Reading Time: 3 minutes

সবুজ পাহাড় আর নীল সমুদ্রেই চট্টগ্রামের সৌন্দর্য সমাপ্তি ঘটেনি। এই শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো আরও বেশি সুন্দর। বেশীরভাগ মানুষ সমুদ্র আর পাহাড় দেখেই ফিরে আসে নিজ ঠিকানায় কিন্তু, চট্টগ্রামের শীর্ষ ৪ টি ঐতিহাসিক স্থান এতই সুন্দর যেন একবার দেখলে দেখতে ইচ্ছে করবে বারবার। খ্যাতনামা পার্সিয়ান সাধু বায়েজিদ বোস্তামির মাজার থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের ওয়ার সিমেট্রি এই সবকিছুই বিশ্বযুদ্ধের শিকড় যা আজই ছড়িয়ে আছে চট্টগ্রামের মাটিতে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরটিতে আরও অনেক কিছু রয়েছে। যান্ত্রিক জীবনের সকল ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে ঘুরে আসুন এই চট্টগ্রামের শীর্ষ ৪ টি ঐতিহাসিক স্থান থেকে। আপনার মনের খোঁড়াক মিলে যেতে পারে এই অসম্ভব সুন্দর কয়েকটি জায়গা থেকে। চলুন জানা যাক চট্টগ্রামের সুন্দর এই স্থানগুলো সম্বন্ধে। 

চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি

চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি
চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি

ইতিহাসের পাতা ঘাটলে আপনি খুঁজে পাবেন অসংখ্য বীরত্বপূর্ণ অর্জন ও সাফল্য। ঐতিহাসিক এই ঘটনাগুলোর প্রভাব এতটাই গভীর ছিল যে, পৃথিবীর আকার পরিবর্তন করেছিল। চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি বা চট্টগ্রাম কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি এমনই যুগান্তকারী চিহ্ন রেখেছিল যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আজকের বিশ্ব কিভাবে তৈরি হয়েছিল এবং এর ভিত্তি সম্বন্ধে। 

বন্দর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই সিমেট্রিটি বাংলাদেশের কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশনের একটি সিমেট্রি। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী দ্বারা নির্মিত এই কবরস্থানটি শুধু কমনওয়েলথ দেশগুলির সৈন্য এবং অন্যান্য মানুষদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে, কবরস্থানে ৪০০ জনকে দাফন করা হয়েছিল। কিন্তু, বর্তমানে সেখানে ৭৩৩১ টি সমাধি রয়েছে। এই সমাধিগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে স্থানান্তর করা হয়েছিল। ওয়ার সিমেট্রির তৈরির সময় এই এলাকাটি একটি বিশাল ধানের ক্ষেত ছিল, যদিও বর্তমানে এটি বেশ উন্নত এলাকা এবং শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এবং  পর্যটকদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় স্থান। 

চন্দ্রনাথ মন্দির

চন্দ্রনাথ মন্দির
চন্দ্রনাথ মন্দির

এই মন্দিরটি বাংলাদেশের অন্যতম ৭টি শক্তি পীঠের মধ্যে একটি! শক্তিধর্মের ভক্তদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। চট্টগ্রামের শীর্ষ ৪ টি ঐতিহাসিক স্থান এর মধ্যে চন্দ্রনাথ মন্দির দেখতে বেশ সুন্দর। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় প্রায় মাটি থেকে ১০২০ ফুট উপরে এই মন্দিরের অবস্থান। কিন্তু, মন্দিরের যাত্রা মোটেও সহজ নয়। তবে পাহাড়ে ট্রেকিং এবং উঁচু চূড়ায় আরোহণ যাত্রাটিকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলেছে। এমনকি আপনি মন্দিরের পথে চায়ের দোকানও পাবেন। পাহাড়ে বসে এক চা উপভোগ করার আনন্দই আলাদা!  

এই মন্দির তৈরি হওয়ার পেছনের গল্পটা ছিল ঠিকে এমন, দেবী সতী (দেবতা শিবের প্রথম স্ত্রী) এর মৃত্যুর পরে, শিব ক্রুদ্ধ হন। গভীর অনুশোচনার পর শিব তার স্ত্রীর মৃতদেহটি তার কাঁধে নিয়ে গেলেন এবং  “তান্ডব নৃত্য” (ধ্বংসের নৃত্য) শুরু করলেন। সেই নাচের আশঙ্কায় বিশ্বে ধ্বংস এবং সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে বলে দেবতা বিষ্ণু তাঁর চক্র ব্যবহার করেছিলেন এবং দেবী সতীর দেহকে ৫১ টুকরো করলেন। ফলস্বরূপ, শিব আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন। দেবী সতীর দেহের অংশ যে জায়গাগুলোতে পড়েছিল সে সমস্ত স্থান পবিত্র হয়ে উঠে এবং শক্তি পীঠ নামে পরিচিতি লাভ করেছিল।

মসজিদ-ই-সিরাজ উদ-দৌলা

মসজিদ-ই-সিরাজ উদ-দৌলা
মসজিদ-ই-সিরাজ উদ-দৌলা

স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত চট্টগ্রামের অতি প্রাচীন চন্দনপুরা মসজিদ। নগরীর চকবাজার ওয়ার্ডের সিরাজ-উদ-দৌলা সড়কে এটি অবস্থিত। মসজিদের চারদিকে যেন রঙের মেলা। স্থানীয়দের কাছে এটি তাদের পরিচয়ের একটি অংশ এবং চট্টগ্রামের শীর্ষ ৪ টি ঐতিহাসিক স্থান এর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর একটি দর্শনীয় স্থান। ইতিহাসবিদরা অনুমান করেছেন যে মসজিদটি ১৮৭০ সালে মাস্টার আবদুল হামিদ নামে একজন ঠিকাদার দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।  কথিত আছে লখনৌ এবং মুম্বাই থেকে বিল্ডার এবং আর্কিটেক্টদের এই মসজিদ নির্মাণ করতে আনা হয়েছিল। চোখা ধাঁধানো নকশা আর রঙের ব্যবহারের জন্য এই মসজিদটি সকলের মন কেড়েছে। এটি শহরের আন্দরকিল্লা এবং চকবাজার চৌরাস্তার মধ্যে অবস্থিত, এই পাঁচ গম্বুজ মসজিদটি সত্যি না ভোলার মত একটি জায়গা। 

ওয়ালি খান মসজিদ 

ওয়ালি খান মসজিদ
ওয়ালি খান মসজিদ

শুধু চন্দনপুরা জামে মসজিদ নয়, চকবাজার এলাকায় চট্টগ্রামের আর একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে সেটা হল ওয়ালি খান মসজিদ। ওয়ালি খান মসজিদ প্রতিষ্ঠার কাজটি আঠারো শতকের।  এটি নির্মাণ করেছিলেন মোগল ফৌজদার ওয়াল বেগ খান। চকবাজারের প্রতিষ্ঠাতাও এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জমিটি তিনি দান করেছিলেন। আয়তক্ষেত্রাকার স্থাপনার প্রতিটি পাশে চারটি অষ্টভুজ রয়েছে, মসজিদে তিনটি প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদটি বেশ নকশায় সুসজ্জিত। সুন্দর মোটিফ দিয়ে সজ্জিত। যদিও বর্তমানে এর সৌন্দর্য আগের মত আর নেই। বারবার সংস্কারের কারণে এর গাঁথুনি কাঠামোতে এসেছে পরিবর্তন আর বেশীরভাগ অংশ হারিয়েছে। 

এই ছিল চট্টগ্রামের শীর্ষ ৪ টি ঐতিহাসিক স্থান গুলো। যেখানে ঘুরে আসার মত রয়েছে অনেক কারণ। চট্টগ্রাম শহরটি এতই সুন্দর যেখানে আপনি ফিরে যেতে চাইবেন বারবার। বহুসংস্কৃতির বৈচিত্র্যের সাথে সমৃদ্ধ এই শহরটি আপনাকে হতাশ করবে না। কেমন লাগলো তাহলে আজকের এই ব্লগ? আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না যেন! 

Write A Comment