সভ্যতার যত অগ্রসর হচ্ছে প্রকৃতির উপর মানুষের অত্যাচারের পরিমাণ ততই যেন বেড়ে চলেছে। সবকিছুরই শেষ আছে, আমাদেরও উচিত এই অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে যাবার আগেই তার লাগাম টেনে ধরা। এজন্য সবার আগে মনোযোগী হওয়া উচিত সব ধরণের একবার ব্যবহার্য জিনিস আমাদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া এবং পূনঃব্যবহার করা যায় এমন জিনিসের দিকে নজর দেওয়া। সকল ভালো কাজের শুরুটা হয় ঘর থেকেই। তাই পৃথিবীকে বাঁচানোর অভিযানও শুরু হবে নিঃসন্দেহে ঘর থেকেই। আমাদের ছোট ছোট সম্মিলিত পদক্ষেপই পারে বিশাল কিছু করে ফেলতে। তাই চলুন দেখে নেয়া যাক আমাদের ঘরেই পূনঃব্যভার করার মত কী কী জিনিস আছে যেগুলোকে মেয়াদকালের সর্বোচ্চ সময় ব্যবহার করে আপনি পরোক্ষভাবে পরিবেশ বাঁচানোর উদ্যোগে সামিল হতে পারেন।
যেকোন ধরণের প্লাস্টিক দ্রব্য
একথা সর্বজন স্বীকৃত যে প্লাস্টিক পরিবেশের সবচেয়ে বড় শত্রু। কিন্তু কাচামালের সহজলভ্যতা এবং স্বল্প দামের কারণে প্লাস্টিকের ব্যবহার সামান্যতম কমেনি বরং দিনেদিনে বেড়েই চলেছে। তাই সবধরণের প্লাস্টিকনির্মিত দ্রব্যকে তার মেয়াদের সম্পূর্ণ সময় ব্যবহার করতে হবেই। এরপর তা যদি পূনঃব্যবহার করা হয় তো এর ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে।
আপনি চাইলে ঘরে খুব সহজেই প্লাস্টিকের পূনঃব্যবহার করতে পারেন। প্লাস্টিকের বোতল, যার বা তেলের ক্যানকে খুব সহজেই পানি ছিটানোর বোতল, গুঁড়া সাবান রাখার পাত্র বা থালাবাসন মাজার পাউডার রাখার পাত্রে পরিণত করা যায়।
এছাড়া মোটামুটি সাইজের পানির বোতল মাঝখানে কেটে নিচে ছোট ছোট ছিদ্র করে তাতে কিছু মাটি ভরে চাইলে ছোট ছোট অর্নামেন্টারি গাছ লাগানোর কাজেও ব্যবহার করা যায়। এগুলো ঘর সাজানোর গাছ হিসেবে বেশ সমাদৃত। কেটে ফেলা পাত্রের বাকি অংশও নষ্ট না করে তা পাখিখে খাবার দেবার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। প্লাস্টিকের ব্যাগও সম্ভব হলে সংরক্ষণ করে একাধিকবার ব্যবহার করুন। প্রয়োজনমাফিক ময়লার ঝুড়িতেও প্লাস্টিকের পুরাতন পলিথিন রেখে তাতে ময়লা ফেলুন এবং পরবর্তীতে সেই পলি সহই তা জায়গামত ফেলে দিন।
কাঁচের দ্রব্যাদি
কাঁচ এমনিতেই একটি পূনঃব্যবহার্য বস্তু, তাই পরিবেশের উপর এর ক্ষতির মাত্রা তুলনামূলক কম। কিন্তু তাই বলে এর যথেচ্ছ ব্যবহারও ঠিক নয়। প্রতি লাইফ সাইকেলেই একে যতবেশি সম্ভব ব্যবহার করা উচিত এবং যত্রতত্র ছুড়ে ফেল উচিত নয় কোনভাবেই। এমন কী ভাঙ্গা কাঁচের টুকরোকেও পুনরায় ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কাঁচের টুকরো জড়ো করে সেগুলোকে পালিশ করে, আঠা দিয়ে জোরা লাগিয়ে সেগুলো থেকে চমৎকার শো-পিস বানানো সম্ভব। এছাড়া কাঁচের বোতল বা জার সব সময়ই পূনঃব্যবহার করা যায়। ভালভাবে মুখ আটকে রাখলে এতে বাতাস ঢুকতে পারে না এবং ভেতরে রাখা জিনিস অনেকদিন পর্যন্ত ভাল থাকে। আমাদের মায়েদের আচার সংরক্ষণের জন্য তো কাঁচের বোতল খুবই প্রিয় এবং কার্যকরী জিনিস! এছাড়া কাঁচের বোতলে ছোট ছোট গাছ লাগিয়ে তা ঘর সাজাতেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
পুরানো কাগজ
কাগজের একটি সিঙ্গেল শিট বানাতে গড়ে তিন গ্যালন পানি খরচ হয়। তাই কাগজের পূনঃব্যবহার অত্যন্ত জরুরী। আর কাগজকে পুনরায় ব্যবহার করা সহজও বটে! পুরানো ম্যাগাজিন বা খবরের কাগজ ব্যবহার করে সহজেই ছোট ঝুড়ি কিংবা বক্স বানিয়ে ফেলা যায়। বিভিন্ন হোল্ডার, র্যাপিং পেপার বা খাম বানানোর কাজেও কাগজ পূনঃব্যবহার করা যায়। বাসায় সাজিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন আকার এবং আকৃতির অরিগামি বানাতেও পুরানো কাগজের ব্যবহার রয়েছে। জুয়েলারি বক্সের শক্ত তলা বানাতে কাগজ আর আঠার ব্যবহার রয়েছে। নিউজপ্রিন্ট খবরের কাগজ সহজেই পানি শোষণ করে নিতে পারে। এজন্য কাচা সবজি বা তরুতরকারী কাগজ দিয়ে ঢেকে রাখলে তা সাধারণের চেয়ে বেশি সময় ভাল থাকে। সব মিলিয়ে পুরাতন কাগজের রয়েছে নানাবিধ উপযোগীতা যা আমাদের নিয়মিত ব্যবহার করা উচিত।
পুরানো কাপড়চোপর
কাপড়ের রঙের উচ্ছিষ্টাংশ পরিবেশের জন্য ভয়ানকরকমের ক্ষতিকর। তবে বাস্তবতা হল অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে দেশ গার্মেন্টস শিল্পের উপর নির্ভরশীল। তাই পরোক্ষভাবে হলেও এই ক্ষতির মাত্রা কমাতে আমাদের নজর দেয়া উচিত সব ধরণের কাপড়ের যথাসম্ভব লম্বা লাইফসাইকেল নিশ্চিত করার দিকে। আমরা চাইলেই কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে অচল কাপড়ের ব্যবহার করতে পারি সবাই। যেমন পুরাতন টাওয়েলকে ব্যবহার করা যায় টয়লেটের সামনে ফ্লোর ম্যাট হিসেবে। আবার এগুলোকে সেলাই করেও অন্য কাজে সুন্দর ব্যবহার করা যায়। পুরাতন টি-শার্ট বা গেঞ্জি, ধুলা মোছার কাপড় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ঘর মোছার কাজেও এর সমাদর আছে। পুরাতন হয়ে যাওয়া উলেন সোয়েটার থেকে হজ মোজা প্রস্তুত করা সম্ভব। চাইলে আরও অনেকভাবেই কাপড়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব।
আসবাব ও কাঠের পূনঃব্যবহার
ঘরের আসবাব সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ হলেই তা ছুড়ে ফেলে নতুন কেনা থেকে বিতর থাকুন। বরং আমাদের সবার উচিত জিনিস মেরামত করে তা ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা। কাঠের আসবাবের রঙ জ্বলে গেলে তা নতুন করে রঙ করার ব্যবস্থা নিন। মেরামতের অযোগ্য হলে তা থেকে নতুন কিছু বানিয়ে নেয়া যায় কিনা সেই চিন্তা করুন। কাঠের কাজ করার সময় যে ছিলকা বা তুষ বের হয় তা মাটিতে অনেক পুষ্টির যোগান দেয়, তাই সার হিসেবে আপনার ছাদ বাগানে এর ব্যবহার থাকতে পারে। মোট কথা, আপনি যদি আজ একটা কাঠের আসবাব কম বানান, আপনি প্রত্যক্ষভাবে একটি গাছ কাটা থেকে বিরত থাকলেন!
ঘরে থেকেই পরিবেশ রক্ষার জন্য সকল জিনিসের সঠিক ব্যবহার এবং পূনঃব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরী। আর তা নিয়েই এই ছিল আমাদের ছোট্ট আলোচনা। ঘর থেকেই নিজের পৃথিবির জন্য কিছু করতে খুব বেশি কিছু নয় বরং সদিচ্ছাই যথেষ্ট। এর বাইরে আর কোন কোন পন্থা অবলম্বন করে আপনি প্রকৃতির জন্য কাজ করেন? আমাদেরকে জানাতে ভুলবেন না!