Reading Time: 3 minutes

দেশের সবচেয়ে অভিজাত কয়েকটি এলাকার মধ্যে গুলশান একটি। সম্পূর্ণ আবাসিক হিসেবে পরিকল্পনা করা হলেও বর্তমানে গুলশান পরিণত হয়েছে একটি বাণিজ্যিক হাবে। শত মানুষের পদচারণায় মুখরিত এই এলাকায় বাস দেশের সম্ভ্রান্ত সকল পরিবারের। এখানকার রাস্তাঘাট যেমন উন্নত ও প্রশস্থ ঠিক তেমনি উন্নত এখানকার জীবনযাপনের মান। গুলশান এবং এর আশেপাশের বনানী, নিকেতন, বারিধারা প্রমুখ এলাকায় অসংখ্য মানুষের বাস। জীবন মানেই শুধু ছুটে চলা নয়, প্রয়োজন আছে অবসর এবং চিত্তবিনোদনের। আর সুস্থ এবং শারীরিক মানসিক বিনোদনের কথা উঠলে সেখানে কথা থাকবে গুলশানের পার্ক নিয়েও। গুলশান এবং আশেপাশের এলাকার মানুষজন প্রতিনিয়ত এই পার্কগুলো ব্যবহার করে থাকেন। চলুন দেখে আসি গুলশানে পার্ক আছে কতগুলো এবং কোথায় কোথায়!

গুলশান সাউথ পার্ক

গুলশান সাউথ পার্ক

নাম যেমন বলে, গুলশানের সর্ব দক্ষিণে গুলশান এভিনিউ এর একদম শেষে এই পার্কের অবস্থান। সংলগ্নেই আছে গুলশান পুলিশপ্লাজা এবং শুটিং ক্লাব। পার্কটি গুলশানের পার্ক হলেও অবস্থানগত কারণে এর সুবিধা ভোগ করেন নিকেতন এলাকার বাসিন্দারাও। কেননা এর একদিনে রয়েছে সম্পূর্ণ নিকেতন এলাকা, একটু সামনে আগালেই দেখা মিলবে হাতিরঝিল প্রকল্পেরও। 

পার্কটির পরিসর কিছুটা ছোট হলেও এর অভ্যন্তর বেশ পরিপাটিভাবে সাজানো গোছানো। ভেতরে আছে জারুল, কৃষ্ণচূড়া, শিমুলসহ বাহারী সব ফুলের গাছ যা তৈরী করে দারুণ দৃষ্টিনন্দন এক আবহের। ভেতরে আছে সুন্দর একটি ওয়াকওয়ে, বসার জন্য বেঞ্চ, দোলনাসহ বাচ্চাদের কিছু খেলার সরঞ্জাম। 

এই পার্কটির স্থান প্রায় ২৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে অবৈধভাবে দখলকৃত ছিল। ২০০৫ সালে বিশেষ উদ্যোগে তা দখলমুক্ত করা হয় এবং ২০০৭ সালে রাজউক-এর অধীনে একটি পাবলিক পার্ক হিসেবে উন্মুক্ত এই পার্কটি। নিকেতন এবং গুলশান ১ এর বাসিন্দাদের জন্য সকাল বা বিকালের হাঁটা এবং ঘুরাঘুরির জন্য পার্কটি সমাদৃত।  গুলশানের পার্ক হিসেবে অন্যান্য পার্ক থেকে এর পরিসর ছোট হলেও গুলশানের এ দিকটায় আর কোন পার্ক নেই। তাই এই পার্কটি বাসিন্দাদের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয়। 

গুলশান লেক পার্ক

গুলশান সাউথ পার্ক থেকে গুলশান এভিনিউয়ের সম্পূর্ণ বীপরিত দিকে গুলশান ২ এর একদম উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে নিরিবিলি ছিমছাম আরেকটি পার্ক, গুলশান লেক পার্ক। এই পার্কটি গুলশান তো বটেই, দেশের অন্য যে কোন পার্ক থেকে ব্যতিক্রম, কেননা এর অভ্যন্তরে রয়েছে আস্ত একটি লেক! মূলত একটি লেককে কেন্দ্রে রেখেই গড়ে উঠেছে এই পার্কটি। তাই ভেতরের বেশিরভাগ স্থানজুড়েই পার্কটির অবস্থান। 

গুলশানের পার্ক হিসেবে এটি যথেষ্ট সমাদৃত। ভেতরটি চমৎকার সাজানো গোছানো এবং ওয়েল মেইন্টেইনড। এখানে সবসময় থাকে নিরাপত্তারক্ষীর অবস্থান। ভেতরে একটি লেক থাকায় প্রাকৃতিক যথেষ্ট সুন্দর ও মনোরম। লেকের উপরে রয়েছে ব্রিজ। এই পার্কটি মূলত গুলশান ২ থেকে কাছে হলেও পার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে অনেক স্থান থেকেই মানুষ ঘুরতে এবং ছবি তুলতে এখানে আসেন। 

চিত্তবিনোদনের জন্য বিখ্যাত এই পার্কটির ভেতরে আছে সুন্দর একটি জগিং ট্র্যাক। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের প্রত্যুষ কিংবা বৈকালিক দৌড়ের জন্য যা চমৎকার। আছে বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য একটি নির্দিষ্ট কর্নারও। এমনকি ভেতরে একটি ভেন্ডিং মেশিনও মিলবে যেখানে আমদানীকৃত বিভিন্ন কোমল পানীয় কিনতে পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে গুলশানের এই পার্কটি থাকে বেশ প্রাণচঞ্চল। 

জাস্টিস শাহাবুদ্দিন পার্ক

গুলশান লেক পার্কের কয়েকশ মিটার দক্ষিণে, গুলশান এভিনিউয়ের উল্টোদিকেই আছে আরেকটি বিশাল পার্ক, বিচারপতি শাহাবুদ্দিন পার্ক। মূল এভিনিউ এর পূর্বে অবস্থিত এই গুলশানের পার্ক সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে পোল্যান্ড এবং সৌদি দূতাবাস। মূলত গুলশান ২ দূতাবাস এবং আশেপাশের মানুষ এই পার্ক বেশি ব্যবহার করেন। পার্কের অভ্যন্তরটি চমৎকার সাজানো গোছানো এবং স্বভাবতই অন্যান্য অনেক পার্কের চেয়ে অনেক বেশি ফ্যাসিলিটি এবং অ্যামেনিটি সম্পন্ন। পার্কের অভ্যন্তরে আছে একটি করে বাস্কেটবল কোর্ট এবং ব্যাডমিন্টন কোর্ট। এছাড়া চমৎকার গাছের ছায়াঘেরা ওয়াকওয়েও আছে সকাল কিংবা সন্ধ্যায় হাঁটাহাটির জন্য। লেকের ভেত্রেই রয়েছে চমৎকার একটি জলাধার যার মাঝখানে আছে সুন্দর একটি ফোয়ারাও। এছাড়া ক্লান্ত হয়ে বসার বা বিস্রাম নেবার জন্য বেঞ্চ এবং অনান্য ব্যবস্থা তো আছেই। সব মিলিয়ে গুলশানের পার্ক হিসেবে খুবই নান্দনিক এই জাস্টিস শাহাবুদ্দিন পার্ক।  

বারিধারা লেকসাইড পার্ক

গুলশানের পার্ক হিসেবে শেষ যে পার্কটির কথা আমরা বলব, তার নামে সাথে গুলশান না থাকলেও গুলশানের যে কোন বাসিন্দার জন্য এটি সহজেই অ্যাক্সেসিবল। রাজুকের তত্ত্বাবধানে থাকা এই পার্কটির নাম বারিধারা লেকসাইড পার্ক। গুলশান ২ চত্বর থেকে খুবই কাছে, লেকের পূর্ব পাশেই চারিদিকে দূতাবাস সংলগ্ন এলাকায় পার্কটির অবস্থান। জাপান দূতাবাস, চীন দূতাবাস, তুরস্ক দূতাবাস, ইন্ডিয়ান হাইকমিশনসহ কূটনৈতিক অঞ্চলের লাগোয়া স্থানে অবস্থিত হওয়ায় সবচেয়ে চমৎকারভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা পার্কই নয় বরং দেশের সবচেয়ে নিরাপত্তা বেষ্টিত পার্কও হয়ত এটি। যেহেতু প্রচুর ভিনদেশী মানুষের আনাগোনা রয়েছে তাই এই পার্কে ঢুকবার সময় কমবেশি সকলেরই প্রয়োজন পড়ে নিরাপত্তারক্ষীদের সাহায্য করার। তবে একবার সেই নিরাপত্তা পার করে ভেতরে ঢুকতে পারলে দেখা যায় অসাধারণ নান্দনিক দৃশ্যের। সাজানো গোছানো এই পার্কের অভ্যন্তরে ওয়াকওয়ে ধরে হাঁটবার সময় দেখা মেলে গুলশান লেকের নয়নাভিরাম দৃশ্যের, শুনতে পাওয়া যায় নানান পাখির কলকাকলি এবং কিচিরমিচির যা ঢাকার মত ব্যস্ত শহরে খুবই দুষ্প্রাপ্য একটি অভিজ্ঞতা! গাছগাছালির মাঝে থাকলে মনে হয় এক যেন অক্সিজেন উৎপাদনের এক প্রাকৃতিক কারখানা! 

গুলশানের পার্ক নিয়ে এই ছিল আমাদের আয়োজন। এর মধ্যে কোন কোন পার্কে আপনি গিয়েছেন, জানিয়ে দিন কমেন্ট সেকশনে। আর কোন কোন এলাকার পার্ক সম্পর্কে জানতে চান তাও লিখতে পারেন আমাদেরকে। আর এমন লেখা প্রতিনিয়ত পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের বিপ্রপার্টি ব্লগে

Write A Comment