নতুন সন্তানের আগমন উপলক্ষ্যে প্রেগন্যান্সির সময়টা পরিবারের সবার জন্যই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় গর্ভবতী মায়ের যত্ন নেয়া এবং তার সুবিধা-অসুবিধার দিকগুলো বিবেচনা করে ঘরকে নতুন করে সাজানো অত্যন্ত জরুরি। যদিও হুট করে পুরো বাসার সবকিছু পরিবর্তন করা সম্ভব না। তবুও ঘরে চলাফেরার ক্ষেত্রে যেন কোন অসুবিধা বোধ না হয় এবং ঘরের ভেতরের পরিবেশটা আরও আনন্দময় করে তুলতে প্রয়োজন দারুণ কিছু টিপস। আর তাই আজকের ব্লগে কীভাবে গর্ভবতী মায়ের জন্য ঘর সাজানো যায়, সে বিষয়ে বিশেষ কিছু টিপস নিয়েই লেখা হচ্ছে আর্টিকেলটি।
ঘরে আলো-বাতাসের সুব্যবস্থা
ঘরের ভেতরে যেন গুমোট বা বদ্ধ ভাব না থাকে সে দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। রুমে যদি অনেক আসবাব থাকে, তবে বাড়তি আসবাবগুলো অন্য রুমে সরিয়ে, রুমের ভেতর পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে প্রেগন্যান্সির সময় যেহেতু ঘরের ভেতরে সময়টা বেশি কাটানো হয়, তাই যেন কোন ধরনের অস্বস্তিবোধ না হয় সেজন্য বাহারি নকশার পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। এ সময় রুমের ভারী পর্দা পাল্টে হালকা ফেব্রিকের পর্দা ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে বাতাসের চলাচল আরও ভালোভাবে হবে। প্রেগন্যান্সিকালীন সময় এবং নতুন অতিথির আগমন, ঘরে প্রাকৃতিক আলোর ব্যবস্থা রাখা উচিত অনেক বেশি। ঘরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি দূর করতে এবং ভিটামিন ডি প্রবেশের জন্য প্রাকৃতিক আলো যেন ঘরে ঢুকতে পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
রিল্যাক্সিং সিটার এর ব্যবস্থা করা
প্রেগন্যান্সির সময় মায়েদের দুশ্চিন্তা মুক্ত থেকে সঠিকভাবে বিশ্রাম নেয়ার প্রয়োজন অনেক বেশি। এসময় যত বেশি রিল্যাক্স থাকতে পারবে, বাচ্চার শারীরিক এবং মানসিক গঠনে তা ততটাই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর তাই গর্ভবতী মায়ের জন্য ঘর সাজাতে সাধারণ চেয়ারের বদলে ঘরে আরামদায়ক সোফা বা রিল্যাক্সিং সিটার এর ব্যবস্থা করতে হবে। বই পড়া, টিভি দেখা কিংবা পরিবারের মানুষের সাথে গল্প করা কিংবা বিশ্রাম নেয়ার সময় যেন আরাম করে বসে সময়টা কাটানো যায়, সেজন্য গর্ভবতী মায়ের রুমে আর্ম চেয়ার, রকিং চেয়ার কিংবা বড় ধরনের কোন রিল্যাক্সিং সিটার হবে ঘর সাজানোর জন্য বেস্ট একটি উপায়।
ঘর জীবাণুমুক্ত রাখা
ঘর সাজানোর পাশাপাশি ঘরের ভেতরটা পরিষ্কার এবং ব্যাকটেরিয়া মুক্ত রাখতে পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার ব্যাপারেও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। মহামারীর এই সময়টায় বিশেষ করে সম্পূর্ণ বাসা জীবাণুমুক্ত রাখতে প্রতিদিন না হলেও অন্তত সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন পুরো ঘর জীবাণুনাশক সামগ্রী ব্যবহার করে পরিষ্কার করা উচিত। এতে করে হবু মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে। তবে জীবাণুনাশক সামগ্রীতে যেহেতু কেমিক্যাল থাকে, তাই ঘর পরিষ্কারের সময় সে ঘরে প্রেগন্যান্ট মায়ের না থাকাই উত্তম। ঘরের ভেতর জীবাণু থাকার জায়গা সমূহ পরিষ্কার করার পরই সে ঘরে তার প্রবেশ হবে কম ঝুঁকিপূর্ণ।
উঁচু আসবাব বদলে ফেলা
গর্ভবতী মায়ের জন্য ঘর সাজানো এর জন্য ঘরে যদি উঁচু আকৃতির আসবাব যেমন আলমারি বা শেলফ থাকে, তবে সম্ভব হলে সেগুলো পাল্টে লম্বায় ছোট বা সহজে জিনিসপত্র রাখা যাবে এমন আকারের আসবাব দিয়ে ঘর সাজানো যেতে পারে। মাতৃত্বকালীন সময়ে যেহেতু অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়, তাই হাতের নাগালে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যেন রাখা সম্ভব হয় সেজন্য উঁচু ধরনের আসবাব বদলে ঘরে রাখা উচিত মাঝারি আকৃতির ওয়ারড্রোব বা কেবিনেট। তবে শুধু প্রেগন্যান্সির সময়েই নয়, নতুন অতিথির আগমনেও এ ধরনের আসবাব বেশ কার্যকরী হবে। আর হরহামেশাই যেহেতু ঘরের আসবাব পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, তাই নতুন করে ঘর সাজানোর পরিকল্পনার সময় ফার্নিচার কেনার টিপস হয়তো আপনার জন্য বেশ উপকারী হবে বলেই আশা করা যাচ্ছে।
ঘরে সবুজের উপস্থিতি বাড়ানো
ঘরে কিংবা বারান্দায় ছোট ছোট প্ল্যান্টস বা ইনডোর গাছ লাগানোর ফলে তা নবাগত মায়ের জন্য বেশ স্বস্তিকর হবে। গর্ভবতী মায়ের জন্য ঘর সাজানো -তে ঘরে সবুজের উপস্থিতি থাকলে তা অক্সিজেনের মাত্রা যেমন বাড়াবে তেমনি বাহারি ডিজাইনের গাছের টব ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলবে অনেকাংশে। এছাড়া ঘরে উজ্জলতা আনার জন্য আর্টওয়ার্ক, কার্পেট বা রাগস এবং কালারফুল কুশন দিয়েও ঘর সাজাতে পারেন।
বাথরুমের মেঝে পরিষ্কার রাখা
ঘর সাজানোর পাশাপাশি বাথরুম ছিমছাম এবং পরিষ্কার রাখাও গর্ভকালীন সময়ে অত্যন্ত জরুরি। বাথরুমে যেহেতু পানির ব্যবহার বেশি হয়, তাই অসাবধানতাবশত কোন ধরনের দুর্ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে মেঝে পরিষ্কারের কার্যকরী টিপস সম্পর্কে আগেভাগেই জেনে নেয়া ভালো এবং সে অনুযায়ী বাড়ির যেকোনো মেঝে পরিষ্কার রাখা উচিত। প্রয়োজনে বাথরুমে ছোটও কার্পেটও ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ করে কোভিডকালীন এসময়ে এ বিষয়ে সচেতন হওয়া যেন আরও বেশি প্রয়োজন। আর যদি ঘর টাইলসের হয়, তবে টাইলস ফ্লোর পরিষ্কারের টিপস সম্পর্কেও ধারণা নিয়ে নিতে পারেন। এতে করে ঘর এবং বাথরুমের যেকোনো মেঝেই আর পিছিল থাকবে না এবং গর্ভবতী মায়ের জন্য এ জায়গাগুলো থাকবে সুরক্ষিত।
গর্ভকালীন সময় থেকে নবাগত শিশুর আগমনের সময়টা প্রতিটি পরিবারের জন্যই হয় আনন্দের। তাই খুশির এই মুহূর্তগুলোকে আরও দুশ্চিন্তা মুক্ত করে কাটানোর জন্য পরিবারের সবার মনমানসিকতায় যেমন ইতিবাচক ভাব থাকা উচিত তেমনি গর্ভবতী মায়ের জন্য এই সময়টা যেন নিরাপদে এবং নিশ্চিন্তে কাটে সে ব্যাপারেও প্রতিটি পদক্ষেপ নেয়া উচিত গুরুত্বের সাথে। আর এর শুরুটা করা যেতে পারে গর্ভবতী মায়ের জন্য ঘর সাজানোর মধ্য দিয়ে। আশা করি গর্ভবতী মায়ের জন্য ঘর সাজানো এর এই টিপসগুলো আপনাদের কাজে আসবে।