আমাদের আশেপাশের পরিবেশের অবস্থা এতটা ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখছে যানবাহনের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা। কেননা, এই যানবাহনগুলোর কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে কার্বন-ডাই -অক্সাইডের মাত্রা যার প্রভাব পড়ছে বাতাসের গুণগত মানে। তাই পরিবেশের উপর এর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার কমিয়ে আনতে এবং প্রচলিত পার্কিং স্পেসের বদলে নতুন কোন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে গ্রিন পার্কিং লট প্রযুক্তি ব্যবহার করার এখনই উপযুক্ত সময়। এখন অত্যন্ত প্রয়োজন।
যদিও এই প্রযুক্তির ব্যবহার বেশ বড়সড় কোন বিনিয়োগের মতোই মনে হতে পারে, তবে এর ফলে পরিবেশ এবং বিনিয়োগকারী উভয়ই উপকৃত হতে পারবে। জনসাধারণের নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে ও টেকসই অবস্থান গড়ে তুলতে গ্রিন পার্কিং লট প্রযুক্তি এর মাধ্যমে তা করা সম্ভব।
স্থাপনের জন্য যা যা প্রয়োজন
গ্রিন পার্কিং লট প্রযুক্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে সেখানে থাকা বিশাল গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অন্তত ৭৫% জায়গা থাকা অপরিহার্য। পার্কিং এরিয়া জুড়ে থাকা সবুজের বিস্তার যেন পথচারীরা উপভোগ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে সেখানে বেঞ্চ এবং টেবিলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ধরনের গ্রিন পার্কিং লট প্রযুক্তি -তে পানির গুণগত মান, প্রবাহের পরিমাণ এবং তাপমাত্রার পরিমাপ বজায় রাখা উচিত। এছাড়া পার্কিংয়ে ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য গ্রিডের বিদ্যুৎ ব্যবহারের কোন প্রয়োজন নেই। বরং গ্রিডের বিদ্যুতের বদলে গ্রিন পার্কিং লট প্রযুক্তি -তে বিদ্যুতের অন্যতম উৎস হতে পারে সোলার প্যানেল। এছাড়া ল্যান্ডস্কেপ কোডে যেন পরিবেশগত ভাবে উপযোগী উপাদানের অন্তর্ভুক্তি থাকে, সে বিষয় নিশ্চিত করা জরুরি। তাছাড়া এই পার্কিং লটে উন্নত আলোর ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাও বজায় রাখা প্রয়োজন। এই জায়গাটি মানুষের জন্য নিরাপদ স্থান হয়ে গড়ে উঠতে পারে, যেখানে বসে শহুরে বাগান উপভোগ করার পাশাপাশি মানুষ বইও পড়তে পারবেন নিশ্চিন্তে। এছাড়া গ্রিন পার্কিং লটের রয়েছে আরও অনেক ধরনের সুবিধা, যার কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হল-
স্পেস ব্যবহারে দক্ষতা
প্রচলিত পার্কিং লটের চেয়ে এ ধরনের পার্কিং লটে জায়গার ব্যবহার আরও ভালোভাবে করা সম্ভব। কেননা বহুতল এবং স্বয়ংক্রিয় পার্কিং ব্যবস্থার ফলে এতে বেশ জায়গা বাঁচানো সম্ভব হয়। যা কিনা এ ধরনের পার্কিং লটের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য বলা যায়। এছাড়া গ্রিন পার্কিং লট প্রযুক্তির ব্যবহারে সীমিত জায়গার মধ্যে প্রতিটি গাড়ি পার্ক করা সম্ভব হয়। যেহেতু এখানে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে গাড়ি পার্কিং করা হয়, তাই অতিরিক্ত মানুষের উপস্থিতির প্রয়োজন পড়ে না এবং পার্কের প্রতিটি জায়গার সঠিক ব্যবহারও নিশ্চিত করা যায়।
বিষাক্ত গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে আনে
প্রচলিত পার্কিং লটের চেয়ে এই প্রযুক্তির পার্কিং লটে বিষাক্ত গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ লক্ষণীয়ভাবে কমই হয়ে থাকে। স্বয়ংক্রিয় লিফট থাকার কারণে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করারও প্রয়োজন পড়ে না। আর এর সাথে পার্কিং লটে যদি বেশ গাছপালাও থাকে, তবে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। যা কিনা পার্কিং এরিয়ায় থাকা কার্বন-ডাই -অক্সাইড শোষণ করে নিতেও সহায়তা করে।
তাপের প্রভাব হ্রাস করে
প্রচলিত পার্কিং লটগুলোর কারণে পরিবেশের উপর যে ধরনের প্রভাব পড়ছে, তা পরিবেশবান্ধব গ্রিন পার্কিং লট প্রযুক্তি এর মাধ্যমে অনেকাংশেই হ্রাস করা সম্ভব। যা মূলত পার্কিং এরিয়ার ভেতরের এবং বাইরে লাগানো গাছগুলোর উপস্থিতির কারণেই হয়ে থাকে। শুধু পার্কিং এরিয়াই নয়, পরিবেশবান্ধব উপায়ে রিয়েল এস্টেট খাতেরও উন্নয়ন করা সম্ভব।
নিরাপত্তা ঝুঁকি হ্রাস করে
মানুষের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য পার্কিং লটটি ব্যবহারকারীদের সীমিত জায়গা সরবরাহ করে থাকে। স্বয়ংক্রিয় পার্কিং ব্যবস্থায় সীমিত সংখ্যক জায়গায় কাস্টমারদের উপস্থিতির অনুমতি থাকে, এ কারণেই ব্যবহারকারীরা যথাযথ নিরাপত্তা উপভোগ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ড্রপ-অফ, পিক-আপ এবং ওয়েটিং এরিয়া উল্লেখযোগ্য। এছাড়া অন্যান্য জায়গাতে কাস্টমারদের প্রবেশে সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে, তা একদিকে যেমন নিরাপত্তার ঝুঁকি হ্রাস করে, অন্যদিকে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও কমে আসে।
আলোর ব্যবহারে দক্ষতা
এ ধরনের পার্কিং লটে শুধুমাত্র যেসব জায়গায় মানুষের উপস্থিতি রয়েছে, সেসব জায়গায় আলোর প্রয়োজন হয়। এসব জায়গা ব্যতীত বাকি পার্কিং যেহেতু মেশিন দ্বারা পরিচালিত হয়, তাই সেখানে আলোর কোন প্রয়োজন পড়ে না। কেননা মেশিনগুলো একটি নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করে সিস্টেমেটিক উপায়ে গাড়ি পার্কিং এর কাজটি সম্পন্ন করে থাকে, যেখানে আলাদা করে আলোর ব্যবস্থা না রাখলেও চলে।
গ্রিন পার্কিং লট প্রযুক্তি-তে পার্কিং নির্মাণে সবুজের উপস্থিতি এবং গাছের ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়, যা কিনা পার্কিং এরিয়া শীতল রাখতে সহায়তা করে। এমনকি জায়গাটিতে শহুরে তাপের প্রভাব কমিয়ে আনে। আর তাই পরিবেশবান্ধব পার্কিং এরিয়া নির্মাণে শুধু পছন্দ নয়, প্রয়োজনীয়তার দিকটাও আগ্রাধিকার পাবে। এর পাশাপাশি ২০২০ সালে পরিবেশবান্ধব আর্কিটেকচারাল ট্রেন্ড কেমন ছিল, চলুন সে বিষয়েও ধারণা নেয়া যাক।