“ইশ যদি বিংশ শতাব্দীতে থাকতাম, খুবই ভালো হতো যদি বিংশ শতাব্দীতে বড় হতে পারতাম!” এমন ক্ষোভ বা অভিযোগ যাদের মনে রয়েছে তাদের জন্যই আজকের এই বিশেষ ব্লগ! ইন্টেরিয়র ডিজাইন বা স্টাইলের সার্থকতা এখানেই, মনের মত পরিবেশ আবহ ঠিক নিজের আশেপাশেই তৈরি করার সুযোগ কেবল এখানেই রয়েছে। তো যারা ভাবছিলেন বিংশ শতাব্দীটা আসলে কেমন ছিল? কেমন ছিল তখনকার সময়ের হোম ডেকোর! বিংশ শতাব্দীর হোম ডেকোরের প্রধান উপাদানগুলো নিয়েই আজকের ব্লগ লেখা। গ্রেট গ্যাটসবিতে থাকার আকাঙ্ক্ষা থাকলে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে আর্ট ডেকো স্টাইল আপনার জন্য করতে পারে জাদু। বিংশ শতাব্দী স্টাইল আর ফ্যাশনকে গ্ল্যামারাসভাবে উপস্থাপন করতে পারে কেবল আর্ট ডেকো স্টাইল। জ্যামিতিক প্যাটার্ন, ডিটেইল ওয়ার্ক, বোল্ড রং এই সমস্ত উপকরণকে বিংশ শতাব্দীতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে আর্ট ডেকো স্টাইল কে করে তুলেছে জনপ্রিয়।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনে আর্ট ডেকো স্টাইল কী?
ইউরোপ আমেরিকার বিংশ থেকে ত্রিংশ শতাব্দীর সময়টা বেশ জনপ্রিয় ছিল বিশ্বজুড়ে। হোম ডেকোর থেকে শুরু করে সবকিছুতে ছিল মিনিমাল ভাব এবং প্রাকৃতিক আমেজ। এছাড়াও, আর্ট ডেকো স্টাইলের বিশেষ পেইন্টিংগুলো ছিল নজরকাড়া। ঠিক প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এর আগে ফ্রান্সে এই আর্ট ডেকো স্টাইলের আধিপত্য তৈরি হয়। এই স্টাইলটা দেখে আপনি সহজেই আন্দাজ করতে পারবেন এটা কোন স্টাইল, থাকবে স্ট্রেইট লাইন, জ্যামিতিক প্যাটার্ন এবং শেইপ, ক্লিন এবং আয়তাকার ডিজাইন। আর্ট ডেকো ইন্টেরিয়র স্টাইলের ভেতরে আরও খুঁজে পাবেন, স্কাল্পচার, পর্দা, পেইন্টিংস ইত্যাদি।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনে আর্ট ডেকো স্টাইলের ইতিকথা
এই স্টাইলের ইতিকথা জানতে চলে যেতে হবে সুদূর ফ্রান্সে সেই উনিশ শতাব্দীতে। “আর্ট নউভিও” (Art Nouveau) এর সাথে তখন পুরো ফ্রান্স জুড়ে চলছিল সৃজনশীল এক ডিজাইন ট্রেন্ড অ্যাক্টিভিটি। অসংখ্য ডেকোরেটিভ আর্টিস্ট এক সাথে কাজ করে যাচ্ছিলেন বলেই আমরা আর্ট ডেকো স্টাইলের দেখা পেয়ে যাই। এই ডেকোরেটিভ আর্টিস্ট হচ্ছে তারা যারা ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত কাজ করে গেছেন টেক্সটাইল ডিজাইনার হিসেবে আবার কখনো ডিজাইন করেছেন আসবাব। কিন্তু, এই সমস্ত কাজ করা আর্টিস্টদের জন্য বেশ সাধারণ ব্যাপারই ছিল। কিন্তু, এই একই সালে সকল আর্টিস্টরা “আর্টস ডেকোরেটিফস” স্বীকৃতি পান। সেই থেকে আর পেছন ফেরা নয়! এর পর থেকে আসলেই এই আর্ট ডেকোর পথ চলা। সকল আর্টিস্টরা তখন ধীরে ধীরে তাদের মতামত রাখতে শুরু করলেন এবং অন্যরকম এক স্টাইল তৈরি করলেন।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনে আর্ট ডেকো স্টাইলের মূল মন্ত্র
ঘরের ভেতরে স্টেটমেন্ট তৈরি করতে আর্ট ডেকো স্টাইলের তুলনা নেই। আর্ট ডেকো স্টাইলটা শুধু নামে আলাদা নয় বরং, এর অনেক উপাদানই বেশ নতুন আর সম্পূর্ণ আলাদা। আর্কিটেকচার থেকে শুরু করে আসবাব বা অন্যান্য অনুষঙ্গে এই স্টাইলের ছোঁয়া ছিল।
রং
এই আর্ট ডেকো স্টাইলের রংগুলো ছিল বোল্ড। কখনো পাওয়া গিয়েছে সোনালি চকচকে বর্ডার আবার কখনো দেখা গিয়েছে রূপালি জরি। তবে এই ডেকোর স্টাইলে ব্যবহৃত রং ছিল, হলুদ, লাল, সবুজ, নীল এবং গোলাপি। উজ্জ্বল এই রঙগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। নিউট্রাল রঙও ছিল বেশ কিছু, ক্রিম এবং বেইজ! যেগুলো লিভিং রুম, ডাইনিং রুম এবং বেডরুমে ব্যবহার করা হতো। এছাড়াও, নিউট্রাল রঙের সাথে বোল্ড রঙগুলোও বেশ সুন্দর করে মিক্স ম্যাচ করে ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে।
আসবাব
আর্ট ডেকো স্টাইলের আসবাবগুলো ছিল অদ্ভুত এবং বেশ জনপ্রিয়। একটু রেট্রো ঘরানার আবহ বিরাজ করতো। আসবাবের সাইজও ছিল বিশাল। বড়সর সোফা বা চেয়ার ছিল বেশ সাধারণ বিষয়। ছিল প্যাটার্ন! ছিল মোটিফ! প্রতিটা আসবাবে ছিল ডিটেইলিং। থাকতো বড় বড় সাইডবোর্ড। ফ্লোরালও থাকতো আবার প্রিন্টও।
ফেব্রিক
শার্ক এবং জেব্রার চামড়ার পাশাপাশি ব্যবহার হতো ভেলবেট আর লেদার। তবে ফ্লোরাল আর প্রিন্টের চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হতো, সলিড রঙ আর টেক্সটাইল সেই সাথে থাকতো জ্যামিতিক ডিজাইন। সলিড রঙের সাথে কনট্রাস্টে ব্যবহার হতো বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল।
মেঝে
উড ফ্লোরিং কিংবা শেইপ করা ওয়ালপেপার যদি থাকে আপনার ঘরে, তবে নিঃসন্দেহে এটা আর্ট ডেকো স্টাইলের উপকরণ। এছাড়াও টাইলস বা লিনোলিয়ামের ভেতর কখনো দেখা গিয়েছে কালো সাদার চেকার্ড মেঝে বা অপটিক্যাল কোং নকশা। এই মেঝেগুলোতে সলিড উজ্জ্বল রঙের রাগস ব্যবহার করলে ঘরের ভেতর আর্ট ডেকো স্টাইল বেশ চমৎকারভাবে ফুটে উঠবে।
লাইট
এই ডেকো স্টাইলটা সহজে ঘরের ভেতর আনার আরও একটি কার্যকরী উপায় হচ্ছে লাইটিং। বিংশ শতাব্দীর সেই সময়কে ঘরের ভেতর বন্দী করতে লাইটিং এর ভূমিকা অনেক। সেই সময়কার লাইটগুলো বিখ্যাত ছিল তাদের জিওম্যাট্রিক এবং সিমেট্রিক প্যাটার্নের জন্য। লাইটিং এ বরাবরই দেখা যেতো অনেক ডিটেইলিং। ফিক্সচার লাইটগুলোতে ক্লিন মডার্ন লাইনগুলো এনে দিতে পারে মিনিমাল ডেকরের ছোয়া। ফিক্সচারগুলোতে গ্লাসের ব্যবহারও দেখা যেত।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনে আর্ট ডেকো স্টাইলে ঘর সাজাবেন
ঘরের ভেতর এই আর্ট ডেকো ফুটিয়ে তুলতে আপনাকে বেশি কিছু করতে হবে না। অ্যানিম্যাল প্রিন্ট, জ্যামিতিক শেইপ, লাইটিং ইত্যাদি সহ আরও বেশ কিছু জিনিস যোগ করলেই আপনার ঘরে আর্ট ডেকো স্টাইল ফুটিয়ে তুলতে পারবেন।
অ্যানিম্যাল প্রিন্ট
ফেব্রিকে রাখুন অ্যানিমাল প্রিন্ট। সোফা বা ফ্লোরে অ্যানিম্যাল প্রিন্ট রাখুন। সোফা যদি পুরোটা অ্যানিমাল প্রিন্ট রাখতে চান তাহলে, সলিড কালারের কুশন দিতে পারেন। অথবা সলিড কালারের সোফা রেখে অ্যানিম্যাল প্রিন্টের কুশন ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া, অ্যানিম্যাল প্রিন্টের ওয়াল পেপার বা কার্পেট ব্যবহার করতে পারেন।
লাইটিং
আর্ট ডেকো স্টাইলে ঝাড়বাতি ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের বিশেষ জায়গাগুলো পেনডেন্ট লাইট দিয়ে হাইলাইট করতে পারনে। ব্যবহার করতে পারেন ভিনটেজ স্টাইলের আসবাব। লাইটিং এর ক্ষেত্রে ওয়ার্ম লাইটগুলো এই স্টাইলকে খুব ভালো করে কমপ্লিমেন্ট করতে পারে।
প্রাকৃতিক আলো
ঘরের থাকতে হবে পর্যাপ্ত আলো। জানালাগুলো হতে হবে বড়সর। যাতে করে আলো বাতাসের যাতায়াত থাকে পুরোসময়। চেষ্টা করতে হবে সূর্যের আলো যেন পুরোটা ঘরে ঢুকতে পারে। প্রাকৃতিক আলোতে ঘর যেমন বড় দেখায় তেমনি, ঘরকে উজ্জ্বলও করে তোলে।
আয়না
হোম ডেকোরে আয়না ব্যবহারের কোন জুড়ি নেই। আয়না ঘরকে যেমন বড় দেখায় তেমনি ঘরের ভেতর এলিগেন্ট ভাবও আনে। ঘর বড় দেখাতেও কিন্তু আয়না বেশ চমৎকার কাজ করে থাকে। সূর্যের আলো হোক কিংবা কৃত্রিম কোন আলো তা মূহুর্তেই দ্বিগুণ হয়ে যায় আয়নার কারণে। তাই বড়সর আকারের আয়না ঝুলিয়ে দিতে হবে দেয়ালে। যাতে করে সূর্যের আলো আয়নায় এসে পরে। আয়না কিন্তু হোম ডেকোরে বেশ কার্যকরী উপায়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বড় ছোট অনেকগুলো আয়না একসাথে দেয়ালে ব্যবহার করলেও দেখতে যেমন সুন্দর দেখায় তেমনি ঘর উজ্জ্বলও দেখায়।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনে আর্ট ডেকো স্টাইল হতে পারে আপনার মনের মত একটি ডেকোর স্টাইল। বিংশ শতাব্দী স্টাইল আর ফ্যাশনকে গ্ল্যামারাসভাবে উপস্থাপন করার আকাঙ্ক্ষা থাকলে এই স্টাইলটি বেছে নিতে পারেন।
হোম ইন্টেরিয়রটা স্টাইলিশ করতে চাচ্ছেন? বিপ্রপার্টি হতে পারে আপনার ইন্টেরিয়র গাইডেন্স! সেটা কীভাবে জানতে যোগাযোগ করুন এখনই!
কলঃ ০৯৬১২১১০০১১
ইমেইলঃ interior@bproperty.com
ভিজিট করুন https://my.bproperty.com/interior