Reading Time: 5 minutes

সময়ের সাথে ঘরের ইন্টেরিয়রে এসেছে অনেক পরিবর্তন। প্রতি বছরই কোন না কোন ট্রেন্ড এসে যোগ হয়েছে আবার সেই একই ট্রেন্ড খানিক সময় পর হারিয়েও গিয়েছে। গত বছরে কী কী ট্রেন্ড এসে যোগ হয়েছিল জানতে দেখে নিন ২০২০ সালের ইন্টেরিয়র ট্রেন্ড। ঘরের ইন্টেরিয়র সবসময়ই আমাদের মন মত কিংবা হাল ফ্যাশনের হয়ে থাকে। কখনো শখ করেও করা হয়। কিন্তু, গত বছর থেকে চলছে লকডাউন। হয়তো কিছুটা সময়ের বিরতি ছিল কিন্তু সাবধানতা কখনোই কমেনি। অনেকেই কর্মক্ষেত্রে ফিরে গিয়েছেন আবার অনেকেই করেছেন হোম অফিস। এ বছরও প্রায় একই অবস্থা। গোটা দেশ প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আছে লকডাউনে। তাই ঘরের ইন্টেরিয়রে লকডাউনের প্রভাব বেশ গাঢ়। পরিবর্তন হয়েছে ঘরের আউটলুক। ঘরের সাজে প্রাধান্য পেয়েছে ঘর আর পরিবারে নিরাপত্তা আর স্বাচ্ছন্দ্য। আসুন জানা যাক ঘরের ইন্টেরিয়রে লকডাউনের প্রভাব আসলে কতটুকু পরেছে। 

ঘরের সাজসজ্জায় পরিবর্তন  

ঘরের ইন্টেরিয়রে লকডাউনের প্রভাব আসলে সময়ের দাবি। নিজেদের নিরাপদ রাখতে এগুলো আমাদের সবারই কম বেশি করতে হয়েছে। সর্বক্ষণ ঘরে থাকলে ঘরের ডেকোর একরকম থাকে না। যত্ন-আত্তিও আর আগের মত থাকে না। অনেকেই বাসায় একাই কাজ করছেন এই লকডাউনে। বাইরের কাউকে ঘরে প্রবেশ করানো একদমই নিরাপদ নয়। এই সমস্ত বিষয়গুলোরও একটা প্রভাব পরেছে  ঘরের ইন্টেরিয়রে। 

লিভিং রুম ও বেডরুম 

এক সাথে সময় কাটানো

গত বছর থেকে ঘরের সাজের মূল প্রতিপাদ্যটাই একটু বদলে গেছে। উৎসব থেকে শুরু করে নিয়মিত জীবনে প্রাধ্যন্য পেয়েছে সাবধানতা। লিভিং রুমটা আর আগের মত মেহমানদের মত সাজিয়ে রাখা হয় না। যেহেতু সবাই এখন বাসায়ই সময় কাটায় তাই লিভিং রুমটা হয়েছে নিজেদের একটা আড্ডা ও টিভি দেখার রুম। করোনাকালের শুরু থেকেই মেহমানদের আনাগোনা একদমই কমে গিয়েছে। তাই হয়তো ঘর সাজিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা এখন আর তেমন নেই। লিভিং রুমে ঢুকতেই এখন চোখে পড়ে একটি টেবিল বা দেয়ালে স্যানিটাইজার রাখার তাক। যেখানে মাস্ক গ্লাভস রেখে নিজেকে স্যানিটাইজ করে তবেই ঘরে ঢোকা হয়। অনেকেরই জরুরী কাজে বাইরে যেতে হয়। এক্ষেত্রে বাড়ি ফিরে গোসল করার সুবিধার্তে লিভিং রুমের এক কোণায় রাখা হয়েছে কাপড়ের ব্যবস্থা, যাতে করে নিজের ঘরে ঢুকে আর কাপড় নিয়ে আসতে না হয়। ছোটদের স্কুল হচ্ছে এখন বাসায়, দিনের পুরোটা সময় তারা এখন বাসাতেই থাকছে। তাই লিভিং রুমটাই এখন হয়ে উঠেছে তাদের খেলার মাঠ, আবার কখনো টিভি দেখার ঘর। তাই হয়তো আগের মত করে সাজিয়ে রাখা যাচ্ছে না। চিরচেনা লিভিং রুমটা এখন আর চেনা যাচ্ছে না। ভাইরাস থেকে পরিবারকে বাঁচাতে অনেকেই ছিলেন কোয়ারেন্টাইনে। একটি ঘরকে সম্পূর্ণ নিজের দখলে রাখা হয় কম করে ১৪ দিন। এই অবস্থায় ঘরের ভেতরে কারও প্রবেশ এবং নিজেরও বাইরে যাওয়া একদমই নিষেধ। ঘরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাটাও এই অবস্থায় কঠিন হয়ে পরে। চিরচেনা শোবার ঘরটা হয়ে উঠে একদম হাসপাতালের বিছানা। ছিমছাম ভাবটা আর থাকে না। কিন্তু, সময় আবার ফিরবে! আগের মত করে ঘরও সেজে উঠবে।  

হোম অফিস বা অনলাইন ক্লাস

হোম অফিস বা অনলাইন ক্লাসের জন্য বরাদ্দ একটি ঘর

লকডাউনে গোটা দেশ। ঘরের বাইরে বের হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু তাই বলে তো থেমে থাকবে না অফিস আদালত। বাসায় বসে হচ্ছে অফিস আর অনলাইন ক্লাস। বাচ্চাদের স্কুল থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটি ছাত্রদের সকল ক্লাস এখন হচ্ছে ঘরে বসেই। অনলাইনে ক্লাস একটা নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর হলেও হোম অফিসের যেন একেবারেই কোন বাধা ধরা সময় নেই। তাই একটা রুমকে পুরোটাই ছেড়ে দিতে হয় হোম অফিসের জন্য। অনলাইনে ভিডিও মিটিং করতে হয় বলে হোম অফিসের একটা নিজস্ব সেট আপও অনেকেই দিয়েছেন। মূলত নিজের কাজের জায়গাটা নিজের করে সাজিয়ে নিলে কাজের গতি অনেকটাই বেড়ে যায়। ঘরে বসে কাজ করলেও তখন আর একঘেয়েমি লাগে না তেমন। অনেকেই আবার নিজের ডেস্কটাকে বানিয়েছেন একদম ট্রেন্ডি ডিজাইনে, করেছেন অফিস ডেস্ক নিয়ে ডি আই ওয়াই । আগের সময় বিবেচনা করলে হোম অফিস বা অনলাইন ক্লাস এই সবকিছু আমাদের কাছে বেশ নতুন একটা বিষয় ছিল। হোম অফিসের জন্য স্পেস রেডি করতেও ঘরের ইন্টেরিয়রে বেশ বড় একটা প্রভাব পরেছে। এই সময়ে ঘরের পুরোটা কাজ আপনাকে একাই করতে হচ্ছে। সবার দেখা শোনা বা হোম অফিস কিংবা বাচ্চাদের অনলাইন ক্লাস সব আপনাকে একাই সামলাতে হচ্ছে এই অবস্থায় ঘরের ইন্টেরিয়র আগের মত রাখা বেশ মুশকিল। বিপদের সময় কেটে গেলে আগের মত সবকিছু ফিরে আসলে আবারো ঘর সেজে উঠবে নিজের পছন্দে।  

কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশন রুম

কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশন রুম তৈরির জন্য ইন্টেরিয়রের খুব বেশি একটা পরিবর্তন করতে হয় না

ঘরের একটি ঘরকে অনেকেই তৈরি করেছেন কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশন রুম হিসেবে। যারা আক্রান্ত হয়েছেন কিংবা যাদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের জন্যও এই রুম দুটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশন রুম তৈরির জন্য ইন্টেরিয়রের খুব বেশি একটা পরিবর্তন করতে হয় না। কিন্তু পুরো বাড়ির একটা ঘর সম্পূর্ণবাকিদের ব্যবহারের বাইরে চলে যায়, যার প্রভাব পুরো বাড়িতেই পরে টুকটাক। বাসায় কোয়ারেন্টাইন রুম প্রস্তুত করা খুব একটা কঠিন বিষয় নয়। বাড়িতে নির্ধারিত কোয়ারেন্টাইন রুমটি বাকি সদস্যের কক্ষগুলো থেকে আলাদা হতে হবে। সম্ভব হলে ঘরের সাথে একটা বাথরুমও রাখা উচিত। এতে করে রোগীকে ঘরের বাইরে আর যেতে হবে না। চেষ্টা করবেন রোগীর জন্য আলাদা ঘর বরাদ্দ করার। যদি না থাকে তাহলে বাসার গেস্ট রুমটি ব্যবহার করুন। ঘরটি অবশ্যই খোলামেলা হতে হবে। যেন আলো বাতাস চলাচল করতে পারে ঠিক মত। ঘরটি যতটা সম্ভব পরিষ্কার এবং স্যানিটাইজ করুন।  

রোগীর সুবিধার্থ্যে ঘরের সরঞ্জাম কমিয়ে আনা 

পানির বোতল, ঔষধ, হালকা খাবার ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রোগীর হাতের নাগালে রাখা উচিত

ঘরে কোয়ারেন্টাইন রুম তৈরি করার সময় মনে রাখুন, অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে এ ঘর ভর্তি করে রাখার অনেক অসুবিধা। এক, রোগীর চলাচলে অসুবিধা হবে। দুই, পরবর্তীতে জিনিসগুলো জীবাণুমুক্ত করাও বেশ বড় ধরনের ঝামেলা। তাই শুরুতেই অপ্রয়োজনীয় ফার্নিচার ও অন্যান্য জিনিস সরিয়ে ফেলাই ভালো। এছাড়া অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী কোয়ারেন্টাইন রুমে রাখলে অনেক সময় তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ কোয়ারেন্টাইন রুমে রোগী বিশ্রাম নিবে ও ধীরে ধীরে সুস্থতা অর্জন করবে এমনটাই কাম্য। তবে মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, ল্যাপটপ বা গেমিং ডিভাইস ব্যবহার করলেও নির্দিষ্ট সময় মেনে করা উচিত। অর্থাৎ, রোগীর পরিপূর্ণ বিশ্রাম  নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকতে হবে। তবে ঘরে কোয়ারেন্টাইন রুম তৈরি করতে কিছু জিনিস রাখা আবশ্যক। যেমন- অ্যালার্ম ক্লক রোগীকে ঔষধ খেতে মনে করানোর কাজটি করতে পারে। পানির বোতল, ঔষধ, হালকা খাবার ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রোগীর হাতের নাগালে রাখা উচিত। এছাড়া যদি ক্রাচ, লাঠি বা হুইল চেয়ার প্রয়োজন হয়, তাও এমন জায়গায় রাখুন যাতে রোগী সহজেই এসব ব্যবহার করতে পারে। যদি রোগীর ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা প্রয়োজন হয়, তবে কোয়ারেন্টাইন রুমে মনিটরিং ডিউভাইসও রাখা যেতে পারে। 

ঘরের ইন্টেরিয়রে লকডাউনের প্রভাব হয়তো আপনার কাছে নেতিবাচকই মনে হবে। নিজের সাজানো গোছানো ঘরটা যেন অন্য এক বাসা হয়ে উঠেছে। এটা অবশ্যই মন খারাপ করা একটা বিষয়। কিন্তু এই দুঃসময়ে এটা খুব স্বাভাবিক এবং ইতিবাচক একটা বিষয়। এই সময়ের এটাই প্রয়োজন। দুঃসময় কেটে গেলে নিজের এই ঘরকে নতুন এক মেকওভার দিতে আর একটুও দেরি করবেন না।  

Write A Comment