এখনো আমাদের দেশে ভবন নির্মাণের অন্যতম প্রধান কাচামাল হল ইট। বলা যায় যে কোন স্থাপনার অন্যতম প্রধান কাচামাল হল ইট। তাই আপনি নতুন কোন ভবন নির্মাণ করতে চান অথবা ক্রয়, ইটের কোয়ালিটি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেয়াটা অত্যন্ত জরুরী। আর ইটের কোয়ালিটি চেক করতে বেশ কিছু কার্যকরী টেস্ট রয়েছে। নিচের প্রতিটি টেস্টই তেমন কিছু টেস্ট, এগুলোতে ভালো রেজাল্ট আসলে আপনি ব্যবহৃত ইটের কোয়ালিটি সম্পর্কে নিশ্চিত থাকতে পারেন। এই টেস্টগুলো আপনি নিজে অথবা কোন দক্ষ পরামর্শক এর সাহায্য নিয়ে করতে পারেন। কীভাবে ইটের কোয়ালিটি চেক করা যায় জানা থাকলে নিশ্চিত করা যায় স্থাপনার দীর্ঘস্থায়ীত্ব।
এফ্লোরোসেন্স টেস্ট (লবণের মাত্রা নির্ণয়)
এই জনপ্রিয় ও কার্যকর পরীক্ষাটির মাধ্যমে ইটের অভ্যন্তরে কী পরিমাণ লবণ আছে তা নির্ণয় করা হয়। বেশীমাত্রায় লবণের উপস্থিতি মানেই তা নিম্নমানের ইট, দীর্ঘস্থায়ীত্বের জন্য ইটের গঠনে কোন লবণ না থাকাই উত্তম। ক্ষেত্রবিশেষে সামান্য থাকতে পারে তবে মাত্রাতিরিক্ত হওয়া যাবে না কোনভাবেই। এই এফ্লোরোসেন্স টেস্টের মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন লবণাক্ততার মাত্রা সম্পর্কে।
কীভাবে এই টেস্ট করা হয়
এই পরীক্ষাটি করা অত্যন্ত সহজ। একটি রুমের ব্যবস্থা করুন যেখানে রয়েছে প্রোপার ভেন্টিলেশন। এবার ৩০X২০ সেন্টিমিটার আয়তনের একটি ডিশ নিন এবং বিশুদ্ধ পানি (ডিস্টিল্ড ওয়াটার, আমাদের দেশে অনেক সময় “ব্যাটারির পানি” নামে পরিচিত) দিয়ে তা পূর্ণ করুন। এর ভেতরে এবার লম্বালম্বিভাবে একটি ইটকে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত করে ফেলুন। খেয়াল রাখবেন ইটের উপরে যেন কমপক্ষে ২.৫ সেন্টিমিটার পানির লেভেল থাকে। এরপর কয়েক ঘন্টা রেখে নিন যেন ইট পানি শোষণ করতে পারে। এবার পুরো মিশ্রণ থেকে পানি ইভাপোরেট বা শুকিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করুন আর ইটটিকেও শুকাতে দিন। তারপর পুরো প্রক্রিয়াটা আরেকবার চালান এবং নিচের পর্যবেক্ষণগুলো করুন।
সম্ভাব্য ফলাফল
- শুন্যঃ যদি ইটের গায়ে কোন লবণের উপস্থিতি দেখতে না পান, স্থাপনার কাজে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন।
- সামান্যঃ যদি ইটের গায়ে অল্প এরিয়া, ১০ভাগের মত লবণের উপস্থিতি দেখা যায়, তাহলেও নির্মাণের কাজে এই ইট ব্যবহার করা যাবে।
- মোটামুটিঃ ৫০% এর মত এরিয়ায় লবণের উপস্থিতি চোখে পড়ছে, তবে কোন পাউডারিং বা ফ্লেকিং দেখা যাচ্ছে না। এমন ইট ব্যবহার না করাই ভালো।
- বেশিঃ ৫০% এর মত এরিয়ায় লবণের উপস্থিতি চোখে পড়ছে, এর সাথে পাউডারিং ও ফ্লেকিংও দেখা যাচ্ছে। এমন ইট পরিহার করুন।
- অনেক বেশিঃ পাউডারিং ও ফ্লেকিংসহ প্রচুর পরিমাণে ডিপোজিট ডেখা যাচ্ছে। পরবর্তীতে আরও টেস্ট করা হলে সেই পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোন অবস্থাতেই এমন ইট ব্যবহার করবেন না, যে কোন নির্মাণের জন্য এ অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ।
পানি শোষণক্ষমতার পরীক্ষা
ইটের কোয়ালিটি চেক করার জন্য আরেকটি চমৎকার ও সহজ পরীক্ষা হল এর পানি শোষণক্ষমতার পরীক্ষা। এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষাও বটে। সবচেয়ে বড় বিষয় হল চাইলে কোন দক্ষ লোকের সহায়তা নিয়ে যেমন করা সম্ভব, আবার আপনি নিজেই এই পরীক্ষাটি করতে পারেন।
পরীক্ষা
অনেকগুলো ইট থেকে ইচ্ছেমত ৫ টি ইট বেছে নিন। শুষ্ক অবস্থায় ইটগুলোর সঠিকভাবে ওজন করে গড় বের করে নিন এবং তা নোট রাখুন। এবার ইটগুলোকে পানিতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত রাখুন ২৪ ঘন্টার জন্য। ২৪ ঘন্টা পর ইটগুলোকে পানি থেকে তুলে, পানি ঝরিয়ে নিয়ে আবার ওজন নিন ও গড় বের করুন।
ফলাফল ও বিশ্লেষণ
ভালো মানের ইট খুব বেশি পানিশোষী নয়, তাই পানি শোষণের পর এর ভর খুব বেশি বাড়ার কথা নয়। যদি গড় ওজন বের করার পর দেখা যায় যে গড় প্রায় ২০% এর মন তা বৃদ্ধি পেয়েছে তাহলে বুঝতে হবে এই ইটের অভ্যন্তরীণ উপাদান খুব একটা সুবিধার নয় এবং এই ইটের কোয়ালিটিও খুব বেশি ভালো নয়।
হার্ডনেস, সাউন্ডনেস এবং স্ট্রাকচারাল ইন্ট্রিগিটি টেস্ট
চোখে দেখে, স্পর্শ করে এবং শব্দ শুনে অর্থ্যাৎ আপনার ইন্দ্রিয় ব্যবহার করেও আপনি ইটের কোয়ালিটি চেক করতে পারেন। অনুমেয় যে এই পরীক্ষাগুলো খুব একটা সময়ক্ষেপণকারী নয় এবং করতে খুব বেশি টেকনিক্যাল নলেজেরও দরকার নেই। চলুন দেখে নেয়া যাক কীভাবে অল্প সময় ও শ্রম ব্যয়ে কীভাবে ইটের কোয়ালিটি চেক করা যায়।
হার্ডনেস টেস্ট
হাতের নখের উল্টোপাশ কিংবা ধারালো কোন জিনিস যেমন তারকাটা দিয়ে ইটের গায়ে আঁচর কাটার চেষ্টা করুন। উন্নতমানের ইটে এমন সাধারণ চেষ্টায় কোন দাগ পড়বে না, অন্য ইটে দাগ বসে যাবে।
সাউন্ড টেস্ট
দুই হাতে দুটি ইট নিয়ে খুব বেশি জোরে না আবার আস্তেও না এমনভাবে একে অপরের সাথে বাড়ি দিন। যদি ঠক করে সন্তোষজনক একটি আওয়াজ হয় এবং ইটগুলো ভেঙে না যায় তাহলে এর কোয়ালিটি বেশ ভালো।
স্ট্রাকচারাল ইন্ট্রিগিটি টেস্ট
এই পরীক্ষার জন্য একটি হাতুড়ির সাহায্যে কয়েকটি ইট নিয়ে সেগুলোকে ভেঙে দুই টুকরো করুন এবং ভেতরের অংশ পর্যবেক্ষণ করুন। ভেতরের অংশ থাকবে একদম কম্প্যাক্ট বা আঁটসাঁট, এতে কোন ফাঁপা স্থান থাকবে না, থাকবে না কোন ফাটল বা চির। ভেতরের অংশ হবে সমান ও সমতলীয়। এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই ইটের কোয়ালিটি চেক করা যায় অনেকাংশেই।
ভঙ্গুরতার শক্তি পরীক্ষা
ভঙ্গুরতার শক্তি পরীক্ষা (Crush strength test) শুধুমাত্র ইট নয় বরং আরও বেশ কিছু নির্মাণ সামগ্রীর মান নির্ণয়ের জন্য একটি প্রচলিত ও কার্যকরী পরীক্ষা। এই পরীক্ষা করার জন্য প্রয়োজন হবে একটি কম্প্রেশন টেস্টিং মেশিন যা এরকম পরীক্ষার জন্য বিশেষায়িত পরীক্ষাগার বা ল্যাবেরটরিতে পাওয়া সম্ভব। ব্যবহৃত ইট ঠিক কতটুকু প্রেসার সহ্য করতে পারে, কোন শক বা ভূমিকম্পের মত দুর্যোগ কতটুকু সহনীয়, তা এই পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা সম্ভব।
পরীক্ষা
কমপ্রেশন টেস্টিং মেশিনের ভেতর দিয়ে ইটের উপর প্রেশার বাড়াতে থাকলে এক পর্যায়ে ইটটি ভেঙে যাবে। যে মুহূর্তে ইটটি ভেঙে যায়, কমপ্রেশন মেশিনের ডিসপ্লে থেকে সেই মানটি দেখে নিতে হবে।
ফলাফল বিশ্লেষণ
যে প্রেসারে ইটটি ভেঙে যাচ্ছে তা যদি প্রতি মিলিমিটার স্কয়ারে ৩.৫০ নিউটন এর চেয়ে কম হয় তাহলে ইটের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা খুব বেশি সন্তোষজনক নয়। তাই নিরাপদ ভবন নির্মাণের জন্য ৩.৫০ নিউটন/মিমি স্কয়ার এর চেয়ে কম প্রেসারে ভঙ্গুর ইট ব্যবহার করা উচিত নয়।
ইটের কোয়ালিটি চেক করার জন্য কিছু প্রচলিত ও সহজ পরীক্ষা এগুলো। এর বাইরে আরও বেশ কিছু পরীক্ষা রয়েছে কিন্তু সেগুলোর জন্য প্রয়োজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বা কন্সটাকশন এক্সপার্টের। কিন্তু উপরে উল্লেখ করা পরীক্ষাগুলো আপনি নিজেই করতে পারবেন। এ সম্পর্কে আরও জানার থাকলে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করতে পারেন কমেন্ট সেকশনে। চাইলে ঘুরে দেখতে পারেন আমাদের ব্লগও।