বাড়ি বা আশ্রয়স্থল যেই নামেই ডাকুন না কেন, উদ্দেশ্য কিন্তু আপনাকে আশ্রয় দেয়া, আপনার সকল চাহিদা পূরণ করা। বাসা একটি ঠিকানা আমাদের কাছে এক ভিন্ন অনুভূতি। নিজের করে তিলে তিলে গড়ে তোলা একটি ঠিকানা। আমার আপনার বাসা আর বিশ্বের নামীদামী নেতাদের বাসা কিন্তু এক নয়! সরকারী বাসা বলে কথা। সরকারি বাসাগুলোর গল্প সম্পূর্ণই আলাদা। এই সরকারী বাসাগুলো কেবল আবাসস্থলের চাহিদাই পূরণ করে থাকে না, বরং দিয়ে থাকে আরও বেশি কিছু। যেমন একজন রাষ্ট্র প্রধানের বাসাটি এমন হওয়া যেখান থেকে তিনি স্বচ্ছন্দে দেশ পরিচালনা করতে পারেন। আজ আমরা বেশ চমৎকার ৫টি রাষ্টভবন নিয়ে আলোচনা করব। যেখানে, আপনার জানতে পারবেন এই সমস্ত বসবাস ভবনে কি আছে কি নেই!
প্রাসাদ ইলিসি
স্থপতি আর্মান্ড-ক্লোড মোলেট থেকে শুরু করে সম্রাট নেপোলিয়ন অব্দি প্রায় সকলেই এই প্রাসাদে থেকেছেন। কিন্তু, ১৮৪৫ সালে প্রথমবারের মতো ফরাসী রাষ্ট্রপতির জন্য এটি বরাদ্দ করা হয়। বরাদ্দের আগে এই চমৎকার প্রাসাদটি অনেক সুপরিচিত এবং শক্তিশালী ছিল কিন্তু ফরাসি রাষ্ট্রপতি এই প্রাসাদে নিজের সুবিধামত বেশ কিছু পরিবর্তন আনেন। তবুও এটা এখনো, বিশ্বের বুকে চমৎকার এক প্রাসাদ হয়ে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে। এই প্রাসাদটি ফ্রান্সের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এবং যেহেতু এটা একজন রাষ্ট্র প্রধানের আবাস্থল তাই জন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। ১১,০০০ বর্গফুট আয়তনের এই প্রাসাদে কক্ষ রয়েছে ৩৯৯ টি যদিও এটা ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় প্রাসাদ নয় তবুও বেশ আইকনিক একটি প্রাসাদ।
প্রাসাধ আবুধাবি
আবুধাবিতে এমনই এক প্রাসাদ রয়েছে যা কিনা আপনাকে মনে করিয়ে দিবে, ডিজনি মুভির সেই আলিশান প্রাসাদগুলোর কথা যেখানে রাজার মত থাকেন দেশের রাষ্ট্র প্রধান। এমন নাকি গুজবও রয়েছে যে সেই স্পেস থেকেও নাকি এই প্রাসাদকে দেখা যায়। তবে স্পষ্ট চাঁদের আলোয় অনেক দূর থেকে এই প্রাসাদ চোখে পড়ারই কথা। দেশের এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল এই প্রাসাদটি ঠিক ২০১২ সালের দিকে। পুরো প্রাসাদটি নিপুণভাবে ডিজাইন করা হয়েছে এবং সামনের অংশটি সাদা গ্রানাইট এবং চুনাপাথরের তৈরি। এই প্রাসাদের শীর্ষে অবস্থিত রয়েছে “গ্র্যান্ড হল” যা কিনা৪৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে তৈরি করা হয়েছে। এমন আরও মূল্যবান উপাদান নিয়ে তৈরি এই প্রাসাদটি নির্মান করা হয়েছে ১৫০ হেক্টর জমির উপর। আবুধাবিতে রয়েছে পৃথিবীর সবচাইতে দামী কয়েকটি বিল্ডিং এমিরেটস প্যালেস।
হোয়াইট হাউস
গোটা পৃথিবীতে এই হোয়াইট হাউজের মতো বিখ্যাত সম্ভবত কোন বাড়িই নেই। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির সরকারী বাসস্থান এবং কর্মক্ষেত্র। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে, “হোয়াইট হাউস” “রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ”, “রাষ্ট্রপতির হাউস” এবং “এক্সিকিউটিভ ম্যানশন” নামে পরিচিত। রাষ্ট্রপতি থিওডোর রুজভেল্ট ১৯০১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসটির বর্তমান নামটি দিয়েছিলেন। এই চমত্কার প্রাসাদটি সত্যিই বড়। এতই বড় যে এখানের যারা বসবাস করেন এবং দেখাশোনা করেন তাদের জন্য রয়েছে ১ থেকে ৬ তলায় ১৩২ টি কক্ষ, ৩২ টি বাথরুম। এছাড়াও রয়েছে, ৪১২ টি দরজা, ১৪৭ টি জানালা, ২৮ টি ফায়ারপ্লেস, ৭ টি সিঁড়ি এবং ৩ টি লিফট। অতিথিরা এই হোয়াইট হাউজের কিছু অংশ দেখতে পারলেও অনেকটা অংশ এখনো সংরক্ষিত। তবে হোয়াইট হাউজের নীচে রয়েছে ভূগর্ভস্থ বাংকার সেই সাথে আছে ভূগর্ভস্থ পশ্চিম উইং কমান্ড কেন্দ্র। ২০১০ সালে অত্যন্ত নিরাপত্তার সাথে এই রাষ্টভবনটি তৈরি করা হয়। চমৎকার ৫ টি রাষ্টভবন এর মধ্যে হোয়াইট হাউজ সবার কাছেই এক পরিচিত নাম।
প্রাসাদ আঙ্কারা
তুরস্কের ঐতিহ্য আজ থেকে সমৃদ্ধ নয় সেই আব্রাহামিক যুগ থেকে। তুরস্কের অনেকগুলি আকর্ষণীয় জিনিস রয়েছে যা আরও অনেক দেশ ঘুরলেও তুরস্ককে কখনো ভুলতে দিবে না এবং আপনি বিশ্বের আর কোথাও এর মতো কিছুই দেখতে পাবেন না। যেমন আঙ্কারায় রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ। তুরস্কের স্মৃতিসৌধও বেশ সুন্দর করে নির্মিত কিন্তু যখন নৈপুণ্যতার দিক থেকে এই প্রাসাদটির তুলনা নেই। এই প্রাসাদটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল ২০১৪ সালে, বিলিয়ন ডলারের প্রায় অর্ধেকটা খরচ করে তৈরি করা হয়। ১১০০ টি কক্ষ নিয়ে তৈরি এই প্রাসাদটি বিশ্বের অন্যতম চমত্কার রাষ্ট্রপতি ভবন।
প্রাসাদ প্রাগ
নবম শতাব্দীর অন্যতম একটি নিদর্শন হিসেবে প্রাগের এই প্রাসাদটির নাম বিশ্বের প্রাচীন বৃহত্তম দুর্গ হিসাবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে রয়েছে। এবং এই ঐতিহ্যবাহী জায়গাটি এদেশের রাষ্ট্রপতি বাসস্থান এবং একই সাথে কর্মক্ষেত্র। এই প্রাসাদটি দশম শতাব্দী থেকে শুরু করে অনেকের উপস্থিতির সাক্ষী হয়েছে এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছেন, অ্যাডলফ হিটলার সহ অনেকেই। পৃথিবীর বুকে স্থাপত্য শৈলীকে এইভাবে আর কোন কাঠামো পরিবেশন করেনি। কি নেই এই প্রাসাদে, ৪ টি প্রাসাদ, ৫ টি হল, একাধিক যাদুঘর যেখানে রয়েছে বোহেমিয়ান বারোক এবং ম্যানারিজম গ্যালারি সংগ্রহ, চারটি টাওয়ার এবং এগারোটির মত উদ্যান। এই প্রাসাদে স্থান করে নিয়েছে বোহেমিয়ান ক্রাউন জুয়েলস, সেন্ট ওয়েইনস্লাসেরি ক্রাউন, বোহেমিয়ার রাজাদের করোনেশন ভেস্টমেন্ট, সোনার ক্রস এবং সেন্ট ওয়েনেস্লাসের তরোয়ার যা সংরক্ষণ করা হয়েছে প্রাগের সেন্ট ভিটাস ক্যাথেড্রালে। এই সবকিছুই এই প্রাসাদকে বিশ্বের অন্যতম চমত্কার রাষ্ট্রপতি ভবন হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই তো প্রতিবছর প্রায় ১.৮ মিলিয়ন দর্শনার্থী এই প্রাসাদটি দেখতে আসে।
চমৎকার ৫ টি রাষ্ট্রভবন এর এই তালিকাটি নিশ্চয়ই আপনার ভালো লেগেছে? লাগারই কথা এমন চমৎকার তথ্য কার না ভালো লাগবে। এমন আরও চমৎকার সব টপিকে ব্লগ পড়তে বিপ্রপার্টির ব্লগে নজর রাখুন।