Reading Time: 5 minutes

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় পাঁচ মাসেরও বেশি হয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশ ধীরে ধীরে লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। যেহেতু, সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি এখনও সমান ভাবেই রয়েছে এবং এই ঝুঁকির মাঝেই সাধারণ মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে হচ্ছে তাই সাবধানতার প্রয়োজন এখনই সবচেয়ে বেশি। কিন্তু, একটি বিষয় নিশ্চিত যে লকডাউনের পরে জীবন আর আগের মতো কখনই হবে না। জীবন তখনই আগের অবস্থায় ফিরতে পারে যদি না সবার হার্ড ইমিউনিটি, সঠিক থেরাপি এবং ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়ে যায়। তার আগ পর্যন্ত আপনাকে এই “নিউ নর্মাল” কে মেনে নিতেই হবে। এবং জানতে হবে, ঘরের বাইরে সুরক্ষিত থাকার উপায় সম্বন্ধে! কেননা এই কয়েকটি উপায়ে সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধ হচ্ছে।  

ভীড় এড়িয়ে চলুন 

সমাবেশ
অন্যের কাছ থেকে প্রায় ছয় ফুট বা দুই মিটার দূরত্ব রাখা

যতটুক সম্ভব সমাবেশ থেকে দূরে থাকা বা জনসমাগম এড়ানো। অন্যের কাছ থেকে প্রায় ছয় ফুট বা দুই মিটার দূরত্ব রাখা ইত্যাদি। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে, “ হাঁচি দেওয়ার সময় বা জোর করে শ্বাস নিলে তা মুখ বা নাকের ফোঁটা থেকে ছয় ফুট পর্যন্ত করোনা ভাইরাস ভ্রমণ করতে পারে”। তাই প্রত্যেককে এই সংক্রমণ রোধ করতে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে দুই মিটার শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। নয়তোবা, আপনি যদি কোন করোনা সংক্রামিত ব্যক্তির শ্লেষ্মার সংস্পর্শে থাকেন তবে, সেখান থেকে আরও ১০০ জনের এই রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে। এক সমীক্ষায় জানা গেছে, যেকোন ১০০ জনের জমায়েতে করোনা আক্রান্ত রোগীর দ্বারা সংক্রমিত হবার ৩% সম্ভাবনা থাকে, সুতরাং নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য গণ জমায়েত এড়িয়ে চলুন। 

দূরত্ব বজায় রাখুন

সামাজিক দূরত্ব চিনহ
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে

জনসমাগম এড়ানোর পাশাপাশি, বাইরে থাকা অবস্থায় নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে,“ হাঁচি দেওয়ার সময় বা জোর করে শ্বাস নিলে তা মুখ বা নাকের ফোঁটা থেকে ছয় ফুট পর্যন্ত করোনা ভাইরাস ভ্রমণ করতে পারে”। তাই প্রত্যেককে এই সংক্রমণ রোধ করতে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে দুই মিটার শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনি যখন বাইরে থাকবেন আপনার এবং অন্যান্য ব্যক্তির মধ্যে যথাযথ দূরত্ব রাখুন। অর্থাৎ, ছয় ফুট দূরত্ব রাখার অভ্যাসটি মুদির দোকানের লাইন থেকে শুরু করে কাউন্টারের লাইন এমনকি যেখানেই জনসমাগম দেখতে পাবেন সেখানেই এটি মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে। এমনকি আপনি যখন বাজারে যাবেন স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করুন। 

মুখের জন্য মাস্ক 

মাস্ক
মাত্র মাস্ক ব্যবহার ও ঘনঘন হাত ধোয়ার ফলেই করোনা রোধ করা সম্ভ

শুরুর দিকে মাস্ক ব্যবহারটা এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, কিন্তু সময়ের সাথে যেভাবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, তখন এই মাস্ক ব্যবহারই অন্যতম একটি অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশ বিদেশে ইতিমধ্যে এই মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিশেষ করে আপনি যখন সুপার শপ, মার্কেট, রেস্তোঁরা, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে থাকবেন অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। যেহেতু এই রোগ প্রতিরোধের জন্য কোনও ভ্যাকসিন বা ঔষধ নেই সেহেতু, এই মাস্ক পরিধান বা ব্যবহার করা অতি জরুরী। কেবল মাত্র মাস্ক ব্যবহার ও ঘনঘন হাত ধোয়ার ফলেই করোনা রোধ করা সম্ভব।

গণপরিবহন থেকে সাবধান থাকুন 

গণপরিবহন
গণপরিবহনেই নিতে হবে সর্বাধিক সাবধানতা

সাধারণ ছুটি যেহেতু আর হচ্ছে না তাই গণপরিবহন অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি জায়গা হতে যাচ্ছে। আপনার এই গণপরিবহনেই নিতে হবে সর্বাধিক সাবধানতা। যারা পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে যাতায়াত করবেন তাদের জন্য এই দূরত্ব নিশ্চিত করা আরও জরুরী। যেহেতু, সবকিছু থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে তাই  বাস বা ট্রেনে যাওয়ার সময় আপনার কঠোরভাবে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। যদিও ট্রেন ও বাসের মতো গণপরিবহণে দূরত্ব বজায় রাখা সত্যিই কঠিন বিশেষত বাংলাদেশে। কিন্তু আমরা যদি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমতে পারে। ফেস মাস্ক পরার পাশাপাশি বাইরে থাকাকালীন সময়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে গ্লাভস এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) ব্যবহার করুন। এছাড়াও, পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করার সময় একটি লাইন বজায় রাখার চেষ্টা করুন।

নগদ গ্রহণ এড়িয়ে চলুন 

কার্ড আদান প্রদান
কার্ড আপনি সহজেই জীবাণু মুক্ত করতে পারছেন

যদিও সকলের জন্য এটা কার্যকরী নয় তবুও, যদি নগদের বিনিময়ে কার্ডে টাকা পরিশোধ সম্ভব তাহলে এটা অবশ্যই করা উচিত। কার্ড আপনি সহজেই জীবাণু মুক্ত করতে পারছেন কিন্তু নগদ টাকার বেলায় তা সম্ভব নয়। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমরা যা ই ক্রয় বা বাসায় আনি না কেন তা যেন জীবাণু মুক্ত করা হয় কিংবা সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে কার্ড বা বিকাশ পেমেন্ট খুবই কার্যকরী!। যদিও মোবাইল ফোন ব্যবহারে হতে হবে অধিক সতর্ক। অনলাইন পেমেন্ট বা অন্যান্য অর্থপ্রদানের মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতে পারেন, বিকাশ, রকেট, ইউকাশ, আইপি, ইত্যাদি। এখানকার সময়ের জন্য এই স্মার্ট কার্ডগুলো চমৎকার সমাধান হতে পারে।

জিনিসপত্র জীবাণু মুক্ত করুন 

জীবাণু মুক্ত করা হচ্ছে ফোন
ভালো করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে

নিজের সাবধানতা নিজের কাছে। যেখানে সেখানে নিজের জিনিসপত্র রাখবেন না। আপনার ইলেকট্রনিক্সের জিনিসপত্র যেখানে সেখানে রাখবেন না। স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপগুলো প্রতিদিন বেশি ব্যবহার করা হয় সুতরাং, এগুলো ভালো করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা গ্যাজেটগুলো যেমন সহজেই ময়লা হয়ে যায় তেমনি জীবাণু চুম্বকের মত টেনে আনে। শত যত্ন নেওয়া সত্ত্বেও অচিরেই দেখা যায়, এই ডিভাইগুলো জুড়ে ময়লা দাগ, বা আঙুলের ছাপ রয়েছে। আপনি যদি সঠিক এবং নিয়মিতভাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত না করতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনি নিজের বাড়িই সুরক্ষিত হয়নি। কেবল ধূলাময়লা নয়, এই ডিভাইসগুলো জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া দ্বারাও আক্রান্ত হতে পারে। তাই ডিভাইস গুলো ভালোমত পরিষ্কার করতে হবে। প্রথমত, আপনার জিনিসগুলো যেখানে সেখানে রাখা বন্ধ করুন। তবে আপনার ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসগুলো ব্যবহারের আগে জীবাণুমুক্ত করুন। শুধু এই ডিভাইস নয় অন্যান্য জিনিস যেমন ব্যাগ, মানিব্যাগ, পোশাক, গহনা এবং অন্যান্য জিনিস সমানভাবেই জীবাণুমুক্ত করুন। 

অতিরিক্ত ন্যাপকিন, জীবাণুনাশক স্প্রে এবং স্যানিটাইজার বহন করুন  

ন্যাপকিন ও সেনিটাইযার
ভালো করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে

সাধারণ ছুটির পরবর্তী জীবন মোটেও আর আগের মত হবে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব আপনাকে এই নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে হবে। দৈনন্দিন জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে আপনাকে হতে হবে আরও বেশি সতর্ক। আপনার পরিবার এবং প্রিয়জনদের সুরক্ষিত রাখতে আপনি যেভাবে কাজগুলো করছিলেন সেভাবে তাদেরও এটি করতে বলুন।   আপনার পরিবার এবং প্রিয়জনদের সুরক্ষিত রাখতে ব্যবহারের জিনিসগুলো জীবাণু মুক্ত করুন এবং যখনই বাইরে থেকে বাড়ি ফিরবেন তখনই নিজেকে জীবাণুমুক্ত ও সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন।  ঘর পরিষ্কার করুন করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে। বাইরে থেকে এসে তাড়াতাড়ি আপনার কাপড় ধুয়ে নিন। প্রতিবার ওয়ালেট এবং নগদ অর্থ স্পর্শ করলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। আপনি চাইলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিজেই তৈরি করতে পারেন। 

এই সকল উপায় বাদেও ঘরের বাইরে সুরক্ষিত থাকার উপায় সম্বন্ধে আমাদের আরও ভাবতে হবে। হতে হবে আরও সতর্ক। ডব্লিউএইচও সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, যে করোনভাইরাস কখনও পুরোপুরি যাবে না। সুতরাং, কিছু জিনিস নিয়ম করে মেনে চলুন। শপিংকে বিনোদনের একমাত্র উৎস হিসাবে ভাববেন না। আপনার কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাজার বা মুদির দোকান থেকে বেরিয়ে আসুন।  নির্দিষ্ট কিছু কাজ করার জন্য আঙ্গুলের ব্যবহার করুন, পরিবর্তে আপনার হাঁটু, পা, কনুই ইত্যাদি ব্যবহার করুন। আপনি যখন হোম ডেলিভারি অর্ডার করছেন তখন সতর্ক থাকুন। যেকোন কিছু স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন। সবকিছু সীমাবদ্ধতার ভেতর আনুন। বাইরে থাকা কালীন সময়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে এই সাধারণ টিপসগুলো অনুসরণ করুন।

লকডাউন শেষ হয়েছে বলে এখনই বাইরে যাবেন না। সাবধানতা সর্বক্ষণ কারণ যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। ঘরের বাইরে সুরক্ষিত থাকার উপায় হিসেবে উপরের টিপসগুলো কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেন না। নীচে কমেন্ট করে আমাদের জানান।

Write A Comment