Reading Time: 5 minutes

ঘরের জন্য ঝাড়বাতি বা শ্যান্ডেলিয়ার বাছাই করাও কিন্তু কোন শিল্পের চেয়ে কম নয়! ঘরের মেজাজ কিন্তু এই ঝাড়বাতিই ঠিক করবে! সুতরাং ঘরের জন্য ঝাড়বাতি বাছাই করতে কোন অবহেলা বা আলসেমি একদম চলবে না!  তবে বাছাই এর আগে আপনাকে জানতে হবে, ঝাড়বাতি ডিজাইন, শৈলী এবং ধরণ সম্বন্ধে নাহলে বুঝবেন কি করে কোথায় কোন ঝাড়বাতি মানাবে? জমিদার চলে গেলেও, তাদের এক অন্যতম অংশ হিসেবে এই ঝাড়বাতিকে রেখে গেছেন তারা! এখন অনেক আধুনিক পরিবারেই এই ঝাড়বাতির প্রচলন দেখা যায়। আভিজাত্যময় একটি ঘরের জন্য ঝাড়বাতির যেন কোন বিকল্প নেই।  তাই বসার ঘর থেকে শুরু করে শোয়ার ঘর সবখানেই স্থান করে নিতে দেখা গেছে ঝাড়বাতিকে। ঝাড়বাতি ব্যবহারের আগে ব্যবহারকারীর রুচি, সামর্থ্য ও ঘরের ভেতরে ব্যবহৃত আসবাবপত্রের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। চলুন তাহলে বিস্তারিতভাবে জানি নানারকম ঝাড়বাতি সম্বন্ধে! 

ঝাড়বাতি কেনার আগে যা জানতে হবে  

ঝাড়বাতি
ঘরের ডেকোর অনুযায়ী এই ঝাড়বাতিগুলো বেছে নিতে হবে

ঝাড়বাতি বেছে নেবার আগে আপনাকে জানতে হবে ঝাড়বাতি কত রকমের রয়েছে এবং কোনটা আপনার জন্য একদম পারফেক্ট! ঝাড়বাতি ডিজাইন স্টাইল, শেপ, মেটারিয়াল এবং লাইটিং স্টাইল ভেদে নানারকম হতে পারে। এবং আপনার ঘরের ডেকোর অনুযায়ী এই ঝাড়বাতিগুলো বেছে নিতে হবে। যখন আপনি এই কয়েকটি বিষয় ভালমত জানবেন এরপরই আপনি বিস্তারিত ভাবে ঘরের জন্য কোন ঝাড়বাতি মানিয়ে যাবে সে সম্বন্ধে জানতে পারবেন। ঝাড়বাতি কেনার আগে আপনার নিজের ঘর সম্বন্ধে যা জানতে হবে তা হচ্ছে, পজিশন, ঝাড়বাতি ঝুলানোর উচ্চতা এবং আলোর ক্ষমতা। এই ৩ টি বিষয় জেনেই তবেই আপনি ঝাড়বাতি বেছে নিতে পারবেন। 

ঝাড়বাতির সব কথা

ঝাড়বাতি
ঝাড়বাতি কোনটা কেমন তা নির্ভর করে এর স্টাইলের উপর

ঝাড়বাতির ধরণ নিয়ে আসলে বলার তেমন কিছু নেই! ঝাড়বাতি কোনটা কেমন তা নির্ভর করে এর স্টাইলের উপর! অর্থাৎ কোন স্টাইলের ঝাড়বাতি নিচ্ছেন সেটাই আগে লক্ষ্যনীয়। যেমন, 

মডার্ন শ্যান্ডেলিয়ার ডিজাইন, আধুনিক এবং মধ্য শতাব্দী দুই সময় থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এই ঝাড়বাতিটি ডিজাইন করা হয়েছে। এর নকশায় ফুটে উঠেছে কাঠের কারুকাজ এবং শিল্পের নৈপুণ্য। যেকোন ঘরে এমন ঝাড়বাতি শিল্পের ছোঁয়া আনতে পারে। 

কনটেম্পোরারি শ্যান্ডেলিয়ার ডিজাইন, আপনার বাড়িটি কি ইনোভেটিব এবং মিনিমাল থিমে তৈরি করা? তাহলে এই কনটেম্পোরারি শ্যান্ডেলিয়ার আপনার ঘরের জন্য একদম পারফেক্ট। যখন ঘরের নকশায় রয়েছে ইনোভেটিব একটা ভাব তাহলে শ্যান্ডেলিয়ার কেন হবে গতানুগতিক নকশার! 

রাস্টিক শ্যান্ডেলিয়ার ডিজাইন, যারা ঘরের সাজে রাস্টিক লুক বেশ ভালোবাসেন তাদের জন্য এই রাস্টিক শ্যান্ডেলিয়ার চমৎকার একটি অপশন হতে পারে। প্রকৃতির ছোঁয়া নিয়ে তৈরি হওয়া এই ঝাড়বাতিগুলোতে কাঠের ব্যবহার, লোহা এবং এডিসন-স্টাইলের বাল্বগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যা ঘরের ভেতর রাস্টিক লুক এনে দেয়। 

ফার্মহাউস / ক্রাফটসম্যান শ্যান্ডেলিয়ার ডিজাইন, কাঠ এবং মেটালের সাহায্যে তৈরি হওয়া এই শ্যান্ডেলিয়ারগুলোয় কখনো স্বচ্ছ আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে আবার কখনো শুধু এডিশন বাল্ব ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেকটা রাস্টিক ডিজাইনের শ্যান্ডেলিয়ারের সাথে মিল রয়েছে। 

ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্যান্ডেলিয়ার ডিজাইন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্যান্ডেলিয়ারের ডিজাইনটি এমন যেটা অনেকটা শিল্প কারখানার ব্যবহৃত জিনিসের মত করে তৈরি করা। কাঠ এবং মেটালের মাধ্যমে এমন নকশায় তৈরি করা হয়ে থাকে এই ঝাড়বাতিগুলো  যে দেখেই মনে হবে কোন শিল্প কারখানার ঝলক ফুটে উঠবে।  

এ তো গেলো শ্যান্ডেলিয়ারের ডিজাইন তত্ব। আকার এবং ফিনিশিং ভেদে আরও কিছু অপশন চোখে পড়বে আপনার। লাইটিনিং ফাংশন ভেদেও কিন্তু ঝাড়বাতি একেক ঘরের জন্য একেকরকম। যেমন, 

ঝাড়বাতি
ঝাড়বাতি একেক ঘরের জন্য একেকরকম

আপলাইট শ্যান্ডেলিয়ার্স: এই শ্যান্ডেলিয়ারগুলো সরাসরি ডাউনলাইটিংয়ের পরিবর্তে কোনও স্থানের চারপাশে আলো ছড়িয়ে থাকে। হালকা উপরের দিকে আলো ছড়িয়ে থাকে এবং পরিবেশটা অন্যরকম করে তোলে। 

ডাউনলাইট শ্যান্ডেলিয়ার্স: এই শ্যান্ডেলিয়ারগুলো নিচের দিকে আলো ছড়িয়ে থাকে, যখন আপনি কোন একটা দিকে বা একটা বস্তুতে ফোকাস করতে চাইবেন তখন এই ডাউনলাইট মডেলের শ্যান্ডেলিয়ারগুলো বাছাই করতে পারেন। 

অ্যাম্বিয়েন্ট লাইটিং: ডাউনলাইট ঝাড়বাতি  ছাড়া বাকি সব ঝাড়বাতিই অ্যাম্বিয়েন্ট তৈরির জন্য পারফেক্ট। চারিদকের পরিবেশ চমৎকার করে তোলার জন্য এই ঝাড়বাতির মডেলটি বেছে নেওয়া যেতে পারে।

কোথায় হবে ঝাড়বাতি

ঝাড়বাতি
বড় ঘর আর ছিমছাম সিলিং থাকলেই ঝাড়বাতি ঝুলিয়ে দিতে পারেন

ঝাড়বাতি যে শুধু বসার ঘরেই হতে হবে এমন কিন্তু নয়! বড় ঘর আর ছিমছাম সিলিং থাকলেই ঝাড়বাতি ঝুলিয়ে দিতে পারেন। ঝাড়বাতি দেখতে বেশ সুন্দর হয় একদম রাজকীয় একটা ভাব থাকে তাই ঝাড়বাতি ঝুলিয়ে দেবার আগে ঘরের সিলিংটা আগে সংস্কার করতে ভুলবেন না। ঘরের সাজের সিলিং এর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ! ঘরের জন্য ঝাড়বাতি  এই ৩ টি বিষয়ে যাচাই করে নিতে হবে। তবেই একটা পারফেক্ট ঝাড়বাতি কিনতে পারবেন। 

ঝাড়বাতির অবস্থান,  ঝাড়বাতিকে ঘরের মাঝখানে রাখলেই দেখতে ভালো দেখাবে। সাধারণত বসার ঘরেই আমরা ঝাড়বাতি দেখতে পাই। কিন্তু, শোবার ঘরেও চাইলে রাখতে পারি কিন্তু ঘরের ডেকোর বুঝে নিতে হবে, শোবার ঘরে ক্রিস্টাল ঝাড়বাতি বা ফুলেল ঝাড়বাতি সেট করতে পারেন। নানা রঙের আলোকচ্ছটা দিতে ক্যান্ডেলার ঝাড়বাতিও কিন্তু শোবার ঘরে মানানসই। দেয়াল হালকা রঙের হলে ইউনিক গ্লাসেস ঝাড়বাতি বেছে নিতে পারেন। ঘরে রোমান্টিক আলোর প্রবাহ আনতে চাইলে বাটারফ্লাই মোটিফের ক্রিস্টাল ঝাড়বাতি হতে পারে।

ঝাড়বাতির উচ্চতা, ডাইনিং টেবিল থেকে ঝাড়বাতির দূরত্ব অন্তত ৩০ ইঞ্চির মত হতে হবে, তাহলে ডাইনিং টেবিলে বসা মানুষ একে অপরকে সুন্দরভাবে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে  দেখতে এবং খাদ্য উপভোগ করতে পারবেন। যদি আপনার সিলিং এর উচ্চতা ৯ ফিটের বেশি হয়ে থাকে তাহলে প্রতি ফিট অনুযায়ী ৩ ইঞ্চি করে যোগ করুন এবং ঝাড়বাতি সেই হিসেবে নামিয়ে আনুন ফ্লোরের দিকে।  

ঝাড়বাতির আলো, ঝাড়বাতিতে হলুদ লাইটেই বেশি ভালো দেখায়। হলুদ আলো ঘরে একটি সুন্দর আবহ তৈরি করে। দেয়ালের রং যা-ই হোক, হলুদ লাইট তার সঙ্গে মানিয়ে যাবে। তবে যাদের দেয়াল সাদা বা অফহোয়াইট, তারা চাইলে সাদা লাইটও ব্যবহার করতে পারেন।

যত্ন আত্তি

ঝাড়বাতি
ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি পরিষ্কার করার সময় গ্লাভস পরে নিন

ঝাড়বাতি পরিষ্কার করার আগে সম্ভব হলে একটি ছবি তুলে রাখুন। কারণ প্রতিটি অংশ খুলে যখন পরিষ্কার করবেন এবং পরে যখন সেগুলো ঠিক জায়গামতো লাগাতে ছবিটা খুব কাজে লাগতে পারে। ঝাড়বাতি যখন পরিষ্কার করবেন তখন এর নিচে মোটা কাপড় রেখে পরিষ্কার করুন। এতে কোনো অংশ মাটিতে পড়ে গিয়ে ভাঙার ভয় থাকবে না। ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি পরিষ্কার করার সময় গ্লাভস পরে নিন। এতে আঙুলের ছাপ পড়বে না। ঝাড়বাতি পরিষ্কার করার জন্য একটি সলিউশন স্প্রে তৈরি করে নিন। পানি ও ভিনেগার মিশিয়ে একটি স্প্রে করার বোতলে ভরে তৈরি করে নিন। এরপর একটি পরিষ্কার নরম কাপড়ে সলিউশন স্প্রে করে ঝাড়বাতির বিভিন্ন অংশ পরিষ্কার করুন। পরে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। খুব বড় ঝাড়বাতি হলে সেটি কয়েকটি অংশে ভাগ করে নিন। এতে পরিষ্কার করতে সুবিধা হবে।

দরদাম এবং কোথায় পাবেন 

ঝাড়বাতির দোকান
বিভিন্ন ডিজাইনের ঝাড়বাতি আপনি পেয়ে যাবেন

আকার অনুযায়ী ঝাড়বাতির দরদামে ভিন্নতা রয়েছে। ক্রিস্টালের বিভিন্ন সাইজের ঝাড়বাতি বাজারে পাওয়া যায়, দাম ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে। একটু বড় সাইজের ঝাড়বাতির দাম পড়বে ১ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। কাঁচের সঙ্গে কাঠ ও মেটালের সংযোজনে বিভিন্ন সাইজের ঝাড়বাতি পাবেন ১৫ হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে। কাঁচের সঙ্গে কাঠ কিংবা মেটালের সংযোজনে বিভিন্ন আকারের ঝাড়বাতি পাবেন হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায়। সিলিং ঝাড়বাতি পাঁচ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। বিভিন্ন ডিজাইনের ঝাড়বাতি আপনি পেয়ে যাবেন পল্টন, গুলশান ১ ও ২ নম্বর সার্কেল, বসুন্ধরা সিটি, পুরান ঢাকার নবাবপুর, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে। এখানে অনেক লাইটের দোকান রয়েছে। এর মধ্য থেকেই বাছাই করে নিতে পারেন পছন্দের ঝাড়বাতি।

এই তথ্যগুলো জেনে নিলেই ঘরের জন্য ঝাড়বাতি সঠিকভাবে বেছে নিতে পারছেন! কেমন লাগলো এই তথ্যগুলো জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। কমেন্টে আপনার মতামত দিতে ভুলবেন না!

Write A Comment