Reading Time: 4 minutes

সারা দিনের কাজের শেষে এক ছটাক প্রশান্তি এনে দেয় এই ঘর। শুধু মাথা গুঁজবার ঠাই খুঁজলে আর হবে না। তাতে থাকা চাই কিছুটা নান্দনিকতা। সময় বদলের সাথে ঘরের সাজে এসেছে নানা পরিবর্তন। এখন শুধু আধুনিকভাবে বাসা ডিজাইন করলেই হয় না। যে বাসাটিতে আপনি নিজের একান্ত কিছু সময় কাটাবেন তাতে যদি আপনার নিজের কোন ছাপ না থাকে, তাহলে কি হয়? বাসায় নিজের ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন ফুটিয়ে তুললে, মুহর্তেই আপনার বাসার চেহারা বদলে যাবে। কম বেশি ঘর সাজানোর উপায়গুলো আমরা সবাই জানি। বিপ্রপার্টি ব্লগে আপনি সহজেই পেয়ে যাবেন অসংখ্য আর্টিকেল যেখানে বলা আছে, আপনার ঘরের একেকটি অংশ সম্বন্ধে। যেমন, ডাইনিং রুম,  বাসার এন্ট্রেন্সসিলিংদেয়ালের রঙ ইত্যাদি। এছাড়াও আপনি পেয়ে যাবেন ঘরের আরও কিছু বিশেষ অনুষঙ্গ নিয়ে অসংখ্য টিপস। 

আমরা অনেকেই আছি যারা কিনা স্রোতের বিপরীতে হাঁটতে পছন্দ করি। জীবনের ছোট থেকে শুরু করে বড় প্রায় সবরকমের কাজই তারা নিজের মত করতে ভালোবাসেন। তাদের সবকিছুতে থাকা চাই  সৃজনশীলতার ছোঁয়া। সৃজনশীলতার মধ্যে তারা নান্দনিকতা খুঁজে পেতে ভালোবাসেন। এই লেখাটি তাদের জন্যই। এই লেখা পড়ে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে ঘরের সাজে ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।

পুরনো কিছু আসবাব বা জিনিসপত্র সংগ্রহ করুন

কাঠের চেয়ার
পুরনো আসবাবগুলো বরাবরই দেখতে ভীষণ সুন্দর দেখায়!

কালেকশনে যদি আপনার নানা-দাদার আমলের কিছু থেকে থাকে তাহলে আপনি নিঃসন্দেহে অনেক ভাগ্যবান। আগের সময়ের যেকোন জিনিসই অনেক মূল্যবান এবং সুন্দর। তাই হয়তো এগুলোকে ভিন্টেজ বলা হয়। আগের সময়ের থালা-বাসন, হরিণের মাথা কিংবা কোন আসবাবপত্র। কোনকিছুই হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না। পুরনো এই জিনিসগুলো নিজেদেরই ঐতিহ্য বহন করে। তাই সেগুলোকে পছন্দমত ঘরের যেকোন স্থানে সাজিয়ে রাখুন। যা ঘরের সাজে ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন ফুটিয়ে তুলবে অনেকাংশ। চাইলে, আগের সময়ের কিছু আসবাবপত্র ব্যবহারও করতে পারেন। নানা-দাদার সময়কার পালঙ্ক বা চেয়ার নান্দনিকতার সাথে চাইলেই ব্যবহার করতে পারেন। এই ঐতিহ্যবাহী আসবাবগুলো ঘরের শোভা যেমন বাড়িয়ে তুলবে তেমনি, অতিথিদের হৃদয়ে ফেলবে গভীর ছাপ। পুরনো এই জিনিসপত্রে জড়িয়ে থাকে নানারকম গল্প সেই গল্পগুলো খুঁজে আনতে হবে, তবেই না আপনার ঘর হয়ে উঠবে নান্দনিক।

শখ সকলের সামনে তুলে ধরুন 

ভিন্টেজ রেডিও
শখের যেকোন কিছুই সুন্দর করে সাজিয়ে নিন

আমাদের সবারই কিছু না কিছু শখ আছে সেগুলো, সবার সামনে আনার চেষ্টা করুন। আপনার শখ যদি গান গাওয়া হয়ে থাকে, তাহলে ঘরের এক কোণায় গানের ইন্সট্রুমেন্টগুলো সাজিয়ে রাখতে পারেন। চোখের সামনে পড়লে কিন্তু আপনার প্র্যাকটিসও সময় করেই হবে। অনেকেই পছন্দ করেন ছবি আঁকতে, তারা কিন্তু চাইলেই ছবি আঁকার ক্যানভাস ও রঙ তুলি সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে পারেন, দেখতে কিন্তু ভীষণ নান্দনিক লাগে। অনেকে আছেন যারা বনসাই বানাতে খুব পছন্দ করেন তারা কিন্তু চাইলেই ঘরের বিভিন্ন জায়গায় বনসাই রেখে দিতে পারেন। বই পড়তে কে না ভালোবাসে। আপনি চাইলেই ঘরের ভেতর তৈরি করতে পারেন, একটা ছোট্ট লাইব্রেরী। যেখানে জায়গা করে নিবে আপনার পছন্দের লেখকের বই। এই ছোট্ট ব্যাপারগুলোও কিন্তু আপনার ঘরের সাজে ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন ফুটিয়ে তুলবে।

ডিআইওয়াই (DIY) করুন 

ডিআইওয়াই
নিজেই নতুন কিছু তৈরি করুন

বাকিদের থেকে আলাদা হতে চাইলে কিছু জিনিস তো নিজেই তৈরি করতে হবে। আমাদের ঘরে অনেক কিছু থাকে যেগুলো ব্যবহার করে আপনি নতুন কিছু তৈরি করতে পারবেন। ইন্টারনেটে এমন হাজারো DIY ভিডিও রয়েছে যেগুলো, দেখে আপনি ঘরের অব্যবহৃত জিনিস দিয়ে নতুন কিছু তৈরি করতে পারবেন। বিপ্রপার্টির ইউটিউব চ্যানেলে রয়েছে কিছু DIY ভিডিও সেগুলো দেখে নিতে পারেন। নিজের তৈরি জিনিসপত্রে বরাবরই থাকে সৃজনশীলতার ছোঁয়া। কিংবা এমনও হতে পারে ঘরের কোন এক অংশ আপনি নিজেই রঙ করে ফেললেন। হ্যাঁ, এটা ঠিক পেশাদারদের মত অত নিখুঁত হবে না কিন্তু, সৃজনশীলতার ছাপ তো থাকবে। এইভাবেও কিন্তু নিজের ঘরকে রাঙিয়ে তোলা যায়। 

আর্ট পিস কিনুন 

আর্টপিস
পছন্দের আর্টপিস আনুন

আপনি যদি আর্ট ভালোবেসে থাকেন, সেক্ষেত্রে যেকোন ধরনের আর্ট কিনতে পিছ পা একদম হওয়া যাবে না। মনের মত আর্ট কিনে আনুন। এরপর ঘরের যেকোন একটি জায়গায় এই আর্ট পিস গুলো রাখার ব্যবস্থা করুন। আর্ট মানেই এক অদ্ভুত ব্যাপার। তাই এটি রাখার জন্য একটু কষ্ট তো আপনাকে করতেই হবে। আর্ট পিস অনেক ধরনের হয়ে থাকে। কখনও পেইন্টিং আবার কখনও কোন পিস। দুটো ক্ষেত্রেই রাখার জন্য করতে হবে একটু নান্দনিক ব্যবস্থা যাতে করে আর্ট পিসটি সকলের নজরে পরে। অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য এই আর্ট পিসগুলো বেশ কার্যকরী। তাছাড়া আপনার ঘরের আবহ পরিবর্তন হয়ে সেটা না বলেই নয়। 

 বাসার গল্প বলবে এমন কিছুর ব্যবস্থা করুন 

ছবির ফ্রেম
বাসার গল্প বলার চেষ্টা করুন

এটা হতে পারে কোন দেয়াল যেখানে থাকবে আপনার ছেলেবেলা থেকে শুরু করে বড় হওয়ার প্রায় সব বিশেষ সময়ের ছবি। কিংবা হতে পারে কোন ক্যানভাস যেখানে লেখা থাকবে আপনার প্রিয় বাসাটার গল্প বা আপনার সম্বন্ধে কিছু অজানা তথ্য। যেগুলো মানুষকে আপনার কথা মনে রাখতে বাধ্য করবে। হয়তো আপনি কোথাও ঘুরতে গিয়েছিলেন সেখান থেকে আনা কিছু সুভিনির এর সাথে লিখে রাখলেন কোথা থেকে এটা এনেছিলেন। বা কেমন ছিল সেই ট্যুর। এমন ছোট ছোট বিষয়গুলোই আপনার বাসার সাজে আনতে পারে এক বিশাল পরিবর্তন।

বাসার প্রতিটা ইটের সাথে যদি নিজের গল্পগুলো গেঁথে রাখেন তখনই এই বাসাটি সত্যিই নিজের হয়ে যায়। নিজের জীবনের কিছু অংশ যদি একবার আপনার নিজের ঘরের সাথে মিশিয়েই দেখুন না, পুরনো ঘরটা কেমন নতুন হয়ে উঠে।   

Write A Comment