Reading Time: 3 minutes

রাজধানী ঢাকা, দেশের প্রায় সকল ধরণের ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্র। কোটি মানুষের এই শহরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অফিস ও ব্যবসা বাণিজ্যের স্থান। একটা সময় ঢাকার প্রধানতম কমার্শিয়াল হাব ছিল মতিঝিল। অফিসপাড়া, ব্যাংকপাড়া বলতে তখন সবাই শুধুমাত্র মতিঝিল এবং তদসংলগ্ন এলাকাকেই বুঝতো। তবে সময়ের সাথে সাথে এসেছে পরিবর্তন। বর্ধিত ঢাকার নতুন বাণিজ্যিক কেন্দ্র বা কমার্শিয়াল হাব এখন গুলশান ১, গুলশান ২ এবং এর আশপাশের এলাকা। গুলশানের একটি সফল বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠার পেছনে কী কী কারণ কাজ করেছে? সে বিষয়গুলো নিয়েই আজকের লেখা। 

অবস্থান

গুলশান পুলিশ প্লাজা
গুলশানের অবস্থান বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে আদর্শ

গুলশান এবং বনানী এলাকার পরিকল্পনা করা হয় অনেক আগে। সে সময় ঢাকা শহরের এক প্রকার প্রান্ত ছিল এই এলাকা। কিন্তু সময় যতই গড়িয়েছে, এই ঢাকা ততই সম্প্রসারিত হয়েছে চারিদিকে। এবং গুলশান বনানী এলাকা পড়েছে সেই সম্প্রসারিত এলাকার ঠিক মাঝ বরাবর। ঢাকার উত্তরে বসুন্ধরা বা উত্তরা, দক্ষিণে মতিঝিল বা পুরান ঢাকা, পশ্চিমে ধানমন্ডি বা মোহাম্মদপুর আর পূর্বে বনশ্রী, আফতাবনগর যে অঞ্চলই ধরা যাক না কেন, সব এলাকার মোটামুটি মাঝখানে পড়েছে গুলশান এবং বনানী। আর এমন একটি অবস্থান অবশ্যই একটি সফল বাণিজ্যিক এলাকা গড়ে উঠার পেছনে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। 

যোগাযোগ

গুলশানের রাস্তা
গুলশানের রাস্তাঘাট সুপ্রশস্থ ও উন্নত

কোন একটি সফল বাণিজ্যিক এলাকা থাকে মানুষের পদচারনায় মুখরিত। সেখানে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে অসংখ্য মানুষ। আর তাই একটি কমার্শিয়াল হাবে চাই উপযুক্ত যোগাযোগের ব্যবস্থা। গুলশান এলাকাটি এই দিক থেকেও চমৎকার। অভ্যন্তরীণভাবে কানেক্টেড রাস্তা তো আছেই, গুলশানে যোগাযোগের সবচেয়ে বড় উপায় হল মাঝ বরাবর চলে যাওয়া গুলশান এভিনিউ। গুলশান ১ নম্বর সার্কেলের সাথে একপাশে মহাখালী অন্যপাশে বাড্ডা লিংক রোডের যোগাযোগ  রয়েছে। দক্ষিণ দিকে চলে গেলে পৌঁছানো যায় নিকেতন, হাতিরঝিল কিংবা তেজগাঁওতে। আর ২ নম্বর সার্কেলের সাথে সরাসরি যোগাযোগ বনানী, বারিধারা প্রমুখ এলাকার। অর্থাৎ ঢাকা শহরের প্রধান কয়েকটি সড়কের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে গুলশানের। আর যোগাযোগব্যবস্থার দিক থেকে সময়ের সাথে সাথে হালনাগাদও হয়েছে এই এলাকাটি। বনানী ১১ নম্বর রোডের মাথায় লেকের উপর দিয়ে নতুন ব্রিজ নির্মাণ করে নতুন যাতায়াতের মাধ্যম তৈরি করে তারই গুলশানকে একটি সফল বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে নির্মাণের পরিকল্পনারই উদাহরণ।   

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ 

একটি সফল বাণিজ্যিক এলাকা
গুলশান গড়ে উঠেছে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে

রাজধানী ঢাকাকে একটি পরিকল্পিত এবং আবাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলবার দায়িত্ব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক এর। আর ঢাকা শহরে রাজউকের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন ও সমৃদ্ধ অঞ্চল হল বনানী – গুলশান। পরিকল্পিত গুলশান এলাকার শুরু হয় স্বাধীনতারও আগে, ১৯৬১ সালে পৌরসভা হিসেবে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তা ক্রমান্বয়ে গুলশান থানা এবং একসময় রাজউকের তত্ত্বাবধানে আসে। এর ফলে এই এলাকার রাস্তাঘাট, পার্ক, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক এলাকা সবই একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে গড়ে উঠে। এর সাথে ধীরে ধীরে ঢাকা বর্ধিত হতে থাকলে একসময় ঢাকার কেন্দ্রে সবচেয়ে পরিকল্পিত এলাকা হয়ে দাঁড়ায় গুলশান যা একে একটি সফল বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে আত্মপ্রকাশে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মিউনিসিপ্যাল বন্ড আনার পরিকল্পনা করছে  যা গুলশানের মত এলাকায় বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণকে উৎসাহিত করবে।

কূটনৈতিক অঞ্চল

একটি দেশের সাথে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হল সেই দেশে থাকা অন্য দেশের দূতাবাসগুলো। আর বাংলাদেশের কূটনৈতিক অঞ্চলের প্রায় পুরোটাই রয়েছে গুলশান এবং পার্শ্ববর্তী বারিধারা অঞ্চলে। সব বড় বড় দূতাবাসগুলো এখানেই অবস্থিত। স্বভাবতই বিদেশী নাগরিকদের অধিকাংশের বসবাস সংলগ্ন এলাকায়। আর এ বিষয়টিও বেশ বড় ভূমিকা রেখেছে একটি সমৃদ্ধ বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে গুলশানের উত্থানে। কেননা দূতাবাস এবং বিদেশী নাগরিকদের কথা আথা রেখে অনেক অফিস, ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এই অঞ্চলে গড়ে উঠেছে।

সমাজের সম্ভ্রান্ত শ্রেনীর নাগরিকদের বসবাস

আকাশচুম্বী সুউচ্চ ভবন
গুলশানে গড়ে উঠেছে আকাশচুম্বী সুউচ্চ বাণিজ্যিক ভবন

অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় দেশের সবচেয়ে সম্ভান্ত্র এবং ধনী নাগরিকদের বসবাস গুলশান-বনানী এলাকায়। কারণ সামর্থ্যবান নাগরিকদের অনেকেই ব্যবসায়ী, বড় বড় ব্যাংক বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ডিরেক্টরসহ উচ্চপদে আসীন। এবং স্বভাবতই তারা চেয়েছেন যতটা কাছে তাদের অফিস ও কর্মস্থল গড়ে তোলা যায়। গড়ে উঠেছে অসংখ্য আকাশচুম্বী বাণিজ্যিক ভবন।  যা গুলশানের একটি বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠার পেছনে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।

শুরুতে শুধুমাত্র আবাসিকে এলাকা হিসেবে পরিকল্পনা করা হলেও গুলশান এখন ঢাকার নতুন কমার্শিয়াল হাব, এটিই বাস্তবতা। কেন গুলশান একটি সফল বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে আমাদের মতে তার মূল ৫টি কারণ এগুলোই। এ নিয়ে আপনার মতামত জানাতে পারেন মন্তব্যের ঘরে। প্রতিদিন নতুন নতুন লেকাহ পেতে চাইলে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন বিপ্রপার্টি ব্লগে।   

Write A Comment