একটি নির্দিষ্ট রঙে ঘরের চার দেয়াল রাঙানো থাকবে, সচরাচর এমনটাই দেখা যায়। তবে এর ব্যতিক্রম হিসেবে ঘরের দেয়ালে আপনি আর কী যুক্ত করবেন, ইলিউশন নাকি ওয়ালপেপার? এই দুইটির মধ্যে কোনটির ধরন কেমন, স্থায়িত্ব কেমন হবে, অপশন কোনটাতে বেশি; এসব কিছু নিয়েই বিস্তারিত থাকছে আমাদের আজকের ব্লগে।
ঘর সাজানো কিংবা ঘরের সৌন্দর্য কীভাবে বাড়ানো যায়, এ নিয়ে আমরা অনেকেই হয়তো নানান ধরনের গবেষণা করে থাকি। আর এসব কিছুর মধ্যে বাড়ির ইন্টেরিয়র ডিজাইনের মৌলিক কিছু উপাদান নিয়ে আমরা যেমন ভাবি, তেমনি অন্য কিছুর মধ্যে প্রথমেই ঘরের দেয়াল রাঙানোর কথা চলে আসে। চার দেয়ালের ঘরগুলোকে কীভাবে সাজিয়ে তোলা যায়, এ নিয়ে আমাদের চিন্তার যেন কোন অন্ত থাকে না। কেননা, ঘরের সৌন্দর্যের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ হলও দেয়ালের রঙ এবং এর অলংকরণ, যা ঘরের অন্যান্য দিকগুলোকেও সমানভাবে প্রভাবিত করে। আর তাই শুধুমাত্র দেয়াল রঙ করেই এখন আমরা ক্ষান্ত থাকি না। আমরা ভাবতে থাকি আরও দারুণ কী কী কাজ করা যায় ঘরের এই চার দেয়ালে। অপশন যদি হয় ইলিউশন বা ওয়ালপেপার, তবে কোনটি হবে বেস্ট?
ডিজাইন এবং রঙের অপশন
ইলিউশন নাকি ওয়ালপেপার, এর মধ্যে ডিজাইনের অপশন বেশি ওয়ালপেপারে থাকলেও রঙের পছন্দ এবং ভিন্নতা আনতে ইলিউশন বেশি কার্যকরী। কাস্টমাইজড শেড এ একটি নির্দিষ্ট ডিজাইনে পার্থক্য আনা সম্ভব ইলিউশনে। তবে ওয়ালপেপার এর ক্ষেত্রে ডিজাইনের সংখ্যা আরও বেশি পাচ্ছেন। জ্যামিতিক থেকে শুরু করে ফ্লোরাল, মোটিফ এবং প্যাটার্নের মাধ্যমে এই ভিন্নতাগুলো আনা সম্ভব।
তবে প্রতিনিয়তই ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ফ্যাশন এবং ট্রেন্ডে আসছে নতুনত্ব এবং পরিবর্তন। সেক্ষেত্রে ইলিউশন নাকি ওয়ালপেপার, এই সিদ্ধান্তে আসার আগে খুব ভালমতো চিন্তা করে, ঘরের ডেকর এর সাথে মিল রেখে এবং ট্রেন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে হবে। কেননা, কিছু সময় পরেই হয়তো ওয়ালপেপার এর ডিজাইন বা প্যাটার্ন পুরনো হয়ে যেতে পারে। তখন কিন্তু চাইলেও হুট করে তা পরিবর্তন করা সম্ভব নাও হতে পারে।
তবে এক্ষেত্রে ইলিউশন এর সুবিধা হলো যেহেতু আপনি কাস্টমাইজড শেডে দেয়ালে ইলিউশন করাতে পারছেন, তাই করার সময়ই ঘরের বাকি অংশের রঙের সাথে মিল রেখেই ডিজাইন এবং রঙ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। যেখানে খুব চাকচিক্য যেমন থাকে না, তেমনি ঘরে একটা শৈল্পিক ভাব ফুটিয়ে তুলে, যা ট্রেন্ডের সাথে পরিবর্তন করা জরুরি নয়। তাই ঐতিহ্য এবং শৈল্পিক আবেশ ফুটিয়ে তুলতে ইলিউশন হতে পারে বেস্ট সলিউশন।
যেহেতু আপনি ঘরের দেয়ালে ভিন্ন একটা লুক দেয়ার কথা ভাবছেন, তাই নতুন এই লুক দেয়ার পাশাপাশি বাসা ডিজাইন করা নিয়ে কয়েকটি বিষয়ও জানা জরুরি!
কোনটা পরিষ্কার করা সহজ?
ইলিউশন নাকি ওয়ালপেপার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ঝামেলা কোনটাতে বেশি? এ ধরনের প্রশ্ন এতক্ষণে হয়তো আপনার মনে চলে এসেছে। ইলিউশন এবং ওয়ালপেপার এর মধ্যে দুইটার পরিষ্কার করার ধরন ভিন্ন। দেয়ালে লাগানো ওয়ালপেপার পরিষ্কার করাটা একটু ঝামেলাপূর্ণই বটে। কেননা পরিষ্কার করার সময় আপনার অসতর্কতার কারণে কিংবা দুর্ঘটনাবশত ওয়ালপেপার ছিঁড়ে যাওয়া বা এতে স্ক্র্যাচ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি অল্প একটু অংশ ছিঁড়ে গেলেও, নতুন করে ওয়ালপেপার লাগানোর পুরো প্রক্রিয়া আবার সম্পন্ন করতে হবে, যা দেয়ালে নতুন করে রঙ করার চেয়েও বেশি সময় লাগবে। যদিও ওয়ালপেপার পরিষ্কার করার জন্য রয়েছে কেমিক্যাল জাতীয় বিভিন্ন উপাদান, তবে কাজটা বেশ ধৈর্যের এবং ক্লান্তিকরও বটে। সাথে কেমিক্যালে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক পদার্থ তো থাকেই।
তবে এদিক থেকে দেয়ালের ইলিউশন পরিষ্কার করা বেশ সহজ। এক টুকরো কাপড় ব্যবহার করেই আপনি দেয়ালের ইলিউশনে থাকা ধুলোময়লা পরিষ্কার করে মুছে নিতে পারবেন। এতে ছিঁড়ে নষ্ট হওয়ারও যেমন কোন কিছু নেই, আর এর তেমন রক্ষণাবেক্ষণও করার প্রয়োজন পড়ে না।
আপনি ভাড়া বাসায় থাকুন কিংবা নিজের বাসায়, ঘর পরিষ্কার রাখা কিন্তু বাঞ্ছনীয়। অনেক সময় ভাড়া বাসায় থাকি বলে ঘরের দেয়াল, দরজা-জানালা কিংবা ঘরের অন্যান্য জিনিসের প্রতি যত্ন নেয়ায় অবহেলা করে থাকি। চলুন বদলে ফেলি আমাদের এই অভ্যাস এবং জেনে নেই একজন ভাড়াটিয়া হিসেবে ভাড়া বাসা রক্ষণাবেক্ষণ করার কী কী দায়িত্ব রয়েছে।
দেয়ালের সুরক্ষা ও সৌন্দর্য
স্যাঁতস্যাঁতে ভাবের কারণে অনেক সময় দেখা যায় যে দেয়ালের আস্তর অল্প অল্প করে উঠে আসছে। এই অবস্থাটা একটা সময় এমনও হয়ে যায় দেয়ালে ছোট একটা অংশ থেকে শুরু হয়ে পুরো দেয়াল জুড়েই আস্তর উঠে চলে আসছে। তবে এই ধরনের সমস্যায় ওয়ালপেপার লাগানো দেয়াল মোটেও সুখকর নয়। কেননা, একবার যদি দেয়ালে এমন সমস্যা দেখা দেয়, তখন দেয়ালের ওয়ালপেপার নষ্ট হতে খুব বেশি সময় নিবে না। এতে করে ওয়ালপেপার এর পেছনে অযথা টাকার খরচ তো হবেই, সাথে দেয়ালের সৌন্দর্য ও নষ্ট হবে।
তবে এক্ষেত্রে ইলিউশন করা দেয়ালে বিষয়টা একই রকম হবে না। কেননা, ইলিউশন সহজেই আর্দ্রতা সাথে মোকাবেলা করতে পারে। যেহেতু পানি নিরোধক পেইন্ট এর উপর এই ইলিউশন করা যায়। তাই রান্নাঘর, ডাইনিং, বেডরুম কিংবা বাথরুম; যেকোনো জায়গার দেয়ালেই এই ইলিউশন করে নেয়া সম্ভব।
এছাড়া ইলিউশন করা দেয়ালে আলোর প্রতিফলনও খুব ভালোভাবে হয়, যা দেয়ালের ইলিউশনটি ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে। অন্যদিকে ওয়ালপেপারের ক্ষেত্রে পুরো দেয়ালে আলোর প্রতিফলন অতটা সুন্দরভাবে পড়ে না। তাই ড্রইংরুম বা বেডরুমের দেয়ালে ইলিউশন করলে নির্দিষ্ট সেই দেয়ালে ফোকাস লাইট লাগাতে ভুলবেন না যেন! ইলিউশন নাকি ওয়ালপেপার, ঘরের দেয়ালের জন্য কোনটি হবে পারফেক্ট? এই প্রশ্নের উত্তরে কোন সমাধানে আসার মাঝে দেয়ালের সুরক্ষার বিষয়টি যেহেতু আসছে, তাই চলুন জেনে নেয়া যাক দেয়াল পরিষ্কার করার চমৎকার কিছু টিপস সম্পর্কে!
পরিবর্তনযোগ্য
ওয়ালপেপার লাগানো দেয়ালে পরিবর্তন আনতে চাইলে বদলে নিতে পারেন দেয়ালে বসানো আগের ওয়ালপেপারটি। যদিও কাজটি একটু ঝামেলাপূর্ণ। তবে রিমুভেবল ওয়ালপেপার এর ক্ষেত্রে এই কষ্টটা কিছুটা কম। তবে খরচের দিকটাও যে গণনায় রাখতে হবে। যেহেতু আপনি নতুন করে আবার ওয়ালপেপার বসাচ্ছেন তাই খরচের কথাও মাথায় রাখতে হবে। অন্যদিকে ইলিউশন এর ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই। পেইন্ট করা দেয়ালের ইলিউশন উঠিয়ে নতুন ডিজাইনের ইলিউশন করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে ওয়ালপেপার এর চেয়ে ঝামেলা ইলিউশনে কিছুটা কম। এমনকি আপনি চাইলে ইলিউশন বাদ দিয়ে পছন্দের ভিন্ন কোন রঙেও দেয়াল পেইন্ট করে নিতে পারবেন।
তাই আপন নীড়ের দেয়াল রাঙাতে ইলিউশন নাকি ওয়ালপেপার কোনটি হবে সেরা, সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব আপনার। সীমাবদ্ধতা, ডিজাইনে ভিন্নতা এবং রক্ষণাবেক্ষণের কথা বিবেচনা করে এই দুইটির মধ্য থেকে যেকোনোটি হতে পারে আপনার ঘর সাজানোর জন্য নতুন এক অপশন। এছাড়া ঘরের সাজে আর কী করবেন জানত্ পড়ুন ঘরের সাজে নতুনত্ব আর্টিকেলটি।