাইলে কাছেই আছে রামপুরা বাজার যেখানে কাঁচাবাজার থেকে যে কোন কিছু মিলবে ন্যায্য দামে। এছাড়া এলাকার মানুষেরা মিলে গড়ে তুলেছে চমৎকার একটি কমিউনিটি যা রামপুরাকে করে তুলেছে আরও আদর্শ একটি এলাকা।
রামপুরাতে প্রপার্টি
সূর্য উঠবার আগে থেকেই রামপুরায় মানুষের কোলাহল শুরু হয়, চলতে থাকে গভীর রাত অব্দি। শুধুমাত্র শহরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানকেই যে ডি.আই.টি রোড যুক্ত করেছে তাই নয়, এই রোডের আশেপাশে ব্যাংক, বীমা, অফিস কিংবা বাজার, কোন কিছুরই অভাব নেই। টিভি ভবনের কথা তো আগেই বলা হয়েছে, আছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আউটলেট আর আবাসিক ভবনও। তবে মেইন রোডে বাণিজ্যিক বিভিন্ন স্থাপনা থাকলেও ভেতরের দিকটা সম্পূর্ণ আবাসিক। রামপুরায় সম্প্রতি অনেক রেস্তোরাঁ গড়ে উঠছে যেখানে মেলে মুখরোচক ফাস্টফুড কিংবা গ্রিল আইটেম। বউ বাজার এলাকা আরেকটি ব্যস্ত এলাকা যেখানে নিত্যদিনের সব ধরণের পণ্য মেলে সহজেই। মোটকথা, ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ত এলাকার একটি হল রামপুরা, আর তা এখানকার প্রপার্টিগুলো দেখলেই বোঝা যায়।
যাতায়াত ব্যবস্থা
রামপুরায় থাকার একটি অন্যতম ভাল দিক হল, সমগ্র এলাকাজুড়ে এবং অন্য এলাকার সাথেও অতি চমৎকার যাতায়াত ব্যবস্থা। রামপুরা ব্রিজের কথা কে না জানে? দিন রাত সবসময়ই এখানে থাকে প্রয়োজনীয় যানবাহন। আর এর মূল কারণ পশ্চিমে থাকা হাতিরঝিল আর মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া ডি.আই.টি রোড। ডি.আই.টি রোড দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য সিটি বাস চলাচল করে যার মধ্যে আছে গ্রিন ঢাকার মত এসি বাসও। হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস এবং ওয়াটার ট্যাক্সিও মূহুর্তেই মানুষকে পৌঁছে দিচ্ছে গন্তব্যে। এলাকার বাসিন্দারা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মুভ করতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন বউবাজার সংলগ্ন এলাকা। অর্থাৎ গণপরিবহন বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টের কোন অভাবই নেই রামপুরায়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা ভাবলেও রামপুরা চমৎকার একটি এলাকা। কেননা রামপুরা তার সামনের জেনারেশনের জন্য নিশ্চিতভাবেই সঠিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে সক্ষম। বাংলা এবং ইংরেজি মিডীয়ামে শিক্ষা দিচ্ছে এমন অনেকগুলো সরকারি, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে এই এলাকায়। শুধু রামপুরা নয় বরং এর আশেপাশের সমস্ত এলাকাই ভালমানের স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটির জন্য সুনামধন্য।
চিকিৎসা সুবিধা
কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছাড়া রামপুরায় প্রধান হেলথকেয়ার ফ্যাসিলিটি হল বেটার লাইফ হসপিটাল। এটি রামপুরা বাজারের কাছেই অবস্থিত। এই হাসপাতালটি সবধরনের ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করতে সক্ষম। এখানে একটি বেশ উন্নত ফিজিওথেরাপি সেন্টারও রয়েছে যা ঢাকাতে সবস্থানে তেমন অ্যাভেইলেবল নয়।
মসজিদ, অন্যান্য উপাসনালয় ও ধর্মীয় স্থান
রামপুরা এলাকায় হিন্দু মুসলিমসহ সব ধর্মাবলম্বী মানুষ বাস করে মিলেমিশে। ঢাকা হল মসজিদের শহর, তাই কোন মুসলিমকে আল্লাহর ঘর খুঁজতে বেগ পেতে হয় না। আবার রামপুরা ব্রিজের পাশেই, হাতিরঝিলের প্রবেশ মুখে আছে শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মন্দির, তাই রামপুরায় বসবাসকারী কোন হিন্দুগর্মাবলম্বীকেও খুব বেশি দূরে যেতে হয়না উপাসনালয়ের খোঁজে।
আশপাশের এলাকা
রামপুরা এলাকাটি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বেষ্টিত এবং হাতিরঝিল প্রজেক্ট আর ডি.আই.টি রোডের কারণে তার সবগুলোর সাথেই আছে চমৎকার যোগাযোগব্যবস্থা। রামপুরার দক্ষিণে আছে বিশাল বাড্ডা আর আফতাবনগর এলাকা যেখানে দ্রুতগতিতে চলছে উন্নয়ন। খিলগাঁও আর বনশ্রী আছে পূর্বদিকে আর উত্তরে মালিবাগ যেগুলো সবই গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকা। এবং পশ্চিম দিকে আছে হাতিরঝিল যার মাধ্যমে খুব সহজেই গুলশান, তেজগাঁও এবং কারওয়ান বাজার এলাকায় পৌঁছান সম্ভব।
রামপুরাতে জীবনযাপন
খাবার এবং রেস্টুরেন্ট
ঢাকার অন্যান্য এলাকার মতই রামপুরাও ছোট বড় নানান খাবারের দোকানে আর টং দোকানে ভরপুর। আছে বিভিন্ন রেস্তোরাঁও যেখানে মেলে মুখরোচক নানান খাবার। এদের মধ্যে আল কাদেরিয়া রেস্তোরাঁ বেশ বিখ্যাত। এটি প্রথমে একটি শিক কাবাব এবং গ্রিল চিকেনের স্থান হিসাবে শুরু হলেও সময়ের সাথে সাথে এর বিস্তার ঘটেছে সমগ্র রামপুরাজুড়ে বেশ কয়েকটি স্থানে। আল কাদেরিয়া রেস্টুরেন্টে মেলে ঐতিহ্যবাহী বিরিয়ানি যেখানে আল কাদেরিয়া ক্যাফেতে ভোজনরসিকদের জন্য আছে ফাস্ট ফুডের সমাহার।
শপিংএর গন্তব্য
যদিও শহরজুড়ে শপিং এর গন্তব্য হিসাবে রামপুরার তেমন নামডাক নেই, কিন্তু রামপুরা বাজারের জন্য এই এলাকা বেশ প্রসিদ্ধ। একদম টাটকা কাঁচাবাজার, প্রাত্যহিক বাজার এবং বাসাবাড়িতে প্রয়োজনীয় যে কোন সামগ্রী এখানে মেলে সহজেই। এছাড়া কাপড়চোপড় এবং কম্পিউটার বা মোবাইল সামগ্রীর জন্য যাওয়া যেতে পারে মদিনা শপিং কমপ্লেক্স কিংবা মোল্লা টাওয়ারে।