আধুনিক সময় এবং আধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট দুটো ক্ষেত্রেই নান্দনিক জীবনযাত্রার চাহিদা রয়েছে অনেক। আমাদের চারপাশের পরিবেশ বা জায়গা মাঝে মাঝে এত গভীরভাবে আমাদের প্রভাবিত করে, যে আমরা তা উপলব্ধি করতে পারি না। নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা বা ঘরের সাজ সবকিছুতেই আমরা আমদের পছন্দকে প্রাধান্য দেই। এমনকি নিজের পোশাক থেকে শুরু করে ঘরের সবকিছুতে ব্যক্তিগত পছন্দেরই বহি:প্রকাশ ঘটাই। বহু প্রজন্ম ধরে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ধারণাকে বেশ জটিলভাবে দেখা হয়েছে। বেশীরভাগ মানুষই ভেবে থাকে যে ইন্টেরিয়র ডিজাইন বা ইন্টেরিয়র ডিজাইনার বেশ ব্যয়বহুল বা বিলাসবহুল। সম্ভবত এই কারণেই বেশির ভাগ মানুষ ইন্টেরিয়র ডিজাইনার নিয়োগ করেন না এমনকি বাড়িতে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করানো থেকেও বিরত থাকেন। বাড়িটির হয়তো একটা সংস্কার প্রয়োজন কিন্তু এমন ধারনার জন্যই তারা ইন্টেরিয়র ডিজাইনার নিয়োগ দেন না। তাই আজকের এই ব্লগে আমরা আলাপ করবো, ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ইতিবাচক প্রভাব সম্বন্ধে এবং কেন এটা প্রয়োজন সে বিষয়েও জানাবো। পড়তে থাকুন …
ইন্টেরিয়র ডিজাইন মূলত কী?
ইন্টেরিয়র ডিজাইন একটি আর্ট ফর্ম যা আপনার বাসার ইন্টেরিয়র সেট আপকে আগের থেকে আরও সুন্দর করে তোলে। এমনকি ঘরের ভেতকার পরিবেশ ইতিবাচকভাবে বদলে ফেলার সাথে সাথে ঘরের সৌন্দর্যও বর্ধন করে থাকে। সাধারণত, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার নিয়োগ করা হয় বাড়ির ভেতরে কোন বড় ধরণের পরিবর্তন সাধন করার জন্য। যদিও কয়েক বছর ধরে, ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ট্রেন্ডে এসেছে লক্ষণীয় পরিবর্তন। ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং বেশ সৃজনশীল একটি কাজ। যেখানে প্রতিনিয়ত থাকা চাই উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা। তাই ইন্টেরিয়র ডিজাইনারা ক্লায়েন্টদের চাহিদা পূরণের জন্য, তাদের প্ল্যানে বর্তমান সময়ের ইন্টেরিয়রের ট্রেন্ডগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে পছন্দ করেন। যাতে করে তাদের প্ল্যানগুলো হয় সময় উপযোগী। হোম ডেকোরে ইন্টেরিয়র ডিজাইন দেখে যতটুকু না মনে হয়, তার থেকে এর প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব অনেক বেশি। কেবল মাত্র ইন্টেরিয়র ডিজাইনই আপনাকে সাহায্য করে থাকে, ছিমছাম, আরামদায়ক এবং কমফোর্টেবল একটি বাসা বানাতে। এছাড়াও, ঘরের ভেতরকার স্পেস মোডিফিকেশন, ঘরের জন্য লাইট বাছাই এবং ফাংশনাল প্ল্যানিং এই সমস্ত কাজ ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা করে থাকেন। এটা শুধু ডিজাইন নয়। ইন্টেরিয়রের সেই ক্ষমতা রয়েছে যা কারও উপর ছাপ ফেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আপনি যদি ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে আরও জানতে চান তাহলে চলুন বিস্তারিত জানা যাক। কীভাবে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ইতিবাচক প্রভাব আমাদের জীবনকেও প্রভাবিত করছে।
বাড়ির চেহারা বদলে দিতে ইন্টেরিয়র ডিজাইন
আপনি আসলে ব্যক্তি হিসেবে কেমন তার অনেকটাই বলে দেয়া যায় আপনার রুচি বোধ আর পছন্দ দেখে। এই তত্ত্বটি অনেকটাই ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ইন্টেরিয়র ডিজাইন সবাইকে যার যার নিজস্ব পছন্দ ও রুচিবোধ প্রকাশের সুযোগ করে দেয়। লিভিং রুমে ফার্নিচার রাখার প্ল্যান থেকে শুরু করে বিভিন্ন রুমের কম্পোজিশন সবকিছুই ইন্টেরিয়র ডিজাইনের মাধ্যমে আপনি করতে পারছেন।
রঙের মেজাজ
ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ইতিবাচক প্রভাব গুলোর ক্ষেত্রে রঙ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমাদের চারপাশ ও মেজাজের উপর এই রঙের প্রভাব দুর্দান্ত। তাই এমন একটি ডিজাইন তৈরি করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ যা যে কারোর রুচির সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। যেমন দেয়ালের কথা বলতে গেলে সবসময় লাইটার টোন বেছে নেওয়া উচিত লাইটার টোন আপনাকে শান্ত আর ছিমছাম একটা ভাব এনে দিবে ঘরের ভেতর। আর অন্যান্য অনুষঙ্গের জন্য উজ্জ্বল রঙ বেছে নিলে তা আপনাকে ঘরের ভেতর উৎসব মুখর একটা আমেজ এনে দিবে। রঙের মেজাজটাই এমন ঘরের চারপাশটা একদম বদলে ফেলে।
জায়গার সঠিক ব্যবহার
এখনকার সময়ে লেস ইজ মোর! আপনাকে বেশি কিছু করতে হবে ছোট কোন পরিবর্তনের মাধ্যমে ঘরের ভেতরটা বদলে ফেলতে পারেন। ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সেই ক্ষমতা রয়েছে যে একটি ছোট বাড়িকে সঠিক ডিজাইনের মাধ্যমে বড় করে দেখিয়ে দিতে পারে। এ কারণেই ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা এমনভাবে পরিকল্পনা করেন যা প্রাকৃতিকভাবেই যেকোন ঘরকে খোলামেলা ও প্রশস্ত দেখায়। ভিজুয়াল কিছু ট্রিকস আছে যেগুলো ব্যবহার করে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে এই কারসাজিগুলো করা যায়। এই ক্ষেত্রে স্লিমার এবং স্মার্ট ফার্নিচারগুলো প্রধান ভূমিকা পালন করে। কেউ যদি স্পেস বাচাতে চান তাহলে ফ্লোরে ড্রেসিং টেবিল বা বুক শেলফ না রেখে তা দেয়ালে কেবিনেট করে ফেলুন। ফ্লোরে না রেখে দেয়ালে ঝুলিয়ে দিলে অনেকটুকু জায়গা বেঁচে যাবে।
আলোকসজ্জা
সাধারণত উজ্জ্বল আলো যেমন মানুষকে আনন্দিত করে তোলে তেমনি একটু কম আলো একটু ঘোলাটে আমেজ তৈরি করে। যেকোন নির্দিষ্ট রুমের জন্য লাইট বেছে নেওয়ার আগে, লাইটের এক্সপোজারের পরিমাণের পাশাপাশি রুমের অরিয়েন্টেশনের দিকটাও বিবেচনা করা উচিত। এলইডি লাইট, ওয়ার্ম লাইট কিংবা ডেকোরেটিভ লাইট যেটাই হোক না কেন বেছে নেওয়ার আগে এই বিষয়গুলো অবশ্যই যাচাই করা ভালো। লাইট এমন বেছে নিতে হবে যা কিনা আপনার ঘরের পুরো লুককে কমপ্লিমেন্ট করবে। সুতরাং, লাইটিং এর গুরুত্ব অনেক।
রুম বিন্যাস
যেকোন রুম অর্গানাইজ ও পরিষ্কার রাখা যেমন জরুরী তেমনি স্টাইলিশ ফার্নিচার দ্বারা সাজিয়ে রাখাও ঠিক তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। ঘরের ভেতর ইন্টেরিয়র মডিফিকেশন থাকার পরও যদি কেউ তা এলোমেলো বা অগছালো করে রাখে তাহলে তা অকার্যকরী প্রমাণিত হতে পারে। একটি নির্দিষ্ট জায়গা খুঁজে বের করা যেখানে আপনি সবকিছুই সাজিয়ে গুছিয়ে রাখবেন। এতে করে যেমন আপনার সময় বাঁচবে তেমনি আপনি সহজেই প্রয়োজনের সবকিছু খুঁজে পাবেন।
রুমের পরিবেশ
ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ইতিবাচক প্রভাব গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এটা রুমের পরিবেশ একদম বদলে দেয়। রুমের পরিবেশ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এটা রঙ, লাইট, ফার্নিচার এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফিচারকে একসাথে উপস্থাপন করে, আর এই ফিচারগুলোর কারণেই ঘরের ভেতর তৈরি হয়ে কিছু অনুভূতি আর আমেজ। ঘরের ভেতর প্রবেশ করার সাথেই আপনার মেজাজ বদলে যাওয়ার এই কার্যকলাপটি ঘটে থাকে কেবল, ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ইতিবাচক প্রভাব এর ফলে। এছাড়াও, ইন্টেরিয়র ডিজাইন ব্যবহার করে যেকোন স্পেসকে নিজের কমফোর্ট জোনে পরিণত করা যায়। এমন একটি জায়গা তৈরি করা যেখানে আপনি দিনশেষে নিজের স্বস্তিটুকু খুঁজে পাবেন।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ের ইতিবাচক প্রভাবগুলো এতটাই বেশি যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। সময়ের সাথে, ইন্টেরিয়র ডিজাইন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। আমাদের জীবনেও আরও অনেক রঙ যুক্ত করতেও অবদান রাখে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ের ইতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক সুবিধাগুলো থেকে দূরে সরে যাওয়ার পরিবর্তে কেননা আমরা ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ের প্রভাবগুলো নিয়ে ভাবি। এখনই সময় নিজের স্পেসে একটা পৃথিবী আঁকার।
ইন্টেরিয়র ডিজাইন নিয়ে লেখা আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনার কেমন লেগেছে? আপনিও কি আমার সাথে একমত? আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।