Reading Time: 5 minutes

ঘর মানে নিজস্ব এক পৃথিবী। আর নিজের সেই পৃথিবীকে সবাই নিজের মনমতো সাজাতে চায়। আর সেটি পরিকল্পিতভাবে করার উপায় হলো পেশাদার ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের সাহায্য নেয়া। অনেকের হয়তো ইন্টেরিয়র ডিজাইন নিয়ে প্রচলিত কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে, যা তাদের এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত রাখে। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই এমন নয়! সাধ্যের মধ্যেই পেশাদার ইন্টেরিয়রের সেবা পাওয়া যায় আর তা আপনার ঘরকে করে তুলতে পারে নান্দনিক ও কার্যকর। তবে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের জেনে নেয়া উচিত ইন্টেরিয়র ডিজাইনের স্টাইলগুলো। কেননা ইন্টেরিয়র ডিজাইনের স্টাইলগুলো জানা থাকলে উপযুক্ত স্টাইল বেছে নেয়া হবে অনেক সহজ। আর এ কথা মাথায় রেখেই বিপ্রপার্টি ব্লগের এবারের আয়োজনে থাকছে বিখ্যাত কিছু ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টাইল নিয়ে ব্লগ সিরিজ। আজকের ব্লগে জানাচ্ছি ইন্টেরিয়র ডিজাইনে শ্যাবি শিক (Shabby Chic) ডেকোর স্টাইল এর খুঁটিনাটি।   

শ্যাবি শিক ডিজাইন স্টাইল কী?

শ্যাবি শিক ডিজাইন স্টাইল
নকশায় শান্ত সুর, আসবাবে প্রাচীনত্বের ছাপ, অলংকরণে বনেদি ভাবধারা পাবেন শ্যাবি শিক ডেকোরে

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ডিজাইনের মূল প্রতিপাদ্য হলো নিত্য নৈমিত্তিকতা (casualness), আরামদায়ক ঘরোয়া আবহ (comfortableness) এবং কমনীয় আভিজাত্য (elegance). এ ডিজাইন স্টাইলে সাজানো ঘর দেখতে অভিজাত ঠিকই, তবে আড়ম্বরতা বা ঝা চকচকে আবহ সেখানে পাবেন না। বরং মার্জিত আভিজাত্যের সাথে স্বাচ্ছন্দ্যের মেলবন্ধন ঘটায় শ্যাবি শিক ডেকোর। এর নকশায় শান্ত সুর, আসবাবে প্রাচীনত্বের ছাপ, অলংকরণে বনেদি ভাবধারা একে করে তুলেছে অন্যান্য ডিজাইন স্টাইল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। রোম্যান্টিক এ ডেকোর স্টাইলকে বিশ্বব্যাপী নারীসুলভ বা ফেমিনিনও বলা হয়।  

শ্যাবি শিক ডিজাইন স্টাইলের ইতিকথা

ওল্ড ইংল্যান্ড কটেজ
শ্যাবি শিক ডিজাইন স্টাইলের শুরু গ্রেট ব্রিটেনে

শ্যাবি শিক ডিজাইন স্টাইলের শুরু গ্রেট ব্রিটেনে। ব্রিটেনের কান্ট্রিসাইডে যে বাংলো বা কটেজ টাইপ বাড়িগুলো দেখা যায় সেগুলোতেই এর উদ্ভব বলে ধারণা করা হয়। বাংলো বা কটেজগুলো সাজানো হতো রঙ্গিন ছিটের সোফা-পর্দা, পুরোনো পেইন্টিং, পূর্বে ব্যবহৃত অভিজাত আসবাব দিয়ে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনে শ্যাবি শিক ডেকোর স্টাইল আনতেও এ উপাদানগুলো বহুল ব্যবহৃত। তবে কান্ট্রিসাইড কটেজ ডেকোর স্টাইল হিসেবে প্রচলিত ছিলো বলে অনেকে একে এখনো ‘কটেজ স্টাইল’ বা ‘কান্ট্রি বোহেমিয়ান’ হিসেবে। 

শ্যাবি শিক ডিজাইন স্টাইল মূলত আভিজাত্য আর আরামের সমন্বয় ঘটায়, যা আবেগতাড়িত আর আকর্ষণীয় ডেকোর স্টাইল পপ-ভিক্টোরিয়ানের সম্পূর্ণ বিপরীত ধারা। আশির দশকে যখন মধ্যবিত্তরাও ব্যয়বহুল ও চোখ-ধাঁধানো ডেকোর স্টাইলের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছিলো, তখন শ্যাবি শিক বলছিলো সম্পূর্ণ উল্টো কথা। পুরোনো আসবাব, পুরোনো ফেব্রিকের পুনঃব্যবহারও যে ঘরে আভিজাত্যের ছোঁয়া আনতে পারে সে বোধটিকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলো এ ডেকোর স্টাইল। শুধু তাই নয়, আভিজাত্যের জন্য আরাম বা স্বাচ্ছন্দ্যবোধকে বিসর্জন দেয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না শ্যাবি শিক ডেকোর স্টাইলের প্রবক্তারা। 

তৎকালীন সময়ে প্রচলিত প্রায় অনেকগুলো ডিজাইন স্টাইল থেকে অনুপ্রাণিত শ্যাবি শিক ডিজাইন স্টাইল। অষ্টাদশ শতাব্দীর সুইডিশ পেইন্টিং, ফ্রেঞ্চ শ্যাট্যু(এক ধরনের ম্যানসন বা প্রাসাদ)’র গঠনশৈলী ও কারুকার্যের প্রভাব এতে সুস্পষ্ট। 

শ্যাবি শিক ইন্টেরিয়র স্টাইলের মূল মন্ত্র

প্যাস্টেল দেয়াল
হালকা রংয়ের দেয়াল আর পুরোনো আসবাবে সাজাতে পারেন ‘শ্যাবি শিক’ স্টাইলের ঘর

অভিজাত ও আরামদায়ক সাজসজ্জাই ফুটিয়ে তোলে শ্যাবি শিক ইন্টেরিয়র স্টাইল। নান্দনিকতা ও অগোছালো ভাব এখানে হাত ধরাধরি করে চলে। 

হালকা রং 

ইন্টেরিয়র ডিজাইনে শ্যাবি শিক ডেকোর স্টাইল আনতে হালকা শেডের রংগুলো ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ সাদা, বেইজের পাশাপাশি এখানে গোলাপি, ল্যাভেন্ডার, হালকা নীল ইত্যাদি প্যাস্টেল রংগুলোও এখানে মানানসই।  ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। তবে টারকুইসের মতো ভিভিড কালার বা অত্যুজ্জ্বল রংয়ের কিছু শেডও এখানে দারুণভাবে মানিয়ে যায়। শ্যাবি শিক স্টাইলে প্যাস্টেল রং দিয়ে আসবাব পেইন্ট করার রীতি বহুল প্রচলিত। 

ভিন্টেজ আসবাব ও ফেব্রিক 

টেক্সচারে প্রাচীনত্বের ছোঁয়া ইন্টেরিয়র ডিজাইনে শ্যাবি শিক ডেকোর স্টাইল আনার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তাই ভিন্টেজ লেদারের আসবাবে রঙ্গিন কুশন, কাঠের তৈরি পুরোনো আসবাবে প্যাস্টেল রং এ স্টাইলের জন্য চমৎকার উপযোগী। আগেই বলেছি, ব্যয়বহুল গৃহসজ্জার বিপরীত ধারা হিসেবে শ্যাবি শিকের উদ্ভব। তাই পুনঃব্যবহারের মাধ্যমে নান্দনিকতা প্রতিষ্ঠার প্রতিটি ধাপই শ্যাবি শিক স্টাইলের সাথে মানিয়ে যায় দারুণ ভাবে। 

‘মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ’

পেইন্টিং, স্যুভেনিয়ার, রাগ, ব্ল্যাংকেট, পিলো, কুশন বা ঘর সাজানোর জিনিসগুলো বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে শ্যাবি শিকের ‘মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ’ রীতিকে মনে রাখা যায়। যেহেতু অগোছালো নান্দনিকতাই এর মূল সুর, তাই প্যাটার্ন বা রং মানানসই হচ্ছে কিনা সেটি নিয়েও ভাবার প্রয়োজন হয় না। 

প্রাকৃতিক উপাদান

গাছ, কাঠ, আলোছায়ার খেলার মাধ্যমে ঘরে প্রকৃতির সান্নিধ্য আনে শ্যাবি শিক ডেকোর স্টাইল। আসবাব, ফেব্রিকে ব্যবহৃত হয় এসব প্রাকৃতিক উপাদান; যা একইসাথে যান্ত্রিকতা ও আড়ম্বরতার বিরুদ্ধচারিতা করে। তবে নান্দনিক আভিজাত্য সৃষ্টিতেও প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ব্যবহারের জুড়ি মেলা ভার।  

উষ্ণ আলোকসজ্জা

ঘরে উষ্ণ আলোর উপস্থিতি আনে রহস্যময় আভিজাত্য, আরামদায়ক স্নিগ্ধতা; যা ইন্টেরিয়র ডিজাইনে শ্যাবি শিক ডেকোর স্টাইল আনার অন্যতম অনুষঙ্গ। ব্রোঞ্জ ও স্ফটিকের প্রদীপ বা ল্যাম্প, ঝাড়বাতি বা মোমবাতির আলো ঘরে আলোছায়ার খেলা তৈরি করে। 

ফুলেল নকশা 

প্রাচীন ইংল্যান্ডের ভ্যালি বা উপত্যকায় ফুলের সমারোহ ছিলো দারুণ পরিচিত। সেখান থেকেই হয়তো অনুপ্রাণিত হয়েছে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে শ্যাবি শিক ডেকোর স্টাইল এর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ফ্লোরাল প্যাটার্না বা পুষ্পশোভিত নকশা। দেয়ালের ওয়ালপেপারে, বেডশিট বা পর্দার ফেব্রিকে এ প্যাটার্ন তাই এ ডেকোর স্টাইলে জনপ্রিয়। 

যেভাবে শ্যাবি শিক ইন্টেরিয়র স্টাইলে ঘর সাজাবেন

শ্যাবি শিক ডিভান
আভিজাত্য মানে যে ব্যয়বহুল ও ঝকমারি আবহ না, এ বোধটি যারা উপলব্ধি করতে পারেন তাদের জন্য ইন্টেরিয়র ডিজাইনে শ্যাবি শিক ডেকোর স্টাইল দারুণ মানানসই

 

আভিজাত্য মানে যে ব্যয়বহুল ও ঝকমারি আবহ না, এ বোধটি যারা উপলব্ধি করতে পারেন তাদের জন্য ইন্টেরিয়র ডিজাইনে শ্যাবি শিক ডেকোর স্টাইল দারুণ মানানসই। তবে আসুন জেনে নেই কীভাবে তা করা যায়।  

টেক্সটাইলে বৈচিত্র্য  

ফুলেল, আরামদায়ক স্নিগ্ধতা-  শ্যাবি শিক ইন্টেরিয়র স্টাইলের বৈশিষ্ট্য। আর এ বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলতে টেক্সটাইলের জুড়ি নেই। পুরোনো কাপড় কেটে বানানো ঘরের পর্দা, কুশন কাভার বা টেবিলওয়্যার ঘরকে দেবে একদম পারফেক্ট ‘শ্যাবি শিক’ লুক! এগুলোতে সঠিক প্যাটার্নের ব্যবহার আপনার ঘরে আনবে যথার্থ আবহ। তবে চাইলে আপনি ‘ফেডেড’ বা ‘ভিন্টেজ’ টেক্সটাইল কিনতেও পারেন। এমনকি টেক্সটাইল নতুনের মতো দেখালেও সমস্যা নেই। সেক্ষেত্রে পুরোনো ধাঁচের প্যাটার্ন, ওল্ড ইংল্যান্ড ফ্লোরাল প্যাটার্ন বেছে নিতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে। সাদা লিনেন বা বেডশিটের সাথে ফ্লোরাল কুশন বা কম্বল দেখতে কিন্তু চমৎকার লাগবে!

ফেব্রিকের ধরনেও আনতে পারেন বৈচিত্র। যেমন, ভিন্টেজ ড্রেসিং টেবিলে নিটেড বা উলে বোনা কাভার ছড়িয়ে দিয়ে আপনি ঘরোয়া ও আরামদায়ক আবহ আনতে পারেন।   

প্যাস্টেল রংয়ের আসবাব 

পুরোনো আসবাব, রং উঠে যাওয়া আসবাব এখনই ফেলে দেবেন না। বরং হালকা সবুজ, হালকা নীল, হালকা গোলাপি ইত্যাদি শেডে রাঙিয়ে ফেলুন প্রাচীন আভিজাত্যের এসব নিদর্শনকে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনে শ্যাবি শিক ডেকোর স্টাইল এর জন্য এটি দারুণ উপযোগী। 

কুশন ও থ্রো রাগ 

বসার ঘরে নিচু ডিভান, কিছু কুশন ও থ্রো রাগ সাজিয়ে রেখে আরামদায়ক আবহ তৈরি করতে পারেন। এগুলো যদি হয় হাতে বোনা বা ফুলেল নকশার, তবে তা ইন্টেরিয়র ডিজাইনে শ্যাবি শিক ডেকোর স্টাইলের জন্য আরো বেশি উপযোগী হয়।  

বাঁশ-বেত-মাটি-পাথরের সামগ্রী 

হাউজপ্ল্যান্ট রাখতে পারেন বেতের ঝুড়িতে। বাঁশের তৈরি ভাস্কর্য বা সাদা পাথরের তৈরি ভাস্কর্য অভিজাত আবহ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে। অনেকে অবশ্য ঘরে রাখেন পাথরের ভাস্কর্য। যেহেতু অগোছালতাই এ ডেকোর স্টাইলে নান্দনিকতার রূপ, তাই প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি যেকোনো কিছুই হতে পারে আপনার গৃহসজ্জার অংশ। নির্দ্বিধায় বেছে নিন, বাঁশের ফুলদানি, পাথুরে দেয়ালচিত্র বা মাটির টব। 

পুরোনো ধাঁচের পেইন্টিং 

শ্যাবি শিক স্টাইলের মূলমন্ত্র প্রাচীন আভিজাত্য। তাই পেইন্টিং বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পোস্ট মর্ডান কিছু না বেছে নেয়াই ভালো। পুরোনো ভঙ্গিমায় আঁকা দেয়ালচিত্র আপনার সংবেদনশীল রুচির পরিচায়ক হয়ে উঠতে পারে। 

শ্যাবি শিক ডিজাইন আপনার ঘরে আনবে আভিজাত্যের স্নিগ্ধতম রূপ। এ কথা মানতেই হবে যে হোম ইন্টেরিয়রের প্রভাব আমাদের মনেও ভীষণ প্রভাব ফেলে। তাই আপনি যদি অভিজাত কিন্তু আরামদায়ক জীবনযাত্রা চান, তবে নির্দ্বিধায় ইন্টেরিয়র ডিজাইনে শ্যাবি শিক ডেকোর স্টাইল বেছে নিতে পারেন। এ সম্পর্কে আরো কিছু জানতে চাইলে বা কোনো মূল্যবান মতামত জানাতে চাইলে লিখতে পারেন আমাদের কমেন্টস বক্সে!

চাইলে বিপ্রপার্টি ইন্টেরিয়রের সহায়তায় আপনার বাড়িও সাজিয়ে ফেলতে পারেন এই নান্দনিক ডিজাইন স্টাইলটির মাধ্যমে। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন এখনই!

কলঃ ০৯৬১২১১০০১১
ইমেইলঃ interior@bproperty.com
ভিজিট করুন https://my.bproperty.com/interior

Write A Comment