Reading Time: 4 minutes

বাসা নেয়ার সময় আমরা পরিবারের সদস্যদের কী প্রয়োজন, কী পছন্দ সে সবই ভাবি। দিন শেষে প্রত্যেকে যেন শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যের ঠিকানায় ফিরতে পারে, তেমনটাই আমাদের চাওয়া। তবে রোগ-ব্যাধি ও সুস্থতা লাভের প্রচেষ্টা আমাদের বহমান জীবনের অংশ। আর সেই প্রচেষ্টায় দারুণ সহায়ক হতে পারে ‘রিকভারি রুম’। রিকভারি রুম হতে পারে আপনার বাসারই একটি রুম, যেখানে পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে থাকতে পারবে। এমন নয় যে সব সময় একটি রুমকে রিকভারি রুম বানিয়ে রেখে দিতে হবে, বরং প্রয়োজনের সময় কোনো একটি রুমকে রিকভারি রুম হিসেবে তৈরি করে নিতে পারেন। সব ধরনের রোগের ক্ষেত্রেই রিকভারি রুম ঘরে থেকে সুস্থতা লাভের সুন্দর উপায়। তবে যেসব রোগের চিকিৎসায় কোয়ারেন্টাইন আবশ্যক, সেসব রোগের জন্য বাড়িতে রিকভারি রুম থাকার জুড়ি নেই। কেননা এখানে একদিকে যেমন অসুস্থ ব্যক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সকল কিছুর ব্যবস্থা করা যায় সহজেই, তেমনি বাড়ির অন্যান্যরা যাতে সংক্রমিত না হয় সে ব্যবস্থাও করা যায়। তবে সংক্রমণের ভয় না থাকলেও অসুস্থ ব্যক্তিকে ঘরেই যথাযথ পদ্ধতিতে সেবা দিতে রিকভারি রুম সত্যিই কার্যকরী। তবে ঘরে রিকভারি রুম তৈরি করতে হলে খুঁটিনাটি নানা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। আজকের ব্লগে জানাচ্ছি ঘরে রিকভারি রুম তৈরির বিস্তারিত। 

ঘরে প্রশান্তির ছোঁয়া

আরামদায়ক ফেব্রিক
বিছানার চাদর, পর্দা, ফ্লোর ম্যাট হিসেবেও চোখের জন্য আরামদায়ক রং ও ফেব্রিক নির্বাচন করা শ্রেয়

ঘরে রিকভারি রুম তৈরি করার প্রথম ধাপ হলো এর মূল উদ্দেশ্য মাথায় রাখা। অর্থাৎ দ্রুত সুস্থতা লাভে সহায়ক হওয়াই যে ঘরটি তৈরির লক্ষ্য তা ভুলে যাওয়া যাবে না। আর এ ব্যাপারটি মনে রাখতে পারলেই রোগীর স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ঘরের পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত তা সহজে বোঝা যাবে। যেমন- রিকভারি রুমে অতি উজ্জ্বল ছবি, চিত্রকর্ম ইত্যাদি না রাখাই ভালো। তবে সব ধরনের গৃহসজ্জার সামগ্রী সরিয়ে ফেলতে হবে এমনটি নয়। ঘরটিতে যিনি থাকবেন তার পছন্দের কোনো ছবি বা পেইন্টিং রাখা যেতেই পারে, তবে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন রোগীর ওপর কোনো ধরনের মানসিক চাপ না ফেলে। এছাড়া বিছানার চাদর, পর্দা, ফ্লোর ম্যাট হিসেবেও চোখের জন্য আরামদায়ক রং ও ফেব্রিক নির্বাচন করা শ্রেয়। 

ঘরের আলো ও তাপমাত্রা

ঘরে আলো আসে
রিকভারি রুম হতে হবে এমন যেখানে দিনের বেলায় পর্যাপ্ত আলো আসে কিন্তু রাতে আলোর কারণে রোগীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না

ঘরে রিকভারি রুম তৈরি করার সময় অবশ্যই আলোর ব্যাপারটি খেয়াল রাখুন। কেননা রোগীর পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করতে যেমন আলো একটি জরুরি বিষয় তেমনি ভিটামিন ডি সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান নিশ্চিত করতে আলোর বিকল্প নেই। অর্থাৎ রিকভারি রুম হতে হবে এমন যেখানে দিনের বেলায় পর্যাপ্ত আলো আসে কিন্তু রাতে আলোর কারণে রোগীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না। এটি নিশ্চিত করতে এ রুমে ব্ল্যাকআউট ব্লাইন্ড বা একটু ভারী ধাঁচের পর্দা ব্যবহার করা যায়। এ ধরনের পর্দা থাকলে রাতে স্ট্রিট লাইট বা অন্যান্য উজ্জ্বল আলোর কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না। আবার দিনের বেলায় পর্দা টেনে দিলে ঘরে রোদও আসবে। 

রিকভারি রুম অন্যান্য রুমের চাইতে শীতল (১৬-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) হওয়া ভালো। তবে বরফশীতল রুম রাখতে হবে এমনটা নয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমও জরুরি না। তবে স্বাভাবিক তাপমাত্রার চাইতে খানিকটা শীতল তাপমাত্রা বেশির ভাগ রোগীর জন্যই আরামদায়ক হয়। তবুও এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। কারণ তাপমাত্রা রোগীর জন্য স্বাচ্ছন্দ্যের কিনা সেটাই সবচেয়ে জরুরি বিষয়। এছাড়া ঘর স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেলো কিনা এ ব্যাপারেও লক্ষ রাখা দরকার। কারণ স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে ছত্রাক জন্মায়, যা ভীষণ অস্বাস্থ্যকর। 

বাথরুম যেভাবে সাজাবেন 

বাথরুমে টয়লেট্রিজ
রিকভারি রুমে অ্যাটাচড বা কাছাকাছি বাথরুম থাকা ভীষণ জরুরি

রিকভারি রুমে অ্যাটাচড বা কাছাকাছি বাথরুম থাকা ভীষণ জরুরি। রোগীর অবস্থা বুঝে বাথরুমে গ্র্যাব বার তৈরি করা যায়, এগুলো ধরে চলাচল করলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে যায়। বাথরুমের ক্ষেত্রে রোগীর সুবিধা-অসুবিধা জেনে নেয়াও প্রয়োজন। যেমন যাদের সোজা হয়ে দাঁড়াতে বা বসতে সমস্যা হয়, তাদের জন্য টয়লেট রাইজারের মতো জিনিসগুলো সহায়ক হতে পারে। পিচ্ছিল ফ্লোরের কারণে যাতে কোনো দুর্ঘটনা না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে নন স্কিডিং ম্যাট বাথরুমে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া অবশ্যই খেয়াল রাখুন বাথরুমের জন্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিস যেমন- টুথপেস্ট থেকে টয়লেট টিস্যু যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে।  

যা রাখবেন ও যা রাখবেন না 

ঔষধ ও মাস্ক
পানির বোতল, ঔষধ, হালকা খাবার ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রোগীর হাতের নাগালে রাখা উচিত

ঘরে রিকভারি রুম তৈরি করার সময় মনে রাখুন, অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে এ ঘর ভর্তি করে রাখার অনেক অসুবিধা। এক, রোগীর চলাচলে অসুবিধা হবে। দুই, পরবর্তীতে জিনিসগুলো জীবাণুমুক্ত করাও বেশ বড় ধরনের ঝামেলা। তাই শুরুতেই অপ্রয়োজনীয় ফার্নিচার ও অন্যান্য জিনিস সরিয়ে ফেলাই ভালো। এছাড়া অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী রিকভারি রুমে রাখলে অনেক সময় তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ রিকভারি রুমে রোগী বিশ্রাম নিবে ও ধীরে ধীরে সুস্থতা অর্জন করবে এমনটাই কাম্য। তবে মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, ল্যাপটপ বা গেমিং ডিভাইস ব্যবহার করলেও নির্দিষ্ট সময় মেনে করা উচিত। অর্থাৎ রোগীর পরিপূর্ণ বিশ্রাম  নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকতে হবে। 

তবে ঘরে রিকভারি রুম তৈরি করতে কিছু জিনিস রাখা আবশ্যক। যেমন অ্যালার্ম ক্লক রোগীকে ঔষধ খেতে মনে করানোর কাজটি করতে পারে। পানির বোতল, ঔষধ, হালকা খাবার ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রোগীর হাতের নাগালে রাখা উচিত। এছাড়া যদি ক্রাচ, লাঠি বা হুইল চেয়ার প্রয়োজন হয় তাও এমন জায়গায় রাখুন যাতে রোগী সহজেই এসব ব্যবহার করতে পারে। যদি রোগীর ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা প্রয়োজন হয়, তবে রিকভারি রুমে মনিটরিং ডিউভাইসও রাখা যেতে পারে। 

ঘরে রিকভারি রুম তৈরি করা খুব একটা কঠিন না। শুধু প্রয়োজন যথেষ্ট সচেতনতা আর সতর্কতা। ওপরের নিয়মগুলো মেনে রিকভারি রুম তৈরির পাশাপাশি আমরা যদি নিয়মিত ঘরটি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করি এবং রোগীর যত্ন নেই, তবেই রিকভারি রুমের উদ্দেশ্য পূরণ করা সম্ভব হবে। এভাবে রিকভারি রুম তৈরি করে আমরা ঘরেই অসুস্থ প্রিয়জনদের সেবা করতে পারি।

Write A Comment