Reading Time: 4 minutes

এলাকা হিসেবে উত্তরা যে কতটা সুপরিকল্পিত তা আমরা সবাই জানি। এমন সুপরিকল্পিত এলাকা ডিজাইন করার সময় নগর পরিকল্পনাবিদেরা যেসব বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখেন তার মাঝে নিঃসন্দেহে থাকে রাস্তাঘাটের বিষয়টি। আর এজন্যই উত্তরায় এভিনিউ সংখ্যা বেশ কয়েকটি। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে এখন পর্যন্ত নামকরণ করা ১১টি এভিনিউ আছে উত্তরার সেক্টরের ভেতরে। উত্তরার এভিনিউ পরিচিতির প্রথম পর্বে আমরা জেনেছি ৬টি এভিনিউ সম্পর্কে। আজকে দ্বিতীয় পর্বে আমরা জানব বাকি ৫টি এভিনিউ নিয়ে। চলুন শুরু করা যাক?

১. সোনারগাঁ জনপথ (সেক্টর ৭, ৯, ১১, ১৩ এবং আরও)

সোনারগাঁ জনপথ
উত্তরা সোনারগাঁ জনপথ

আপনাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, উত্তরার সবচেয়ে বড় এভিনিউ কোনটি? চোখ বন্ধ করে জবাব দিন, সেটি সোনারগাঁ জনপথ! এর অবস্থান উত্তরার সর্ব উত্তরে। পূর্ব প্রান্তে হাউজ বিল্ডিং থেকে শুরু করে খালপাড় দিয়াবাড়ি পার করে পশ্চিমে একদম গোল চত্বর / মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত এর বিস্তার! মাঝে রয়েছে প্রায় ৩ কিলোমিটারের চেয়েও বেশি পথ। 

সোনারগাঁ জনপথ আসলে কত বড় তা বুঝাতে বলা যায়, আলাওল এভিনিউয়ের পশ্চিমে শুরু হওয়া এই এভিনিউ শেষ হতে হতে পথিমধ্যে আরও দুটি এভিনিউয়ের সাথে মোলাকাত করে তবেই শেষ হয়। প্রথমেই ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টর গোল চত্বরে, জমজম টাওয়ারের নিকট গরীবে নেওয়াজ এভিনিউয়ের মাঝখান দিয়ে এগিয়ে গিয়ে ১২-১৩’র মোড় বা ময়লার মোড়ে শাহ্‌ মকদুম এভিনিউয়ের এক প্রান্ত ছুঁয়ে তবেই সামনে এগিয়ে চলে এই এভিনিউ।

আর উত্তরার সবচেয়ে বড় এভিনিউতে দেশের সবচেয়ে বড় রিয়েল এস্টেট সল্যুশনদাতা প্রতিষ্ঠান বিপ্রপার্টি ডট কম -এর উপস্থিতি থাকবে না, তা কী করে হয়? উত্তরা তো বটেই, এর সাথে সাথে সাভার, টঙ্গী, নিকুঞ্জের মত সব এলাকার রিয়েল এস্টেট সার্ভিস হিসেবে সোনারগাঁ জনপথেরই খান টাওয়ারে আছে বিপ্রপার্টির উত্তরা মার্কেটপ্লেস। ১১ নম্বর সেক্টরের ১৪ ও ১৬ নং প্লটের ৪র্থ তলায় এর অবস্থান। 

এই এভিনিউ প্রথমে একপাশে ৭নং এবং অন্যপাশে ৯ নং সেক্টরকে রেখে আগায় পূর্ব-পশ্চিম বরাবর। গরীবে নেওয়াজ এভিনিউ পার করার পর একপাশে থাকে সেক্টর ১৩, অন্যপাশে ১১। এরপর শাহ্‌ মকদুম এভিনিউ পার করে খালপার এলাকা পার করে এগিয়ে যায় আরো সামনে।
সমগ্র সোনারগাঁ জনপথ জুড়েই আছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট। আছে সুপারশপ ও শপিং মল। উত্তরায় এভিনিউ হিসেব করলে একমাত্র সোনারগাঁ জনপথেই চলে পাবলিক বাস। সবকিছু মিলিয়ে সোনারগাঁ জনপথকে উত্তরার সবচেয়ে ব্যস্ত ও জমজমাট এভিনিউ বললে বোধহয় ভুল হবে না।

২. কবি নজরুল এভিনিউ (সেক্টর ৩ – ৫)

কবি নজরুল এভিনিউ
কবি নজরুল এভিনিউ

উত্তরায় এভিনিউ হিসেবে সবচেয়ে দীর্ঘ ও জনপ্রিয় যদি হয় সোনারগাঁ জনপথ তাহলে খুব সম্ভব সবচেয়ে কম পরিচিত ও নাতিদীর্ঘ এভিনিউ হয়ত এই কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ। উত্তরাবাসীর অনেক জানেনই না যে এই নামে কোন এভিনিউ আছে, কোথায়ই বা তার অবস্থান! এমনকি লেখক নিজেই এই এভিনিউয়ের আশেপাশেই বসবাস করলেও অনেকদিন পর্যন্ত এই এভিনিউ সম্পর্কে ছিল অজ্ঞাত। 

উত্তরার ৩নং সেক্টর পোস্ট অফিসের সামনে থেকে শুরু করে পশ্চিমে ৭-৮০০ মিটার এগিয়ে ৫ নং সেক্টর জহুরা মার্কেটের কাছে গিয়ে এটি শেষ হয়েছে। উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে আছে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টর খেলার মাঠ যা ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠ নামেও পরিচিত, আছে উত্তরার পোস্ট অফিস, ৩ নং সেক্টর জামে মসজিদ, ৫ নং সেক্টর কল্যাণ সমিতি প্রভৃতি। সবচেয়ে কম ব্যস্ত বা পরিচিত বলেই হয়ত ৫ নম্বর সেক্টরের মধ্যে থাকা ব্রিজ পরবর্তী রাস্তাটুকু এখনো বেশ গাছগাছালির ছায়ায় ঢাকা একটি রাস্তা।

৩. গাউসুল আজম এভিনিউ (সেক্টর  ১৩ – ১৪)

গাউসুল আজম এভিনিউ
গাউসুল আজম এভিনিউ আগোরা সুপারশপ

গাউসুল আজম এভিনিউও উত্তরায় এভিনিউ হিসেবে বেশ পরিচিত। এটি পূর্ব পশ্চিমে কাজী নজরুল এভিনিউয়ের সমান্তরালেই অবস্থিত। পূর্বদিকে ৭ নং সেক্টর লেকড্রাইভ রোড থেকে শুরু করে সর্ব পশ্চিমে শাহ্‌ মকদুম এভিনিউ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে এর বিস্তৃতি। দক্ষিণে আছে সেক্টর ১৪ এবং উত্তরে সেক্টর ১৩। সর্ব পুবে আছে হাই কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল। এভিনিউ জুড়ে আছে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে যার মাঝে কুপারস, হারফি, খানা’স, ক্রিমসন কাপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আছে আগোরা এবং মীনাবাজারের মত বড় দুটি সুপার শপ। রিগ্যাল ফার্নিচার এবং আরএফএল বেস্ট বাই-এর একটি সম্পূর্ণ ৬তলা ভবনের দেখাও মিলবে এই এভিনিউতে। 

৪. শাহ্‌ মকদুম এভিনিউ (সেক্টর  ১১ – ১৩)

উত্তরায় এভিনিউ প্রায় সবগুলোই পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত। তবে ব্যতিক্রম যে দুটি এভিনিউ উত্তর-দক্ষিণ বরাবর চলে গিয়েছে তার একটি এই শাহ্‌ মকদুম এভিনিউ। গাউসুল আজম এভিনিউ যেখানে শেষ হয় সেখান থেকেই শুরু শাহ্‌ মকদুম এভিনিউয়ের। একপাশে সেক্টর ১১ আর অন্যপাশে সেক্টর ১৩ কে রেখে উত্তর দক্ষিণ বরাবর সাড়ে ৫০০ মিটার এগিয়ে মিলিত হয়েছে সোনারগাঁ জনপথের সাথে। 

এই এভিনিউতেও বেশ কিছু চমৎকার রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে রয়েছে। উত্তরা পাসপোর্ট অফিস যেতে অনেকেই এই এভিনিউ ব্যবহার করেন। এছাড়া সর্ব দক্ষিণে, যে জায়গাটি মানুষের মুখে ময়লার মোড় নামে পরিচিত, সেখানে প্রতি বিকেলেই বসে স্ট্রিট ফুডের সমারোহ, তাই এ জায়গাটি থাকে লোকে লোকারণ্য। 

৫.  গরীবে নেওয়াজ এভিনিউ (সেক্টর  ১২ – ১৩)

উত্তরা রাস্তা
উত্তরা এলাকার যে কোন একটি সাধারণ রাস্তা

উত্তরায় এভিনিউ পরিচিতির সর্ব শেষ এভিনিউটি হল গরীবে নেওয়াজ এভিনিউ। শাহ্‌ মকদুম এভিনিউয়ের মতই এটিও বিস্তৃত উত্তর দক্ষিণে। তবে এর কলেবর তথা দৈর্ঘ্য শাহ্‌ মকদুম এভিনিউ থেকে বেশি, প্রায় এক কিলোমিটারের মত সর্ব দক্ষিণে গাউসুল আজম এভিনিউ এবং উত্তরে আছে স্লুইস গেট।  লুবানা জেনারেল হসপিটাল, ইবনে সিয়া, ল্যাব এইডের মত বেশ কিছু স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান আছে এই এভিনিউতে। আছে শান্ত মরিয়ম ইউনিভার্সিটি। অন্য সব এভিনিউয়ের মতই অসংখ্য রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফের সমাহার এই এভিনিউও। আছে চাপ সামলাও এর মত বেশ বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট। 

গরীবে নেওয়াজ এভিনিউয়ের আরেকটি বিশেষত্ব হল, অসংখ্য ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের ব্রাঞ্চ আছে এই এভিনিউতে। প্রাইম ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংকসহ বেশ কিছু ব্যাংক আছে এই এভিনিউতে। এছাড়া ইনকাম ট্যাক্সের জোন ৯ এর অফিসও এই এভিনিউতেই। আর অন্যান্য শপিংমল্‌ সুপার শপ এবং ব্র্যান্ডেড বিভিন্ন দোকান মিলিয়ে এটিও উত্তরার অন্যতম ব্যস্ত একটি এভিনিউই বটে।

 

উত্তরার এভিনিউ নিয়ে দুই পর্বের ধারাবাহিক লেখার এটি ছিল শেষ পর্ব। এলাকা হিসেবে উত্তরা যে কতটা সাজানো গোছানো সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় উত্তরায় এভিনিউগুলোর দিকে চোখ বুলালেই। উত্তরায় এভিনিউ নিয়ে আমাদের এই আয়োজন আপনার কেমন লাগলো? উত্তরা এলাকা সম্পর্কে আপনি আর কী জানতে চান? কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না যেন! এমন আরও অসংখ্য বিষয় সম্পর্কে জানতে সাবস্ক্রাইব করুন এবং চোখ রাখুন বিপ্রপার্টি ব্লগে। আপনার জন্যই আমরা প্রতিদিন প্রকাশ করি নতুন নতুন লেখা। 

Write A Comment