আতিথেয়তা আর ঐতিহ্য-দুইয়ে মিলে খুলনার জুড়ি মেলা ভার! শান্ত এ জেলাটিতে দেখার আছে অনেক কিছুই। সেইসাথে এখনো পর্যন্ত এখানে যত উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি হয়েছে তা থেকে বলাই যায়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও খুলনা দারুণ সম্ভাবনাময়। কিন্তু খুলনার প্রিয় বিষয়গুলো কী তা কি আপনি জানেন? আজ বলবো সেসব কথাই! তবে আসুন জেনে নেই খুলনা কেন আমার এত প্রিয়!
খুলনাবাসীর জীবনযাত্রা
যেকোনো জায়গা চেনা যায় নিবাসীদের জীবনাচরণ আর সংস্কৃতি দিয়ে। খুলনার প্রিয় বিষয়গুলো এর মধ্যে অন্যতম এখানকার মানুষের চমৎকার আতিথেয়তা আর সহৃদয়তা। প্রথমবার খুলনা গেলে সত্যিই তাদের আপ্যায়নে মুগ্ধ হতে হয়! এছাড়া খুলনাবাসীর জীবনযাপনের ধরন ভীষণ সাধারণ। চাকরির পাশাপাশি প্রায় সবাই ব্যবসা করেন। খুলনা দেশের তৃতীয় বৃহৎ শিল্প নগরী হওয়ায় ব্যাপারটি বেশ স্বাভাবিকই মনে হয়। পুরো খুলনা জেলায় ছড়িয়ে আছে অসংখ্য পাটকল, চিনিকল, বিস্কুট বানানোর কারখানা এবং নিউজপ্রিন্ট কাগজের কল। খুলনাবাসী কাজে-কর্মে ডুবে থাকলেও তাঁদের জীবনাচরণে সাধারণত্বের ছোঁয়া চেনা যায় সহজেই। আর এই আড়ম্বরহীন সাধারণ জীবনের কারণেই খুলনা হয়ে উঠেছে শান্ত ও নিরিবিলি এক জেলা, যা ব্যক্তিগতভাবে আমার ভীষণ পছন্দ।
খুলনায় যাতায়াত
আমরা যারা ট্র্যাফিক জ্যামের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি বা খানাখন্দে ভরা ভাঙ্গা রাস্তায় যাতায়াত করতে করতে বিরক্ত, তাদের জন্য খুলনার রাস্তাঘাট এক আশীর্বাদের নাম। বিশেষ করে ঢাকাবাসী শুধুমাত্র এমন আরামদায়ক রাস্তার জন্যই খুলনা ভ্রমণে যেতেই পারেন। খুলনার রাস্তা বেশ প্রশস্ত, মসৃণ ও পরিকল্পিত। এছাড়া স্পষ্ট রোড সাইন থাকায় যেকোনো জায়গা খুঁজে পাওয়াও মেগাসিটিতে ঠিকানা খুঁজে পাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি সহজ।
খুলনার খাবার-দাবার
খুলনার খাবার ভোজনরসিকদের একেবারেই হতাশ করবে না। খুলনার প্রিয় বিষয়গুলো এর মধ্যে এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার চুইঝালের কথা বলতেই হবে। গরু বা খাসির মাংসে চুইঝাল দিয়ে যে সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয় সেটির স্বাদ সত্যিই অতুলনীয়। স্থানীয় এ খাবারটি খুলনায় এলে তাই চেখে দেখতে ভুলবেন না কিন্তু! আর মিষ্টিপ্রেমীদের জন্য সুখবর হলো সাতক্ষীরার ঘোষ ডেয়ারি আর খুলনার সবচেয়ে পুরোনো মিষ্টির দোকান ইন্দ্রমোহন সুইটস। এমন সুস্বাদু খাবারের সন্ধানে তাই একবার খুলনা ঘুরে আসাই যায়!
খুলনার নদী
ভৈরব ও রূপসা, খুলনার এই দুই প্রধান নদী মংলা পোর্টের সাথে শহরকে সংযুক্ত করেছে। কিন্তু যাতায়াতের মাধ্যম হওয়া ছাড়াও নদীর তাৎপর্য তো আরো অনেক। নৌকাভ্রমণ বা মাছ ধরার জন্য খুলনায় রয়েছে বেশ কিছু মনোরম জায়গা। ভৈরব বা রুপসায় নৌকা ভ্রমণ আপনার মন ভালো করে দেবে নিমেষেই! শুধু তাই নয়, ভীষণ জাঁকজমক পূর্ণ আয়োজন ছাড়াও যে সুন্দর সন্ধ্যা কাটানো সম্ভব সেটিও খুলনায় গেলে বোঝা যায়। রূপসা ব্রিজের কথাই ধরা যাক। ব্রিজের ওপর থেকে ছুটির সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার জন্য তেমন কোনো আয়োজনের প্রয়োজন হয় না, তবে পরিবার বা বন্ধুদের সাথে কাটানোর জন্য সেটি হতে পারে দারুণ এক মূহুর্ত।
সুন্দরবন
সুন্দরবনের কথা না বললে খুলনার প্রিয় বিষয়গুলো এর তালিকা শেষ করা যাবে না। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের প্রবেশপথ এই খুলনা। আর সুন্দরবনের সৌন্দর্য শব্দে প্রকাশ করা বোধ হয় সম্ভব নয়। গহীন অরণ্যের রূপ দেখতে চাইলে তাই সুন্দরবনে ৩ থেকে ৫ দিনের নৌভ্রমণকেই বেছে নেয়া উচিত।
যত কথাই বলি খুলনার প্রিয় বিষয়গুলো বোধহয় বলে শেষ করতে পারবো না। তাই বলছি, নিজের চোখে একবার দেখে আসুন প্রশান্তি আর সৌন্দর্যের আধার এ জেলাটিকে! কথা দিচ্ছি, আপনি মুগ্ধ হবেন!
2 Comments
Everything was good & Clear
but need a simple correction
খুলনার সবচেয়ে পুরোনো মিষ্টির দোকান ইন্দ্রমোহন সুইটস
সঠিক তথ্য দিয়ে আমাদের সহায়তা করার জন্য ধন্যবাদ, স্যার।