আর কয়দিন বাদেই কোরবানির ঈদ। চারিদিকে যেমন আনন্দের হিড়িক পড়েছে তেমন আনন্দের মাঝেও একটু যেন মন ভার। যেভাবে প্রতিবার কোরবানির ঈদ হয় এবার তার থেকে একটু অন্যরকম হতে যাচ্ছে। কিন্তু, সব পরিস্থিতিতেই নিজেকে এবং পরিস্থিতিকে মানিয়ে নিয়েই আমাদের এগিয়ে চলা। কোরবানির ঈদ মানেই যেন রাজ্যের কাজ। যেমন, আনন্দ তেমনি পরিশ্রম। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী হওয়াতে ঈদ দেশের সবচেয়ে বড় উৎসবের মধ্যে একটি। এই দেশের কাঠামো ইসলামিক সংস্কৃতিতে গড়ে উঠার কারণে বছরের দুটি ঈদকে দেয়া হয় সর্বাধিক প্রাধান্য। ঐতিহ্য থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ও জাতীয় চিন্তা ভাবনা, সবকিছুতেই রয়েছে ইসলামিক চেতনা। তাইতো, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও অংশগ্রহণ করে এই খুশির দিনে আর ভাগাভাগি করে নেয় সমান আনন্দ।
কিন্তু, ঈদের আগের প্রস্তুতি কিন্তু নিতেই হয়। ছোট পরিসরে এবারের ঈদ হলেও ঈদের দায়িত্ব বা কাজ কিন্তু আগের মতই। কোরবানির পশু কিনে আনা তারপর জবাই ও তারপরের কাজগুলো গুছিয়ে করা। সবকিছু হওয়া চাই ঠিকঠাক। তাই ঈদের আগে জেনে নিন কিভাবে কোরবানি ঈদ ২০২০ উদযাপন করবেন এবং কিভাবে নেবেন ঈদের আগের এবং পরের প্রস্তুতি। কোরবানির ঈদে রান্নাঘরের উপর দিয়ে বয়ে যায় ঝড় তাই ঈদের আগে অবশ্যই প্রস্তুত রাখবেন রান্নাঘরের যে ৫টি জিনিস এতে করে কোরবানির অর্ধেক কাজ কমে আসবে।
ঈদ হোক একদম নিজের মত এবং ছোট্ট পরিসরে
নিজের ও প্রিয়জনের সুস্থতার জন্য এবারের কোরবানি ঈদ ২০২০ উদযাপন নিজের মত করে করলে কিন্তু খারাপ হয় না। ঘরে পরিবারের সাথে সময় দিয়ে আনন্দে ঈদের দিনটি পার করলে বেশ ভালো হবে। আপনি চাইলেই কিন্তু ঈদটি হতে পারে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী। ঈদের দিনের শুরুটা হোক মজাদার সব রান্না দিয়ে। চমৎকার সব রেসিপি আছে ঈদের দিনটিকে আরও স্মরণীয় করে তোলার জন্য। প্রিয়জনের পছন্দের খাবার রান্না করুন। সকালের নাস্তাটা আর করা হয়নি তাই ঈদের দিনের শুরুটা করুন মজাদার নাস্তা দিয়ে। বাড়ির ছেলেরা ঈদের জামাত শেষ করে আসলে ঈদের কোলাকুলি শেষে, সকলে বসে মজাদার নাস্তা উপভোগ করুন। এর মাঝেও একটা সুন্দর সময় পার হয়ে যাবে। এছাড়া ঈদের পোশাক পরতে ভুলবেন না। ঘর সাজানো শেষ, মজার খাবার দাবার ও তৈরি। এবার তাহলে কী বাকি রইল? নিজেকে একটু সাজিয়ে তোলা! লুডু কিংবা কোন ইনডোর গেমস খেলতে পারেন। সকলে মিলে সিনেমা বা নাটক দেখতে পারেন। দূরে থাকা প্রিয়দের ভিডিও কলে মনে করতে পারেন।
কোরবানির অর্থ একটু ভিন্ন এই বছর
আপনি চাইলেই এই ঈদটি হতে পারে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী। করোনা আর বন্যার থাবায় তছনছ হয়ে গেছে অনেক পরিবার। কেননা, এই কোরবানির ঈদে তাদের পাশে গিয়ে আমরা দাড়াই? তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার আর পোশাক পৌঁছে দেই। কোরবানির পশু হয়তো বেশি দামে না কিনে অর্ধেক টাকাটা অসহায়দের দিয়ে দিলেন। আমরা সবাই এখন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছি না, প্রয়োজন ছাড়া কিছু কিনছিও না। বেঁচে যাচ্ছে অনেকগুলো টাকা, কেননা এই ঈদে বেঁচে যাওয়া সেই টাকা দিয়ে অসহায়দের পাশে দাড়াই। তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণের খাবারের ব্যবস্থা করি। যাতে করে আমাদের সাথে তাদেরও ঈদ হয় শান্তিপূর্ণ। ঈদের জন্য রান্না করার সময় না হয় বেশি করে রান্না করলেন, যাতে করে পেট ভরে খেতে পারে আরও একটি পরিবার।
পশুর হাট এবং জনসমাগম এড়িয়ে যাওয়া
অনলাইনে কেনাকাটা আপনি পছন্দ করুন আর নাই করুন। এই সময়ের তাগিদে অনলাইন থেকে কোরবানির পশু ক্রয় করাই শ্রেয়। ঈদের সময় মারাত্মক ভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধ করার জন্য সরকার অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করছে। এবং এটাই সময় উপযোগী একটি পদক্ষেপ। পশুর হাট সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে তবেই যেকোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত। প্রতিবছরই এই সময়টায় গরু ছাগলের হাট হয়ে ওঠে জমজমাট। বেশীরভাগ মানুষ এই সময়টাতে দরদাম করে সবচেয়ে ভালো কোরবানির পশু ক্রয় করতে চান। তবে, এ বছর পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। তাই অনলাইন থেকে পশু কিনে আনুন। এবং হাটের মত জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। শুধু অনলাইনে পশু ক্রয় করেই কিন্তু শেষ নয়। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কসাইয়ের কাজটাও করে দিচ্ছে। মাংস পরিষ্কার করে কেটে আপনাকে হোম ডেলিভারিও দিচ্ছে। কসাইয়ের ঝামেলা এড়াতে চান না এমন কেউ নেই। কোরবানির সময়ে এটা সবচেয়ে ঝামেলাপূর্ণ একটি কাজ। এবং এখন চাইলে আপনি অনলাইনে “সম্পূর্ণ কোরবানি পরিষেবা” অর্ডার করতে পারেন। যদিও এটি বাংলাদেশে একটি স্বল্প পরিচিত সেক্টর, তবে বেশ কয়েকটি সংস্থা এই বছর এই পরিষেবা দিচ্ছে। যতটা সম্ভব ঝামেলা এবং ঝুঁকি দুটোই কমিয়ে আনুন।
ঈদের পরবর্তী সময়ে ঘর পরিষ্কার
ঈদের দিনগুলোতে কোন না কোনভাবে ঘর অপরিষ্কার হবেই। আর কয়েকটা দিন পরই কোরবানির ঈদ, আপনাদের হয়তো রান্নাঘর প্রস্তুত! কারণ, এই রান্নাঘরের ওপর দিয়ে বেশি ঝড়টা বয়ে যায়! কমবেশি আমরা সবাই মাংস ভাগাভাগি থেকে শুরু করে মাংস গুছিয়ে ফ্রিজে রাখা, সব কাজ রান্না ঘরেই করে থাকি। তাই রান্নাঘর পরিষ্কার করা নিয়ে তেমন ভাবনা নেই, কারণ রান্নাঘর পরিষ্কারের কয়েকটি জাদুকরী টিপস ইতিমধ্যে আপনারা জেনে গেছেন! ঈদের আগেই ঘরের কিছু কাজ যা আপনার নিজের করে ফেলা উচিত, সেগুলো হয়তো সবই করা শেষ! তাহলে এবার কী বাকী রইল? যেটার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি সেটিই বাকী রয়েছে। কোরবানি ঈদের পর ঘর পরিষ্কার করাটা অনেক জরুরী একটি বিষয়। ঈদের ব্যস্ততা কেটে গেলে, এবার একে একে পরিষ্কার করে নিন, ঘরের প্রয়োজনীয় কিছু অংশ। কোরবানি ঈদের পর ঘর পরিষ্কার করে ফেললে আপনি অনেকটা চিন্তামুক্ত হয়ে যাবেন। এই একটি কাজ সেরে ফেললেই আপনি নিয়মিত জীবনে নিশ্চিন্তে ফিরতে পারবেন।
কোরবানি ঈদ ২০২০ উদযাপন হোক আনন্দে, শান্তিতে এবং সুস্থতায়। আশা করি এই ঈদটি পালিত হবে নিরাপদে। ঈদের আগাম শুভেচ্ছা।