Reading Time: 4 minutes

বিশ্বজুড়ে এখন একটাই আতঙ্ক কাবু করে রেখেছে, পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে থাকা কোটি কোটি মানুষকে। করোনাভাইরাস নামের এই আতঙ্কের প্রভাব পড়েছে মানুষ থেকে শুরু করে অর্থনীতি সবকিছুর উপর। পুরো বিশ্বকে থমকে দাওয়ার শুরুটা ২০২০ সালের শুরুর দিকেই হয়েছে। একদিকে লকডাউনে চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর চাপ, এসব কিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টায় থাকা এই ভাইরাস যেন ক্রমেই আরও শক্তিশালী হয়ে উঠলো। আবাসন খাত এ লকডাউন এর প্রভাব ও ছিল উল্লেখ করার মতো। তবে জীবন যেমন থেমে থাকে না, তেমনি করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলে আবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টায় প্রতিটি খাতই যেন ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলো। চলুন আবাসন খাত এ লকডাউন এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই আজকের ব্লগে। 

অন্যান্য খাতের মতো আবাসন খাত এ লকডাউন এর প্রভাব ছিল উল্লেখ করার মতো। লকডাউনের সময়টাতে কিছুটা থেমে গেলেও ধাক্কা কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিতে রয়েছে আবাসন খাত। চলছে ক্রেতাদের ফ্ল্যাট কেনার অনুসন্ধান এবং দিনশেষে পছন্দ অনুযায়ী নতুন ফ্ল্যাটের মালিক হয়ে ওঠার গল্প। এতে করে আবাসন ব্যবসায়ে চলছে নিয়মিত ফ্ল্যাট কেনাবেচা। বেড়েছে ফ্ল্যাট কেনাবেচার হার। গতবছর লকডাউন পূর্ববর্তী সময় থেকে এ বছর দ্বিতীয় লকডাউনের সময় পর্যন্ত ফ্ল্যাট কেনাবেচায় একেক সময়ের চিত্র ছিল একেক রকম। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে হয়তো সেই রেট বেড়েছে, কোথাও হয়তো তা কমে গেছে কয়েক শতাংশ। এর মধ্যে চলছে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন নতুন প্রকল্পে কাজ শুরু করা।

Business closed in lockdown
লকডাউনের প্রভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ছোট-বড় অনেক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম

লকডাউন এর সময়ে 

২০২০ সালের মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে করোনার সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে শুরু হয় লকডাউন বা অবরুদ্ধ অবস্থা জারি করা। এর প্রভাব পড়ে আবাসন ব্যবসায়। সেসময় ফ্ল্যাট বিক্রি তো দূরের কথা, যেকোনো ধরনের কার্যক্রমই যেন বন্ধ হয়ে যায়। গ্রাহকদের কাছে কিস্তির টাকা পাওয়া থেকে শুরু করে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বাধা পড়ে সর্বত্র। পরবর্তীতে মে মাসে সীমিত আকারে ব্যবসা খুললেও, কাজে পুনরায় গতি আসতে অনেকটা সময় লেগে যায়। এর মধ্যে সীমিত সংখ্যক ক্রেতাও দেখা দেয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। অন্যদিকে ২০২১ সালের এপ্রিল মাস থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় লকডাউনের চিত্র প্রথম লকডাউন থেকে ভিন্ন। গত বছরের মতো এবার হয়তো সবকিছু থেমে যায়নি আবাসন খাত এ লকডাউন এর প্রভাব এ। সীমিত আকারে উপস্থিতি হোক কিংবা ডিজিটালি, চলছে ফ্ল্যাট দেখা, ভাড়া দেয়া এবং কেনার কার্যক্রম।  

নির্মাণ খাত 

তবে উল্টো চিত্র দেখা গিয়েছে নির্মাণ খাতে। ইস্পাত, সিমেন্ট এবং নির্মাণ শিল্পসহ সব ধরনের শিল্পের শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ে বিগত বছরের লকডাউনে। ছোট থেকে মাঝারি আকারের ইস্পাত কারখানাগুলো ছিল বন্ধের পথে। নির্মাণ সামগ্রীর চাহিদা ছিল কম, মূল্যও ছিল অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে কম। যদিও বছরের শেষদিকে ধীরে ধীরে এ পরিস্থিতি থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যায়। কেননা, একদিকে যেমন বাড়তে থাকে নির্মাণ সামগ্রীর চাহিদা। অন্যদিকে ৬০-গ্রেড স্টিলের দাম প্রতি টনে ৫৮ থেকে ৬০ হাজার টাকা হয়ে যায়, যদিও এরচেয়ে কম মূল্যেও পূর্ববর্তী বছরে স্টিল বিক্রয় হয়েছে।

বিনিয়োগের সুযোগ 

২০২০–২১ অর্থ বছরের বাজেটে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা দেওয়ায় করোনাকালের মধ্যেই ফ্ল্যাট বিক্রিতে গতি এসেছে। এর সাথে ব্যাংক ঋণে সুদের হার কমে আসার কারণেও আবাসন খাত এ লকডাউন এর প্রভাব কিছুটা হলেও ছিল ইতিবাচক। এক্ষেত্রে একেক আবাসন প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাট বিক্রির চিত্র একেক রকম হলেও, এমন অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ে আশার কথা হচ্ছে থেমে নেই কিছুই। যেহেতু বাজেটে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে, তাই দেশের বাইরে টাকা যাওয়ার প্রবণতাও একই সাথে কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিনিয়োগ হচ্ছে আবাসন খাতে। যা সত্যিকার অর্থেই উল্লেখ করার মতো একটি বিষয়। 

Construction industry
গতি ফিরে এসেছে নির্মাণ খাতে, বাড়ছে বিনিয়োগ

ভার্চুয়াল প্রপার্টি ফেয়ার 

অনলাইনে প্রপার্টি প্রদর্শন করার মাধ্যমে আয়োজিত ফেয়ার-ই ‘ভার্চুয়াল প্রপার্টি ফেয়ার’ হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো এসময় তাদের প্রপার্টি রিলেটেড অফারগুলো কাস্টমারদের সামনে তুলে ধরে। যা অন্যসব ফেয়ারের মতো হলেও, পার্থক্য শুধু একটাই যে পায়ে হেঁটে, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করেও আপনি এই ফেয়ারে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। কেননা এর অস্তিত্বই হচ্ছে ভার্চুয়াল জগতে, এখানে ঘরে বসেই প্রপার্টির পুরোটা জানতে পারছেন খুব সহজেই। 

স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে বিগত বছরে যখন এই প্রপার্টি ফেয়ারের আয়োজন করা অসম্ভব ছিল। ঠিক তখনই সব সমস্যার সমাধান হয়ে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে প্রপার্টি ফেয়ার যাত্রা করে। ঘরে বসেই প্রপার্টির লিস্ট থেকে পছন্দেরটি বেছে নেয়া এখন অনেক সহজ। যেখানে থাকছে না লকডাউনের কোন বিশেষ প্রভাব। তাই অনলাইনে কেনাকাটা এবং লেনদেন এর মতো ভার্চুয়াল প্রপার্টি ফেয়ার এর আইডিয়াটাও বেশ সময় উপযোগী, বিশেষ করে এই লকডাউনের সময়ে।  

Virtual Property Fair
ঘরে বসে প্রপার্টি কেনাবেচা হবে এখন খুব সহজেই

বিপ্রপার্টি অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ার

মহামারীর মতো চ্যালেঞ্জিং এই সময়ে আবাসন খাতের গতিকে সচল রাখতে এবং আবার আগের মতো ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে এগিয়ে ছিল অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ার। আর সেই ভাবনা থেকেই বাংলাদেশের একমাত্র রিয়েল এস্টেট সল্যুশন প্রভাইডার বিপ্রপার্টি শুরু করে অনন্য এই যাত্রা। এই অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ার এ উঠে আসে ১০ হাজারেরও বেশি প্রপার্টি এবং দারুণ সব প্রজেক্টস এর খোঁজ। 

অনলাইন প্রপার্টি ফেয়ারে যেহেতু সশরীরে যাবার প্রয়োজন হয় না, তাই সব ধরনের সুবিধাদি এখানে অফার করা হয় অনলাইনে। অনলাইন প্রপার্টি মেলায় রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারস, বিভিন্ন কোম্পানি এবং বিক্রেতারা প্রপার্টি প্রদর্শন করে। সাথে গ্রাহকদের জন্য আর্থিক পরামর্শ, আইনি সহায়তা পর্যন্ত সবরকম সার্ভিস দেয়া হয় বিনামূল্যে। 

আবাসন খাত এ লকডাউন এর প্রভাব যেমনই হোক না কেন, ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিতে সার্বিকভাবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে যেকোনো বাধা অতিক্রম করার লক্ষ্যই সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় যেকোনো খাতকে। 

Write A Comment

Author