Reading Time: 5 minutes

নিজের ঘরকে সবচেয়ে সুন্দর করে সাজাতে কে না চায়! আর সুন্দর করে সাজানোর এক পরিকল্পিত ধারা হলো পেশাদার ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের সাহায্য নেয়া। অনেকেরই হয়তো ইন্টেরিয়র ডিজাইন নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে, কেউ ভাবেন এটি দারুণ খরচান্ত ব্যাপার, কেউ আবার এর প্রয়োজনীয়তাই ঠিক বুঝতে পারেন না। কিন্তু সত্যিটা একেবারেই ভিন্ন! ঘরে নান্দনিকতার ছোঁয়া, নিজের ব্যক্তিত্বের যথার্থ প্রতিফলন আনতে পেশাদার ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের শরণাপন্ন হওয়াই সবচেয়ে উপযোগী। আর ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের কাছে যাওয়ার আগে এ সম্পর্কে খানিকটা জানাশোনা থাকলে তা কিন্তু আপনার জন্য সুবিধাজনকই হবে। কেননা ইন্টেরিয়র ডিজাইনের স্টাইলগুলো জানা থাকলে নিজের বাড়ির জন্য কী ধরনের ডিজাইন মানানসই হবে তা বোঝা সহজ হয়। আর এ কথা মাথায় রেখেই বিপ্রপার্টি ব্লগের এবারের আয়োজনে থাকছে বিখ্যাত কিছু ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টাইল নিয়ে ব্লগ সিরিজ। আজকের ব্লগে জানাচ্ছি ইন্টেরিয়র ডিজাইনে বোহেমিয়ান ডেকোর স্টাইল এর খুঁটিনাটি।

বোহেমিয়ান ডিজাইন স্টাইল কী?  

বোহেমিয়ান ডিজাইন স্টাইল
ছন্নছাড়া ডিজাইন স্টাইল

যা কিছু ছন্নছাড়া, যা কিছু এলোমেলো, তাকেই পৃথিবীজুড়ে ডাকা হয় ‘বোহেমিয়ান’ নামে। আর এই ‘বোহেমিয়ান’ ধারাকে ধারণ করে যে ডিজাইন স্টাইলের উৎপত্তি তা যে খুব ঝাঁ চকচকে বা গোছানো হবে না, সেটি নিশ্চয় বুঝতেই পারছেন! বোহেমিয়ান ডিজাইনের মূল প্রতিপাদ্য হলো নিয়ম-নীতিহীন, অগোছালো, উজ্জ্বল রঙিন ও ভীষণ আরামদায়ক ঘরোয়া আবহ। বোহেমিয়ান তত্ত্বের মূলে মিশে আছে ব্যতিক্রমী জীবনধারা। তাই মুক্তমনা, ভ্রমণপ্রেমী, সৃজনশীল মানুষের জীবনদর্শন ও  রুচির প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে এ ডিজাইন স্টাইল। 

বোহেমিয়ান ডিজাইন স্টাইলের ইতিকথা 

ঊনবিংশ শতকে ফ্রান্স থেকে বোহেমিয়ান ডিজাইন স্টাইলের উৎপত্তি। সেসময় বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ফরাসি কিছু শিল্পী প্যারিসের রোমানি এলাকায় চলে যায়। এলাকাটি ছিলো জিপসি বা ভবঘুরে অধ্যুষিত। জিপসিদের সংস্কৃতির সাথে শিল্পীদের সৃজনীশক্তি মিলে সেখান থেকেই উদ্ভব ঘটে বোহেমিয়ান ডিজাইন স্টাইলের। আমেরিকান ডিজাইনার ও লেখক জাস্টিনা ব্লেকনি এ সম্পর্কে বলেন, “পুঁজিবাদী ধ্যানধারণার বিপরীত স্রোত থেকে উৎসারিত ছন্নছাড়া জীবনযাপনের সাথে মানানসই ডিজাইন স্টাইলই ‘বহো’ বা ‘বোহেমিয়ান’।” 

বোহেমিয়ান ইন্টেরিয়র স্টাইলের মূল মন্ত্র 

অগোছালো নান্দনিকতাই বোহেমিয়ান ইন্টেরিয়র স্টাইলের প্রধানতম শর্ত। রকমারি রং ও প্যাটার্ন, পুরোনো ধাঁচের আসবাব মিলিয়ে বোহেমিয়ান সাজের ঘর অন্য যেকোনো ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টাইলের তুলনায় মুক্ত ও স্বাধীন আবহের সৃষ্টি করে। 

বোহেমিয়ান কালার প্যালেট 

বোহেমিয়ান কালার প্যালেট
কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই এ ডিজাইন স্টাইলে

ইন্টেরিয়র ডিজাইনে বোহেমিয়ান ডেকোর স্টাইল মানেই ঘরজুড়ে ছড়ানো রকমারি রং। পার্পলের অ্যামেথিস্ট শেড, নীল-সবুজ প্যালেটের টারকুইস শেড, সবুজের জেড শেডগুলো বোহেমিয়ান স্টাইলে দারুণ মানানসই। তবে বড় আসবাবের ক্ষেত্রে নিউট্রাল শেড অর্থাৎ সাদা, ধূসর, হালকা বাদামি রংগুলো বেছে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে কনট্রাস্ট তৈরি করা হবে সহজতর। কিন্তু বোহেমিয়ান ডেকোর স্টাইলে একটি কথা মনে রাখা জরুরি আর সেটি হলো, কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই এ ডিজাইন স্টাইলে। উষ্ণ রং-শীতল রংয়ের ব্যাপারটিও ভাবতে হবে না একদম। জাস্টিনা বেকনের মতে, “কোন রং কোন রংয়ের সাথে মানানসই তা ভাবার কোনো দরকার নেই। কেননা বেমানান আর এলোমেলো দৃশ্যপটেও সৌন্দর্য ধারণ করে বোহেমিয়ান ডিজাইন স্টাইল।” 

বোল্ড প্যাটার্ন 

বোহেমিয়ান ডেকোর স্টাইলের অনন্য বৈশিষ্ট্য বোল্ড প্যাটার্নের মিশেল। তবে এ প্যাটার্ন মোটেও স্ট্রাইপড, পোলকার মতো গতানুগতিকতা বেছে নেয় না। বরং মান্ডালা, কুরুশকাঁটা, প্যাচওয়ার্কের প্যাটার্নগুলো ইন্টেরিয়র ডিজাইনে বোহেমিয়ান ডেকোর স্টাইল আনতে দারুণ উপযোগী। 

ভিনটেজ আসবাব, পুরোনো টেক্সটাইল  

ভিনটেজ আসবাব, পুরোনো টেক্সটাইল 
ভিনটেজ আসবাব আর টেক্সটাইলের মিশেল

বেইজ বা আর্থি শেডের ভিনটেজ ফার্নিচারগুলো এ ডিজাইন স্টাইলের আবহ সৃষ্টি করে সহজেই। মনে রাখা জরুরি যে, ‘বহো’ একেবারেই ঝা চকচকে নতুন ভাবকে ধারণ করে না। ফলে পুরোনো আসবাব আর টেক্সটাইলের মিশেলে আরামদায়ক আবহ আনার রীতি বেশ প্রচলিত। 

প্রকৃতির ছোঁয়া 

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ডেকোর স্টাইলের মতো বাঁশ, বেত, দড়ি ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ব্যবহার করে বোহেমিয়ান স্টাইলও। সবুজ সতেজতা, সূর্যালোকের উজ্জ্বলতা ঘরে আনে প্রাণবন্ত ভাব। সাধারণত স্যাকুলেন্ট, টবের হাউজপ্ল্যান্ট, ঝোলানো পোথোস ব্যবহৃত হয়। 

হস্তশিল্প সামগ্রী 

ইন্টেরিয়র ডিজাইনে বোহেমিয়ান ডেকোর স্টাইল আনতে হাতে বোনা সামগ্রী ব্যবহারের রেওয়াজ দারুণ প্রচলিত। কুরুশকাঁটায় বোনা টেবিল ক্লথ, থ্রো রাগ এতে দারুণ মানানসই। বাঁশ বা বেতের তৈরি আসবাবও ব্যবহৃত হয়। 

নানান দেশের কথকতা 

নানান দেশের কথকতা 
দেয়াল জুড়ে নানান দেশের কথকতা

শুরুতেই বলেছি, বোহেমিয়ান ভাবধারা ভ্রমণপ্রেমী, মুক্তমনা, সৃজনশীল মানুষদের কথা বলে। বিভিন্ন দেশের রকমারি জিনিস দিয়ে ঘর সাজানো তাই স্বভাবতই ইন্টেরিয়র ডিজাইনে বোহেমিয়ান ডেকোর স্টাইল আনতে দারুণ উপযোগী। পার্শিয়ান রাগ, নেপালি কুকরি, তিব্বতি থাংকা সবই জায়গা পাবে এ ডেকোর স্টাইলে। 

বোহেমিয়ান ঘ্রাণ 

প্রকৃতির কাছে ফিরে যাবার বোধ থেকেই হয়তো ট্রপিকাল সৌরভ, অ্যালোভেরা-ক্যামোমিলের প্রাকৃতিক সৌরভ বেছে নেয়া হয় বোহেমিয়ান ডেকোরে। রান্নাঘরে, বাথরুমে, ফয়্যার এরিয়ায় এসেনশিয়াল অয়েল বা সুগন্ধি মোমবাতি রাখা হয়।

আরামদায়ক আবহ 

আরামদায়ক আবহ 
স্বাচ্ছন্দ্যের অনুভূতি

ঘরে ঢুকলেই যেন আরাম আর স্বাচ্ছন্দ্যের অনুভূতি হয়, তা নিশ্চিত করে বোহেমিয়ান স্টাইল। তাই নরম বিছানা, এধারে ওধারে ছড়িয়ে রাখা থ্রো পিলো, দোলনা সারা ঘরে এনে দেবে আরামদায়ক আবহ। 

যেভাবে বোহেমিয়ান ইন্টেরিয়র স্টাইলে ঘর সাজাবেন 

ঘর মানে যাদের কাছে মুক্ত মনের প্রতিচ্ছবি তাদের জন্য বোহেমিয়ান ইন্টেরিয়র স্টাইল দারুণ উপযোগী। বোহেমিয়ান স্টাইলে ঘর সাজাতে এ সহজলভ্য উপাদানগুলো বেছে নিতে পারেন আপনি। 

রাগ বা পাপোষ 

রাগ বা পাপোষ 
রাগ বা পাপোষ বোহেমিয়ান ইন্টেরিয়র স্টাইলের অনুষঙ্গ

নানা দেশী, নানা নকশার নরম ও আরামদায়ক পাপোষ বোহেমিয়ান ইন্টেরিয়র স্টাইলের অনুষঙ্গ হয়েছে দুটো কারণে। এক, এটি ঘরে আরামের ভাব ছড়িয়ে দেয়। দুই, এগুলোর রকমারি প্যাটার্ন ঘরে প্রাণবন্ত বৈচিত্র্য আনে সহজেই।

রকমারি থ্রো রাগ, কুশন, ম্যাট্রেস 

এ উপাদানগুলো অগোছালো তবে নান্দনিক সৌন্দর্য আনে ঘরে। মরোক্কান প্যাটার্ন, বোট্যানিকাল প্যাটার্ন, ম্যান্ডালা প্যাটার্নের কুশন কাভার, হাতে বোনা রাগ বা পার্শিয়ান রাগ দিয়ে বোহেমিয়ান স্টাইলে ঘর সাজাতে পারেন আপনি। বেডিং হিসেবেও এখানে বাহারি রংয়ের ও প্যাটার্নের ফেব্রিক ব্যবহার করা যায়।

দোলনা ও নিচু আসবাব 

বাঁশ, বেতের তৈরি আসবাব বা ভিন্টেজ আসবাব এ ডেকোরে দারুণ মানানসই। নিচু আসবাব ঘরে আভিজাত্যের ভাব আনেনা, বরং আনে স্বাছন্দ্যের ছোঁয়া। এছাড়া বাঁশ বা বেতের তৈরি বিভিন্ন রকম দোলনাও ঘরে প্রাণবন্ত আবহ সৃষ্টি করে। 

হাতে বোনা ঝুড়ি 

হাতে বোনা ঝুড়ি 
বোহেমিয়ান ডেকোরে হাতে বোনা ঝুড়ি

হাতে বোনা ঝুড়ি দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়ালসজ্জা করতে পারেন। এছাড়া অর্গানাইজার বা লন্ড্রি বাস্কেট হিসেবে, গাছের টবের কাভার হিসেবে হাতে বোনা ঝুড়ি ব্যবহার করে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে বোহেমিয়ান ডেকোর স্টাইল আনা যায়। 

ভিন্নধর্মী চেয়ার

পিকক চেয়ার, বাটারফ্লাই চেয়ার বা ডিভান এর মতো রিলাক্সিং সিটারগুলো  ঘরে আরামদায়ক আবহ আনতে ভীষণ কার্যকরী। এগুলো সোজা হয়ে বসে থাকার উপযোগী স্ট্রেইট চেয়ারের ঠিক বিপরীত। ফলে এগুলোর উপস্থিতি মানেই পুরো ঘরে ছড়িয়ে দেয়া এক ধরনের আরামদায়ক আলস্য। 

কড়ি, বাঁশ বা বেতের ঝাড়বাতি 

এ ঝাড়বাতিগুলো বোহেমিয়ান ডিজাইনের মূল উপাদানের সাথে মানিয়ে যায় চমৎকারভাবে। সেই সাথে ঝাড়বাতির উজ্জ্বল বা স্নিগ্ধ আলো ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

বোহেমিয়ান ডিজাইন আপনার মুক্ত-স্বাধীন মানসিকতার প্রতিচ্ছবি ফোটাতে পারে ঘরে। এ কথা মানতেই হবে যে হোম ইন্টেরিয়রের প্রভাব আমাদের জীবনাচরণে অনেক।

কেমন লাগলো এই ডিজাইন স্টাইল? চাইলে বিপ্রপার্টি ইন্টেরিয়রের সহায়তায় আপনার বাড়িও সাজিয়ে ফেলতে পারেন এই নান্দনিক ডিজাইন স্টাইলটির মাধ্যমে। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন এখনই!

কলঃ ০৯৬১২১১০০১১
ইমেইলঃ interior@bproperty.com
ভিজিট করুন https://my.bproperty.com/interior

Write A Comment