Reading Time: 5 minutes

ট্রেনের টিকিট কাটতে ঘন্টার পর পর ঘন্টা স্টেশনে দাড়িয়ে থাকার অভিজ্ঞতা আছে অনেকেরই। তবে এই মোবাইল আর ইন্টারনেটের যুগে সব কিছুই এখন হাতের মুঠোয়। এক ফোনকলে যেমন বাসার সামনে গাড়ি এসে হাজির হয় তেমনি চাইলেই ১০ দিন পরের ট্রেনের টিকিট কেটে ফেলা যায় মুহুর্তেই, ঘরে বসেই! নতুন প্রযুক্তির কল্যাণে আপনি খুব সহজেই অনলাইনে ট্রেন টিকিট কেটে ফেলতে পারবেন। কীভাবে? দেখে নিন ধাপ গুলো। 

অনলাইনে ট্রেন টিকিট কাটার দুটি মূল ধাপ আছে। একটি হল রেজিস্ট্রেশন করা, অন্যটি টিকেট কাটা। রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ। তবে এটি মাত্র একবারই করতে হয়।

অনলাইন রেজিস্ট্রেশনঃ

online train ticket BD
বাংলেদেশ রেলওয়ের ই-টিকেটিং প্ল্যাটফর্মের হোমপেজ
  • অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে আপনাকে প্রথমেই যেতে হবে বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব ই-টিকেট সার্ভিস প্রোভাইডারের ওয়েবসাইটে যার ঠিকানা www.esheba.cnsbd.com
online train ticket Bangladesh
সাইন-আপ করতে হলে দিতে হবে কিছু তথ্য
  • এবার এখানে আপনার নিজের একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে যাকে বলে “সাইন-আপ” করা। ভয় নেই, এখানে অ্যাকাউন্ট খুলতে কোন চার্জ লাগবে না, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আপনি অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে পারবেন। তবে অ্যাকাউন্ট খুলতে দিতে হবে কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য। এসব তথ্যের মধ্যে আছে আপনার নাম, ই-মেইল অ্যাড্রেস, জন্মতারিখ, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে তথ্যটি দিতে হয় তা হল, আপনার নিজস্ব শনাক্তকরণ বা আইডেন্টিফিকেশন নম্বর। বর্তমানে আই ডি নম্বর হিসাবে জন্ম সনদ (বার্থ সার্টিফিকেট) বা জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (ন্যাশনাল আই ডি) গ্রহণ করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে থেকেই ট্রেনের টিকিটের কালোবাজারি রোধে এরূপ আই ডি নম্বর প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে

সব ঘর পূরণ করা হয়ে গেলে এবং দুইবার পাসওয়ার্ড টাইপ করার পরে, সবার নিচে থাকা সিকিউরিটি কোডটি দেখে টাইপ করুন এবং রেজিস্টার বাটনে ক্লিক করুন। 

BD online train ticket verification
ইমেইল নিশ্চিতকরণ করতে এরকম একটি মেসেজ আসবে
  • সব কিছু ঠিকঠাকভাবে ইনপুট দেয়া হলে আপনাকে আবার ওয়েবসাইটের হোমপেজে নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখানে ( ছবিতে গোল চিহ্নিত) লেখা থাকবে আপনার ইমেইল চেক করার জন্য। এসময় আপনার ইমেইল-এর ইনবক্স চেক করতে হবে। সেখানে একটি ভ্যালিডেশন লিংক যাবে। সঙ্গে সঙ্গে ইমেইল না পেলে কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন, অথবা আপনার মেইলের স্প্যাম ফোল্ডারটি চেক করুন। 
train ticket mobile verification
নিজস্ব মোবাইল নম্বর ভেরিফাই করে নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ
  • ইমেইলটি পেলে সেখানে থাকা ভ্যালিডেশন লিংকে ক্লিক করলে আপনি লগ-ইন করতে পারবেন (লগ-ইন করতে আপনার দেয়া ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন)। লগ-ইন হলে এমন একটি পেইজ ওপেন হবে। এবারে আপনার অ্যাকাউন্টের বিপরীতে একটি মোবাইল নম্বর যোগ করার পালা। এখানে বাম পাশে থাকা বক্সে আপনার মোবাইল নম্বর দিন এবং “সেন্ড ভেরিফিকেশন কোড” বাটনটি চাপুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার দেয়া মোবাইল নম্বরে একটি ভেরিফিকেশন কোড যাবে। এবার সেই কোডটি ডান পাশের বক্সে লিখুন এবং মোবাইল নম্বর ভেরিফাই করে নিন।
অনলাইনে ট্রেন টিকিট
লগ-ইন করা হয়ে গেলে দেখা যাবে এমন একটি ড্যাশবোর্ড

মোবাইল নম্বর প্রদান এবং ভেরিফিকেশনের সময় সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা, এই মোবাইল নম্বরটি পরবর্তীতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবং মোবাইল নম্বর ভেরিফাই করার জন্য সর্বোচ্চ ৩টি সুযোগ আপনি পাবেন।

  • মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশন করা হয়ে গেলে আপনি লগ-ইন করে ফেলতে পারবেন এবং সব সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। ছবিতে থাকা এরকম একটি স্ক্রিন আপনি দেখতে পাবেন আপনার ড্যাশ বোর্ডে। এখানে আপনার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বরসহ সবধরনের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী থাকবে। এছাড়া সম্প্রতি কেনা টিকিটের তথ্য এবং কোন টিকিট কেনার সময় যদি তা ঠিকমত না হয় সেই তথ্যও থাকবে। 

অনলাইনে ট্রেন টিকিট কাটাঃ

train ticket purchase BD
টিকিট কাটার আগে বিস্তারিত ইনপুট দিতে হবে

একবার রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে গেলে আপনি যতবার ইচ্ছা অনলাইনে ট্রেন টিকিট কাটতে পারবেন। এজন্য লগ ইন করে আপনাকে যেতে হবে “পারচেস টিকিট” (Purchase Ticket) অপশনে।

  • পারচেস টিকিট অপশনে ক্লিক করলে আপনার স্ক্রিনে উপরের ছবির মতন ৪টি অপশনের বক্স আসবে। এতে প্রথমেই সিলেক্ট করুন আপনি কোন স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করতে চান। এজন্য “Station From” এর পাশে থাকা বক্সে ক্লিক করলে দেশের সব স্টেশনের তালিকা হাজির হবে। সেখান থেকে আপনার কাঙ্ক্ষিত স্টেশনটি সিলেক্ট করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। এরপর ক্রমান্বয়ে একে একে কবেকার টিকিট কাটতে চান, কোন স্টেশন পর্যন্ত যেতে চান এবং কোন শ্রেনীতে ভ্রমণ করতে চান তা সিলেক্ট করুন এবং পরবর্তী ধাপে যান।
Railway online train ticket BD
সঠিকভাবে ইনপুট দিলে দেখা যাবে অ্যাভেইলেবল ট্রেনের লিস্ট
  • পরবর্তী ধাপে আপনার প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে শুরু করে শেষ স্টেশন পর্যন্ত নির্দিষ্ট দিনে কোন কোন ট্রেন আছে এবং সেগুলোর যাত্রার সময় দেখা যাবে (উপরের ছবি দ্রষ্টব্য)। এখান থেকে আপনার পছন্দের ট্রেন এবং সিট সংখ্যা সিলেক্ট করুন। পাশে দুটো বাটন দেখা যাবে, একটি অটো সিলেকশন আরেকটি সিট সিলেকশন।
online train ticket BD seat selection
যাত্রা শুরুর ১২০ ঘন্টা আগ পর্যন্ত সিট সিলেক্ট করা যাবে
  • আপনি যদি প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে শুরু করে একদম শেষ স্টেশন পর্যন্ত যেতে চান এবং যাত্রা শুরুর ১২০ ঘন্টা টিকিট কাটেন কেবলমাত্র সেক্ষেত্রেই সিট সিলেকশন অপশনটি ব্যবহার করতে পারবেন। সিট সিলেকশনে ক্লিক করলে এই ছবির মত একটি পেজ আসবে। এতে ট্রেনের বগির বিস্তারিত দেখা যাচ্ছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র সবুজ চিহ্নিত আসনগুলি আপনি কিনতে পারেন। হলুদগুলো কেউ কেনার জন্য বুকিং দিয়েছে এবং লালগুলো বিক্রি হয়ে গিয়েছে। অন্যান্য সিটগুলো অনলাইনে কেনা যাবে না। 
online train ticket BD auto seat
আছে অটো সিলেকশন সুবিধাও
  • সিট সিলেকশন কাজ না করলে অটো সিলেকশন ব্যবহার করুন। অটো সিলেকশনের ক্ষেত্রে আপনার সিট বেছে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। সিট খালি থাকা সাপেক্ষে আপনাকে সিট বরাদ্দ করা হবে। 
online train ticket BD payment
রিফান্ড পলিসি মানতে “ওকে” প্রেস করুন
  • সিট পেলে এবার আসে টাকা পেমেন্টের বিষয়। পেমেন্টের যে কোন অপশন ক্লিক করলেই একটি ওয়ার্নিং উইন্ডো আসবে। এখানে রিফান্ড পলিসি এবং অন্যান্য বিষয় উল্লেখ আছে। ওকে ক্লিক করলেই পেমেন্ট গেটওয়েতে নিয়ে যাওয়া হবে। 
online train ticket BD payment amex
পেমেন্ট গেটওয়ে
  • রেলওয়ের সাথে চুক্তি থাকা ব্যাংকের ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড, বিকাশ, ডাচবাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে আপনি পেমেন্ট করতে পারবেন। এখানে উদাহরণ হিসাবে আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। আমেরিকান এক্সপ্রেস-এ ক্লিক করে পপ-আপ বক্সে ওকে ক্লিক করলে এই পেজটি আসবে। এখানে বিস্তারিত চেক করুন এবং আপনার কার্ডের বিস্তারিত তথ্য দিয়ে ওকে ক্লিক করুন। আপনার সার্ভিস প্রোভাইডারের উপর নির্ভর করবে এরপরে ধাপগুলো কেমন হবে। তবে সাধারণত আপনার মোবাইলে একটি পিন যাবে এবং সেটি ব্যবহার করেই ট্রানজাকশন কমপ্লিট হবে।
অনলাইন ট্রেন টিকিট
এরকম একটি টিকিট পিডিএফ ফরম্যাটে রেজিস্টার্ড ইমেইল অ্যাড্রেসে চলে যাবে
  • ট্রানজাকশন সফলভাবে শেষ হলেই একটি পেজ আসবে যেখানে আপনি আপনার টিকিটের বিস্তারিত দেখতে পারবেন। এর একটি কপি (পি ডি এফ ফরম্যাটে) আপনার মেইলেও প্রেরন করা হবে যা দেখতে উপরের ছবিটির মতন। আপনি নিজে যদি ভ্রমণ করতে চান তাহলে এর একটি প্রিন্টআউটই যথেষ্ট। আর এই টিকিট দিয়ে অন্য কেউ ভ্রমণ করতে চাইলে এখানে থাকা মোবাইল নম্বর এবং পিন নম্বর ব্যবহার করে দেশের যে কোন অনলাইন স্টেশন থেকে টিকিট প্রিন্ট করে নিতে হবে। 

এভাবে খুব সহজেই আপনি কেটে ফেলতে পারেন অনলাইনে ট্রেন টিকিট । প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আপনার জীবনকে সহজ করে নিন। আপনি চাইলে অনলাইনেই বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ট্রেন শিডিউল সম্পর্কে। 

4 Comments

  1. মশিউর

    ভাইয়া অনলাইন ট্রেন টিকিট কি ক্যান্সিল করা যায়

  2. স্যার, বর্তমানে অনলাইনে ট্রেনের টিকিত ক্যান্সেল করার কোন নিয়ম নেই। ক্যান্সেল করতে হলে আপনাকে ট্রেন ষ্টেশনে গিয়ে কথা বলা লাগবে।

  3. Shahadat Hossain

    Sir, train e kivabe visitor ra ticket dekhbe… Ami ki direct phone e j ticket royece seta dekhale hobe??

  4. স্যার, আপনাকে ই-টিকেটটি প্রিন্ট করে নিয়ে যেতে হবে যাত্রাকালীন সময়ে অথবা আপনি ট্রেন ষ্টেশনের কাউন্টারে গিয়ে ই-টিকেটটি দেখালে আপনাকে সেটি প্রিন্ট করে দিবে।

Write A Comment