Reading Time: 3 minutes

কত রকমের ছুটি কাটাই আমরা। ঈদের ছুটি, পূজার ছুটি, জাতীয় দিবসগুলোর ছুটি আরো কত কি। তবে এসবের বাইরেও মিষ্টি এক প্রকার ছুটি আছে, যাকে আদর করে আমরা ডাকি গ্রীষ্মের ছুটি বা আম কাঁঠালের ছুটি। নব্বই দশক থেকেই এই ছুটি আমাদের সকলের মনেই জায়গা করে নেয়। এই ছুটিতে ছোটবেলার ‘মামার বাড়ি’ কবিতা স্মৃতি থেকে বাস্তবে এসে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়।

“আম-কাঁঠালের বনের ধারে
মামা-বাড়ির ঘর,
আকাশ হতে জোছনা-কুসুম
ঝরে মাথার ‘পর।
ঝড়ের দিনে মামার দেশ
আম কুড়াতে সুখ
পাকা জামের শাখায় উঠি
রঙিন করি মুখ।”

সেইসব স্মৃতি হাতড়েই আজকের  গ্রীষ্মের ছু্টির একাল সেকাল এর গল্পগুলো। চলুন ফিরে দেখি।

৯০ এর দশকে গ্রীষ্মের ছুটি

সে সময়ে ঝড়ের দিন চলে এলো মানেই স্কুল ছুটি। গ্রীষ্মের এই ছুটিটা বেশ লম্বা। আর কবিতার লাইনগুলোকে সত্যি করে দিয়ে এই ছুটিতে মামার দেশে না গেলেই যেন নয়। বই খাতা গুছিয়ে নিয়ে মায়ের কাছে মামার বাড়ি যাবার আবদার। মামার বাড়ি চলে এলেই মামাতো ফুপাতো সব ভাইবোন মিলে একসাথে জটলা পাকানো। মামাবাড়িতে পুরনো দেওয়ালের ফাঁক ফোকর দিয়ে রোদ ঢুকে পড়ত তখন। সেই রোদ গায়ে মাখতে মাখতেই যেন নাকে লাগত কালবৈশাখীর গন্ধ।  ঠিক তখন ঝড় এলেই আম বাগানে ছুট। টপাটপ কাঁচা পাকা আম লুটিয়ে পড়ছে মাটিতে। কে কত বেশি আম কুড়োতে পারে সেই প্রতিযোগিতা চলছে দিনভর। সেইসাথে কাঁচা আম কুড়িয়ে এনে সে আম ঝাল লবন মেখে খাওয়া।

আম ধরে থাকা হাত
মায়ের কাছে মামার বাড়ি যাবার আবদার

এদিকে রান্নাঘরে চলত আমের আচার বানানোর উৎসব। সেইসব আচার চুরিতেও জুড়ি ছিল না ৯০ এর বাচ্চাদের। মামা বাড়ির আরেক মজা ছিল বাড়তি আহ্লাদ। যেন যেমন ইচ্ছে তেমন চলার স্বাধীনতা। ইচ্ছেমতো পুকুর জুড়ে সাঁতার শেখা কিংবা সাঁতার কাটা। ভাইবোন সবাই মিলে কপাল টোকা, বরফ পানি, বৌ চিঁ কিংবা ইচিং বিচিং এর মতো মজার মজার খেলায় মেতে থাকা। মোরগ ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠেই আজ কোন বাগানে কী চুরি করবো- আম, জাম, কাঁঠাল নাকি লিচু- সেই পরিকল্পনা।  

এই শতকের গ্রীষ্মের ছুটি

শিশুরা খেলছে
গ্রীষ্মের ছুটিটা সব সময়ই একটু আলাদা

এই শতকের গ্রীষ্মের ছুটিগুলো হয়ত একটু কম রঙিন। বিশেষত শহরে। এখন ছুটির সাথে যুক্ত হয় একটু হোমওয়ার্ক আর একটু পড়াশোনা। এই নিয়মের বাইরে থাকে না সবে স্কুলে পা বাড়ানো কচি কাচারাও। কারন স্কুল খুললেই শুরু হয়ে যাবে পরীক্ষা। তবুও, এর ফাঁকেই চলে ভাই বোন সবাই মিলে টেলিভিশনে প্রিয় কোনো অনুষ্ঠান দেখা। নিজের ঘরটাকে নিজের মত সাজিয়ে নেয়া। ঘরের কাজে মায়ের সাথে হাত লাগানো, আরো কত কি। আর সেই যে ঝড়ের দিন, মামার বাড়ি না হলেও, নিজের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে কালবৈশাখির রূপে মুগ্ধ হতে ভুল হয়না একালেও। সমস্ত আকাশ অন্ধকার করে নিয়ে গোমড়ামুখো হয়ে থাকে যেন। তুমুল বাতাসের সাথে বৃষ্টির নাচন দেখতে দেখতে ঘরের সবচেয়ে ছোট শিশুটা ভয়ে জানালা টেনে দেয়। তবে ঝড় না হয়ে সেই বৃষ্টি যদি হয় সুবোধ বালকের, তবে দৌড়ে ছাদে গিয়ে এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজে নিতে ভুলে যায়নি এখনকার ছেলেমেয়েরাও। যেহেতু, সারা বছরে এই একটা সময়ই দীর্ঘ ছুটি পাওয়া যায় তাই আরামপ্রিয়রা ঘরে বসেই বই পড়ে কিংবা মুভি দেখে কাটিয়ে দেয় সময়। একটু বিশেষভাবে ছুটিটাকে উপভোগ করতে বাবা, মা, সন্তান সবাই মিলে দূরে কোথাও ঘুরতে যাবার পরিকল্পনা, প্রিয় কোনো রিসোর্ট, পাহাড় কিংবা সমুদ্রে।

৯০ এর দশক হোক কিংবা একবিংশ শতক, গ্রীষ্মের ছুটিটা সব সময়ই একটু আলাদা। ঘরের ডেকোর থেকে শুরু করে জীবন যাপন সব কিছুতেই ছিল মাধুর্য। যেন রুটিনমাফিক জীবনের মাঝে এক প্রস্থ বৈশাখী ঝড়। সে ঝড়ে আম কুড়ানো হোক বা না হোক, ইচ্ছেমত জীবন কুড়াতে বাদ যায় না কেউই। বড় হবার আগের শেষ শৈশব ও কৈশোরকে ভরপুর উপভোগ করার নামই যেন গ্রীষ্মের ছুটি। কিন্তু আজ, গোটা পৃথিবী যখন অসুখে ভুগছে, তখন গ্রীষ্মের ছুটিও যেন মিলিয়ে গেছে বাকি সব সাধারণ ছুটির মাঝে। প্রতিটি ছুটিই এখন ঘরে থাকার। প্রতিটি ছুটিই এখন বড্ড বেরসিক। এই বেরসিক ছুটির দিনে জানালায় চোখ রেখে যদি গ্রীষ্মের ছুটির সোনালি কোনো দিন মনে পরে যায়, জানিয়ে দিন  গ্রীষ্মের ছু্টির একাল সেকালে। 

Write A Comment

Author