Reading Time: 5 minutes

যেকোন স্থানের জন্যই হাসপাতাল অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা। এটা শুধু উন্নয়নশীল এলাকারই পরিসূচক নয় বরং, হাসপাতালের অবস্থান বাসস্থান বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এমন অনেকেই আছেন যাদের জন্য বাসার কাছে হাসপাতাল হওয়াটা বেশ জরুরী। জায়গায় সহজলভ্যতা, যথাযথ অবকাঠামো, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর কারণে, কিছু এলাকায় স্বভাবতই হাসপাতালের সংখ্যা বেশি। আগারগাঁও ও শেরে-ই-বাংলা নগর ঠিক এমনই একটি এলাকা যেখানে গড়ে উঠেছে দেশের বিখ্যাত সব হাসপাতাল। আরও ভালো করে জানতে পড়তে থাকুন, আগারগাঁও ও শেরে-ই-বাংলা নগরের শীর্ষ কয়েকটি হাসপাতাল সম্বন্ধে। 

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই হাসপাতালটি পূর্বে আইয়ুব কেন্দ্রীয় হাসপাতাল নামে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতার পরে এর নামকরণ করা হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল নামে। তবে, ২০০৫ সালের দিকে বাংলাদেশ সরকার এই হাসপাতালটিকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেয়। যার ফলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল দেশের ১৪ তম সরকারী মেডিকেল হাসপাতাল হিসেবে স্বীকৃতি পায়। যদিও প্রাথমিকভাবে বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল কলেজ নামে পরিচিত হলেও পরে ২০০৯ সালে এটি বদলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ করা হয়। 

অন্যান্য সরকারী মেডিকেল কলেজগুলির মধ্যে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তৃতীয় স্থান অর্জন করায় এটি দেশের অন্যতম একটি নামী হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত। এই হাসপাতালে ৩৫ টি বিভাগ সহ মোট ৮৫০ টি শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক চিকিত্সা সুবিধা রয়েছে। এই হাসপাতালের ডেন্টিস্ট্রি বিভাগটি তাদের নিজস্ব শ্রেণিকক্ষ, গ্রন্থাগার, ল্যাব্রেটরি,পরীক্ষাগার ইত্যাদি নিয়ে পৃথকভাবে স্বাধীন ইউনিট হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি ২০১১ সাল থেকে বিডিএস ডিগ্রি দিচ্ছে। এছাড়া সকল আধুনিক সুবিধা নিয়ে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে রয়েছে ২০ টির মত শয্যা। এই সবকয়টি বিষয় এই হাসপাতালটিকে করে তুলেছে আদর্শ চিকিৎসালয়।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল 

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

আগারগাঁও এবং শের-ই-বাংলা নগরের আরও একটি বড় হাসপাতাল এটি। হৃদ রোগ সংক্রান্ত সকল সমস্যার জন্য দেশের সর্বস্থান থেকে মানুষ এখানে আসেন সুচিকিৎসার জন্য। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই হাসপাতালটি। চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য এই হাসপাতালে এমডি কার্ডিওলজি, এমএস (কার্ডিওভাসকুলার এবং থোরাসিক) সার্জারি এবং কার্ডিওলজিতে ডিপ্লোমা করারও সুযোগ রয়েছে। ১৫ টি বিভাগ নিয়ে কার্ডিয়াক সার্জারি থেকে শুরু করে রক্তদান পরিষেবাও এখানে দেওয়া হয়ে থাকে। সরকারী বেসরকারি সকল চিকিত্সক, চিকিৎসক সহকারী নার্স এবং রোগীদের কার্ডিয়াক যত্ন প্রদানের সাথে জড়িতদের জন্যও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও পরিচালনা করে থাকবে।

জাতীয় কিডনী ইনষ্টিটিউট   

জাতীয় কিডনী ইনষ্টিটিউট
জাতীয় কিডনী ইনষ্টিটিউট

বাকি দুটি হাসপাতালের মতই এটাতেও সরকার পুরোপুরি অর্থায়ন করে থাকে। আগারগাঁও ও শেরে-ই-বাংলা নগরের শীর্ষ কয়েকটি হাসপাতাল এর মধ্যে কিডনি রোগের জন্য এটি বিখ্যাত। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই হাসপাতাল দেশের নেফ্রোলজি, ইউরোলজি এবং ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের ইতিহাসের একটি মাইলফলক ছিল। এমডি (নেফ্রোলজি), এবং এমএস (ইউরোলজি) এর মতো স্নাতকোত্তর কোর্সে প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকে এই ইনস্টিটিউটটি। হাসপাতালের নেফ্রোলজি এবং ইউরোলজি বিভাগগুলির জন্য ইনডোর আউটডোর সকল সুবিধা রয়েছে। প্রতি মাসে হাজার হাজার কিডনি রোগী এই হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়ে যান।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

১৯৮১ সালে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের অংশ হিসাবে এই হাসপাতালটি তার যাত্রা শুরু করে। ১৯৯৪ সালে পেশাদারদের প্রশিক্ষণ প্রদান, স্নাতকোত্তর কোর্স, মনোবিজ্ঞান এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞের গবেষণা পরিচালনার জন্য এই ইনস্টিটিউটটি নির্মাণ করা হয়েছিল। হাসপাতালটি ইনডোর ও আউটডোর সকল পরিষেবা দিয়ে থাকে। শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক ও কৈশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, ফরেনসিক সাইকিয়াট্রি, মাদকের আসক্তি এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে। তবে এই সমস্ত পরিষেবা সকাল ৮ টা থেকে দুপুর আড়াইটা (সরকারী ছুটি ব্যতীত) পর্যন্ত উপলভ্য। হাসপাতালে এমন বিশেষায়িত ক্লিনিকও রয়েছে যা কেবল সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে খোলা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, পেইন ক্লিনিকটি কেবল শনিবার ও অটিজম ক্লিনিকটি কেবল সোমবার খোলা থাকবে।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)

আগারগাঁও ও শেরে-ই-বাংলা নগরের শীর্ষ কয়েকটি হাসপাতাল এর মধ্যে এই হাসপাতালটি অন্যতম। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) হাসপাতালটি পূর্বে প্রতিবন্ধীদের হাসপাতাল হিসাবে পরিচিত ছিল। ১৯৭২ সালে এই হাসপাতালটি বাংলাদেশ সরকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল হিসাবে নির্মাণ করেছিল যা পরে গিয়ে ২০০২ সালে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) হিসেবে নামকরণ করা হয়। এই অর্থোপেডিক হাসপাতালটি প্রতিদিনই বিশাল সংখ্যক দুর্ঘটনা কবলিত রোগীদের নিয়ে কাজ করে থাকে। সম্প্রতি ১০০০ শয্যা সংযোজিত  করা হয়েছে। 

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সে ও হাসপাতাল 

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সে ও হাসপাতাল
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সে ও হাসপাতাল

২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে এই হাসপাতালটি। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এখনো সগৌরবে চলে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি।  হাই-টেক প্রযুক্তিতে এই হাসপাতালটি বেশ সুসজ্জিত। ৬টি আধুনিক অপারেশনসহ ৪৫৬ শয্যা  বিশিষ্ট এই হাসপাতালে রয়েছে ১৬ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ আরও রয়েছে ১২ শয্যা বিশিষ্ট এইছডিইউ এবং ৬টি শয্যা বিশিষ্ট রিকোভারি ইউনিট। এই দশ তলা বিল্ডিংটি বাংলাদেশের সবচেয়ে আধুনিক রেডিওলজি এবং ইমেজিং বিভাগে সজ্জিত। পেশাদারদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ নানান কর্মসূচী চালনা করে থাকে।

জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট

জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট
জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট

১৯৭৮ সালে নির্মিত এই ইনস্টিটিউটটি বেশ জনপ্রিয় একটি চক্ষু হাসপাতাল। নানান উন্নয়ন কর্ম কান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের সেরা আই-কেয়ার প্রতিষ্ঠান হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে বেশ অল্প সময়ের মধ্যে। নিবিড় পরিচর্যার জন্য রয়েছে ২৫০ টির মত শয্যা। প্রায় ২০০০ রোগীর মত মানুষ এখান থেকে চিকিৎসা পান এবং ৪ টির মত সার্জারি প্রতিদিন করতে হয় এই ভিড় সামলাতে। প্রতিষ্ঠানটি পেশাদারদের জন্য চক্ষুবিদ্যায় ডিপ্লোমা, এমসিপিএস, এফসিপিএস, এবং এমএসের মতো পেশাদার ডিগ্রি ও পেডিয়াট্রিক চক্ষুবিদ্যা এবং মেডিকেল রেটিনা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণও সরবরাহ করে থাকে। 

ঢাকা শিশু হাসপাতাল

ঢাকা শিশু হাসপাতাল
ঢাকা শিশু হাসপাতাল

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পরে ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন এটি ছিল দেশের একমাত্র শিশুদের হাসপাতাল। প্রথম দিকে এটা ধানমন্ডির একট ব্যক্তিগত প্রপার্টিতে ৫০ টির বেশি ইনডোর শয্যা নিয়ে এই হাসপাতালটি তার যাত্রা শুরু করে। এরপরই বাংলাদেশ সরকার এই পুরো মালিকানা বরাদ্দ নেয় এবং ৬৫০ টি শয্যা নিয়ে সরকারীভাবে এটি যাত্রা শুরু করে। হাসপাতালের তিনটি বড় বিভাগ রয়েছে – পেডিয়াট্রিক মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, অ্যানাসথেসিয়া এবং ডায়াগনস্টিক বিভাগ। কার্ডিওলজি থেকে বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অধীনেও চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে। ওপিডি (আউট-রোগী বিভাগ) এবং জরুরী ইউনিট প্রতিদিন ৯০০ থেকে ১০০০ পেডিয়াট্রিক রোগীদের সেবা প্রদান করে থাকে। এই হাসপাতালটির শিক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৩ সালে এবং এফসিপিএস, এমডি, এমএস এবং ডিসিএইচের মতো স্নাতকোত্তর কোর্সগুলো করিয়ে থাকে। এই ইনস্টিটিউটটি পেডিয়াট্রিক নার্সিং এবং হেলথ টেকনোলজিতে বিএসসি-তে ডিপ্লোমা ডিগ্রী প্রদান করে থাকে। 

এই সবকয়টি হাসপাতাল সম্বন্ধে একটি দিক লক্ষ্য হয়তো করেছেন আর সেটি হচ্ছে, এই সবগুলো হাসপাতালই চিকিৎসা সেবা দেবার পাশাপাশি মেডিকেল প্রতিষ্ঠানও, যেখানে রয়েছে পেশাদার ডিগ্রি এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ।

Write A Comment