Reading Time: 4 minutes

ঘরের সাজ নিয়ে ভাবতে গেলে আমরা কত শত ডেকোর আইডিয়া নিয়ে ভাবি। ইংরেজী ঘরানার আইডিয়াগুলো বরাবরই আমাদের অনুপ্রাণিত করে আসছে। কিন্তু, কোথাও কি আমরা বায়েস্ট হয়ে যাচ্ছি না, বিদেশী ধাঁচের সাজের প্রতি? আবার ভাবি, ঘরের জন্য যে সাজগুলো বেশি চোখের সামনে ভাসে সেগুলো তো বিদেশি ধাঁচেরই। ঘরের সাজে সংস্কৃতির ছোঁয়া যারা আনতে চাই তাদের জন্য আজকের এই আয়োজন। 

দেশীয় পণ্য থেকে শুরু করে দেশীয় সাজ, দুটোই আমরা উৎসবেই বেশি পছন্দ করি। কিন্তু, উৎসব ছাড়াও কিন্তু ঘরের সাজে বাঙালিয়ানা রাখা সম্ভব। অনেকে নিশ্চয়ই ভাবছেন, উৎসবের দিনগুলো বাদে ঘরের সাজে বাঙালিয়ানা কি আদৌ মানাবে? এমন প্রশ্ন মনে এসে থাকলে তার উত্তর এখানেই পেয়ে যাবেন। 

বেশি কিছু করতে না চাইলে একটি চমৎকার সহজ উপায়  হচ্ছে, বাঁশ বা বেতের আসবাব ব্যবহার করুন। এগুলো যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি টেকসই! দামেও সাধ্যের মধ্যেই হবে। বাসার সব আসবাব যদি বেতের হয় ঘরে কিন্তু, বাঙালিয়ানা বেশ ফুটে উঠবে।

বেডরুম 

দেয়াল
নিজের ঘরের একটি দেয়ালে আঁকুন পছন্দমত কোন নকশা

বেডরুম এমন একটি জায়গা যা কিনা একান্ত আপনার। তাহলে,নিজের ঘর তাহলে কেন নিজের মত হবে না, বলুন তো? নিজের ঘর অন্যের মত করে সাজানোর মত বিড়ম্বনা কিন্তু, আর নেই। আমাদের সবার মধ্যেই কিছু না কিছু বাঙালিয়ানা থাকেই সেগুলো কোনগুলো এবং ঘরের সাজের সাথে কিভাবে তা ব্যবহার করা যায় সেটা ভাবুন! এমন হতে পারে আপনার কোন শখ বা পছন্দের কিছু থেকে থাকলে তা বেডরুমে পছন্দের এক কোণায় রেখে দিন। আপনি কি বই পড়তে ভালোবাসেন? তাহলে বই কোন বুক সেলফে নয় বরং দেয়াল ঘেঁষে মাটিতে রেখুন। দিনশেষ বাড়ি ফিরে সেদিকে তাকাতেই কিন্তু আপনার মন ভালো হয়ে যাবে! ঘর থেকে যদি আকাশ নাও দেখা যায় তবুও মন খারাপ হবে না! আরও অনেক কিছু, কিন্তু করবার আছে! আপনি কি গান বাজনা পছন্দ করেন কিংবা নিজেই গাইতে পারেন? দুটোর একটিও হয়ে থাকলে বেডরুমের কোণায় শখের তানপুরা কিংবা হারমোনিয়াম বা সেতারটা রেখে দিন। যেখানে রাখবেন সেখানে পারলে একটু আসর তৈরি করে নিন। মেঝেতে তোষক বা কুশন রাখুন, যাতে করে আপনার পছন্দের জায়গায় কিছুটা সময় আপনি কাটাতে পারেন।

ড্রয়িং রুম

 সাংস্কৃতিক ডেকোর
ঘরের এই দেয়ালটি আমার সবথেকে পছন্দের

ড্রয়িং রুমের ডেকোর তো বাজেটেই সম্ভব তা আমরা আগেই জেনে গেছি। ড্রয়িং রুম যেখানে আপনার বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়রা কখনো বা অচেনা কেউ এসে বসবেন। সুতরাং এই ঘরটা এমন হওয়া চাই যেখানে ছিমছাম পরিবেশ যেমন থাকবে তেমনি থাকবে স্বাচ্ছন্দ্য। তাহলে কি করা যায়? যা সহজেই ঘরের রূপ বদলে দিবে? অনেক কিছু করবার আছে যদি আপনি একটু সময় নিয়ে করতে পারেন। প্রথমেই আসি দেয়ালের দিকে। দেয়ালের রঙ নিয়ে আছে নানা টিপস। দেয়ালের রঙ নিয়ে আছে নানা টিপস। রঙের সাহায্যে কি না করা যায়, দেয়ালের রঙের সাহায্যে ঘর বড় দেখানো যায়। আবার এই দেয়ালের রঙের টেক্সচার বদলে ফেললেই ঘর হয়ে ওঠে নতুনের মত। এইসব তো আমরা কম বেশি জানি। দেয়ালে প্রিয় কবির কোন পঙক্তি বা গানের কোন লিরিক দেয়ালে লিখে রাখলে কেমন হয়? কবি গুরুর একটি গান আছে “এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকেনা তো মন” এমন একটা গান যদি দেয়ালে বাংলায় বিভিন্ন রঙে লিখে রাখেন, বলুন তো আপনার ঘরের জন্য আর কিছু কি প্রয়োজন রয়েছে? আমার মনে হয় না! মেঝেতে কার্পেট না বিছিয়ে বাহারি নকশার শীতল পাটি বিছিয়ে রাখলেন। বাংলা মটিফের পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন জানালায়। বেতের ল্যাম্প শেইড রাখলেন! রিকশা পেইন্টের কিছু আসবাব এনে রাখলেন, যেমন ট্রাঙ্ক! ট্রাঙ্কের উপর রিকশা পেইন্ট কিন্তু বেশ চমৎকার লাগবে! যেমন কাজের তেমনি ঘরের জন্য হতে পারে সৌন্দোর্যের আসবাব। সোফার কাপড়টা হতে পারে হাতের কাজের। নকশী কাঁথার স্টীচে আপনার সোফা ফুটে উঠবে বেশ চমৎকারভাবে। বাংলায় পাওয়া যায় নানা রকম শিল্পের সমাহার।  কি নেই এই বাংলায়! 

ডাইনিং রুম 

মগ
ছিমছাম এবং প্রিয়

অনেকের কাছেই ডাইনিং রুম কিছুটা অবহেলিত। এতে যদিও দোষের কিছু নেই। বাকী সব ঘরে আসলে সময় বেশি কাটানো হয়ে থাকে। তাই হয়তো এই জায়গাটিতে খুব বেশি আসা হয়ে উঠে না। এবং খরচার কথা ভাবলে এই ঘরটি ডেকোর লিস্ট থেকে বাদ পরেই যায়। কিন্তু্, এখন তো বাদ দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কেননা ৫০০০ টাকায় ডাইনিং রুমের ডেকোর খুব ভালো ভাবেই সম্ভব। ডাইনিং রুমে বেশি কিছু না করেও অল্প কিন্তু চমৎকার কিছু করা যায়। কিভাবে? টেরাকোটা দেয়ালের কথা শুনেছেন? কেমন হয় যদি বাঙালিয়ানা ধাঁচের একটা টেরাকোটা দেয়াল করে ফেলা যায়? খুব অল্প একটা সাজ, যার প্রভাব কিন্তু অনেক গভীর। ডাইনিং রুমের এক কোণায় একটা টি টেবিল রাখুন এর উপর রেখে দিন গ্রামোফোন। দেখুন না ডাইনিং রুমের চেহারাটা কিভাবে বদলে যায়। সাজ শুধু ঘরের মধ্যেই আবদ্ধ রাখলে হবে না। তৈজসপত্রেও আনতে হবে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া। কাঁসা বা পিতলের তৈজসপত্র ব্যবহার করুন। নাম শুনে ঘাবড়ে যাওয়া যাবে না, যে এই কাঁসা পিতল আবার কই পাবো? ভাকুর্তা গ্রামের কথা মনে আছে কি? যেখানে খুব কম মূল্যে কাঁসা বা পিতলের তৈরি তৈজসপত্র পাওয়া যায়। একবারে কিনে আনুন। দেখবেন ডাইনিং রুম একবারে বদলে গেছে। 

বারান্দা

টবে রাখা গাছ
বারান্দায় গাছ রাখুন

বারান্দা ঘরের সবচেয়ে সুন্দর এবং শান্তির জায়গায়। সুতরাং এই জায়গাটির জন্য বেশি রঞ্জিত কিছু করবার দরকার নেই কিন্তু, ছোট খাটো কিছু করলে কিন্তু খারাপ হয় না। আপনার যদি বারান্দা না থেকে থাকে তাহলে, নিশ্চয়ই ছাঁদের চিলেকোঠা আছে তাইনা? সেখানেও কিন্তু বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তোলা যায়। চিলে কোঠার ছাদে মাটির টালি ব্যবহার করা যায়। দেখতে ভীষণ নতুন একটা কিছু হবে। এছাড়াও মাটির তৈরি ছিকা বা মাটির তৈরি টব তো বারান্দায় বরাবরই রাখা যায়। দুটো ছোট বেতের মোড়া রেখে দিলেন সময় করে গল্প প্রিয়জনের সাথে গল্প করলেন। বারান্দায় আকাশ দেখতে দেখতে আড্ডার মধ্যে চায়ের কাপে ডুবে গেলে কিন্তু মন্দ হয় না!

ঘরের সাজে বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তোলার আরও অনেক অনেক চমৎকার সব টিপস আছে। কিন্তু সেগুলো জানাবার আগে জানতে চাই আপনার কি এই টিপসগুলো ভালো লেগেছে? নাকী আরও বেশ কিছু টিপস সম্বন্ধে জানতে চাচ্ছেন? উত্তর যেটাই হোক আমাদের জানিয়ে দিন কমেন্টে।

Write A Comment