Reading Time: 4 minutes

রাজধানী ঢাকা দেশের প্রাণকেন্দ্র। জীবন ও জীবিকার জন্য সবাই ছুটে আসে এখানে, তাই হয়ত এশিয়ার মধ্যে ঢাকা সবচেয়ে জনপ্রিয়। শুধু রাজধানী বলে নয়, নিশ্চয়ই আরও কিছু কারণ আছে! যারা ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা তারা হয়তো এগুলো বিশেষভাবে খেয়াল করেন না, কিন্তু ঢাকার আছে চমৎকার কিছু উপাদান যা আপনার দৈনন্দিন জীবনকে করে তুলে আরও সহজ। আর এই সব উপাদানই ঢাকাকে বানিয়েছে আকর্ষণীয়। খুঁজলে হয়ত পাওয়া যাবে ঢাকার অসংখ্য সমস্যার কথা, কিন্তু আমরা এখানে শুধু ঢাকার ইতিবাচক বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো। চলুন তবে শুরু করা যাক, কেন ঢাকায় থাকা, সেই আলোচনা-

প্রশাসনিক কেন্দ্র 

শাপলা ফুল
শহরের অন্যতম প্রাণ কেন্দ্র

বসবাসের এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধার জন্য ঢাকার কোন জুড়ি নেই, দেশের প্রায় সকল প্রশাসনিক কেন্দ্র এখানে অবস্থিত। ঢাকা থেকেই প্রায় সব সরকারি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হয়ে থাকে। তাই সমগ্র দেশ থেকে মানুষ ঢাকায় আসে তাদের দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করতে। যদিও ঢাকায় সবাই ইচ্ছে করেই আসে এমন না, কিন্তু অনেকেরই না এসেও উপায় থাকেনা এই কারণে। স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকা মানুষদের এ ভোগান্তি পোহাতে হয় না। চাকরী বা ব্যবসা, যে যেটাই করছেন, ঠিক সময়ে নিজের কাজটি সম্পন্ন করতে পারেন সবাই।

প্রযুক্তির হাব

হাব
প্রযুক্তি হাব ঢাকা

নিঃসন্দেহে ঢাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে আধুনিক শহর। তাই বলা যেতে পারে প্রায় সকল প্রযুক্তির ব্যবহার ঢাকায় প্রথম হয় এবং তা উপভোগ করার ক্ষেত্রেও ঢাকার বাসিন্দারা এক ধাপ এগিয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ঢাকায় প্রথম থ্রি জি এবং ফোর জি ইন্টারনেট চালু হয় এবং এটির কভারেজ এখনো ঢাকাতেই সবচেয়ে শক্তিশালী। এমন অনেক প্রযুক্তিগত ব্যাপারেই ঢাকার প্রাধান্য অন্যান্য শহরের চেয়ে বেশি।

সহজলভ্যতা

বিল্ডিং
হাতে কাছেই সবকিছু

ঢাকায় থাকা মানুষদের নাগরিক জীবনের সকল চাহিদা সহজে মিটে যায় সহজেই। ভৌগলিকভাবে ঢাকার অবস্থান এমন যে অন্যান্য শহরের সাথে এই শহরটি খুবই ভালভাবে সংযুক্ত।  আপনার জীবনের সকল চাহিদার যোগান দিবে এ শহর। শপিং কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে হাসপাতাল সবকিছুই সহজলভ্যতা প্রতিটি এলাকাতেই। এছাড়াও রয়েছে কাঁচা বাজার কিংবা বিভিন্ন সুপার শপ। তাই প্রয়োজনে আপনাকে দূর দূরান্তে দৌড়াতে হবে না।

খাদ্যের সমাহার

বিল্ডিং
আধুনিক সব ফুড আউটলেট

খাবার নিয়ে মেতে থাকি আমরা সবাই! ঢাকার খাবার সর্বসেরা। স্বাদ বা রেস্তোরাঁর পরিবেশ, সবকিছুতেই ঢাকার খাবার নামকরা। বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, জেলা উপজেলা শহরে, ঢাকা থেকে বাবুর্চি নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক সময়ই ঢাকার রেস্তোরাঁ বা ক্যাফের আইডিয়া দ্বারা অনেকে উৎসাহিত হয়েছেন এবং সে অনুযায়ী নিজ নিজ এলাকায় রেস্টুরেন্ট বানিয়েছেন। আধুনিক এবং ইউনিক আইডিয়ার এক বিশাল সমাহার হয়ে আছে ঢাকা শহর। অনেকে শুধু খাবার খেতে নয় মনোরম পরিবেশে কিছু সময় নিজের মত করে কাটাতেও এসে থাকেন এখানে। তাই খাবারের পাশাপাশি ইন্টেরিয়রের দিকেও নজর দেয়া হচ্ছে ভীষণ। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার বিরিয়ানী থেকে শুরু করে বনানী ও ধানমন্ডির পশ্চিমা ধাঁচের খাবারগুলো ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছে। ভিন্নতা শুধু মেন্যুতে নেই আছে মূল্যেও। মন ও পেটের ক্ষুদা চাইলেই অল্প খরচে মিটিয়ে নেয়া সম্ভব। হাজার খানেক টাকার মধ্যেই পেট পুড়ে খেয়ে নেয়া যায় বন্ধু-বান্ধবসহ।

ঘোরাঘুরির সুযোগ

লেক
বিনোদনের অভাব নেই শহরে

সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনের জন্য আপনার প্রয়োজন বিনোদন ও উপভোগের জায়গা। সৌভাগ্যক্রমে, ঢাকায় থাকা মানুষদের এর কোন অভাব নেই। মিরপুরে আছে বেশ কিছু জায়গা। মিরপুর ১ এ আছে জাতীয় চিড়িয়াখানা, পুরান ঢাকায় রয়েছে উল্লেখযোগ্য জাদুঘর। এছাড়া আপনি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাহলে আপনি ঢাকায় কোন বিখ্যাত পার্ক ঘুরে আসতে পারেন। এ ছাড়া আছে প্রাকৃতিক পার্ক গুলো যেখানে আপনি নিশ্চিন্তে সময় কাটাতে পারবেন। এত সুন্দর সুন্দর জায়গা থাকতে আপনার সন্ধ্যা খারাপ কাটবে তা হতে পারে না।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

সেতু
সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা

ঢাকা এমন একটি শহর যেখান থেকে দেশের যেকোন কোণায় আপনি সহজেই পোঁছাতে পারেন। ভৌগোলিকভাবে ঢাকার অবস্থান এমন ভাবে যেখান থেকে দেশের সব জেলার‍ যাতায়াতের সহজলভ্য মাধ্যম রয়েছে। ট্রেন থেকে শুরু করে জলপথের যাতায়াত ব্যবস্থাও বেশ ভাল। আপনি যেকোন সময় দেশের যেকোন প্রান্তে পৌঁছাতে পারেন যা ঢাকায় থাকা মানুষ প্রতিনিয়ত উপভোগ করছে। ঢাকা থেকে বের হওয়ার জন্য রয়েছে সুপ্রশস্ত রাস্তা এবং হাইওয়ে। আপনি যদি স্বপ্নের আবাসন খুঁজে থাকেন তবে মালিবাগ, গুলশান, মিরপুর, উত্তরা এবং ধানমন্ডি, সাধ্যমত যেকোন একটি এলাকা বেছে নিতে পারেন। শহরবাসী দিনের বেলায় যেকোন সময় অল্প খরচে শহরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতে পারেন। পাবলিক বাসগুলো ১০ থেকে ৫০ টাকা টিকিট রেখেছে যার বিনিময়ে আপনি চলে যেতে পারবেন শহরের যেকোন প্রান্তে। এছাড়া হাতিরঝিলের মত বিশাল প্রোজেক্টের কল্যাণে যানজটের মাত্রা অনেকটাই কমে এসেছে। 

শিক্ষার সু-ব্যবস্থা 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

এ বিষয়ে না বললেই নয়! একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্ভর করে আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর। এবং এ শহরে সেটির কোন অভাব নেই। সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য লেখাপড়ার চাপ থাকে সেই প্রাইমারী থেকে। প্রতিটি বাবা-মা ই চেষ্টা করেন সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ লেখাপড়া ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে। তাই হয়তো বিভিন্ন শহর হতে ঢাকায় এসে নিজের আবাসন গড়ে তোলেন। মিরপুর, মালিবাগ এবং ধানমন্ডিতে আছে অনেক বিখ্যাত স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়। সরকারি থেকে বেসরকারি সবরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখানে রয়েছে। বাছাই করার ক্ষেত্রে আপনার রয়েছে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। 

ঢাকায় থাকা বাসিন্দাদের হয়তো এ শহরকে তেমন কিছু মনে নাই হতে পারে কিন্তু যারা দূর থেকে এ শহরে এসেছেন, হয় চাকরীর জন্য কিংবা পড়ালেখার জন্য, তাদের কাছে ঢাকা এক স্বপ্নপুরি। আপয়ান্র কাছে ঢাকা কেন থাকার জন্য সেরা? নিচে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।

Write A Comment