Reading Time: 5 minutes

ফার্নিচার বা আসবাব যার কাছে যে নামেই পরিচিত হোক, বলতে গেলে আমরা এগুলো ছাড়া অচল। রাতে ঘুমোতে গেলে লাগবে বিছানা আবার খেতে গেলে লাগে ডাইনিং টেবিল। এটা খুব সহজেই বলা হয়ে গেল, আরও কত কিছু প্রয়োজন হয় নিত্য দিনের এই জীবনে। শুধু কিছু একটা হলেই যে হয়ে যায় তা কিন্তু নয়! আমরা মনের অজান্তে খুঁজতে থাকি আরাম স্বাচ্ছন্দ্য এবং পছন্দ। কখনো ভেবেছেন ফার্নিচার বা আসবাব কোথা থেকে এলো কিভাবে কেউ ভাবতে পারল যে এমন কিছুরও দরকার রয়েছে। ঐ তো ইতিহাসটাই আজ একটু করে বলতে যাচ্ছি। 

শুরুর দিকেকার কথা

কাঠ কাটা হচ্ছে
কাঠের ফার্নিচারের শুরু

শুরুটা কোথায় হয়েছিল? আদিম যুগের মানুষ কী রকম ফার্নিচার ব্যবহার করত? আপনার এসব প্রশ্ন জাগলেও জানার সুযোগ নেই। যেতে হবে কিছুটা আগের দিকে।কিছু ইউরোপীয় ঐতিহাসিক মনে করতেন ফার্নিচারের শুরুটা হয় পাথরের মাধ্যমে। অর্থাৎ, সে যুগে মানুষ পাথর কেটে ফার্নিচার বানাত। ইতিহাস থেকে জানা যায়, খৃষ্টপূর্ব প্রায় ২০০০ বছর আগে স্কটল্যান্ডের অর্কনি দ্বীপে পাথরের ফার্নিচারের প্রচলন শুরু হয়। সে সময় মানুষ পাথরের কুটিরে তিমির হাড় দিয়ে ছাদ দিয়ে বসবাস করত। ভিতরে পাথরকে বেড হিসাবে ব্যবহার করত। জামা কাপড় ওয়ারড্রোবের মত বানাত। তখন অবশ্যই সেগুলোর নাম তারা জানত না। যুগের প্রবর্তনে আমরা নাম দিয়েছি নানা রকম। এরপর চলতে থাকে প্রবর্তন। আজকের এই মডার্ন ফার্নিচার এসেছে বিশ শতকে গিয়ে। এ সময় কাঠের পাশাপাশি প্লাস্টিক, প্লাইউড বোর্ড, ফাইবার গ্লাসের ফার্নিচার নির্মাণ শুরু হয়। ডিজাইনেও বেশ চাকচিক্য আসে। আধুনিক যুগে ফার্নিচার নির্মাণে কমফোর্টের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ সময় জাজিম, ম্যাট্রেস, ফোমের বেড, সোফা, কুশনের মত আরামদায়ক আসবাব আসে। 

স্থায়িত্ব বা টেকসই 

কাঠের আসবাব
কাঠের আসবাব মানে টেকশই হয়ে থাকে

আসবাব বা ফার্নিচার খুব বেসিক একটা চাহিদা। এটা ছাড়া আমরা বাসা বাড়ি কল্পনাও করতে পারি না। আর এই আসবাবই আমরা হুট করে যেমন কিনতে পারি না তেমন হুট করতে বদলে ফেলতেও পারি না। প্রচুর মূল্য কষতে হয় এগুলোর জন্য। তাই যেকোন আসবাব কেনার আগে আমরা ভাবি হাজারটা কথা। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, স্থায়িত্বকাল বা টেকসই হবে কেমন? আসবাবের স্থায়িত্ব বা টেকসই নির্ভর করে তা কী দিয়ে তৈরি। শুকনা এবং সিজনড করা কাঠের আসবাব বেশ মজবুত হয়। এছাড়াও আপনি কিভাবে যত্ন নিচ্ছেন এর উপরও আপনার আসবাবের স্থায়িত্ব নির্ভর করে। তাছাড়াও, আসবাব কিভাবে তৈরি করছেন মানে কারিগরি নৈপুণ্যতার উপরও নির্ভর করছে। খুব কম সময় ধরে কাটা কাঠ বা কাঁচা কাঠ দিয়ে কখনই আসবাব তৈরি করা উচিত নয়। এতে আসবাব টেকসই হয় না। এদিক দিকে ঘরের জন্য আসবাব হিসেবে আলমারি আমরা অনেকেই বেঁছে নেই কিন্তু, একটা আসবাব এমন আছে যাকে ঘিরে রয়েছে নানা প্রশ্ন! কি সেই আসবাব! বেডরুম কেবিনেট! হ্যাঁ, ঠিক ভাবছেন! এই বেডরুম কেবিনেট নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। কেউ বলে কেবিনেট বেশ উপকারী আবার কেউ বলে কিনা, না এটা মোটেও ভাল না। বেডরুম কেবিনেটের গুণাগুণ আমরা অনেকেই কমবেশি জানি!

দরদাম 

ভিনটেজ আসবাব
ভিনটেজ আসবাব

যেকোন আসবাব বা ফার্নিচারের দাম নির্ভর করে তার উপকরণ, নির্মাণ পদ্ধতি ও নকশার উপর। কাঠের ধরন, নকশা এবং আসবাব কেনার সময় সবকিছুর উপরই নির্ভর করে এর দাম। বেতের বা স্টিলের তৈরি আসবাবের দাম কাঠের তৈরি আসবাব থেকে কিছুটা কম। কিন্তু ঐ যে স্থায়িত্বের প্রশ্ন আসলে অনেকেই এই আসবাব বেছে নেবেন না।  নান্দনিক ও পছন্দসই এসব আসবাবের দামও সাধ্যের মধ্যে। বসার মোড়া এক থেকে দুই হাজার টাকা, ডাইনিং টেবিল ১৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা, সোফা সেট ১৫ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা, বাচ্চাদের দোলনা তিন থেকে ছয় হাজার টাকা, আয়না দেড় থেকে পাঁচ হাজার টাকা, খাট ও ডিভান পাঁচ থেকে ২৫ হাজার টাকা, ওয়ার্ডরোব ২২ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। 

এদিকে কাঠের আসবাব আবার ব্র্যান্ড অনুযায়ী একেক রকম। ভালো ব্র্যান্ড থেকে ক্রয় করলে সোফা সেট পরবে ৬৫ হাজার টাকা থেকে দেড় লক্ষ টাকা। খাট ২৫ হাজার থেকে ৮৫ হাজার অব্দি। কিন্তু আপনি যদি ব্র্যান্ড হিসেব না করে কেনেন সেক্ষেত্রে অনেকটা সেভিং করা যেতে পারে। নির্ভর করছে আপনার পছন্দের উপর।

নানান কাঠের আসবাব 

চেয়ার
নানারকম ফার্নিচারের আসবাব এবং তার দাম

শুধু কি কাঠ দিয়েই তৈরি হয় আসবাব, না অবশ্যই না! বাজারে এখন বিদ্যমান আছে নানান কিছু যা দিয়ে রুচিশীল আসবাব তৈরি করা সম্ভব। বিলাসিতা নয়, প্রয়োজনে আসবাবপত্র কেনেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। আর এই চাহিদাও মিটাচ্ছেন অনেক ফার্নিচার দোকান। ছোট-বড় খাট, সোফা সেট, ডাইনিং টেবিল, কাঠের আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, ওয়ারড্রোপ, চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চসহ সব ধরনের কাঠের আসবাবপত্র পাওয়া যাচ্ছে এসব দোকানে। এবং  ঘরের জন্য আসবাব কেনার আগে কিছু জিনিস জেনে তবেই আসবাব কিনুন। 

কাঠ 

এসব আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুন, গর্জন, মেহেগনি, গামারী, ওক, বিচ, পাইন, গজারী, শিলকড়াই ইত্যাদি কাঠ। বাজারে এখন সেগুনের চাহিদা বেশি; কারণ এই কাঠের স্থায়িত্ব বেশি, সহজে ঘুনে ধরে না এবং এর রংটাও বেশ উজ্জল। সকলের চাহিদা থাকায় এই কাঠের আসবাবপত্রই বেশি তৈরী হয়।  কাঠ বেতের পাশাপাশি পাওয়া যায় বিভিন্ন বিদেশি ফার্নিচার যেগুলো নাকি বিদেশ থেকেই আমদানি করে আনা হয়ে থাকে! যেমন মালয়েশিয়ান কাঠ। এগুলো মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করে আনা এবং কাঠের পাশাপাশি এগুলোর দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে নানান আসবাব। 

কাঠের বিকল্প হিসেবে মালয়েশিয়ান প্রসেস উডও বেশ কাজের। এই প্রসেস উডের মধ্যে রয়েছে পার্টিক্যাল বোর্ড, ভিনিয়ার্ড বোর্ড, এমঅডিএফ বোর্ড, প্লাই বোর্ড। আমাদের দেশে এই প্রসেস উডের ফার্নিচার বেশ চলছে। তবে প্রসেস উড ও কাঠের ফার্নিচারের একটা বড় অংশ চীন থেকে আমদানি করা হয়। প্রসেস উডের সুবিধা হল ঘুন ধরে না। এদিকে আছে সেগুন কাঠ বেশ জনপ্রিয় এবং টেকসই একটি কাঠ। তবে সেগুন কাঠ বলে অন্য কাঠ অনেকেই কিনে আনে। এক্ষেত্রে সাবধান থাকবেন। আর একটি কাঠ হচ্ছে কেরোসিন কাঠ, এই কাঠের ফার্নিচার বেশ জনপ্রিয়। বিক্রেতারা বলছেন, পাইন ট্রি-ই আমাদের দেশে কেরোসিন কাঠ নামে পরিচিত। এই কাঠ দেখতে সুন্দর এবং পলিস ছাড়াই ব্যবহারের উপযোগী। তবে চাপ সহ্য করার ক্ষমতা কম। 

মেটাল বা ধাতব 

ধাতব বা মেটালের আসবাব আজকাল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এর কারণটিও বেশ সহজ। ধাতু অন্য কোনও উপাদানের চেয়ে বেশি টেকসই। যদি সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া হয় তবে এটি আজীবন টিকতে পারে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি ধাতু বেছে নেওয়ায়। ধাতব আসবাব দুটি ধরণের হয়: অ্যালুমিনিয়ম এবং স্টিল। স্টেইনলেস স্টিলের আসবাব বেশি টেকসই তবে মূল্য বেশি। ধরণের উপর নির্ভর করে এর দাম পরিবর্তিত হয়। অন্যদিকে, অ্যালুমিনিয়াম আসবাব স্টিল আসবাবের চেয়ে বেশি হালকা তাই এটিতে মরিচা ধরে না।

আশা করা যায় এরপর যখন কেউ আসবাব কিনতে যাবেন একটু হলেও দিক নির্দেশনা পেয়ে যাবেন। কোন কাঠ কেমন এবং কেমন তার বাজার দর! বা ইতিহাস সব কিছুই পেয়ে যাবেন এখান থেকে। আমি সঠিক করে বলতে পারি আসবাব বা ফার্নিচার নিয়ে এমন লেখা খুব কমই চোখে পড়েছে। সুতরাং কেমন লাগল জানাতে ভুলবেন না। 

Write A Comment