Reading Time: 4 minutes

ভাবা যায় আজকের চট্টগ্রামের নাম ছিল, হরিকেল!!! শুনে অবাক হওয়া ছাড়া উপায় নেই। গুনে গুনে হাজার বছরের পুরনো এই শহরের ইতিহাসের কথা বলব আজ। সেখানে কি আছে? সেখানে কি হয়? কেমন বা সেই শহরটা দেখতে। সবকিছু যদি এক সাথেই পেয়ে যান, মন্দ হয়না কিন্তু! প্রকৃতির সব বৈচিত্র্য পাহাড়, নদী, বন, সমুদ্র ও সমতল ভূমি। কি নেই এখানে? তাই হয়তো সকলে আদরের নাম দিয়েছে  চট্টগ্রাম বন্দরনগরী । শিল্পীর আঁকা ছবির মত সুন্দর এই বন্দরনগরীর অলিগলিতে ঘুরব আজকে আর দেখাবো বন্দরনগরীর অলিগলি আসলে কেমন…

ঘুরে দেখার যা আছে

আইয়ুব বাচ্চুর সমাধি
রূপালি গিটার যেখানে

শহর ঘুরতে শুরু করলেই প্রথমেই চোখে পড়বে প্রবর্তক মোড়। এখানে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অনেক স্মৃতি জমা আছে দেখেই হয়তো এমন নামকরণ হয়েছে। এছাড়াও এই চত্বরকে আরও স্মরণীয় করে রেখেছেন প্রয়াত কিংবদন্তী গায়ক আইয়ুব বাচ্চুর রূপালি গিটারের স্মৃতিতে তৈরি ফোয়ারা। এই ফোয়ারা দেখলে কখন যে মনের কোণে আইয়ুব বাচ্চুর গানের সুর বেজে উঠবে তা বলা মুশকিল। কিন্তু, আপনি সেই সুরে হারিয়ে যাবেন তা নিশ্চিত। এছাড়াও ঘুরে দেখার জন্য আরও বেশ কিছু সুন্দর যায়গা রয়েছে চট্টগ্রামে। 

শাহ আমানত সেতু

কর্ণফুলী সেতু
কর্ণফুলী সেতু

নগরীর ধারে কর্ণফুলী নদী দেখে আপনার যদি মনে হয়, লন্ডনের টেমস, বানারাসের গঙ্গা যেন কিছুই না। নিজের দেশে এত অপরূপ সৌন্দর্যের কাছে বিদেশের সকল সৌন্দর্যই হার মেনে যায়! এছাড়াও আমাদের দেশে নির্মান হয়েছে চমৎকার কিছু সেতু! কর্ণফুলী সেতু হওয়াতে বান্দরবান ও কক্সবাজারের পথ হয়েছে অনেকটা সহজ এবং সুন্দর। ইংরেজ আমলের শুরুর দিকে কর্ণফুলী নদীতে নাকি নির্মিত হয়েছিল কাঠের জেটি। সেখান থেকে শুরু চট্টগ্রাম বন্দরনগরী এর। সময় যেভাবে এগিয়েছে সাথে বেড়েছে বাণিজ্য, বেড়েছে বন্দরে কাজের ব্যস্ততা। নানারকম পণ্য বোঝাই অসংখ্য ছোট বড় জাহাজ কখনো ছাড়ছে আবার কখনো ফিরছে বন্দরে। তাই হয়তো দেশের প্রথম সামুদ্রিক বন্দর এটি। এই সেতুর আশেপাশে আরও ঘুরতে চাইলে কিছু দূর গেলেই পেয়ে যাবেন। চমৎকার এক বিনোদন কেন্দ্র অভয়মিত্র সাম্পান ঘাট। প্রাকৃতিক পড়িসরে গড়ে ওঠা এই বিনোদন কেন্দ্রে একবার গেলে ফিরে আসা খুব কঠিন।  কি নেই সেখানে মাটির নিচে টানেল, কর্ণফুলী নদীর বহমান জল ধারা, ভাসমান দেশি বিদেশি রঙ বেরঙের জাহাজ, সাথে থাকছে সাম্পান নৌকা। 

মজাদার সব খাবার দাবার

শুটকি বাজার
শুটকি বাজার

চট্টগ্রামে ঘুরতে যাবেন আর সেখানের মাছের বাজারে হানা দিবেন না তা কি হয় নাকি! সামুদ্রিক মাছের স্বাদ কে না পেতে চাইবে। নানারকম মাছের সমাহার দেখতে চলে আসুন, ফিরিঙ্গিবাজারের শত বছরের পুরনো মাছের বাজারে। এখানের ব্যবসায়ীরা যুগ যুগ ধরে এই ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন। যেকোন মাছ কেনার আগে সমস্ত মাছের বাজার ঘুরে তবেই কোন মাছ কেনার পরামর্শ দিব। দরদাম করে তবেই কোন মাছ ক্রয় করবেন। পর্যটক ভেবে ঠকিয়ে দেবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

রেস্তোরা
চাটগাঁইয়া রসনার স্বাদ পেতে ঘুরে দেখুন নানা রকম রেস্তোরা

চট্টগ্রাম বন্দরনগরী এর ঐতিহ্যবাহী খাবারের সংখ্যা অগণিত।  চট্টলার খাবারের স্বাদ বহুদিন ধরেই গর্ব ও সফলতার গল্প বলছে। এখানের বহু খাবারের হোটেল এবং নামীদামী রেস্টুরেন্টগুলো সকলের কাছেই প্রিয়। বিখ্যাত মেজবানি মাংস, পায়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় খাবারের স্বাদ পেতে চট্টগ্রামে গিয়ে যেকোন হোটেলে অবশ্যই ঢুঁ মারতে পারেন। মিলবে প্রকৃত চাটগাঁইয়া রসনার স্বাদ। যারা ভাবেন শুধু পুরান ঢাকার বিরিয়ানিই স্বাদে ও সৌরভে সেরা, তাদের ভুল ধারণা ভেঙে যাবে এখানে এসে। চট্টগ্রাম এখন রেস্টুরেন্ট কিংবা খাবার দোকানের দিক থেকে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই ঢাকা থেকে। বিভিন্ন স্বাদ আর মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে শহরজুড়েই। বিভিন্ন রসনা আর স্বাদের সমন্বয় ভ্রমণের সঙ্গে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে বন্দরনগরীকে।

সমুদ্র সৈকত
নীল সমুদ্রে কিছুক্ষণ

চট্টগ্রামের কাছে যেমন ঘোরার জায়গার শেষ নেই তেমনি শহর থেকে একটু বেড়িয়ে খানিকটা দূরে গেলেই দেখা মিলবে চমৎকার সব দর্শনীয় স্থানের। যেমন, নেভাল বিচ, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত কিংবা বাটারফ্লাই পার্ক। অলিগলির ইউটিউব প্লে লিস্টে রয়েছে চট্টগ্রাম শহর নিয়ে আরও কিছু চমৎকার ভ্লগ সেগুলো দেখতে ভুলবেন না যেন! কোনটাই কম নয়। একেকটা যায়গায় পরিবার নিয়ে আপনি কিছুটা সুন্দর সময়ভাবে কাটানো যাবে । শহরটা বেশ সুন্দর এবং সাজানো গোছানো। বাণিজ্যের ব্যস্ততা এই শহরের নিত্য সঙ্গী। তবে সৌন্দর্যের দিক দিয়ে এই শহরের কোন কমতি নেই। সবুজে ঘেরা এত চমৎকার একটি প্রাকৃতিক শহর না দেখলে বিরাট বড় এক না পাওয়া রয়ে যাবে। এই শহরটি তার নিজস্ব ঐতিহ্য ধরে রাখতে রয়েছে নিজস্ব ভাষা আর সংস্কৃতি। এই শহর ঘুরতে ঘুরতে কানে যদি বেজে উঠে মাইজভান্ডারী কিংবা কবিয়াল থেমে যাবার কিছু নেই। এখানের বাতাসেই এই সুর মাধুর্য ঘুরে বেড়ায়। মন যদি গান কেড়েই নেয় নজর কাড়বে এখানের সুলতানি আমলের নানা নিদর্শন। চট্টগ্রামের বাকী গল্পগুলো নাহয় অন্য একদিন শুনিয়ে যাবো। তার আগে আজকের এই অলিগলি ভ্লগ কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেন না!  

Write A Comment